Skip to main content

ইসলাম এবং বিজ্ঞান শিক্ষার দ্বন্দ্ব

 

ডাক্তার জাকির আব্দুল করিম নায়েক প্রসঙ্গে


ভূমিকা

আমি রাশেদ। আমার এক বন্ধু ডাঃ জাকির নায়েকের অন্ধ ভক্ত। আমার একটি লেখায় আমি ডাঃ জাকির নায়েকের বিজ্ঞানময় কুরআন আবিষ্কারের সমালোচনা করি আর তাতেই বিধি বাম। বন্ধু আমার আমাকে ডাঃ জাকির নায়েকের কিছু দাবি দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বসে যেন পারলে আমি সেসব খণ্ডন করি।

আমি সত্যের সন্ধানী। সেই সত্য যদি ইসলামের পক্ষে হয় তাও আমি গ্রহণ করি, আবার সত্য যদি প্রচলিত ইসলামের বিরুদ্ধে যায় তাও আমি সত্য বলেই গ্রহন করি। সত্যটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সত্যটা কে বলছে বা কোথা থেকে বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি অন্ধ বিশ্বাসী নই। ডাঃ জাকির নায়েক যদি নিজের মন মত কুরআনের তাফসির করে সেটাকে আমি অন্তত কখনই সঠিক বলবনা। তাফসির হতে হবে তাফসিরের নিয়ম অনুসরণ করে।

এবার আসি দাবি খণ্ডনে।

চাঁদের নিজস্ব আলো নেই️

দাবিঃ বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জেনেছে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ আসলেই কি কুরআনে এই কথা বলেছে? আসুন দেখা যাক কুরআন কী বলে!

সুরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৬১
تَبٰرَکَ الَّذِیۡ جَعَلَ فِی السَّمَآءِ بُرُوۡجًا وَّجَعَلَ فِیۡہَا سِرٰجًا وَّقَمَرًا مُّنِیۡرًا
উচ্চারণঃ তাবা-রাকাল্লাযী জা‘আলা ফিছছামাইবুরূজাওঁ ওয়া জা‘আলা ফীহা- ছিরা-জাওঁ ওয়া কামারাম মুনীরা-।
অর্থঃ কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।

এখানে শব্দটি হল মুনীর। অর্থাৎ চান্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন মুনীর রুপে? আসুন আরো একটু গভীরে যাই। মুনীর শব্দটি এসেছে নূর থেকে। মুনীর হল ইসমে ফায়েল যার অর্থ যে নূর দেয়। তাহলে এবার দেখতে হবে নূর অর্থ কী? নূর অর্থ আলো বা স্নিগ্ধ আলো বা দীপ্তিময় আলো। তাহলে দাড়াচ্ছে, মুনীর অর্থ হল আলো দানকারী বা স্নিগ্ধ আলো দানকারী বা দীপ্তিময় আলো দানকারী। এখন প্রশ্ন হল নূর কী ধার করা আলো হতে পারে? না, হতে পারেনা। এর দুইটি কারণ আছে। প্রথমত নূর অর্থ যে ধার করা আলো এটি কোন ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে নেই আর থাকা সম্ভব ও না। দ্বিতীয়ত আল্লাহ এর গুনবাচক ৯৯ নাম এর একটি হল নূর [1] যা ধার করা আলো হওয়া সম্ভব না। কুরআন শুধু বলছে দীপ্তিময় চন্দ্র, যেটা বাস্তবিক অর্থে ঠিকই আছে। কারণ খালি চোখে চাঁদকে দীপ্তিময়ই লাগে।

আমার মতে চাদের আলোকে ধার করা আলো প্রমাণ করতে গিয়ে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক আল্লাহকে অসম্মান করেছে! কারণ সে মুনীর অর্থ করেছে যে ধার করা আলো দেয়। অর্থাৎ নূরকে সে ধারকরা আলো বুঝিয়েছে আর আল্লাহ এর গুনবাচক নাম হল নূর। তাহলে আল্লাহ কার আলো ধার করে? যখন তখন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলা সাধারণ মুসলিমরা না বুঝেই পরম তৃপ্তিতে তা গিলে খাচ্ছে! খুবই দুঃখজনক!

আরও দেখুন

চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে️

দাবিঃ বিজ্ঞান মাত্র দু’শো বছর আগে জেনেছে চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষ পথে ভেসে চলে। সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খন্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলে?

সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩৩
وَہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ الَّیۡلَ وَالنَّہَارَ وَالشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ
উচ্চারণঃ ওয়াহুয়াল্লাযী খালাকাল লাইলা-ওয়ান্নাহা-রা ওয়াশ শামছা ওয়াল কামারা কুল্লুন ফী ফালাকিইঁ ইয়াছবাহূন।
অর্থঃ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। প্রত্যেকে এক একটি বৃত্তাকার পথে সাঁতার কাটে।

প্রথমত আয়াতে কোথাও কক্ষপথ কথাটি নেই। আছে ফালাকিইঁ ইয়াছবাহূন । ফালাক অর্থ বৃত্ত বা বৃত্তাকার কিছু। কোন গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রের কক্ষপথই বৃত্তাকার না। কক্ষপথসমূহ হয় উপবৃত্তাকার। এবং সম্মুখ গামী। আমরা গ্রহ, নক্ষত্র পরিমণ্ডলকে যতটা সরল মনে করি বিষয়টা এত সরল না। আর যখনি আমরা সূর্য বা চন্দ্রের কক্ষপথ কে ফালাক (চরকির বৃত্তের মত) বলব তখনই পদার্থ বিজ্ঞান অনুসারে সূর্য চন্দ্র পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যাবে। সুতরাং আয়াতে যে ভাবে বলা হয়েছে, সেই ভাবে কক্ষপথ হয়না! জাকির নায়েক এবং হুজুরদের আরো একটু পদার্থ বিজ্ঞানের বেসিক পড়ার দরকার!

এবার আসি জাকির নায়েকের ১৪০০ বছর পূর্বের আলাপে। কক্ষপথের ধারণা কি প্রথমে কুরআন থেকে পাওয়া যায়? উত্তর, না। কক্ষপথের ধারণা পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীক থেকে। এরিস্টটলের সময় থেকেই জিওসেন্ট্রিক সৌর মণ্ডলের ধারণা তৈরি হয় এবং খ্রিষ্টাব্দ ২ শতকে হেলেনিস্টিক এস্ট্রনমার ক্লাউডিয়াস টলেমিয়াস টলেমি মডেল দাড় করান যেখানে চন্দ্র ও সূর্যের কক্ষপথের ধারণা দেওয়া হয় [2]। সুতরাং সূর্য ও চন্দ্রের যে কক্ষপথ থাকতে পারে এই ধারণা কেবল ১৪০০ বছর না তার থেকেও আরো অন্তত ৩০০ বছরের আগের মানুষও জানত। তারা এটা জানত না যে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। অবাক বিষয় হল ডাঃ জাকির নায়েকের বিজ্ঞানময় কুরআনেও কিন্তু এই তথ্য পাওয়া যায়না। সুতরাং দেখাযাচ্ছে ডাঃ জাকির নায়েকের ইতিহাস ও পদার্থ বিজ্ঞানের জ্ঞানের কমতি আছে এবং তার এই “১৪০০ বছর পূর্বে” কথাটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না!

