Skip to main content

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর




সংশয়বাদ কাকে বলে?

কোন দাবী কিংবা ঘটনাকে বিনা প্রশ্নে মেনে না নিয়ে বা অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে তা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ এবং প্রশ্নবিদ্ধ করে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করার পদ্ধতি হচ্ছে সংশয়বাদ। সংশয়বাদ হচ্ছে চিন্তা করার একটি পদ্ধতি, যা অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে সংশয়ী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যুক্তি প্রমাণ যাচাই বাছাই করে দেখার ওপর নির্ভরশীল।

সংশয়বাদ শব্দটি অনেক বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত হয়। যেকোন কিছুকে সন্দেহ, সংশয় পোষণ এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলা যেতে পারে। সাধারণ্যে বহুল প্রচলিত কোনো ধারণাকে সন্দেহ করা অর্থে সংশয়বাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

যারা সংশয়বাদের প্রতি আস্থা রাখেন বা সংশয়বাদ চর্চা করেন তাদেরকে সংশয়বাদী বলা হয়। সংশয়বাদীগণ মনে করেন, বিনা প্রশ্নে বিনা সন্দেহে কোন দাবীকে মেনে নেয়া সত্য জানার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই সত্য জানার জন্য সর্বত্তম উপায় হচ্ছে সংশয় পোষণ করে যাচাই করে দেখা। সংশয়ী দৃষ্টিভঙ্গিই যাচাই করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। চিরায়ত দর্শন থেকেই সংশয়বাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ, স্কেপ্টিসিজম শব্দটি এসেছে। প্রাচীন গ্রিসে কিছু দার্শনিক ছিলেন যারা “কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিতেন না বরং সব কিছুতেই তাদের নিজস্ব যুক্তি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মতামত ব্যক্ত করতেন”। দার্শনিকদের এই ধারাটিকে তখন Skeptikoi বলা হতো। তাই Skeptikoi দার্শনিক ধারার দার্শনিকদের বৈশিষ্ট্যকেই স্কেপ্টিসিজম হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে থাকে।


অজ্ঞেয়বাদ কাকে বলে?

- অজ্ঞেয়বাদ অর্থ হচ্ছে, কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার সরল স্বীকারোক্তি। ঈশ্বর বা এই সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে যেহেতু মানুষের কোন বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ নির্ভর জ্ঞান নেই, তাই এই বিষয়ে অজ্ঞেয়বাদীগণ কিছু জানেন না বলে মনে করেন। একইসাথে, অজ্ঞেয়বাদীগণ দাবী করেন যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে যারা জানেন বলে দাবী করেন, তারা কীভাবে জানেন!

অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি ইংরেজি যে শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, অর্থাৎ “Agnostic” শব্দটিকে ভাংলে আসে গ্রিক “a” এবং “gnostos”। gnostos অর্থ জ্ঞানী, আর তার আগে উপসর্গ “a” মিলে agnostic শব্দের আক্ষরিক অর্থ হয়েছে জ্ঞানহীন। সেই অর্থে একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে agnostic হতে পারেন।

  • ধরুন, কেউ প্রশ্ন করলো, আপনি মামদো ভুত সম্পর্কে জানেন?
  • উত্তর হচ্ছে, আমি জানি না। ( অর্থাৎ আমি এই বিষয়ে অজ্ঞেয়বাদী )
  • এবারে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কী মামদো ভুতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন?
  • উত্তর হচ্ছে, না, আমি বিশ্বাস করি না। ( অর্থাৎ আমি এই বিষয়ে নাস্তিক )

তাহলে, উপরের দুইটি উত্তর যুক্ত হয়ে আমি মামদো ভুত সম্পর্কে আমি একজন অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক। উল্লেখ্য, উপরের উদাহরণগুলো বিষয়টি বুঝাবার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

নাস্তিক কাকে বলে?

ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বা যা মানুষ বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রেখেছে, এরকম কোন কিছুর অস্তিত্বে যাদের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে, তাদের নাস্তিক বলা হয়। যেহেতু ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার কোন প্রমাণ মেলে না, তাই নাস্তিকরা বলেন, প্রমাণ ছাড়া এই দাবীকে মেনে নেয়ার কোন যুক্তি নেই।

অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক কাকে বলে?

অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক হচ্ছেন তিনি, যিনি একইসাথে বলেন, ঈশ্বর সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, এবং প্রমাণের অভাবে এর সম্পর্কে আমার বিশ্বাসের অভাব রয়েছে বা আমরা এই দাবীকে বিশ্বাস করি না বা মেনে নিই না। অনেকেই নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী হওয়ার বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলেন। তাই ভালভাবে বোঝার জন্য নিচের ছবিটি দেখতে পারেন।

উত্তর

যুক্তি কাকে বলে?

যুক্তি হচ্ছে কিছুর সত্যতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত কিছু পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আমরা তার যথার্থতা নিরুপণ করতে পারি। যেমন ধরুন, দুইটি প্রস্তাবনা হচ্ছে,

  • সকল মানুষ মরণশীল জীব
  • কলিমুদ্দীন একজন মানুষ

এই দুইটি প্রস্তাবনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, কলিমুদ্দীন একজন মরণশীল জীব

আবার কিছু যুক্তির কাঠামোতে ভুল থাকায় সেগুলো কখনো যুক্তি হিসেবে গণ্য হবে না। যেমন ধরুন, দুইটি প্রস্তাবনা হচ্ছে,

  • গরু ঘাস খায়
  • মানুষ গরুর দুধ ও মাংস খায়

এই দুইটি প্রস্তাবনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি না যে, মানুষ ঘাস খায়!

যে শাস্ত্রে অশুদ্ধ যুক্তি থেকে বৈধ বা শুদ্ধ যুক্তিকে পৃথক করায় নিয়ম পদ্ধতি আলোচনা করে তাকে যুক্তি বিজ্ঞান বলে।


ধর্ম কাকে বলে?

ধর্ম বলতে সাধারণতঃ পারলৌকিক সুখের জন্য ইহলোকে ঈশ্বর-উপাসনা, আচার-বিচারাদি নিদের্শক তত্ত্বকে বোঝানো হয়। বাঙলা ভাষায় ’ধর্ম’ শব্দটির অর্থ হল ‘যা ধারণ করে’।

ধৃ ধাতু + মন প্রত্যয় = ধর্ম । ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা ।

বাঙলা ভাষায় এই শব্দটির যে মূল অর্থ, এর সাথে বৈশ্বিকভাবে আমরা ধর্ম বলতে যা বুঝি তার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। বাঙলা ভাষাতে ধর্ম বলতে যেমন বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়, আবার একইসাথে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মও বোঝানো হয়। ইংরেজিতে রিলিজিওন(religion) এবং প্রোপারটিজ (properties) বা ক্যারেক্টেরিস্টিকস (characteristics) দুটোকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, কিন্তু বাঙলাভাষায় অনেক সময় দুটোর ক্ষেত্রেই ধর্ম শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

অনেক সময় আমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়ি, চুম্বকের ধর্ম কী? এর দ্বারা আসলে বোঝানো হয় চুম্বকের বৈশিষ্ট্য(characteristics) কী। এই ক্ষেত্রে ধর্ম শব্দটির ব্যবহার সঠিক নয়, কিন্তু এটি বহুল প্রচলিত। এর ফলে নানা ধরণের ভুল ধারণা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ধর্ম বা রিলিজিওন শব্দটির সঠিক অর্থ হওয়া উচিত কিছু বিশ্বাস এবং আচার অনুষ্ঠানের সমষ্টি, যার মাধ্যমে মানুষ অতিপ্রাকৃতিক বা পারলৌকিক সত্ত্বার উপাসনা করে এবং শান্তি লাভের চেষ্টা করে।

দর্শন কাকে বলে?

দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি (philosophy) (গ্রিক ভাষা φιλοσοφία, ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে “জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা”) হলো অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রক্রিয়া প্রভৃতি মৌল বিধানের আলোচনাকেও দর্শন বলা হয়।

বিজ্ঞান কাকে বলে?

বিজ্ঞান হচ্ছে একটি সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত গবেষণার মাধ্যমে কোন বিষয় কেন এবং কীভাবে ঘটে তা জানতে পারি। বলা যেতে পারে, এই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নামই বিজ্ঞান। অর্থাৎ, যেই বিশেষ জ্ঞান আমাদের প্রাকৃতিক কোন ঘটনা কেন ঘটছে, সেটি পদ্ধতিগতভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে, সেই জ্ঞানের নাম হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান কাজ করে প্রমাণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে, তাই এই পদ্ধতিই সত্য নিরুপনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।

নৈতিকতা কাকে বলে?

-নৈতিকতা হচ্ছে ভালো-খারাপ, উচিত-অনুচিত এর পার্থক্যকারী একটি মানদণ্ড, যা জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ যেই জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা কোন কাজটি ভাল আর কোন কাজটি মন্দ, কেন সেটি ভাল বা কেন সেটি মন্দ তা নির্ধারণ করতে পারি, সেই জ্ঞানকে নৈতিকতা বলা হয়। মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পায়, ভাল বা মন্দের মধ্যে তত বেশি ভালভাবে পার্থক্য করা সম্ভব হয়।

প্রমাণ এবং দাবী কাকে বলে?