তাহলে আয়াতটি দিয়ে কি বুঝান হয়েছে? আয়াতটি দিয়ে আমরা খালি চোখে আকাশে যেটা দেখি সেটাই বুঝানো হয়েছে! অর্থাৎ সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয় এবং দেখে মনে হয় তা বৃত্তাকার পথে সাঁতার কেটে (ভেসে) পশ্চিমে অস্ত যায়। প্রাচীন তাফসিরসমূহেও এমনটাই বোঝানো হয়েছে।

মানুষের আঙুলের ছাপ️

দাবিঃ সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে মানুষের আঙুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যা আজ প্রমাণিত।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে আসলে কী বলা হয়েছে

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩
اَیَحۡسَبُ الۡاِنۡسَانُ اَلَّنۡ نَّجۡمَعَ عِظَامَہٗ ؕ
উচ্চারণঃ আ ইয়াহছাবুল ইনছা-নুআল্লান নাজমা‘আ ‘ইজা-মাহ।
অর্থঃ মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৪
بَلٰی قٰدِرِیۡنَ عَلٰۤی اَنۡ نُّسَوِّیَ بَنَانَہٗ
উচ্চারণঃ বালা-কা-দিরীনা ‘আলাআন নুছাওবিয়া বানা-নাহ।
অর্থঃ পরন্ত আমি তার অংগুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।

যখন পূনরুত্থানের আয়াত নাজিল হয়, তখন মক্কার মূর্তিপূজারীরা বলে যে আমরা মরার পর পচে গলে হাড় হয়ে গেলে কি ভাবে আবার পূনরুত্থান হবে! এই প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাজিল করা হয়। ইবনে কাসির তার তাফসিরে যা লিখেছেন সেটা পড়লেই বোঝা যাবে এই আয়াত দুইটির প্রকৃত অর্থ কী বোঝান হয়েছে।

আল্লাহ এই আয়াত দ্বারা বুঝিয়েছেন “আমি এসব (হাড়) বিভিন্ন যায়গা থেকে একত্রিত করে পূনরায় দাড় করিয়ে দেব এবং একে পূর্নভাবে গঠিত করব”। দেখা যাচ্ছে যে, এখানে আঙুলের অগ্রভাগ বলতে সম্পূর্ণ পূনর্গঠনকে বোঝান হয়েছে। আমরা যেমন বলি “তুই আমার চুলটা পর্যন্ত বাঁকা করতে পারবিনা” এর অর্থ এই না যে সত্যিই চুল বাঁকা করার কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন আরবিতে এই রকম অনেক সাংকেতিক বা রূপক শব্দ ব্যাবহার করা হত। আল্লাহ নিজেই কুরআনে বলেছে যে কুরআনের কিছু আয়াত রুপক। আসুন আরো গভীরে যাই…….

জাকির নায়েকের ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে দেখে আসি নবীজির কাছ থেকে যারা কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন তারা কী বলেছেন এই আয়াত সম্পর্কে [3]

জাকির 2

ইবনে আব্বাস (রা) এবং আরো প্রমুখ বলেন যে এর ভাবার্থ হলঃ আমি একে উট বা ঘোড়ার পায়ের পাতার মত বানিয়ে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ উট বা ঘোড়ার পায়ের পাতা যেমন সুগঠিত তেমনি মানুষকেও পূনরুত্থানের সময় সুগঠিত করে তোলা হবে। ইমাম ইবনে জারির (র) বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ একত্রিত করবনা? হ্যা হ্যা শীঘ্রই আমি এসব (হাড়) একত্রিত করব। আমি তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পূনর্বিন্যাস্ত করতে সক্ষম। আমি ইচ্ছে করলে সে পূর্বে যা ছিল তার চেয়েও কিছু বেশি করে দিয়ে তাকে পূনরূত্থিত করতে পারব। ইবনে কুতাইবা (র) ও যাজ্জাজ (র) এর মতেও এই উক্তির অর্থ এটাই।

সুতরাং যারা নবীজির কাছে (সাহাবিরা) বা যারা সাহাবিদের কাছে কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝেছেন তারা বলছেন যে এই আয়াত দুটির ভাবানুবাদ নিতে হবে আর আঙুলের অগ্রভাগ বলতে পূর্নরূপে মানুষকে গঠন বুঝানো হয়েছে সেখানে এক আব্দুল ডাঃজাকের নায়েক বলছে যে না না এই আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ করতে হবে। এমনকি এই আব্দুল পুরোপুরি আক্ষরিক অনুবাদও করে নাই। আয়াতের মধ্যে নিজের মন মত ফিংগার প্রিন্টও ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই কাজটাকে কী বলে জানেন? এটাকে বলে কুরআন বিকৃতি। ডাঃ জাকির নায়েক কেবল কিছু জিনিস গড় গড় করে মুখস্ত বলতে পারে কিন্তু সে কুরআনের ইন্ট্যালেকচুয়াল জ্ঞান বিন্দুমাত্র রাখেনা। যে কুরআনের ভাবানুবাদ আর আক্ষরিক অনুবাদের গুরুত্ব বোঝেনা সে আবার তাফসিরও করে! এখনকার মুসলিমরা তাদের নবীর শেখানো কুরআনের ব্যাখ্যাকে বাদ দিয়ে ডাঃ জাকির নায়েকের করা নতুন তাফসির আবার গিলেও খাচ্ছে । আপনি যদি ডাঃ জাকির নায়েক বা তার তৈরি করা তাফসির নিয়ে কোন নেতিবাচক কথা বলেন, বর্তমানে জাকির নায়েক ভক্ত মুসলিমদের আতে ঘা লেগে যায়! এই সব কারণেই আমি তার ওপর রিতিমত বিরক্ত এবং তাকে আব্দুল মার্কা মাশরুম মুফাস্যির বলি। বিনা কারণে বলিনারে ভাই। কারণ আছে!

‘বিগ ব্যাং’ থিওরি️

দাবিঃ ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি আবিষ্কার হয় মাত্র চল্লিশ বছর আগে। কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলে।

সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩০
اَوَلَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰہُمَا ؕ وَجَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ
উচ্চারণঃ আওয়ালাম ইয়ারাল্লাযীনা কাফারূআন্নছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা কা-নাতা-রাতকান ফাফাতাকনা-হুমা- ওয়া জা‘আলনা-মিনাল মাই কুল্লা শাইয়িন হাইয়ি আফালাইউ’মিনূন।
অর্থঃ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?

ডাঃ জাকির নায়েক নাকি এই আয়াতে বিগ ব্যাং খুজে পায়! দাঁড়ান একটু হেসে নেই!

বিগ ব্যাং সম্পর্কে যার একটু হলেও পড়ালেখা আছে সে ভুলেও এই আয়াতে বিগব্যাং খোঁজার ভুল করবেনা। আমাদের এই ইউনিভার্সের সম্প্রসারণ কে থিওরিটিকালি পেছনে নিয়ে গিয়ে মূলত বিগ ব্যাং থিওরি দেওয়া হয় [4]। সেই থিওরিতে বলা হয় আমাদের এই ইউনিভার্স এক মহা বিষ্ফরণের ফসল। ডাঃ জাকির নায়েক মনে করে যে আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে খুলে গেছে কিন্তু কি অবাক কাণ্ড, বিগব্যাং এর সময় এই পৃথিবীর অস্তিত্বই ছিলনা। বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে বিগব্যাং হয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। আমাদের পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। বুঝতে পারছেন বিষয়টা? এর অর্থ দাড়ায় বিগব্যাং হওয়ার সময় থেকে পরবর্তি প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন বছর পৃথিবী নামক কিছু ছিলই না! কুরআনে বিগব্যাং খোঁজা বড় ধরনের আতলামি ছাড়া আর কিছুই না!

এবার আসি কুরআনের আয়াতে। এটাতো সিওর হলাম যে এই আয়াতে বিগব্যাং এর ছিটেফোটাও নেই। তাহলে? বিগব্যাং কী আমাদের ইউনিভার্স এর সৃষ্টির ১০০% সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে? উত্তর হল না পারেনা। বিগ ব্যাং থিওরির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর অনেক কিছুই বিগব্যাং ব্যাখ্যা করতে পারেনা। সিংগুলারিটির অস্তিত্বে আসা বিগব্যাং সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। এই ইউনিভার্স এর অস্তিত্বের কি বিগব্যাংই একমাত্র থিওরি ? না এর আগে তো ইটারনাল ইউনিভার্স থিওরি ছিল, মাল্টি ইউনিভার্স থিওরি ছিল এখন বিগব্যাং থিওরি আছে সামনে আরো থিওরি আসবে কারণ ১০০% সঠিক নিশ্চয়তা প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। একবার ভাবুন তো নতুন থিওরি আসলে যারা বিগব্যাং দিয়ে কুরআন ব্যাখ্যা করতে চাইছেন আদা পানি খেয়ে তাদের কি হবে! কুরআনে বর্নিত ইউনিভার্স সৃষ্টির সাথে কোন থিওরির মিল নেই কিন্তু কোন থিওরি এই পর্যন্ত পূর্নরূপে এই ইউনিভার্স এর এক্সিস্টেন্সের ব্যাখ্যা দিতে পারে নাই। সুতরাং বল এখনো মাঝ মাঠে। কিন্তু ডাঃ জাকির নায়েক কিন্তু কুরআনে বিগব্যাং এর আবিষ্কার করার ফলে লাল কার্ড খেয়ে মাঠের বাইরে।

আরও দেখুন

পানি চক্রের কথা

দাবিঃ পানি চক্রের কথা বিজ্ঞান জেনেছে বেশি দিন হয় নি। সূরা যুমার ২১ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলেঃ

সূরা আয্‌-যুমার (الزّمر), আয়াত: ২১
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَکَہٗ یَنَابِیۡعَ فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یُخۡرِجُ بِہٖ زَرۡعًا مُّخۡتَلِفًا اَلۡوَانُہٗ ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ حُطَامًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَذِکۡرٰی لِاُولِی الۡاَلۡبَابِ ٪
উচ্চারণঃ আলাম তারা আন্নাল্লা-হা আনঝালা মিনাছছামাই মাআন ফাছালাকাহূইয়ানা-বী‘আ ফিল আরদিছুম্মা ইউখরিজূবিহী ঝার‘আম মুখতালিফান আলওয়া-নুহূছু ম্মা ইয়াহীজুফাতারাঁ-হু মুসফাররান ছুম্মা ইয়াজ‘আলুহূহুতা-মা- ইন্না ফী যা-লিকা লাযিকরা-লিঊলিল আলবা-ব।
অর্থঃ তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।

এই আয়াতে নাকি ডাঃ জাকির নায়েক পানিচক্রের বিজ্ঞান খুজে পেয়েছে। এই আয়াতে যেটা বলা হয়েছে তাকে বলা হয় layman’s term. যা আপনি নিজ চোখে দেখেন তার সহজ বর্ণা দেওয়া হয়েছে। একজন ৫ বছরের বাচ্ছা যে পানি চক্রের কিছুই জানেনা সেও বলতে পারে যে বৃষ্টি আকাশ থেকে পড়ে, বৃষ্টির পানি মাটিতে বহমান হয় কারণ সে তার নিজের চোখে এসব দেখে। যার বিন্দু মাত্র বিজ্ঞানের ধারণা নেই সেও জানে বৃষ্টির পানিতে ফসল হয়। বকলম এক গ্রামের লোককে জিজ্ঞেস করেন সেও বলে দিবে। ফসল শুকিয়ে গেলে হলদে হয়ে যায় সেটাও দেখে বলা যায়। সুতরাং, layman’s term এ যারা বিজ্ঞান খোঁজে তারা মহা বলদ ছাড়া আর কিছুই না। এখানে থেমে যেতে পারতাম কিন্তু না আরো আছে। ঐ যে “১৪০০ বছর আগে” আছেনা সেটার মুখেতো ঝামা ঘসা বাকি আছে!

ডাঃ জাকির নায়েকের মতে বিজ্ঞান পানিচক্র আবিষ্কার করেছে এইতো সেদিন কিন্তু কি আশ্চর্য। কুরআনে পানিচক্রের বিজ্ঞান ১৪০০ বছর আগেই বলা আছে! তাই নাকি? প্রকৃত পক্ষে সত্য হল পানিচক্রের অধিকাংশ প্রক্রিয়া মানুষ ঈসা(আ) এর মৃত্যুর ৫০০ বছর আগে থেকে জানে!

হিভ্রু বিব্লিকাল ইতিহাসে রাজা সোলেমানের সময় কালেই পানি চক্রের প্রাথমিক ধারণার বর্ণনা পাওয়া যায়।
গ্রীক স্কলাররা আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৫০০-৬০০ তেই বৃষ্টির মূল উৎস যে ভূপৃষ্ঠের পানি এবং তা যে সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে উপরে মেঘ হয় আর বাতাস যে মেঘকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায় তা জানত।

Anaximander ৫৭০ খ্রীস্টপূর্বে এবং চায়নার Xenophanes ৫৩০ খ্রীস্টপূর্ব পানিচক্রের অধিকাংশ পর্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় [5]। সুতরাং ১৪০০ বছর না প্রায় ২৫০০ হাজার বছর আগের মানুষ ও পানিচক্র সম্পর্কে অধিকাংশই জানত।

লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি মিশ্রিত হয় না️

দাবিঃ বিজ্ঞান এই সেদিন জেনেছে লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি একসাথে মিশ্রিত হয় না। ২৫ সূরা ফুরকানের ৫৩ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ চলুন দেখে আসি কুরআনে কী বলেছে।

সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৫৩
وَہُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ ہٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّہٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَجَعَلَ بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخًا وَّحِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا
উচ্চারণঃ ওয়া হুওয়াল্লাযী মারাজাল বাহরাইনি হা-যা-‘আযবুন ফুরা-তুওঁ ওয়া হা-যা-মিলহুন উজা-জুওঁ ওয়া জা‘আলা বাইনাহুমা-বারঝাখাওঁ ওয়া হিজরাম মাহজূরা-।
অর্থঃ তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।

এই আয়াত থেকে ডাঃ জাকির নায়েক দাবি করে যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি নাকি মিশ্রিত হয়না। এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডাঃ জাকির নায়েকের রসায়নের জ্ঞানও কম। রসায়নে এক ধরনের পানি আছে যার নাম Brackish Water. জানেন এই Brackish water কিভাবে তৈরি করা হয়? মিষ্টি পানি আর লোনা পানির মিশ্রণের মাধ্যমে [6]

পৃথিবীতে কিছু জায়গা আছে যেখানে দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হয়না এমনকি দুই নদীর পানিও মিলিত হয়না। এটা নির্ভর করে পানির প্রকৃতি, পানি কতটা ঘন আর তাপের ওপর। এই কারণে মিষ্টি পানির সাথে মিষ্টি পানি বা লোনা পানির সাথে লোনা পানি ও না মিলতে পারে। গোয়ালন্দে বা চাদপুরে গেলেই দুই মিষ্টি পানির নদীর পানি মিলিত না হওয়া দেখা যেতে পারে।তার মানে এইনা যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি মেশা সম্ভব না। Brackish Water নিয়ে একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি মিলতে পারে।

আরও দেখুন

ডান দিকে ফিরে ঘুমানো

দাবিঃ ইসলাম আমাদেরকে ডান দিকে ফিরে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছে; বিজ্ঞান এখন বলছে ডান দিকে ফিরে ঘুমালে তা হার্ট এর জন্য ভালো।