আমাদের আলোচনাগুলোতে বহুমানুষ বহুসময় এসে দাবী করেন যে, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা নামক এক অলৌকিক সত্ত্বাই মহাবিশ্বের উৎপত্তির কারণ। কিন্তু তারা সকলেই কোন প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন। ঈশ্বরের প্রমাণ বলতে আমরা আসলে যা দাবী করি, সেটি হচ্ছে এমন কোন বিষয় আমাদের সামনে উপস্থাপন করা, যা ব্যক্তিবিশেষের মন, বিশ্বাস কিংবা ব্যক্তিগত রুচি অভিরুচির ওপর নির্ভর করে না। যেই বিষয়টি একজন সাদা চামড়ার মানুষের জন্যেও যেরকম, কালো চামড়ার মানুষের জন্যেও সেরকম। মুসলিমের জন্য যেমন, হিন্দুর জন্যেও একই। আফ্রিকার মানুষের জন্যেও যেমন, ইউরোপের মানুষের জন্যেও একই। অর্থাৎ প্রমাণটি সাবজেক্টিভ নয়, অবজেক্টিভ।

যেমন ধরুন, জ্বর হলে আমরা প্যারাসিটামল খাই। বেশিরভাগ সময়ই এটি কাজ করে। ঔষধটি ব্যক্তির মন কিংবা বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু জ্বর হলে কেউ কালী পুজা করলো, কেউ আল্লাহ পুজা করলো, কেউ বা যীহোভার পুজা করলো, আরেকজন কোন পুজাই করলো না। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই জ্বর ভাল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, না হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এটি যাচাই করা সম্ভব নয় যে, অমুক দেবতার পুজার জন্যেই জ্বর সেরেছে। বা অমুক দেবতার পুজা জ্বরের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেছে। কেউ যদি দাবী করে, কালী পুজার কারণেই তার জ্বর সেরে গেছে, সেটি প্রমাণ হতে পারে না। কারণ অন্য আরেকজনার আল্লাহ পুজাতেও জ্বর সেরে যেতে পারে, আবার একজন নাস্তিকের ক্ষেত্রে পুজা না করেও জ্বর সারতে পারে। যেহেতু এটি ব্যক্তির বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত, তাই এটি কোন অবজেক্টিভ প্রমাণ নয়।

সাবজেক্টিভ এবং অবজেকটিভ অর্থ কী?

‘Subjective’ এবং ‘Objective’ শব্দগুলি প্রায়শই আমাদের বিভিন্ন আলোচনাতে আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোর অর্থ বেশিরভাগ মুমিন ভাইয়েরা বুঝতে ব্যর্থ হন। বহুবার বহুভাবে বোঝাবার পরেও, আলোচনার শেষে তারা জিজ্ঞেস করেন ”সীতা কার বাপ!” তাই বিষয়গুলো আবারো ব্যাখ্যা করছি।

Subjective বা সাবজেক্টিভ শব্দটি সাবজেক্ট বা ব্যক্তি বা সত্ত্বার ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত মতামত, বিশ্বাস, ইচ্ছা অনিচ্ছা বা অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। আরো ভালোভাবে বললে, এটি হচ্ছে কারো মতামত।

এটি ব্যক্তিগত স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাত, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, সমাজ সংস্কার এবং দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। এর কোন সুনির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড নেই, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগতভাবে এটি এক এক জায়গাতে এক এক রকম।

উদাহরণস্বরূপ, অমুক ব্যক্তির কাছে একটি চলচ্চিত্রকে “অসাধারণ” মনে হয়েছে, সে চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেছে। কিন্তু অন্য আরেকজনার কাছে সেই একই চলচ্চিত্রটি “ভয়াবহ কুরুচিপূর্ণ” মনে হয়েছে। বা ধরুন, অমুক কাজটি অমুকের কাছে ভাল লেগেছে, কিন্তু তমুক ঐ একই কাজকে অন্যায় বলে মনে করেছে।

বা ধরুন, অমুক জাতিগোষ্ঠী পশু বলি দেয়াকে ন্যায়সঙ্গত কাজ মনে করে, কিন্তু অন্য আরেকটি জাতিগোষ্ঠী সেই একই কাজকে অন্যায় কাজ বলে মনে করে। এদের মধ্যে কেউই তাদের কাজের পক্ষে কোন যুক্তিতথ্য প্রমাণ প্রদর্শন না করলে, কাজগুলো তাদের সাবজেক্টিভ অপিনিয়ন বা মতামত হিসেবে বুঝতে হবে। আমাদের নেতা বলেছে তাই এটি ন্যায়, আমাদের ধর্মগুরু বলেছে তাই এটি অন্যায়, এগুলো সবকিছুই সাবজেক্টিভ অপিনিয়ন। এইসব নিয়ম কানুন ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে একরকম হবে, হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে হতে পারে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। অমুক গ্রন্থে আছে বা তমুক ঈশ্বর এটি বলেছে, এগুলো কোনটিই যুক্তি তথ্য প্রমাণ নয়, নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্রভাবে যাচাইযোগ্য নয়, ব্যক্তিবিশেষের বিশ্বাস মাত্র। তাই এগুলো সবই সাবজেক্টিভ অপিনিয়ন বা মতামত।

এবারে আসুন অবজেক্টিভ কাকে বলে জেনে নিই। Objective হচ্ছে, যুক্তি তথ্য এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে যেই তথ্যটিকে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়। এটি ব্যক্তিগত মতামত বা বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, “ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি একশ‘ আশি ডিগ্রী” বা “পৃথিবী নিখুঁতভাবে গোলাকার না হলেও প্রায় গোলাকার” এই বিবৃতিগুলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ যুক্তি তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে যাচাই করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এই তথ্যগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায় বলে এগুলো সত্য তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পৃথিবীর সকল মানুষ এগুলো মানতে অস্বীকার করলেও, এগুলো যুক্তি তথ্য প্রমাণের জোরেই সত্য তথ্য বলে গণ্য হবে। কারো মতামত বা ইচ্ছা অনিচ্ছা বা নির্দেশনা বা বিশ্বাসের ওপর এই তথ্যের সত্যতা নির্ধারিত হবে না। শুধুমাত্র যুক্তি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই এগুলো অবজেক্টিভলি সত্য। এগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা সম্ভব শুধুমাত্র এই তথ্যগুলোকে অবজেক্টিভলি মিথ্যা প্রমাণের মাধ্যমে, বা এর চাইতে ভাল কোন অবজেক্টিভ প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে।

এখানে উল্লেখ্য, যুক্তি তথ্য প্রমাণ কখনো সাবজেক্টিভ হতে পারে না৷ সাবজেক্টিভ হলে সেগুলো আর যুক্তি তথ্য প্রমাণ থাকে না। মতামত বা অপিনিয়ন হয়ে যায়। যুক্তি তথ্য প্রমাণ সেগুলো তখনই হবে, যখন সেটি নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র ভাবে যাচাই করা যাবে।

নাস্তিক মানে কী?

শুরুতেই নাস্তিক শব্দের অর্থ জেনে নেয়া যাক।

নাস্তিক = ন+অস্তি+ইক।
ন = নঞর্থক, নাই, প্রয়োজন হয় নাই।
অস্তি = অস্তিত্ব, ভৌত জগত, প্রকৃতি ইত্যাদি।
ইক = মতবাদী, মতবাদ পোষণকারী।

প্রাচীন বৈদিক যুগে যে বা যারা বেদ মানতো না তাদেরকে ‘নাস্তিক’ বলা হতো। কিন্তু মূল অর্থ হিসেবে “নাস্তিক” শব্দটি একটি দার্শনিক অভিধা। ‘ন + অস্তি’ যুক্তিবাদের আলোকে একটি দার্শনিক সিদ্ধান্ত বা বিশ্বাসের অবস্থান। এখানে ন = নাই, প্রয়োজন নাই। আর অস্তি = অস্তিত্ব।

নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Atheism; অন্যান্য নামঃ নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনিক অবস্থানের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। কোন অলৌকিক স্রষ্টার ধারণাকে বিশ্বাস করা বা আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস বা কোন ধর্ম নয় বরং অবিশ্বাস এবং এটি তথ্য প্রমাণ ও যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসের অনুপস্থিতি বা বিশ্বাসের অভাবকেই তাই নাস্তিকতা বলা যেতে পারে।

নাস্তিক্যবাদ আসে যুক্তিবাদ থেকে। নাস্তিকতা কোন ধর্ম নয়, বরঞ্চ বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মৌলিক দাবী, অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বার অস্তিত্বে অবিশ্বাস। যাবতীয় বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মতত্বকে যাচাই বাছাই এবং যুক্তিসঙ্গত উপায়ে বাতিলকরণ। নাস্তিকতা বলে না যে “ঈশ্বর নেই”; নাস্তিকতার দাবীটি হচ্ছে, “মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঈশ্বর আছে বা কোন অলৌকিক শক্তি আছে তার কোন উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ নেই”। এবং যেহেতু কোন প্রমাণ নেই, তাই ঈশ্বরের এই দাবীকে নাস্তিক্যবাদ বাতিল করে এবং ভ্রান্ত বলে মনে করে।

তবে ঈশ্বরের কোন উপযুক্ত প্রমাণ ধার্মিকগণ দেখাতে সমর্থ হলে তা মেনে নিতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। যখনই পাওয়া যাবে, সেগুলো মেনে নেয়া হবে। তবে যুক্তিহীন বিশ্বাস যেহেতু যাচাই করবার কোন উপায় নেই, তাই একে খারাপ কাজে লাগাবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে- যেহেতু এটা যুক্তিপ্রমাণহীন একটি বিশ্বাসমাত্র। এবং সত্যিকার অর্থে ঘটেছেও তাই। এছাড়া ধর্মগ্রন্থে যেই ঈশ্বরের কথা বলা আছে, সেই ঈশ্বর শুধু নোংরাই নয়, সাম্প্রদায়িক, হিংস্র, তোষামদপ্রিয় এবং লোভী। সে প্রাচীন কালের রাজাদের চরিত্রের অধিকারী, যে শুধু নিজের উপাসনা আর তোষামোদ চায়, তা না পেলেই ভয় দেখায়। তাই ধর্ম ও ঈশ্বর মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপও হতে পারে।

নাস্তিকতার ভিত্তি কী?

নাস্তিকতার ভিত্তি হচ্ছে যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ। মানুষের অর্জিত জ্ঞান, অনুসন্ধান, প্রশ্ন এবং এর মাধ্যমে নেয়া সিদ্ধান্ত। আপনি যখনই প্রমাণ করতে পারবেন কোন একটি ঈশ্বর বা অলৌকিক সত্ত্বার অস্তিত্ব, নাস্তিকতা নিজেই বাতিল হয়ে যাবে। এখানে যুক্তি এবং প্রমাণই মূখ্য, মতাদর্শ বা ব্যক্তি নয়।

এমন নয় যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ পেলেও নাস্তিকরা অন্ধবিশ্বাসীর মত জোর করে অবিশ্বাস করবে।

নাস্তিকরা কি ‘ঈশ্বর নেই’ বলে বিশ্বাস করে?