খণ্ডনঃ না। চিকিৎসা বিজ্ঞান নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করে বলে। কখনই এভাবে ঢালাওভাবে বলেনা। হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে একেক অবস্থার জন্য একেকটা সাজেস্ট করা হয়। আর স্বাভাবিক অবস্থায় শোয়ার ক্ষেত্রে ডানে বামে না ফিরে ঘুমানোকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এমনকি অনেক রোগীর ডান বা বাম পাশ হয়ে শোয়ায় ইরিটেশনের কারণে ইনসমনিয়া হয় আবার অনেকের মেরুদন্ডের হাড়ে বা স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হয় তাদেরকে চিত হয়ে সোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেডিকের সাইন্স রোগীভেদে বিভিন্ন ভাবে সোয়ার পরামর্শ দেয়। কোন রোগীর ডানদিকে শুলে ভালো হয় কোন রোগীর ডান দিকে শুলে খারাপ হয় কোন রোগীর বাম দিকে শুলে খারাপ হয় কোন রোগীর ভালো হয় আবার কোন রোগীর চিত হয়ে শুলে ভালো হয় [7]
ইসলামে ডানদিক হল সুন্নতি দিক ডান দিকে কিছু করলে সওয়াব পাওয়া যায়। ঢালাও ভাবে সবাই ডান দিকে শুলে সবাই শারীরিক সুফলতা পাবেনা এটাই বাস্তবতা সুতরাং ডানদিকে শুলে সকলে শারীরিক ভাবে ভালো থাকবে বলে লাফালাফি করাটা গাধামি ছাড়া আর কিছুই না।

পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়

দাবিঃ পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে। কুরআনের সূরা নামল এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে এই বিষয়ে ধারণা দেয়।

খণ্ডনঃ আসুন দেখি কুরআনের আয়াত গুলিতে আসলে কী বলা হয়েছে।

সূরা আন নম্‌ল (النّمل), আয়াত: ১৭
وَحُشِرَ لِسُلَیۡمٰنَ جُنُوۡدُہٗ مِنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ وَالطَّیۡرِ فَہُمۡ یُوۡزَعُوۡنَ
উচ্চারণঃ ওয়া হুশিরা লিছুলাইমা-না জুনূদুহূমিনাল জিন্নি ওয়াল ইনছি ওয়াততাইরি ফাহুম ইউঝা‘উন।
অর্থঃ সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।

সূরা আন নম্‌ল (النّمل), আয়াত: ১৮
حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوۡا عَلٰی وَادِ النَّمۡلِ ۙ قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ ۚ لَا یَحۡطِمَنَّکُمۡ سُلَیۡمٰنُ وَجُنُوۡدُہٗ ۙ وَہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ
উচ্চারণঃ হাত্তাইযাআতাও ‘আলা-ওয়া-দিন্নামলি কা-লাত নামলাতুইঁ ইয়াআইয়ুহান্নামলুদ খুলূমাছা-কিনাকুম লা-ইয়াহতিমান্নাকুম ছুলাইমা-নুওয়া জুনূদুহূ ওয়াহুম লা-ইয়াশ‘উরূন।
অর্থঃ যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।

দেখা যাচ্ছে যে পিপীলিকা যে মৃতদেহ কবর দেয় বা পিপীলিকার যে বাজার পদ্ধতি আছে তার কোন উল্লেখ তো দূরের কথা এমন কোন ইংগিতও আয়াত দুটিতে নেই। বরং এটিও একটি layman’s term. সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে পিপীলিকার বাজার পদ্ধতি বা মৃত পিপীলিকাকে কবর দেবার বিষয়টি কুরআনে থাকার দাবিটা আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মন গড়া।

বরং এই আয়াতকে বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গেলে উল্টো বিপাকে পড়ে যেতে হয়। খেয়াল করে দেখুন যে নবী সুলায়মান পিপীলিকার কথা শুনতে পারছে যা বিজ্ঞান অনুসারে তথা মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা অনুসারে সম্ভব না!

জনাব আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক এই আয়াতে পিপীলিকার বাজার ব্যাবস্থা আর মৃতকে কবর দেওয়া নিজে নিজে মন মতো ঢুকিয়ে কুরআনকে এক অর্থে বিকৃত করেছে। আর এই দুই আয়াতে সে নাকি বিজ্ঞানও খুঁজে পায় যেখানে আয়াত দুইটি বিজ্ঞানের চোখেই প্রশ্নবিদ্ধ!

মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর

দাবিঃ ইসলাম মদ পানকে হারাম করেছে , চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর।

খন্ডনঃ প্রথমে আমাদের দেখতে হবে ইসলাম কেন মদপান হারাম করেছে! অধিকাংশ মুসলিম বিভিন্ন আয়াত নিয়ে চিল্লা চিল্লি করে কিন্তু এরা জানেইনা কোন আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপট কী। কারণ তারা নিজেরা ইসলামের ইতিহাস, কুরআন, হাদিস পড়ে দেখেনা। মদ্যপান হারামের আয়াত নাজিল হয় যেন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সাহাবিরা নামাজ পড়তে না পারে। শারীরিক উপকারিতার কথা চিন্তা করে মদকে হারাম করা হয়নি। তাফসিরে ইবনে কাসিরে এই আয়াতসমূহ নাজিলের প্রেক্ষাপট ও কারণ স্পষ্টভাবে বলা আছে [8]

জাকির 4
জাকির 6
জাকির 8

মদ সম্পর্কে প্রথম আয়াত

সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২১৯
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ ؕ قُلۡ فِیۡہِمَاۤ اِثۡمٌ کَبِیۡرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ۫ وَاِثۡمُہُمَاۤ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِہِمَا ؕ وَیَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَاذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلِ الۡعَفۡوَ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ ۙ
উচ্চারণঃ ইয়াছআলূনাকা ‘আনিল খামরি ওয়াল মাইছিরি কুল ফীহিমা ইছমুন কাবীরুওঁ ওয়া মানাফি‘উ লিন্না-ছি ওয়া ইছমুহুমাআকবারু মিন নাফ‘ইহিমা-ওয়া ইয়াছআলূনাকা মা যা-ইউনফিকূনা কুল্লি ‘আফওয়া কাযা-লিকা ইউবাইয়িনুল্লা-হু লাকুমুল আ-য়াতি লা‘আল্লাকুম তাতাফাক্কারুন।
অর্থঃ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।

এই আয়াতটি নাজিল হয় হিজরতের পর পর। তখন মদিনার আনসারেরা মদ পান করত এবং জুয়া খেলে অর্থ উপার্জন করত। জুয়া ও মদ ব্যবসা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলাও হত। তারা মদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াত নাজিল হয়। এখানে মদ ও জুয়াকে কিছুটা উপকারিও বলা হয়েছে। তাফসিরে গেলে দেখা যায় এই উপকার আসলে অর্থনৈতিক উপকার বোঝানো হয়েছে কারণ মদের ব্যবসা আর জুয়া খেলে অনেকে অর্থ উপার্জন করতো।

মদ সম্পর্কে ২য় আয়াত

সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৪৩
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡتُمۡ سُکٰرٰی حَتّٰی تَعۡلَمُوۡا مَا تَقُوۡلُوۡنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِیۡ سَبِیۡلٍ حَتّٰی تَغۡتَسِلُوۡا ؕ وَاِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَاَیۡدِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَفُوًّا غَفُوۡرًا
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূলা-তাকরাবুস সালা-তা ওয়া আনতুম ছুকা-রা-হাত্তাতা‘লামূমা-তাকূলূনা ওয়ালা-জুনুবান ইল্লা-‘আ-বিরী ছাবীলিন হাত্তা-তাগতাছিলূ ওয়া ইন কুনতুম মারদা-আও ‘আলা-ছাফারিন আও জাআ আহাদুম মিনকুম মিনাল গাইতি আও লা-মাছতুমুন নিছাআ ফালাম তাজিদূমাআন ফাতাইয়াম্মামূসা‘ঈদান তাইয়িবান ফামছাহূবিউজূহিকুম ওয়া আইদীকুম ইন্নাল্লা-হা কা-না ‘আফুওওয়ান গাফূরা-।
অর্থঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।

এই আয়াতটি নাজিল হয় যখন মাতাল অবস্থায় এক মু্হাজির সাহাবি নামাজ পড়তে গিয়ে ভুল তিলাওয়াত করে। এখানে বলা হয় মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় নামাজ না পড়তে। মদ কিন্তু হারাম করা হয়নি তখনো।

এই ঘটনার পর ঊমর (রা) এর প্রার্থনায় মদকে হারামের আয়াত নাজিল হয়। যেন এই রকম পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়।

সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৯০
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইন্নামাল খামরু ওয়াল মাইছিরু ওয়াল আনসা-বুওয়াল আঝলা-মুরিজছুম মিন ‘আমালিশ শাইতা-নি ফাজতানিবূহু লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।
অর্থঃ হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।

সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৯১
اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَالۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ
উচ্চারণঃ ইন্নামা-ইউরীদুশশাইতা-নুআইঁ ইউকি‘আ বাইনাকুমুল ‘আদা-ওয়াতা ওয়াল বাগদাআ ফিল খামরি ওয়াল মাইছিরি ওয়া ইয়াসুদ্দাকুম ‘আন যিকরিল্লা-হি ওয়া ‘আনিসসালা-তি ফাহাল আনতুম মুনতাহূন।
অর্থঃ শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলামে মদকে হারাম করা হয়েছে কেবল মাত্র সাহাবিরা মাতাল হয়ে নামাজ পড়ত বিধায়।

এলকোহল একটি উতকৃষ্ট জীবানু নাশক। এই করোনার সময় প্রায় সকলেই সেটা ব্যবহার করছে! ধারণা করছি ডাঃ জাকির নায়েকও ব্যবহার করছে!

মদ কি শরীরের জন্য খারাপ? উত্তর, সেটা নির্ভর করছে আপনি কি পরিমান খাচ্ছেন। মদ কি শরীরের জব্য ভালো হতে পারে? জি পারে। পরিমিত এলকোহল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী [9]। বিশেষ করে হার্টের জন্য। এলকোহল শরীরের খারাপ কোলেস্ট্রল LDL কে কমাতে সাহায্য করে যা হার্টের ব্লক সারাতে সহায়তা করে। অনেক হার্ট স্পেশালিষ্ট তার রোগীর কন্ডিশন বুঝে পরিমিত এলকোহল প্রেসক্রাইব করেন। এমনকি অনেক ঔষধের কাচামাল হিসেবেও এলকোহল ব্যবহার করাহয়। হমিওপ্যাথিতে অধিকাংশ ঔষধেই এলকোহল ব্যবহার করা হয়।

আমার দৃষ্টিতে মদের অপকার দিক থেকে উপকার দিক অনেক অনেক অনেক বেশি। জানেন তো অপারেশন থিয়েটারে এলকোহল একটি মাস্ট আইটেম। ভাবুনতো কত মানুষের জীবন বাঁচাতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে!

বলুন আল্লাহ হারাম করেছে তাই হারাম। এর মধ্যে বিজ্ঞান ঢুকাতে গেলেই আপনিও ডাঃ জাকির নায়েকের মত আব্দুলে পরিণত হবেন।

শূকরের মাংস খুবই ক্ষতিকর

দাবিঃ ইসলাম শূকরের মাংসকে হারাম করেছে। বিজ্ঞান আজ বলছে শুকরের মাংস লিভার, হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

খণ্ডনঃ কুরআনে শুকরের মাংস হারাম করেছে এমন কয়েকটি আয়াত

সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৭৩
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَالدَّمَ وَلَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَمَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
উচ্চারণঃ ইন্নামা-হাররামা ‘আলাইকুমুল মাইতাতা ওয়াদ্দামা ওয়া লাহমাল খিনঝীরি ওয়ামা উহিল্লা বিহী লিগাইরিল্লা-হি ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আ-দিন ফালা-ইছমা ‘আলাইহি ইনাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

সূরা আল আনআম (الانعام), আয়াত: ১৪৫
قُلۡ لَّاۤ اَجِدُ فِیۡ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیَّ مُحَرَّمًا عَلٰی طَاعِمٍ یَّطۡعَمُہٗۤ اِلَّاۤ اَنۡ یَّکُوۡنَ مَیۡتَۃً اَوۡ دَمًا مَّسۡفُوۡحًا اَوۡ لَحۡمَ خِنۡزِیۡرٍ فَاِنَّہٗ رِجۡسٌ اَوۡ فِسۡقًا اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَاِنَّ رَبَّکَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
উচ্চারণঃ কুল লাআজিদুফী মাঊহিয়া ইলাইইয়া মুহাররামান ‘আলা- তা-‘ইমিইঁ ইয়াত‘আমুহূ ইল্লা আইঁ ইয়াকূনা মাইতাতান আও দামাম মাছফূহান আও লাহমা খিনঝীরিন ফাইন্নাহূ রিজছুন আও ফিছকান উহিল্লা লিগাইরিল্লা-হি বিহী ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আ-দিন ফাইন্না রাব্বাকা গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু।

যেকোন রেডমিটই হর্ট আর লিভারের জন্য ক্ষতিকর সেই রেড মিটের মধ্যে পড়ে গরুর মাংস, খাসির মাংস, মহিশের মাংস, শূকরের মাংস………। বিজ্ঞানকে বিবেচনা করলে এরা প্রত্যেকেই হার্টের জন্য ক্ষতিকর তাহলে হার্ট বাঁচাতে সবকটাই হারাম করা উচিত ছিল! কিন্তু, তা করা হয়নি। সুতরাং এইসব লেইম ডাবল স্টান্ডার্ড লজিক কোন কাজেই আসবেনা।

বলতে হবে আল্লাহ হারাম করেছে সেই জন্য হারাম। এর পেছনে বিজ্ঞান ঢুকাতে গেলেই রেডমিটের বেড়াজালে আটকে আব্দুল হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যেমন আব্দুল হয়েছে ডাঃ জাকির নায়েক।

রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন

দাবিঃ রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। সূরা মুমিনূনের ২১ নং আয়াতে কুরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করে গেছে ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কী বলা আছে

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ২১
وَاِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً ؕ نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِہَا وَلَکُمۡ فِیۡہَا مَنَافِعُ کَثِیۡرَۃٌ وَّمِنۡہَا تَاۡکُلُوۡنَ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইন্না লাকুম ফিল আন‘আ-মি লা‘ইবরাতান নুছকীকুম মিম্মা-ফী বুতূনিহা-ওয়া লাকুম ফীহা-মানা-ফি‘উ কাছীরাতুওঁ ওয়া মিনহা-তা’কুলূন।
অর্থঃ এবং তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।

ধরা যাক, উট হল সেই চতুস্পদ জন্তু। আমরা উটের কী পান করি? দুধ, পানি এবং মূত্র । উটের দুধ কী উটের উদরে (পেটে) তৈরি হয়? না দুধ তৈরি হয় স্তনে। দুধে কি উপকারিতা আছে? আছে। দুধে কি কোন অপকারিতা আছে? আছে।

Milk allergy, Lactose intolerance এই বিষয় দুটি পড়ুন বুঝতে পারবেন যে কিছু কিছু মানুষের জন্য দুধ কতটা সমস্যার কারণ। উটে উদর থেকে পানি আর মূত্র পাওয়া যায় যা মুসলিমরা পান করে থাকে।

উটের পেটে যে পানি পাওয়া যায় এটা ১৪০০ বছর না, বরং নবীজির দাদার দাদার দাদার আগের মানুষও জানত কারণ তারা উট মেরে তার মাংস খেত এবং কাটার সময় তার পেটে পানি পেত। মরুভূমীতে বহু প্রাচীন কাল থেকেই তীব্র পানির সংকটে উট মেরে তার পেটের পানি ব্যাবহার করা হয়! মূত্র হল যে কোন প্রানীর দেহের বর্জ্য। উটের মুত্র খেলে কি উপকার হয়?