নাস্তিকতা শব্দটির মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস বা বিশ্বাসের অভাব। নাস্তিক শব্দটির মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেন বা যার ভেতর ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের অভাব আছে। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা বা ‘ঈশ্বর আছে’ মনে না করাই নাস্তিকতা।

কোনোকিছু বিশ্বাস না করা তার বিপরীত কিছুতে বিশ্বাস করা নয়। যেমন আপনি দাবী করলেন আপনার বুক পকেটে ৫ হাজার লক্ষ কোটি টাকা আছে। আমি যুক্তিযুক্ত কারণে আপনার দাবী মেনে নিলাম না। আমি বললাম, এত টাকা একসাথে আপনার পকেটে থাকা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। তাই আমি আপনার দাবীটি বাতিল করছি, বা অবিশ্বাস করছি।

এর অর্থ এটি নয় যে, আমি দাবী করছি আপনার পকেটে ৫ হাজার লক্ষ কোটি টাকা নেই বা কোন টাকাই নেই বা আপেল আছে বা কমলা লেবু আছে বা মামদো ভুত আছে বা আল্লাহ আছে। আমার দাবী সেইটুকুই, যা আমি পূর্বে বলেছি। যৌক্তিক কারণে আপনার পকেটে ৫ হাজার লক্ষ কোটি টাকা টাকা একসাথে আছে এটি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। আমি আপনার দাবীকে বাতিল করছি। তবে আপনি সেরকম প্রমাণ দেখাতে পারলে অবশ্যই মেনে নিবো।

প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বর বিশ্বাস করে না কেন?

প্রমাণ থাকলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না। বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় তখনই যখন প্রমাণের অপ্রতুলতা থাকে। আমরা বিশ্বাস করি না যে, বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কারণ এখানে বিশ্বাসের কিছু নেই। অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি না যে, সূর্য আছে। বা পৃথিবী গোলাকার। এসব কোনো বিশ্বাসের ব্যাপার নয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রাপ্ত ফলাফল। বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয়। যে কেউ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। পরীক্ষার বিষয়টি বা পদ্ধতিও হেয়ালীপূর্ণ নয়।

অর্থাৎ পরীক্ষার সময় এরকম বলা হবে না যে, বিশ্বাস করলে ফলাফল এরকম হবে! পরীক্ষাগুলো ব্যক্তি নিরপেক্ষ। অর্থাৎ ব্যক্তির বিশ্বাস অবিশ্বাস রুচি অভিরুচি তার সমাজ গায়ের চামড়া লিঙ্গ এগুলো কিছুই পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। অর্থাৎ অবজেক্টিভ এভিডেন্স।

কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে ভুত আছে, কেউ তা বিশ্বাস করে না। কেউ বিশ্বাস করে জ্বীন আছে, কেউ তা করে না। কারও বিশ্বাস অবিশ্বাসে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা না থাকা নির্ভরশীল নয়।

শেওড়া গাছের পেত্নী এবং আল্লা ভগবান ঈশ্বর যীশু কালই শিব জিউস এরকম হাজার হাজার দেবদেবী ঈশ্বরের সপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করা হয় নি। প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয় এই মহাবিশ্বকে, বা কোন কথিত আসমানি কেতাবকে। যা সেগুলোর অস্তিত্ব প্রমাণ করে না। ঈশ্বরকে যেহেতু বিশ্বাস করতে হয়, তার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে যেসমস্ত যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করা হয় তা অপ্রতুল।

পৃথিবীর সকলেই যদি শেওড়া গাছের পেত্নীতে বিশ্বাস করে, তাতে শেওড়া গাছের পেত্নী প্রমাণিত হয় না। বা পৃথিবীর ফুলফল লতাপাতা গাছপালাও শেওড়া গাছের অস্তিত্বের প্রমাণ হতে পারে না। শেওড়া গাছও শেওড়া গাছের পেত্নীর অস্তিত্ত্বের সপক্ষে প্রমাণ হতে পারে না।

সমাজে কি ধর্মের কোন অবদান নাই?

বহুকাল আগে বিভিন্ন ধর্মের কিছুটা প্রয়োজন ছিল। মানুষের জ্ঞানের অভাবের কারণে নানা প্রশ্নের উত্তর মানুষ জানতো না। সেগুলোকে ব্যাখ্যা করবার জন্য তারা এরকম অনেক কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করেছিল। সেই চরিত্রগুলো তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে কাজে লাগতো। সেই সাথে, সামাজিক শৃঙ্খলার জন্যেও দরকার ছিল। তবে বর্তমান সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম শুধু অর্থহীনই নয়, ক্ষতিকরও বটে।

নাস্তিক হয়ে মুসলমান নাম কেন?

মুহাম্মদ ইসলাম ধর্মের নবুয়্যত পাওয়ার পরে তার নাম পালটায় নি। পুরনো পৌত্তলিক নামই রেখে দিয়েছিল। তার নামটি জন্মের সময় যারা রেখেছিল তাদের কেউই মুসলিম ছিল না। তার বাবার নাম আবদুল্লাহ, মায়ের আমিনা। তারা কেউই মুসলিম ছিলেন না। কিন্তু তাদের নাম এখন মুসলমানদের মধ্যে বহুল প্রচলিত। এমনকি, মুহাম্মদের অনুসারীদের মধ্যে সামান্য কয়েকজন ছাড়া কেউই নাম পালটায় নি। আর এই নামগুলো সবই আরবি নাম। নামের কোন ধর্ম হয় না। আরবি নাম, ইংরেজি নাম, বাঙলা নাম হয়। তাই নাম ইসলামের সম্পত্তি নয়।

মুহাম্মদের দাদার নাম ছিল আবদুল মুত্তালিব, একটি আরব পৌত্তলিক নাম। প্রথম বিবির নাম খাদিজা। প্রথম অনুসারীর নাম আলী। আলীর নাম মুহাম্মদ নিজেই রেখেছিলেন, নবুয়্যতের আগে। ইসলাম গ্রহণের পরে কেউই নাম পালটায় নি। ইরাকের সাবেক এক মন্ত্রীর নাম ছিল তারেক আজিজ। মুহাম্মদের পিতামাতা থেকে শুরু করে তারিক আজিজ এরা কেউই মুসলমান ছিল না। আরব ছিল বলে তাদের আরবি নাম ছিল। আরবের প্রাচীন খ্রিস্টান এবং ইহুদী, সেই সাথে পৌত্তলিকদের নামও এরকম। তাই নামের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্কে নেই। সম্পর্ক ভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে। মুহাম্মদ ভারতে জন্মালে তার নাম ভারতীয় হতো এবং এখন মুসলমানগণ ভারতীয় নামকে মুসলমান বা ইসলামী নাম বলে দাবী করতো। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষায় নাম বিভিন্ন রকম হয়। তাই ইসলাম ত্যাগ করায় কারো নাম পরিবর্তন বাধ্যতামূলক নয়। কারণ ইসলাম ঐসব নামের উদ্ভাবক নয়। ঐ নামগুলো ইসলামের আগে থেকেই আরবে প্রচলিত ছিল।

নাস্তিকের লাশ কী করা হবে?

- কজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে, মারা যাওয়ার পরে যেহেতু আমার কোন চেতনা থাকবে না, তাই লাশ দিয়ে কেউ স্যান্ডেল বানাবে বা পুড়িয়ে দেবে, তাতে তেমন কিছু যায় আসে না। কারণ তখন আমি আর ব্যথা পাবো না। বা কেউ ছুরি দিয়ে কাটলে চিৎকার করবো না। সুতরাং কী করা হবে তা নিয়ে মাথাব্যথা নাই।

তবে যদি আমার শরীর, চোখ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্য কারো কাজে লাগে, সেটা তাদের দিয়ে যেতে ইচ্ছুক। মাটিতে পোকামাকড়ের খাবার হওয়ার চাইতে আমার চোখ দিয়ে আরেকজন পৃথিবী দেখবে, সেটাই উত্তম।

মানুষ নৈতিকতা শিখবে কোথা থেকে?

ধর্ম আমাদের কোন নৈতিকতার শিক্ষা দেয় না। ধর্ম যা শেখায় তা হচ্ছে অন্ধ আনুগত্য, নির্দেশনা পালন। নির্দেশ মানলে পুরষ্কার এবং না মানলে শাস্তি। এই পদ্ধতি নৈতিকতার শিক্ষার অন্তরায়। কারণ নৈতিকতা হচ্ছে কোনটি সকলের জন্য ভাল, কোনটি সকলের জন্য মন্দ, তা বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা।

ধর্মগুলোর একটি প্রধানতম দাবী হচ্ছে, ধর্ম নাকি মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দান করে! খুব গর্ব করে ধর্মের রক্ষকগণ বলে থাকেন যে, তাদের ধর্মীয় নৈতিকতা হচ্ছে অবজেকটিভ, অর্থাৎ স্থান কাল পাত্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। অন্যদিকে সাবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে স্থান কাল পাত্রের ওপর নির্ভরশীল এবং স্থান কাল পাত্রের সাপেক্ষে পরিবর্তন পরিমার্জন সংশোধন যোগ্য। দাবী অনুসারে, অবজেক্টিভ মোরালিটি উচ্চতর কোন ঐশ্বরিক সত্ত্বা থেকে আসে এবং এর কোন পরিবর্তন পরিমার্জন সংশোধন সম্ভব নয়। কিন্তু অবজেক্টিভ মোরালিটির দাবীদার সেই ধর্মগুলোর মধ্যেই খুব হাস্যকর ভাবেই দেখা যায়, উনাদের ধর্মের প্রবর্তকগণ কখনো কখনো আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ভাই বোনের যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দিয়েছিলেন (আদম হাওয়ার ছেলেমেয়েরা ভাইবোন বিবাহ করেছিল), কখনো মুতা বিবাহকে বৈধতা দিয়েছিলেন, নবীর বেলায় যত খুশী বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন, ইত্যাদি; এরকম আসলে অসংখ্য উদাহরণ। তাহলে এই নৈতিকতা বা মোরালিটি তো স্থান কাল পাত্রের ওপরই নির্ভরশীল হলো, তাই না? অবজেক্টিভ হলো কোথায়?