এই আয়াতে দুধের কোন উল্লেখ নেই। এই আয়াতে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুধ উৎপাদন বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি, জাস্ট কিচ্ছু বলা হয়নি। তারপরও আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক কিভাবে তার মন গড়া এসব বলে।

এই আয়াতটিকেও খুব সাধারণ laymen’s term হিসেবে দেখুন। আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মত এখানে বিজ্ঞান খুজতে গেলে কুরআন বিগড়ে যাবে।

জন্ম তত্ত্ব বা ভ্রুন তত্ত্ব

দাবিঃ মানুষের জন্ম তত্ত্ব ভ্রুন তত্ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে এই কদিন আগে। সূরা আলাকে কুরআন এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ কুরআনে ভ্রুন তত্ত্ব নিয়ে বেশকয়েকটি সুরায় আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমার বন্ধু সুরা আলাকের রেফারেন্স দিয়েছে তাই আমার লেখায় আয়াতটি উল্লেখ করলাম। বাকি রেফারেন্স আমি নিজে থেকেই দিলাম।

সূরা আলাক্ব (العلق), আয়াত: ২
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ ۚ
উচ্চারণঃ খালাকাল ইনছা-না মিন ‘আলাক।
অর্থঃ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৭
اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی ۙ
উচ্চারণঃ আলাম ইয়াকুনুতফাতাম মিম মানিইয়িইঁ ইউমনা- ।
অর্থঃ সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১৩
ثُمَّ جَعَلۡنٰہُ نُطۡفَۃً فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ۪
উচ্চারণঃ ছু ম্মা জা‘আলনা-হু নুতফাতান ফী কারা-রিম মাকীন।
অর্থঃ অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১৪
ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَۃَ عِظٰمًا فَکَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ٭ ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰہُ خَلۡقًا اٰخَرَ ؕ فَتَبٰرَکَ اللّٰہُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِیۡنَ ؕ
উচ্চারণঃ ছু ম্মা খালাকনান নুতফাতা ‘আলাকাতান ফাখালাকনাল ‘আলাকাতা মুদগাতান ফাখালাকনাল মুদগাতা ‘ইজা-মান ফাকাছাওনাল ‘ইজা-মা লাহমান ছু ম্মা আনশা’না-হু খালকান আ-খারা ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহছানুল খা-লিকীন।
অর্থঃ এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাকর।

দেখা যাচ্ছে কোরআনে পাঁচটি ধাপের বর্ণনা রয়েছ

প্রথম ধাপঃ নুতফা – বীর্য
দ্বিতীয় ধাপঃ আলাকা – রক্তপিণ্ড (ক্লাসিকাল আরবি ডিকশনারি ও প্রাচীন তাফসির অনুসারে)
তৃতীয় ধাপঃ মুদগা –মাংস খণ্ড বা পিণ্ড
চতুর্থ ধাপঃ ইজামা – হাড়
পঞ্চম ধাপঃ মাংস দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া।

আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মতে কুরআনেই ১৪০০ বছর আগে প্রথম ভ্রুন তত্ত্ব নিয়ে বলেছে। আমি মাঝে মাঝে অবাক হই এই চিন্তা করে যে History of Embryology না পড়ে বা না জেনে এই লোকটা ডাক্তার হল কি করে!

History of Embryology থেকে জানা যায় যে হিপক্রিতাস, এরিস্টটল এবং গ্যালেনের প্রত্যেকের লেখাতে এই ধাপগুলোর বর্ণনা রয়েছে [10]

প্রথম ধাপ : বীর্য
দ্বিতীয় ধাপ : মাসিক রক্ত
তৃতীয় ধাপ : মাংস
চতুর্থ ধাপ : হাড়
পঞ্চম ধাপ : গোশত দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া

সুতরাং আবারো দেখা যাচ্ছে গ্রীক সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ভ্রুন তত্ত্ব বিষয়ক এই ধারণা গুলো প্রচলিত ছিল। এবং আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের এই “১৪০০ বছর আগে বলছে” একটি চরম মিথ্যাচার।

কুরআনে বলা ধাপ গুলো কী Modern Embryology এর সাথে মেলে? সেখানেও রয়েছে মতভেদ। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

ভ্রন তত্ত্ব

দাবিঃ ভ্রন তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( গর্ভের সন্তান ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে। ভাবা যায়… কুরআন এই কথা জানিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। সূরা নজমের ৪৫-৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭-৩৯ নং আয়াতে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কি বলা হয়েছে

সূরা আন-নাজম (النّجْم), আয়াত: ৪৫
وَاَنَّہٗ خَلَقَ الزَّوۡجَیۡنِ الذَّکَرَ وَالۡاُنۡثٰی ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া আন্নাহূখালাকাঝ ঝাওজাইনিযযাকারা ওয়াল উনছা-।
অর্থঃ এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।

সূরা আন-নাজম (النّجْم), আয়াত: ৪৬
مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اِذَا تُمۡنٰی ۪
উচ্চারণঃ মিন নুতফাতিন ইযা-তুমনা।
অর্থঃ একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৭
اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی ۙ
উচ্চারণঃ আলাম ইয়াকুনুতফাতাম মিম মানিইয়িইঁ ইউমনা- ।
অর্থঃ সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৮
ثُمَّ کَانَ عَلَقَۃً فَخَلَقَ فَسَوّٰی ۙ
উচ্চারণঃ ছু ম্মা কা-না ‘আলাকাতান ফাখালাকা ফাছাওয়া-।
অর্থঃ অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৯
فَجَعَلَ مِنۡہُ الزَّوۡجَیۡنِ الذَّکَرَ وَالۡاُنۡثٰی ؕ
উচ্চারণঃ ফাজা‘আলা মিনহুঝঝাওজাইনিযযাকারা ওয়াল উনছা- ।
অর্থঃ অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।

এই আয়াতসমূহের কোথাও গর্ভের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা পুরুষ নির্ধারণ করে তা বলা হয়নি। নির্ধারণ কথাটিই এই আয়াতসমূহের কোথাও নেই। বলা হয়েছে সৃষ্টির কথা। আরো বলা হয়েছে মানুষ পুরুষের বীর্য ছিল! প্রকৃতপক্ষে মানুষ কখনোই পুরুষের বীর্য ছিল না। মানুষ কেবল মাত্র বীর্য থেকে তৈরি হয়না। বীর্যের একটি উপাদান মানুষের জন্মে একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে মাত্র। কুরআন বলেছে মানুষ নাকি একফোটা বীর্য ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর থেকে লেইম জোক আর হতে পারেনা।

মানুষ স্বাভাবিকভাবে যা দেখে যা জানে কুরআনে সবকিছুর বর্ণনা সেভাবেই করে। প্রাচীন তাফসিরও সেটাই বলে। কুরআনে বহুবার বলা হয়েছে “তারা কি দেখেনা?” অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই কুরাআনকে Layman’s term এ উপস্থাপন করেছে। আফসোস এইটা বোঝার ক্ষতা বা জ্ঞান যদি আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের থাকতো!

গর্ভে থাকতে আগে শোনা তারপর দেখা

দাবিঃ একটি বাচ্চা যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার। ভাবা যায়? ১৪০০ বছর আগের এক পৃথিবীতে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার স্তরসমূহ নিয়ে কুরআন বিস্তর আলোচনা করেছে। যা আজ প্রমাণিত! সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৯ , ৭৬ ও সূরা ইনসান আয়াত নং ২।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কী বলা হয়েছে

সূরা আস সেজদাহ্ (السّجدة), আয়াত: ৯
ثُمَّ سَوّٰىہُ وَنَفَخَ فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِہٖ وَجَعَلَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَالۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ
উচ্চারণঃ ছু ম্ম ছাওওয়া-হু ওয়া নাফাখা ফীহি মিররূহিহী ওয়া জা‘আলা লাকুমুছ ছাম‘আ ওয়াল আবসারা ওয়াল আফইদাতা কালীলাম মা-তাশকুরূন।
অর্থঃ অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

সূরা আদ-দাহর (الدَّهْرِ), আয়াত: ২
اِنَّا خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اَمۡشَاجٍ ٭ۖ نَّبۡتَلِیۡہِ فَجَعَلۡنٰہُ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
উচ্চারণঃ ইন্না-খালাকানাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন আমশা-জিন নাবতালীহি ফাজা‘আলনা-হু ছামী‘আম বাসীরা- ।
অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।

প্রথমত আয়াতের কোথাও বলানেই যে আগে শ্রবণ ও পরে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এখানে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক নিজের ইচ্ছা মত ধরে নিয়েছে! অনেক অতি উতসাহী ডাঃ জাকির নায়েক ভক্ত বলবে আয়াতে শ্রবণ শব্দটা আগে ব্যাবহার করা হয়েছে!

আমার বাবা আমাকে এবার ঈদে নতুন শার্ট ও প্যান্ট দিয়েছেন । এই বাক্যটা দিয়ে কি এইটা বুঝানো হয়েছে যে বাবা আমাকে আগে শার্ট ও পরে প্যান্ট দিয়েছে। না তা বুঝাচ্ছেনা।

প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে দুটি আয়াতেই কেন আগে শ্রবণ ও পরে দৃষ্টি ব্যবহার করা হয়েছে? এর কারণ বুঝতে হলে আপনাকে ভাষার সৌন্দর্যতা সম্পর্কে বুঝতে হবে। কুরআন একটি কাব্যিক গেন্থ। প্রতিটি ভাষাতেই ভাষার কাব্যিক সৌন্দর্য বাড়াতে কিছু শব্দ সংগতি ব্যবহার করা হয়। বাংলাতে যেমন দুধ-ভাত, হাত- পা। আপনি কখনোই ভাত-দুধ বা পা- হাত বলেন না। তেমনি আরবিতেও ছামী‘আম বাসীরা একটি শব্দ সংগতি।

বলেছিলাম না আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের কুরআনের ইন্ট্যালেকচুয়াল জ্ঞানের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। এটা তার আরো একটি উদাহরণ। যেখানে কুরআনের ভাষাগত বিন্যাসের কথা বলা হয় সেখানে এই আব্দুলটা বিজ্ঞান খোঁজে।

Embryology বলে কান ও চোখ দুটোর গঠনই ১৬ তম সপ্তাহে শুরু হয়।

আরও দেখুন

পৃথিবী উট পাখির ডিমের মত

দাবিঃ পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী চ্যাপ্টা … কুরআন সূরা নাযিয়াত এর ৩০ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানিয়ে গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কি বলা আছে!

সূরা আন নাযিয়াত (النّزعت), আয়াত: ৩০
وَالۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىہَا ؕ
উচ্চারণঃ ওয়াল আর দা বা‘দা যা-লিকা দাহা-হা-।
অর্থঃ পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।

আয়াতের শেষ শব্দটি দাহা-হা। সকল ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে যার অর্থ বিস্ত্রিত। এখন প্রশ্ন আসে কেন আমরা কুরআনকে বুঝতে ক্লাসিক আরবি ডিকশনারি থেকে অর্থ করব? কেন আমরা আধুনিক আরবি ভাষার ডিকশনারি থেকে কুরআনের শব্দের অর্থ নিতে পারবনা? কারণ প্রাচীন আরবি আর আধুনিক আরবির মধ্যে অনেক পার্থক্য। কুরআন নাজিল হয়েছে প্রাচীন আরবিতে। কেবল তাই নয় কুরাআনের আরবি প্রাচীন আরবির কুরাইশী ডায়ালেক্টে। সুতরাং, কুরাআনের প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝতে হলে দেখতে হবে প্রাচীন আরবিতে সেই শব্দের অর্থ কী। চর্যা পদ বাংলাভাষার আদি নিদর্শন বলে এখন যদি কেউ আধুনিক বাংলা দিয়ে চর্যাপদ বুঝতে যায় তাহলে এর থেকে বড় গাধামি আর হবেনা। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হল ডাঃ জাকির নায়েক সেই গাধামিটা করেছে। সে দাহা-হা শব্দের আধুনিক আরবির অর্থ উটপাখির ডিম নিয়ে কুরআন বুঝতে গিয়েছেন! অথচ, নবীজির কোন সাহাবির কোন রেওয়ায়েতেই এই উদ্ভট ব্যাখ্যা নেই, কোন প্রাচীন তাফসির গ্রন্থে উটপাখির ডিমের কোন অস্তিত্ব নেই। কোন ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে দাহা-হা অর্থ উটপাখির ডিম নেই। মূলত আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক বুঝাতে চেয়েছে যে নবীজি বা তার সাহাবি, তাবে, তাবেইন গন আসলে কুরআন বুঝতনা আর নবীজি আসলে তার সাহাবিদের কুরআন শিক্ষা এবং কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝাতেই পারে নাই, ১৪০০ বছর পর কুরআনের আসল অর্থ এবং ব্যাখ্যা আব্দুল মার্কা মাশরুম মুফাস্যির ডাঃ জাকির নায়েক বুঝতে পেরেছে। আর এই আব্দুলকে নিয়ে না পড়া না জানা মুসলিমদের যে কি তালবাহানা ইদানিং দেখি।

রাত এবং দিন বাড়া এবং কমা️

দাবিঃ পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দুশ বছর আগে। সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে !

খণ্ডনঃ আসুন দেখি কুরআন কী বলে

সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ২৯
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُوۡلِجُ الَّیۡلَ فِی النَّہَارِ وَیُوۡلِجُ النَّہَارَ فِی الَّیۡلِ وَسَخَّرَ الشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ۫ کُلٌّ یَّجۡرِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّاَنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ
উচ্চারণঃ আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ইঊলিজুল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া ইঊলিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়া ছাখখারাশশামছা ওয়ালা কামারা কুলুলইঁইয়াজরীইলাআজালিম মুছাম্মাওঁ ওয়া আন্নাল্লা-হা বিমা-তা‘মালূনা খাবীর।
অর্থঃ তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?

এই আয়াতটিও layman’s term. যে চোখে দেখতে পারে এমন যে কাউকে ( শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, বাচ্চা বা বুড়ো) ভোর রাতে বাইরে দাঁড় করিয়ে দেন। সে দেখতে পারবে কিভাবে রাত আস্তে আস্তে দিনে পরিনত হয়। আবার তাকে পড়ন্ত বিকেলে বাইরে দাড়াতে বলুন সে দেখতে পারবে যে কি ভাবে দিন আস্তে আস্তে রাতে পরিনত হয়। Layman’s term বর্ণনা করতে বিজ্ঞান লাগেনা। লাগে কেবল অবজারভেশন।
আসুন আমরা একটা ছড়া বলি…….

“Layman’s term এ যারা বিজ্ঞান খুজতে যায়
তারা উৎকৃষ্ট মানের গাধা ছাড়া আর কিছুই নয়!”

মজার ব্যাপার হল আয়াতের প্রথমেই আল্লাহ নিজেই বলে দিচ্ছেন ‘ তুমি কি দেখনা?’ যার অর্থ সকল দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ এই আয়াতের বর্ণনা স্বাভাবিক ভাবেই দেখতে পায়। আল্লাহ নিজেই আয়াতটিকে layman’s term হিসেবে বুঝাচ্ছে সেখানে আল্লাহর থেকে বেশি বুঝে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক সেখানে বিজ্ঞান খুঁজতে ব্যাস্ত। আরো অবাক ব্যাপার হল এই আব্দুলটার ভক্তরা তার এই গাধামি কে আপ্রিশিয়েট ও করে!