মানুষের নৈতিকতার ভিত্তি হওয়া উচিত যুক্তি তথ্য প্রমাণের আলোকে জ্ঞান বিজ্ঞান এবং ক্রমাগত এর মানোন্নয়ন। কোন ঐশ্বরিক কেতাব যা বহুকাল আগের মানুষের নীতি নৈতিকতার জ্ঞানের ওপর রচিত হয়েছে, সেগুলো আমাদের সভ্য সমাজে আর প্রয়োগযোগ্য নয়।

ধরুন, একজন আধুনিক সভ্য মানুষ হিসেবে আপনার কাছে অবশ্যই যুদ্ধবন্দী নারীকে গনিমতের মাল হিসেবে বিছানায় নেয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হবে। কিন্তু এই কাজটি আপনার নবীজী নিজ জীবনে কয়েকবারই করেছেন, এবং অন্যদেরও করতে বলেছেন। বা ধরুন আপনি এমন কারও সাথে আপনার বোন বা কন্যাকে বিয়ে দেবেন না, যার ইতিমধ্যে তিনজন স্ত্রী আছে। আপনার বিবেক, বুদ্ধি, আধুনিক মূল্যবোধ, আধুনিক ধ্যান ধারণা আপনাকে সেইসব মধ্যযুগীয় কাজ করতে বাধা দেবে। যদিও আপনি ভাবেন, নৈতিকতার একমাত্র মানদণ্ড আপনার ধর্মটিই, তারপরেও আপনি আপনার বিবেক বুদ্ধি খাঁঁটিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনি যখন বিবেক বুদ্ধি ব্যবহার করছেনই, তখন আপনার জন্য আসলে ধর্মের নৈতিকতার শিক্ষা অগুরুত্বপুর্ণ।

ধর্ম বলছে, শিশু বিবাহ সুন্নত, বহুবিবাহ সুন্নত, কাফের কতল সুন্নত, জিহাদ করা সুন্নত, গনিমতের মাল বা দাসী ভোগ সুন্নত। আপনি বিবেক ব্যবহার করে সেগুলো করেন না। তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই বিবেকটুকু ব্যবহার করতে দোষ কোথায়?

নৈতিকতা শিক্ষার জন্য ধর্মের প্রয়োজন নেই। ধর্ম আমাদের যেই নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তা আধুনিক নৈতিকতার মাপকাঠিতে পুরোমাত্রায় নোংরামী। ধর্ম আমাদের শেখায় গনিমতের মাল হিসেবে নারীকে ভোগ করা যাবে, নারীকে শষ্যক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, বিধর্মীরা সব নরকে অনন্তকাল পুড়বে শুধুমাত্র একটি বিশেষ ঈশ্বরে অবিশ্বাসের জন্য। ধর্ম আরো শেখায় ভাল কাজ করলে স্বর্গে অসংখ্য বেশ্যা এবং মদ পাওয়া যাবে, খারাপ কাজ করলে নরকে অনন্তকাল মারপিট হবে। এইসব নৈতিকতা নয়, বেশ্যার লোভে যেই নৈতিকতার উৎপত্তি হয় তা আদৌ নৈতিকতাই নয়, বরঞ্চ এগুলো ঘৃণা সৃষ্টিকারী-বিধর্মী বা নারীর প্রতি। অপরদিকে মানুষের ভেতরেই প্রথিত থাকে কল্যানবোধ, মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, যা ধর্ম-জাতীয়তাবাদ-লিঙ্গের বড়াই ইত্যাদির কারণে চাপা পরে যেতে থাকে। নাস্তিক্যবাদ মানুষের ঐ মৌলিক মানবিক বোধের বিকাশের কথা বলে, মানুষের ভেতরের নৈতিকতার কথা বলে, বিবেকের কথা বলে। যা কোন লোভ বা ভয়ের কারণে ভাল কাজ করবে না বা খারাপ থেকে বিরত থাকবে না।

আইনস্টাইন বলেছেনঃ A man’s ethical behavior should be based effectually on sympathy, education, and social ties and needs; no religious basis is necessary. Man would indeed be in a poor way if he had to be restrained by fear of punishment and hope of reward after death.

আপনার বাবাই আপনার বাবা, তার কোন প্রমাণ কী?

আমরা সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিষয়ের ওপর আস্থাশীল হই, এবং কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা করি যে, সেটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যেমন ছোটবেলা থেকে আমরা যাদের বাবা মা বলে জেনে এসেছে, যাদের আশেপাশে দেখেছি, তাদেরই বাবা মা বলে জানি। এর সাথে আমরা মিল খুঁজে পাই আমাদের চেহারার সাথে আমাদের বাবা মায়ের চেহারার। আচার আচরণের সাথে আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের আচার আচরণের। এভাবেই আমরা আমাদের বাবা মা কে, সেটি সম্পর্কে ধারণা করি।

আমরা আস্তিক বা নাস্তিক কেউই গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি না, আমার বাবাই আমার জন্মদাতা। কারণ জন্ম প্রক্রিয়া অর্থাৎ সেই যৌনকর্মের সময় আমরা কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। তবে যেহেতু আমরা একটি পরিবারে বড় হই, সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হই যা আমাদের শেখানো হয়। কিন্তু সেটি সবার বেলাতে শতভাগ সত্য নাও হতে পারে। হয়তো আমি যাকে বাবা বলে এতদিন ডেকে এসেছি, সে আসলে আমার জন্মদাতা নন। আমাকে কুড়িয়ে পাওয়া হয়ে থাকতে পারে, অথবা আমার জন্মদাতা আমার জন্মের আগেই মারা যেতে পারে। অনেক ঘটনাই অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু সেগুলোর বেলাতেও আমরা আসলে যুক্তি ও প্রমাণেরই আশ্রয় নিই।

ধরুন, কাল রহিমুদ্দীন বা কলিমুদ্দীন নামের একজন রাস্তায় আপনাকে এসে জাপটে ধরে বললো, সেই আপনার বাবা। এবং আপনাকে বলা হলো, সে যে আপনার বাবা, সেটি অন্তর দিয়ে অনুভব করতে বা সেটি হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে। বিশ্বাস করতে। কোন যুক্তি বা প্রমাণ না চাইতে। এই নিয়ে সন্দেহ না করতে। প্রশ্ন না করতে। আপনি কী করবেন? আপনি যত বিড় বিশ্বাসী মানুষই হোন না কেন, আপনি সেই লোককে কোন প্রমাণ ছাড়া বাবা ডাকবেন না। হয়তো আপনি যুক্তির ধার ধারেন না, বা সন্দেহ অথবা প্রশ্ন করেন না, পরিপূর্ণভাবে একজন বিশ্বাসী মানুষ, তারপরেও আপনি সেই ক্ষেত্রে প্রমাণ চাইবেন। নাকি কোন প্রমাণ ছাড়াই সেই লোকের কথাতে বিশ্বাস করে বাবা বাবা বলে তার গালে দুটো চুমু দেবেন?

সেটি আপনি করবেন না। কারণ এই ক্ষেত্রেও প্রমাণ দরকার হবে। আর যদি তার কাছে সেরকম কোন অবজেক্টিভ প্রমাণ থাকে, সেটি মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। হয়তো আপনাকে যে লালন পালন করেছে, তাকেই আপনি সবসময় বাবা ডাকবেন, কিন্তু আপনার জন্মদাতার কাছে যদি ডিএনএ টেস্ট রেজাল্ট থাকে, এবং অন্যান্য প্রমাণের মাধ্যমে যদি সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ হয় যে, সেই আপনার জন্মদাতা, সেই ক্ষেত্রে এটি তো মানতেই হবে। কারণ যুক্তি তথ্য প্রমাণ ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির চাইতে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।

অনেককিছুই তো দেখা যায় না, সেগুলো বিশ্বাস করেন?

অনেক সময়ই আস্তিকগণ আমাদের বক্তব্যের কিছু ভুল বা মিথ্যা অর্থ তৈরি করে এমন কিছু সস্তা কৌশল করেন, যেগুলো নিতান্তই হাস্যকর। তারা বলে থাকেন, নাস্তিকরা না দেখে বিশ্বাস করে না! অথচ নাস্তিকরা কখনোই দাবী করে না যে, আমরা শুধু দেখার মাধ্যমে কোন কিছু বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করি। আস্তিকরা এই স্ট্রম্যান ফ্যালাসিটি করে খুবই চালাকির সাথে।

পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যেগুলো খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সেগুলোর বাস্তব প্রমাণ রয়েছে। এই যেমন করোনা ভাইরাস। বা ধরুন অক্সিজেন। কিন্তু এগুলো আমরা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারি। এগুলো মানুষের বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয়।

কিন্তু ধরুন ভুত, পেত্নী, জিউস, শিব, গনেশ, আল্লাহ, হনুমান, থ্যানোস, থর, কালী, এরকম সত্ত্বাগুলোর কোন বাস্তব প্রমাণ নেই। কেউ এগুলো বিশ্বাস করে, কেউ করে না। এগুলোর অবজেক্টিভ প্রমাণ দেখাতে পারলে অবশ্যই আমরা মেনে নিতে বাধ্য। যতদিন তা কেউ দেখাতে না পারছে, ততদিন আমাদের পক্ষে এসব দাবী মেনে নেয়া সম্ভব নয়।

পৃথিবীতে নাস্তিকের সংখ্যা কত?

প্রথাগত কোন ধর্ম কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস এর অভাব যাদের রয়েছে, তারাই সংজ্ঞানুসারে নাস্তিক। এদের মধ্যে সরাসরি নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেয়া মানুষও যেমন পড়ে, নিজেকে নাস্তিক পরিচয় না দিয়ে কোন ধর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা মানুষও পড়ে।

পৃথিবীর অনেক ধর্মান্ধ এবং মৌলবাদী অধ্যুষিত দেশেই নাস্তিকগণ সরাসরি স্বীকার করতে পারেন না যে, তারা নাস্তিক। কারণ অনেক দেশেই, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হলে তাদের হত্যা করার বিধান রয়েছে। তারপরেও পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই নাস্তিকদের থাকার যথেষ্ট প্রমাণ মেলে।

২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, বর্তমান পৃথিবীতে ১৬% মানুষ, অর্থাৎ ১১০ কোটি মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়। এদের মধ্যে বড় অংশ সরাসরিই নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দেন, অনেকে নাস্তিক বলে পরিচয় না দিয়ে সংশয়বাদী কিংবা অজ্ঞেয়বাদী অথবা ধর্ম নিরপেক্ষ বলে পরিচয় দেন। তবে তারা কোন ধর্মের সাথে নিজেদের সম্পর্ক থাকাকে অস্বীকার করেন, এবং পারলৌকিক সুখের জন্য কোন আচার অনুষ্ঠানের সাথেও যুক্ত থাকে না। [6]

পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণভাবে ধর্মহীন বা পারলৌকিক বিষয়সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদ, বস্তুবাদ ইত্যাদি দর্শনে বিশ্বাস করে। নাস্তিকরা মুলত কোনো বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ, যেকোনো মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে, নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা। পৃথিবীতে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যার একটি হিসেব দেয়া হলোঃ

চীন – 720,100,000
জাপান – 74,780,000
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – 62,310,000
ভিয়েতনাম – 28,760,000
দক্ষিণ কোরিয়া – 23,250,000
রাশিয়া – 21,190,000
জার্মানি – 21,150,000
ফ্রান্স – 20,830,000
যুক্তরাজ্য – 20,070,000
উত্তর কোরিয়া – 18,070,000

নাস্তিকরা কি অপেক্ষাকৃত বেশি বুদ্ধিমান হয়?

আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত গবেষক হেলমুথ নাইবোর্গ এবং রিচার্ড লিন ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং মানুষের বুদ্ধিমত্তার গণনাঙ্ক আইকিউ টেস্ট নিয়ে গবেষনা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৮২৫ জন কিশোর-কিশোরীদের গবেষণার তথ্য ব্যবহার করে তারা খুঁজে পেয়েছেন যে, নাস্তিকদের গড় আইকিউ অ-নাস্তিকদের গড় আইকিউ থেকে 6 পয়েন্ট বেশি। লেখকরা ১৩৭টি দেশে ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং গড় জাতীয় আইকিউ-এর মধ্যে যোগসূত্রও তদন্ত করেছেন। লেখকরা নাস্তিকতার হার এবং বুদ্ধিমত্তার স্তরের মধ্যে ০.৬০ পরিমাণ সম্পর্ক রয়েছে বলে মতামত দিয়েছেন, যা “পরিসংখ্যানগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ” বলে গণ্য করা হয়।

নাস্তিকরা কীভাবে বিয়ে করে?

বিবাহ হল একটি আইনি চুক্তি যার মধ্যে সাক্ষদানকারী সহ বিয়েতে ইচ্ছুক দুজনের নাম এবং স্বাক্ষর একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ থাকে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আস্তিক নাস্তিক যে কেউ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

নাস্তিকরা কি ভূত বিশ্বাস করে?

ব্যক্তিগতভাবে কোন নাস্তিক কী বিশ্বাস করে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সাধারণত নাস্তিকরা প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করে না।

নাস্তিকতা প্রচার করে কি লাভ?

আমরা নাস্তিকতা প্রচার করি না। আমরা প্রচার করি যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান এবং যুক্তি তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই বাছাই করে দেখার পদ্ধতি। চিন্তা করার যৌক্তিক পদ্ধতি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। যুক্তি তথ্য প্রমাণ দিয়ে আমরা যাচাই করে দেখি, আপনাদের ধর্মের দাবীগুলো কতটা সত্য, কতটা মানবিক।

আপনি আপনার ধর্ম পালন করতে পারেন, আপনার ব্যক্তিগত ঈশ্বর হচ্ছে আপনার বার্বিডল বা খেলার পুতুলের মত। আপনি সেটা নিয়ে বাসায় খেলবেন, তাকে পুজা করবেন কি তার গায়ে তেল মাখাবেন, দিনে পাঁঁচবার তার সামনে উপুর হয়ে মাটিতে নাক ঘষবেন নাকি কপাল থাপড়াবেন, সেটা আপনার বিষয়। তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু আমাকে আপনার বার্বিডল নিয়ে খেলতে বলবেন না, আপনার বার্বিডল আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সমাজ, আমাদের অর্থনীতির উপরে চাপাবেন না, আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক আপনার বার্বিডল হবে না। সেটা যখন করবেন, এবং বলবেন আপনার বার্বিডলই শ্রেষ্ট, তখন আমাদের তোপের মুখে পরতে হবে। আমরা যাচাই করে দেখবো আপনার বার্বিডলটি আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সমাজ, আমাদের অর্থনীতির উপরে কর্তৃত্ব করার উপযুক্ত কিনা। আর এই যাচাইয়ের সময় তার সমালোচনাটাও হবে কঠোর। তাই আপনি যদি আপনার ধর্মকে বা খেলার পুতুল আল্লা-ভগবান-ঈশ্বরকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখেন, সেটাই সকলের জন্য ভাল।

আপনার সন্তানকে কোন ধর্ম শেখাবেন?

নাস্তিক পরিবারে জন্ম বলেই আমার সন্তানকে যে আমার জোর করে নাস্তিক বানাতে হবে, বাপের বিশ্বাস তার ওপর চাপিয়ে দিতে হবে, এর কোন যুক্তি নেই। ঘটনাচক্রে একটি পরিবারে জন্ম নিয়ে বাবা মায়ের ধর্মটিই যারা একমাত্র সত্য ধর্ম বলে মনে করে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করে। আমি আমার সন্তানকে সকল ধর্ম সম্পর্কেই জ্ঞান দিবো, প্রধান ধর্মের গ্রন্থগুলো পড়তে দেবো, একইসাথে ধর্মের বিরুদ্ধের লেখাও পড়তে দেবো। এরপরে ১৮ বছর বয়সে, যখন সে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে, সে নিজেই নিজের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস বেছে নেবে।

নাস্তিকতা নিয়ে আলাপ করে কী লাভ?

সত্যানুসন্ধান এবং যুক্তি ও মেধার বিকাশ। মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটলে সমাজে ধর্মের অনাচার কমতে থাকবে বলেই নাস্তিকগণ মনে করেন। প্রমাণহীন যেকোন বিশ্বাসই ক্ষতিকর হতে পারে, যেহেতু তা যুক্তি বা প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়। তাই এই ক্ষতিকর সামাজিক উপাদানকে নাস্তিকগণ প্রশ্ন করেন, আঘাত করেন। এতে যা লাভ হয়, তা হচ্ছে, সততার সাথে যুক্তি প্রমাণ ও সত্যের প্রতি অবিচল একনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।

ধর্মবিশ্বাসী মাত্রই কি জঙ্গি?

পৃথিবীর কোন নাস্তিক কখনো বলেনি, ধর্মবিশ্বাসী মাত্রই জঙ্গি! পৃথিবীর কোন নাস্তিক কখনো এরকম কোথাও লিখেছে বলেও পড়ি নি। কেউই কোনদিন বলে নি, ধর্মবিশ্বাসী মাত্রই জঙ্গি। এরকম কোথাও কখনো শুনি নি। বরঞ্চ উনারা যা বলেছেন বা যা বলছেন তা হচ্ছে, ধর্মীয় সন্ত্রাসের মূল প্রোথিত রয়েছে ধর্মের মূলের ভেতরে। এ কারণেই  এদেরকে বলা হয় মৌলবাদী। যেকোন মতাদর্শ যখন লক্ষ লক্ষ জঙ্গি সন্ত্রাসী সৃষ্টি করে, তখন খুঁজে দেখা প্রয়োজন সেই মতাদর্শের মূলে কী রয়েছে। সবধরনের পক্ষপাতিত্ব সরিয়ে আমাদের নির্মোহ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে দেখা দরকার, ধর্মগুলো আসলে আমাদের কী শিক্ষা দেয়।

যেমন ধরুন, কোন বিশেষ কোম্পানির খাবার খেয়ে কিছু লোক প্রায়ই অসুস্থ হচ্ছে। শুধু অসুস্থ হচ্ছে তাই নয়, অন্যকে কামড়াতেও শুরু করছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যারা এরকম অসুস্থ হচ্ছে, অন্যদের কামড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে ৯৫% মানুষই ঐ একই কোম্পানির খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। তাহলে ভেবে দেখা প্রয়োজন, ঐ কোম্পানির খাবারের মধ্যে আসলে কী কী উপাদান রয়েছে। সেই উপাদানগুলো মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর। হয়তো সেই কোম্পানীর অনেক বড় ব্যবসা, অনেক লোক সেই কোম্পানির সাথে যুক্ত, অনেক শ্রমিক, অনেকের জীবন সেই কোম্পানির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তারপরেও, জনসাধারণের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হলে, খুঁজে দেখতেই হবে, ঐ কোম্পানির খাবারে আসলে কী কী উপাদান রয়েছে।সেই কোম্পানির ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা! তাদের বিজ্ঞাপন এবং তাদের কেনা রাজনৈতিক নেতারা, টিভি চ্যানেলের মডেলরা ঐ খাবারকে যত ভালই বলুক, তারপরেও দেখতে হবে, ঐ খাবারে কী আছে। মানুষকে রক্ষা করবার জন্যেই।

ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ নৈতিক হয়?

আসুন শুধুমাত্র কঠিনভাবে ইসলামে বিশ্বাসী মানুষ এবং নাস্তিক অধ্যুষিত মানুষের দেশগুলোর তালিকা দেখে নিই। এরপরে আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করুন, কোন দেশের মানুষ অপেক্ষাকৃত নৈতিক,কম দুর্নীতিগ্রস্থ, মানবিক, জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা এবং সভ্য।

১) ইরাক (৯৭% মুসলিম)
২) নাইজেরিয়া (৫৯.৭% মুসলিম, ৪০.৩% খ্রিষ্টান) ,
৩) সোমালিয়া (৯৯.৮% মুসলিম),
৪) আফগানিস্তান (৯৯% মুসলিম),
৫) ইয়েমেন (৯৯% মুসলিম),
৬) সিরিয়া (৯০% মুসলিম) ,
৭) লিবিয়া (৯৭% মুসলিম),
৮) পাকিস্তান (৯৮% মুসলিম),
৯) মিসর ( ৯০% মুসলিম)
১০) কেনিয়া (৮২.৫% খ্রিষ্টান, ১১.১ মুসলিম)

১) সুইডেন ৮৫% নাস্তিক
২) ভিয়েতনাম ৮১% নাস্তিক
৩) ডেনমার্ক ৮০% নাস্তিক
৪) জাপান ৭৬% নাস্তিক
৫) নরওয়ে ৭২% নাস্তিক
৬) চেক রিপাবলিক ৬১% নাস্তিক
৭) ফিনল্যান্ড ৬০% নাস্তিক
৮) ফ্রান্স ৫৪% নাস্তিক
৯) জার্মানি ৪৯% নাস্তিক
১০) হাঙ্গেরি ৪৮% নাস্তিক

উপরের বামদিকের সবগুলো দেশেই দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক, প্রায় দেশগুলোই দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এসব দেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে প্রতিদিন। নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, সমকামী, এরা কেউই সাধারণ মানবিক অধিকারটুকু ভোগ করেন না। অনেকগুলো দেশেই নাস্তিকদের প্রকাশ্যে হত্যার উদাহরণ রয়েছে, নারীদের প্রকাশ্যে পাথর মারার উদাহরণ হয়েছে, সমকামীদের গাছে ঝুলিয়ে হত্যার উদাহরণ রয়েছে। এমনকি একই ধর্মের মধ্যেও ভয়াবহ যুদ্ধ, হত্যা, বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। মেয়েদের স্কুলে বোমা মারা থেকে শুরু করে বিধর্মীদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী কন্যাকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ অসংখ্য। মেয়েরা ধর্ষিত হলেও ভয়ে তা গোপন করে, সেগুলো প্রকাশ করতে চায় না। কারণ ঘটনা জানাজানি হলে শরীয়া আইনে তাদের ওপরেই শাস্তি প্রয়োগের ঘটনা অসংখ্য। সামাজিক অসম্মানের বিষয় তো রয়েছেই। সমাজ ধর্ষিতাদেরই খারাপ চোখে দেখে। এই লিস্টে সুদান, কঙ্গো এবং সৌদি আরবও যুক্ত হতে পারে। সৌদি আরব, ইরান সহ কয়েকটি দেশে প্রকাশ্যে অন্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্রীয়ভাবেই নানান বাধা দেয়া হয়। প্রতিটি শিক্ষিত সভ্য মানুষ জানেন, এইসমস্ত দেশে মানবাধিকারের কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। ৯০ ভাগ মুসলমানের বাঙলাদেশ আসলে ৯০ ভাগ দুর্নীতিবাজ, অসৎ, ভণ্ড, বর্বর মানুষের দেশ।

উপরের দেশগুলোতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী, সমকামীরা সামান্য কিছু উদাহরণ বাদ দিলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সমান অধিকার ভোগ করেন। এই সকল দেশে যে সকল মুসলমান বসবাস করেন, তারা মুসলিম হবার কারণে কোন নির্যাতনের শিকার হন না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এসব দেশেও ঘটে, ধর্ষণ থেকে শুরু করে ধর্মীয় বিভেদ ও বর্ণবাদের প্রভাব এসব দেশেও রয়েছে, তবে তার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মানুষই সোচ্চার। অন্তত আইনগতভাবে বেশিরভাগ দেশই ধর্ম নিরপেক্ষ এবং সকলের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। এসব রাষ্ট্রগুলো সকল ধর্মের মানুষকে সমান মর্যাদা ও অধিকার দিতে বাধ্য। কোন নাস্তিক এসব দেশে কোন ধার্মিকের চাইতে বিন্দুমাত্র বেশি অধিকার ভোগ করে না। ধার্মিক হবার কারণে কাউকে হত্যা করার উদাহরণ পাওয়া যায় না, ধার্মিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্লাসফেমি আইনও নেই। বরঞ্চ অনেকগুলো দেশে নাস্তিকদের ট্যাক্সের টাকায় ধার্মিকগণ তাদের ধর্ম পালন ও ধর্মপ্রচার করে থাকেন।

শুধু তাই নয়, উপরের অনেকগুলো দেশে পর্যাপ্ত অপরাধী না পাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে জেলখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। নেদারল্যান্ড, যেই দেশে গাজা আইনত সিদ্ধ, সেখানে জেলখানা ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুইডেনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জেলখানা, কারণ? আসামীর সংকট। উপরের নাস্তিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে প্রতি বছর সর্বাধিক পরিমাণ মুসলমান পাড়ি জমায়। কারণ এসব দেশে রয়েছে সমান অধিকার এবং সুযোগ। অন্যদিকে, সবচাইতে ভাল মুসলমানটি ঘোরতর দুঃস্বপ্নেও শরিয়া অধ্যুষিত কোন দেশে পরিবার নিয়ে যেতে চাইবে না। কারণ সেসব দেশ ভয়াবহ। সেই সব দেশের বেশিরভাগ মানুষই ধর্মান্ধ।

সত্য হচ্ছে, ধর্ম মানুষকে কখনই পাপ কিংবা অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে না। কাল্পনিক লোভ কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনে যদি কাজ হতো, তাহলে ধর্মান্ধ মুসলমানদের দেশগুলো হতো সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ। অন্যদিকে, জ্ঞান অর্জন, শিক্ষা, প্রগতি, মানবাধিকার, সকলের সমান অধিকার বিষয়ক সেক্যুলার মানবিক চিন্তা ভাবনাই মানুষকে সৎ, এবং মননশীল করে তোলে।

ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে ধর্ষণের মাত্রা কম থাকে?

ধর্মপ্রবণ রক্ষণশীল দেশগুলোতে ধর্ষণের শিকার একজন নারীর পক্ষে ধর্ষণের বিচার চাওয়া, পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা কিংবা আদালতের শরণাপন্ন হওয়া একটি বিশাল ঝুঁকির কাজ। অধিকাংশ সময়ে ধর্ষিতাকেই নানাভাবে অপমান অপদস্থ করা হয়। সামাজিকভাবে হেয় করা হয়, পারিবারিকভাবেও। ধর্ষণের প্রমাণ দিতে দিতে তার জীবন দিতে হয়। সামাজিক লজ্জা আর পারিবারিক অপমান করার কথা তো বাদই দিলাম।

শরীয়া আইন অনুসারে চারজন পুরুষ সাক্ষী প্রয়োজন হয়, ধর্ষণ যে হয়েছে তা প্রমাণ করতে। সাক্ষীসাবুদ আনতে না পারলে মেয়েটাকেই শাস্তি পেতে হয় জিনার দায়ে। এটাই শরীয়া আইন। বিস্তারিত এখানে বলা হয়েছে।

এখন এতগুলো পুরুষ সাক্ষী নিয়ে কোন মেয়ে খুব প্ল্যান মাফিক ধর্ষিত হতে যায়? তাই সেসব দেশে ধর্ষণের কোন অভিযোগই আরোপ করা হয় না। কারণ মেয়েরা জানে, এগুলোই তাদের ভবিতব্য। এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে উল্টো তাকেই শাস্তি পেতে হবে। হেয় হতে হবে। তাকেই চরিত্রহীন প্রমাণ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই তাই মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের অফিশিয়াল রিপোর্টের সংখ্যা কম থাকে। অন্যদিকে ধর্মহীন সেক্যুলার দেশগুলোতে গাড়িতে কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ করলেও সাথে সাথেই পুলিশ চলে আসে। মেয়েরা নির্ভয়ে সেগুলো প্রকাশও করতে পারে। তাতে তাকে সামাজিকভাবে লজ্জিত হতে হয় না।

একইসাথে, ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হলে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবেই গণ্য করা হয় না। আর সভ্য দেশগুলোতে স্বামী বয়ফ্রেন্ড যেই হোক, কারো বিনা অনুমতিতে বা সম্মতি ছাড়া স্পর্শ করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য। তাই সভ্য দেশগুলতে রিপোর্টেড ক্রাইমের সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।

নাস্তিকরা কেন নবীকে নিয়ে কটূক্তি করে?

ভয়ভীতি দেখিয়ে, জবাই করার হুমকি দিয়ে কোনদিন শ্রদ্ধা অর্জন করা যায় না। একজন গণহত্যাকারী, ধর্ষক এবং খুনীকে যেকোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ এগুলোই বলবে। আমাদের কাছে যদি এরকম তথ্য প্রমাণ থাকে যে, নবী বা যে কেউ একজন গণহত্যাকারী, ধর্ষক এবং খুনী ছিলেন, তাহলে আমরা সেটিই বলবো। কোন রক্তচক্ষু আমাদের দমন করতে পারবে না।

যেকারো সম্পর্কে আমরা যা বলি, সেগুলো তথ্য প্রমাণের সাপেক্ষেই বলি। আমাদের তথ্যগুলো ভুল মনে হলে যেকন দিন যেকোন লাইভে যুক্ত হয়ে আমাদের ভুল প্রমাণ করুন, তাহলে আমর আআর সেই কথাটি বলবো না। কিন্তু যতদিন আমাদের তথ্য প্রমাণের বিরুদ্ধে আপনারা আরো শক্তিশালী তথ্য প্রমাণ দিয়ে আমাদের ভুল প্রমাণ করতে না পারছেন, ততদিন আমরা তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেই যাবো।

ধর্ষককে প্রমাণ সহকারে ধর্ষক বলাকে কটূক্তি কেন বলা হবে, সেটিই আমাদের বোধগম্য নয়। শাব্দিক অর্থে এটি কটূক্তি, তবে এগুলোই তথ্য প্রমাণ নির্ভর বিশ্লেষণ।

নাস্তিকরা কি সবকিছু জেনে ফেলেছে?

না, আমি তা মনে করি না। মুক্তচিন্তার মানুষ হয়ে যাওয়া বা না হওয়ার মত বিষয় নয়। এটা ক্রমশ নিজেকে শুধরে নেয়ার প্রক্রিয়া। একটা সিঁড়ির মত, ধাপে ধাপে উপরের দিকে উঠতে হয়। এবং এই সিঁড়ির কোন শেষ নেই। মৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হবে যেন একজন যুক্তিবাদী, মননশীল, মানবিক, মুক্তচিন্তার মানুষ হওয়া যায়।

আমি আজকে যা জানি, কাল যদি যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারি গতকালের ভাবনাটা ভুল ছিল, বিনয়ের সাথে নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো। কারণ ভুল করে করেই আমি শিখবো। বিজ্ঞানও এভাবেই কাজ করে। নতুন তথ্য প্রমাণ গবেষণাতে কাল যদি দেখা যায়, পুরনো ধারণাটি মিথ্যা ছিল, সাথে সাথে সেটা শুধরে নিতে বিজ্ঞান দ্বিধা করে না। ভুল স্বীকার করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়া খুবই জরুরি। বিজ্ঞানের অনেক বড় বড় গবেষণাকে অনেক ছোটখাটো গবেষক ভুল প্রমাণ করে নোবেল পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন। এমনকি, কোথাকার কোন কলিমুদ্দীন রহিমুদ্দীন যদি কাল নিউটনের সূত্রকে ভুল প্রমাণ করে দেয়, নির্দ্বিধায় সে নোবেল পাবে এবং তামাম দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা তাকে মাথায় তুলে নাচবে।

কাল যদি বিজ্ঞান বলে আল্লাহ আছে, তখন?

কাল কী জানা যাবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আজকে কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। কাল যদি জানা যায় আল্লাহ আছে, বা শেওড়া গাছের পেত্নী আছে, বা আপনার একটা কথা বলা বেড়াল আছে, এইসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এগুলো মেনে নেয়া যায় না। কাল যদি জানা যায় অমুকটি সত্য, তাহলে আমরা যদি আজকে তা মেনে নিতে শুরু করি, আমাদের যুক্তির কাঠামো যদি এমন হয়, তাহলে মামদো ভুতকেও মেনে নিতে হবে। একইসাথে মানতে হবে শিব, রাম, কৃষ্ণ, কালী, জিউস, থর ইত্যাদি দেবতাকেও।

সবকিছু কি এমনি এমনি চলে?

ধার্মিক বন্ধু এবং আমাদের বিতর্কে অংশগ্রহণকারী একটি প্রশ্ন প্রায়শই করে থাকেন, প্রশ্নটি হচ্ছে, তাইলে সবকিছু কি এমনই এমনই হইছে? বা সবকিছু কি এমনই এমনই চলে?

এই প্রশ্নটি দ্বারা তারা যা বোঝাতে চান সেটি হচ্ছে, এমনই এমনই কোন কিছুই হয় না। তার পেছনে একজন কারিগর বা একজন স্রষ্টা থাকতে হয়! অথচ, এমনই এমনই সব হয়ে যায়, সেটি মোটেও নাস্তিকদের দাবী নয়। বরঞ্চ এটি পরিষ্কারভাবেই আস্তিকদের দাবী। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, কোন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা হলে আল্লাহ ‘কুন’ (সৃষ্টি হও) আর তা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়ে যায়। আবার তা ধ্বংসের সময় আল্লাহ বলেন, ‘ফাইয়াকুন'( ধ্বংস হও) তখন তা এমনি এমনি ধ্বংস হয়। তাহলে এমনে এমনে বা এমনি এমনি হওয়ার দাবীটি তো আস্তিকদের।

নাস্তিকদের দাবীটি হচ্ছে, কোন কিছুই এমনি এমনি হয় না। মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা পূর্ববর্তী এক বা একাধিক ঘটনাবলীর ফলাফল। এবং আদি কারণ বা শুরুর ঘটনা কিংবা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে আমরা এখনো শতভাগ নিশ্চিতভাবে সবকিছু জানি না। আমরা বৃহৎ সম্প্রসারণ সহ অনেক বিষয় সম্পর্কে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাহায্যে কিছু অনুমান করতে পারি, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলার মত জ্ঞান আমাদের কাছে নেই। তবে এটি স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, ধর্মগ্রন্থগুলোতে মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কে যেসকল তথ্য দেয়া আছে সেগুলো সবই মিথ্যা এবং হাস্যকর। শিশুতোষ রূপকথার গল্প।

কিন্তু কোন বিষয় সম্পর্কে না জানা মানে তো এই নয়, আমাদের এই অজ্ঞতা কোন দাবীর সপক্ষে প্রমাণ! এরকম দাবী একটি লজিক্যাল ফ্যালাসিও বটে, যাকে বলা হয় আর্গুমেন্ট ফরম ইগনোরেন্স।

মহাবিশ্বের উৎপত্তি কীভাবে হলো?

দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার কারণে এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখাটি এখান থেকে পড়তে পারেন। [1][2][3][4]

কারো বিশ্বাসকে আঘাত করা কি উচিত?

আমরা যারা নিজেদের যুক্তিবাদী বলে দাবী করি, তারা সকল ধারণা, সকল বিশ্বাসকেই যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করি, যাচাই বাছাই করে দেখতে চাই। এই সময়ে “বিশ্বাসে আঘাতের” অজুহাত এনে আলাপ আলোচনা এবং যুক্তিতর্ককে খারিজ করে দেয়া শুধু প্রতিক্রিয়াশীলতাই নয়, মানব সমাজের জন্য হুমকিও বটে।

সকল বিশ্বাসকেই যদি সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়, তাহলে মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে গরু কোরবানী না করা। কারণ গরু জবাই দেয়া হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে মস্তবড় খারাপ কাজ। গরু কোরবানী হতে দেখলে একজন হিন্দুর মনে অনেক আঘাত লাগতে পারে।

আবার, মুসলিমদের বিশ্বাসকে সম্মান করে হিন্দুদের উচিত মুর্তি পুজা বন্ধ করে দেয়া। কারণ মূর্তি পুজা দেখলে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। কারণ ইসলামে শিরক সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত।

একইভাবে গোলাম আজম বা বাঙলা ভাইয়ের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে, আবার হিটলারের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে। সকল বিশ্বাসকে সম্মান করা শুধু বোকামি নয়, বিপদজনকও বটে।আমি কেন তা করবো? তাদের বিশ্বাসকে আমি কেন যাচাই করে দেখবো না? তাদের বিশ্বাসকে আঘাত কেন করবো না? তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কেন তা যে মিথ্যা তা বলবো না? কেন আমার যুক্তি তুলে ধরবো না? আমি শুধু সেই বিশ্বাসকেই সম্মান জানাবো, যা যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনায় যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হবে। যুক্তিহীন বিশ্বাস মাত্রই ক্ষতিকর এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য ভয়ংকর। বিশ্বাস ভিত্তিক সমাজ কুসংস্কারের আখড়ায় পরিণত হয়, মানুষকে ক্রমশ মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যায়, যার প্রমাণ বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

আপনি কী আল কায়েদার বিশ্বাসকে সম্মান করবেন? ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে জয় শ্রী রাম বলে কিছুদিন আগে কিছু মৌলবাদী হিন্দু এক মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আপনি তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করবেন?

শুধু ইসলামের সমালোচনা কেন?

কথাটি ঠিক নয়। আমরা সব ধর্মের সমালোচনাই কমবেশি করি। তবে ইসলামের সমালোচনাতে প্রতিক্রিয়া বেশি হয়, তাই প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াতে লিখতেও বেশি হয়। যেহেতু বাঙলায় লিখি, বাঙলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান, তাই এই আলোচনাও বেশি আসে। রিচার্ড ডকিন্সকেও প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়, সে কেন শুধু খ্রিস্টান ধর্মের সমালোচনা করেন! একই প্রশ্ন ক্রিস্টোফার হিচেন্সকেও করা হতো। উনারা খ্রিস্টান প্রধান দেশে খ্রিস্টান পরিবারে জন্মেছে বলেই খ্রিস্টান ধর্মের সমালোচনা বেশী করেছেন।

সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরুদ্ধে হলেও আমি বিশেষভাবে করি ইসলামের সমালোচনা। কারণ আমি একটি মুসলিম পরিবারে জন্মেছি, এবং মুসলিম পরিবার থেকে নাস্তিক হওয়ার সময় যেই প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা ভালভাবে জানি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। হিন্দু এবং খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কেও আমি অনেক পড়ালেখা করেছি, কিন্তু সেগুলো বর্তমান সময়ে মৃতপ্রায় ধর্ম। বিষহীন সাপের মত মাঝে মাঝে ফোঁস ফোঁস করে।

নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য আফ্রিকার ভুডু ধর্ম কিংবা প্রাচীন গ্রীসের ধর্ম, দেবতা জিউস থর হোরাস ইত্যাদির সমালোচনা করার কোন উপযোগ নেই। কারণ সেসব ধর্মের মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল, পাওয়া গেলেও তারা আমার বাঙলা স্ট্যাটাস পড়বে না, আর পড়লেও তাদের কিছু যাবে আসবে না। কারণ তারা এই সময়ে ধর্ম রক্ষার জন্য চাপাতি নিয়ে কোপাকুপি করে বলে মনে হয় না। হুরের লোভে আত্মঘাতি বোমা হামলা করে না। নিরীহ মানুষ মেরে কাফের হত্যার আনন্দ পায় না।

ছোট্ট পরীক্ষা হয়ে যাক। আমি মা কালী নিয়ে একটা কার্টুন ছাপি, যীশু, মোসেস এবং জিউসকে নিয়ে, বুদ্ধ এরপরে মুহাম্মদকে নিয়ে একটি কার্টুন দিই। কোন কার্টুনের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ঘোষণা হতে পারে? ভেবে বলেন তো।

আপনার শরীরের কোন অংশে পচন ধরলে আপনি যেই অংশটাতে বেশি পচন ধরেছে সেই অংশটুকুই তো আগে অপারেশন করে কেটে ফেলেন। নাকি নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য পুরো শরীর কেটে ফেলে দেন? বা অল্প পচন ধরা অংশও কেটে ফেলেন? বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে পচন না ধরা অংশও কেটে ফেলেন? কোনটা করেন?

বা ধরুন আপনার হাঁটুতে চুলকাচ্ছে। আপনি কী নিরপেক্ষতার স্বার্থে সারা শরীর সমানভাবে চুলকান? নাকি শুধু হাঁটুতেই চুলকান?

আইনস্টাইন কি আস্তিক ছিলেন?

ব্যক্তিজীবনে কে আস্তিক ছিলেন আর কে নাস্তিক, তা আস্তিক বা নাস্তিকতার সত্য হওয়ার পক্ষের কোন যুক্তি হতে পারে না। পৃথিবীর সকল মানুষ আস্তিক হলেও আস্তিকতা ভুল হতে পারে, আবার পৃথিবীর সকল মানুষ নাস্তিক হলেও নাস্তিকতা ভুল হতে পারে। একসময়ে বড় বড় দার্শনিকগণও পৃথিবীকে সমতল মনে করতেন। তাতে পৃথিবী সমতল হয়ে যায় নি।

ব্যক্তিজীবনে কে আস্তিক কে নাস্তিক, এটি কোন পক্ষেরই প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে না। যুক্তি বা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে আস্তিকতা বা নাস্তিকতা সম্পর্কে সে বা তারা কী কী তথ্য প্রমাণ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন।

তাই স্টিফেন হকিং এর নাস্তিক হওয়া যেমন নাস্তিকতার পক্ষের কোন যুক্তি হতে পারে না, আইনস্টাইন আস্তিক হয়ে থাকলে সেটিও আস্তিকতার পক্ষের কোন যুক্তি নয়।

বিজ্ঞান বা যুক্তি কোন ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস অবিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয়। সেটি নির্ভর করে যুক্তি তথ্য প্রমাণের ওপর।

কিন্তু আইনস্টাইন কী আসলেই আস্তিক বা ধার্মিক বা ধর্মপ্রাণ ছিলেন? প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন?

… “ঈশ্বর” শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই না। বাইবেল হল কিছু গৌরবান্বিত পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার যা অত্যন্ত শিশুতোষ। যে কোন নিগূঢ় অর্থই করা হোক না কেন তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। এই নিগূঢ় অর্থগুলি স্বভাব অনুযায়ীই নানা ধরণের হয়ে থাকে এবং প্রকৃত পাঠ্যাংশের সাথে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও প্রধানত: শিশুতোষ কুসংস্কারের অনুরূপ। আমি খুশি মনেই নিজেকে যাদের একজন বলে মনে করি এবং যাদের মানসের সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পৃক্ততা, সেই ইহুদী জনগোষ্ঠীরও অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা কোন বিশেষ গুণাবলী আছে বলে মনে করি না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব বেশী উন্নতও না। যদিও ক্ষমতার অভাবে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত আছে। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনা যাতে তাদের নির্বাচিত (ঈশ্বর কর্তৃক) বলে মনে হবে।

আস্তিক মানুষদের একটি বহুল প্রচলিত যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বর না থাকলে আইনস্টাইনের মত প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন? অর্থাৎ, আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাসকে আস্তিকগণ ব্যবহার করতে চান ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে। যা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলে প্রাধিকারের কুযুক্তি। মানে হচ্ছে, আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাসী হোক কিংবা না হোক, তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না। তারপরেও, এই লেখাটির উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র একটি মিথ্যাচারের জবাব দেয়া। যেই বহুল প্রচলিত মিথ্যাচারটি হচ্ছে, আইনস্টাইনকে ঈশ্বরে বিশ্বাসী বানাবার চেষ্টা বা ধার্মিক ধর্মপ্রাণ বানাবার মিথ্যা চেষ্টা।

সেই সময়ে এবং পরবর্তী সময়েও, পুরো পৃথিবীর সবচাইতে প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে আরেকজন প্রখ্যাত জার্মান ইহুদী দার্শনিক এরিখ গুটকিন্ড নিজের লেখা একটি বই পাঠিয়েছিলেন পড়বার জন্য। বইটি পড়বার পরে মৃত্যুর বছরখানেক আগে আইনস্টাইন একটি চিঠি লেখেন এরিখ গুটকিন্ডকে। যেখানে তিনি খুব পরিষ্কারভাবেই নিজের অবিশ্বাসের কথা বর্ণনা করেছেন। সেই চিঠিটি সম্প্রতি নিলামে উঠেছে, এবং নিউইয়র্কে সেই চিঠিটি ২৯ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়েছে।

জার্মান ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে আইনস্টাইন নিজের হাতেই অস্বীকার করেছিলেন ‘ঈশ্বরের হাত’! লিখেছিলেন, ‘‘ওই সব হাত-টাত বলে কিছু নেই। সবটাই মানুষের দুর্বলতা।’’

জার্মান ভাষায় লেখা দেড় পাতার ওই চিঠিতে আইনস্টাইনের মূল বক্তব্য ছিল অনেকটা এরকমঃ তা সে যে ধর্মই হোক, আদতে তা আমাদের আদিম কুসংস্কারই। আমি মনে করি, ঈশ্বর শব্দটা মানুষের দুর্বলতার প্রকাশ আর সেই দুর্বলতা থেকেই তার জন্ম। আর কিছুই নয়।

শুধু তাই নয়, একাধারে বাইবেল এবং ইহুদী ধর্মকে মোটামুটি কঠিন ভাবেই সমালোচনা করেছেন আইনস্টাইন। দার্শনিক গুটকিন্ডকে তিনি লিখেছিলেন, বাইবেল হচ্ছে কিছু আদিম কিংবদন্তীগুলোকে অনর্থক মহান বানানো। কোনও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপট পরিপ্রেক্ষিতের আলোচনাই, বা কোন কিছুই আমার এই ধারণা বদলাতে পারবে না। একই কথা খাটে ইহুদি ধর্মের ক্ষেত্রেও।

এই চিঠিটিই আইনস্টাইনের প্রখ্যাত গড লেটার নামে বহুল পরিচিত। পাঠকদের জন্য নিয়ে আসলাম এই চিঠিটির কিয়দাংশের অনুবাদ।

Princeton, 3. 1. 1954

Dear Mr Gutkind,

Inspired by Brouwer’s repeated suggestion, I read a great deal in your book, and thank you very much for lending it to me. What struck me was this: with regard to the factual attitude to life and to the human community we have a great deal in common. Your personal ideal with its striving for freedom from ego-oriented desires, for making life beautiful and noble, with an emphasis on the purely human element. This unites us as having an “unAmerican attitude.”

Still, without Brouwer’s suggestion I would never have gotten myself to engage intensively with your book because it is written in a language inaccessible to me. The word God is for me nothing more than the expression and product of human weakness, the Bible a collection of honorable, but still purely primitive, legends which are nevertheless pretty childish. No interpretation, no matter how subtle, can change this for me. For me the Jewish religion like all other religions is an incarnation of the most childish superstition. And the Jewish people to whom I gladly belong, and whose thinking I have a deep affinity for, have no different quality for me than all other people. As far as my experience goes, they are also no better than other human groups, although they are protected from the worst cancers by a lack of power. Otherwise I cannot see anything “chosen” about them.

In general I find it painful that you claim a privileged position and try to defend it by two walls of pride, an external one as a man and an internal one as a Jew. As a man you claim, so to speak, a dispensation from causality otherwise accepted, as a Jew the privilege of monotheism. But a limited causality is no longer a causality at all, as our wonderful Spinoza recognized with all incision, probably as the first one. And the animistic interpretations of the religions of nature are in principle not annulled by monopolization. With such walls we can only attain a certain self-deception, but our moral efforts are not furthered by them. On the contrary.

Now that I have quite openly stated our differences in intellectual convictions it is still clear to me that we are quite close to each other in essential things, i.e; in our evaluations of human behavior. What separates us are only intellectual “props” and “rationalization” in Freud’s language. Therefore I think that we would understand each other quite well if we talked about concrete things.

With friendly thanks and best wishes,

Yours,

A. Einstein

প্রিয় গুটকিন্ড,

… ঈশ্বর- এই শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ মাত্র। বাইবেল হচ্ছে কিছু মহান পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার, তবে সত্যিকার অর্থে সেগুলো আদিম, সেকেলে, এবং খুবই শিশুতোষ কাহিনী সমুহের আখ্যান। সেই সব গল্পের যেই অর্থই তৈরি করা হোক না কেন, কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপট পরিপ্রেক্ষিতের আলোচনাই আনা হোক না কেন, তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও সেইসব অত্যন্ত শিশুতোষ কুসংস্কারের ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ।

এবং ইহুদী জনগণ, আমি যাদের একজন বলতে নিজেকে গর্ববোধ করি, এবং যাদের মননের সাথে রয়েছে আমার গভীর মিল রয়েছে, তারা অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের চাইতে কোন উন্নত গুণাবলী সম্পন্ন নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তারা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব উন্নতও নয়। যদিও যথেষ্ট ক্ষমতার অভাবের আশির্বাদের কারণে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে ঈশ্বর কর্তৃক নির্বাচিত কোন গুণাবলী আছে বলে মনে করি না।

বিনীত

এ. আইনস্টাইন

গড লেটার বা ঈশ্বর পত্র
আইনস্টাইনের বিখ্যাত গড লেটার বা ঈশ্বর পত্র



Popular posts from this blog

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ?

  ভূমিকা আজকের প্রবন্ধে আমরা যেই বিষয়গুলোর দিকে আলোকপাত করবো, তা হচ্ছে, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ নামক ইসলামী কেতাব লেখক এবং ইসলাম সম্পর্কে কেতাবটির লেখক যেসকল মিথ্যাচার করেছেন, সে সম্পর্কে। প্রকাশিত ঐ বইটির পাতায় পাতায় যেই বিপুল পরিমাণ মিথ্যাচার এবং হাস্যকর  সব কুযুক্তি  দেয়া হয়েছে, আমি শুধুমাত্র তার অল্পকিছু উদাহরণ তুলে ধরবো। উল্লেখ্য, আরিফ আজাদের কেতাবে খোদ ইসলাম ধর্মকেই আরিফ আজাদ এমনভাবে ধর্ষন করেছেন, যা পড়ে বোঝা মুশকিল যে, এটি কোন ছদ্মবেশি নাস্তিকের ইসলামকে অপদস্থ করার জন্য লেখা নাকি ইসলামপন্থী কারোর। কারণ ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান এই কেতাবে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়ত অনুসারে এই কাজ সরাসরি কুফরি এবং এই কুফরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল (সম্পূর্ন)

আজ আমরা কুরআনের সমস্ত বৈজ্ঞানিক ভুলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।  কুরআনকে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরম অপরিবর্তিত, সরাসরি, নিখুঁত, আল্লাহর বাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।  কোরান যখন বলে, উদাহরণস্বরূপ, "তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বত স্থাপন করেছেন", তখন আল্লাহই এই কথা বলছেন এবং আল্লাহ তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে নিজের কথা বলছেন।  খুব বিরল ক্ষেত্রে, কুরআন মানুষকে উদ্ধৃত করে বা মানুষকে কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় তার একটি উদাহরণ দেয়। যাই হোক না কেন এটা আল্লাহর বাণী, তাই মুসলমানরা যখন কুরআন উদ্ধৃত করে তখন তারা বলে “আল্লাহ বলেন”।  অতএব, কুরআনের কোন ভুল, কোন মিথ্যা বক্তব্য, আল্লাহর ভুল।  যেহেতু আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর, যদি কোন ত্রুটি থাকে, তাহলে এর অর্থ হল বইটি ঐশ্বরিক উৎসের নয় এবং মিথ্যা।  বস্তুত কুরআন নিজেই তা স্বীকার করে।  এটি বৈজ্ঞানিক ভুলের একটি তালিকা।  এই সব দৃষ্টিকোণ সব ভুল নাও হতে পারে.  কিছু লোক এই ভুলগুলির একটি বা দুটির সাথে একমত নাও হতে পারে, অন্যরা ভাববে কেন অন্য ভুলগুলি বাদ দেওয়া হয়।  আমি শুধুমাত্র তাদের উপর ফোকাস করার ...

আরমিন নবাবি ও রিচার্ড ডকিন্স – আস্তিক্য, নাস্তিক্য এবং অজ্ঞেয়বাদ