পৃথিবী গোল

দাবিঃ সূরা আর-রহমানের ১৭ এবং সুরা ইনশিকাকের ৩ নং আয়াত ১৪০০ বছর আগেই আমাদের জানিয়েছে যে পৃথিবী গোল, যা বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জানতে পেরেছে।

খণ্ডনঃ আসলেই কি এই আয়াতসমূহ দিয়ে পৃথিবী গোল বোঝানো হয়েছে?

চলুন দেখি কুরআনের এই আয়াত সমূহে কী বলা হয়েছে।

সূরা আর রাহমান (الرّحْمن), আয়াত: ১৭
رَبُّ الۡمَشۡرِقَیۡنِ وَرَبُّ الۡمَغۡرِبَیۡنِ ۚ
উচ্চারণঃ রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন।
অর্থঃ তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।

সূরা আল ইন‌শিকাক (الانشقاق), আয়াত: ৩
وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত।
অর্থঃ এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।

সূরা আল ইন‌শিকাক (الانشقاق), আয়াত: ৩
وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত।
অর্থঃ এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।

কই আয়াত দুইটির কোথাও তো পৃথিবী গোল বলা হয়নি! ও আচ্ছা এখানে তো জনাব আব্দুল মাশরুম মুফাস্যির বিজ্ঞ দিনে আলেম ডাঃ জাকির নায়েকের তাফসির লাগবে। চলুন দেখা যাক ডাঃ জাকির নায়েকের তাফসিরে কি বলা হয়ঃ

সূরা আর রহমানের ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন (তিনিই দুই উদয়াচল ও অস্তাচলের মালিক)। এখানে উদয়াচল ও অস্তাচল বলতে সূর্য উদয় ও অস্ত যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আমরা জানি একদিনে পৃথিবিতে দুইবার সূর্য উদয় হয় এবং দুইবার অস্ত যায়। আমরা যখন পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হতে দেখি আমেরিকানরা তখন পশ্চিম দিকে সূর্য অস্ত যেতে দেখে। তাহলে আমাদের এখানে সকাল তাদের ওখানে সন্ধ্যা। আবার আমরা যখন সূর্য কে ডুবতে দেখি তখন তারা সূর্য কে উদিত হতে দেখে। এর মানে আমরা পৃথিবীতে দুইবার সকাল দুইবার সন্ধ্যা পরিলক্ষিত হতে দেখি। দুবার সূর্যোদয় আর দুবার সূর্যাস্ত তখনই দেখি যখন পৃথিবী গোলাকার হয়। আর যদি পৃথিবী সমতল বা চ্যাপ্টা হত তাহলে একবারই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হতো। তেমনভাবে সূরা আল-ইনশিক্বাকের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত (যেদিন পৃথিবিকে সম্প্রসারিত করা হবে), এখানে কিয়ামতের দিবসের কথা বলা হয়েছে।সেদিন পৃথিবিকে আল্লাহ সমতল করবেন। তিনি যদি এখনি পৃথিবিকে সমতল বানাতেন তাহলে তখন কিভাবে সমতল করতেন।

দাঁড়ান একটু হেসে নেই। বুঝতে পেরেছেন কত গণ্ডগোল আছে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের এই বিজ্ঞানময় তাফসিরে। আব্দুলটা ভুগোল, গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞানের রীতিমতো ১৩ টা বাজিয়ে ছেড়েছে।

আমরা কি পৃথিবীতে মাত্র দুইবার সূর্য উদয় আর সুর্য অস্ত দেখি? না। যারা অক্ষরেখা, নীরক্ষরেখা আর দ্রাঘীমা রেখা আর ৩৬০ ডিগ্রী কে অসংখ্য দ্রাঘীমা রেখা দিয়ে কি ভাবে ভাগ করা হয় তা জানেন তারা বুঝতে পারবেন যে ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীতে অসংখ্যবার সূর্য উদয় আর অসংখ্যবার সূর্য অস্ত যায় [11] [12]। প্রকৃত পক্ষে প্রতিটি মুহূর্তেই কোথাও না কোথাও সূর্য উদয় হচ্ছে আবার প্রতিটি মুহুর্তেই কোথাও না কোথাও সূর্য অস্ত যাচ্ছে। এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের ভুগোল বিষয়ে ও বেসিক জ্ঞান নেই। আরো বুঝতে পারি দুই অস্তাচল আর উদ্য়াচল দিয়েও পৃথিবী গোল প্রমাণ করতে চাওয়াটা নিতান্তই গাধামি।

তাহলে এই দুই অস্তাচল আর উদয়াচল দিয়ে আসলে কী বোঝানো হয়েছে। সেটা বুঝতে হলে আপনাকে আবারো সেই প্রাচীন তাফসিরে ফিরে যেতে হবে। আরবে প্রধানত দুইটি ঋতু। শীত আর গ্রীষ্ম। শীতকালে সূর্য এক স্থান থেকে উঠলেও গ্রীষ্মকালে সূর্য উদয়ের স্থান পরিবর্তন হয়, একই ভাবে শীত আর গ্রীষ্মকাল ভেদে অস্তাচলেরও পরিবর্তন হয়। এটাও একটি Layman’s term. তারা এটা চোখে দেখত বিধায় জানত।

সম্প্রসারণ যে, যে কোন আকারের বস্তুর হতে পারে এমবকি একটা রেখাংশের ও হতে পারে তা বোধহয় আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের জানা নেই। এথেকে প্রমাণ হয় যে তার পরিমিতির তথা গণিতের ও বেসিক জ্ঞান নেই।

উপসংহার

এই ১৭ টি দাবি খণ্ডনের মাধ্যমে আমরা যা জানতে আর বুঝতে পারলাম তা হলঃ

  • ডাঃ জাকির নায়েকের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, ভুগোল, গণিতের বেসিক জ্ঞান নেই।
  • ডাঃ জাকির নায়েক নিজের ইচ্ছা এবং প্রয়োজন মত কুরআনে বিকৃত করে।
  • ডাঃ জাকির নায়েক প্রাচীন তাফসির তথা নবীজির শেখানো কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে নিজের ইচ্ছামত কুরআনের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে সে নবীজি থেকেও কুরআন ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে।
  • ডাঃ জাকির নায়েক আল্লাহর থেকেও বেশি বুঝতে চায়।
  • ডাঃ জাকির নায়েক কুরআনের ইন্টেলেকচুয়াল জ্ঞানের বিন্দু মাত্র জ্ঞান রাখে না।
  • প্রতিটি মুসলিমের পড়ে জেনে বুঝে ধর্ম পালন করা উচিত। কোন আব্দুলের কথা চোখ বুজে মেনে নেওয়া ঠিক না।

এই লেখা পড়ার জন্য ধৈর্য্যের প্র‍য়োজন আছে। যারা এত ধৈর্য্য নিয়ে লেখাটি পড়ে শেষ করেছেন তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। লেখায় কোন তথ্যগত ভুল থাকলে আমাকে ধরিয়ে দেবেন। সত্যের সাথে থাকবেন

তথ্যসূত্র

  1. আল্লাহর ৯৯ টি নাম []
  2. Geocentric model []
  3. তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৭তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৮, প্রকাশকঃ তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি। প্রকাশিত সাল ২০১০, নবম সংষ্করণ []
  4. Big Bang []
  5. Water cycle []
  6. Brackish water []
  7. LEFT OR RIGHT SIDE SLEEPING BEST FOR YOUR HEART? []
  8. তাফসির ইবনে কাসির (৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম) খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০৬-৯০৮. প্রকাশক তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি। প্রকাশিত সাল ২০০৯, নবম সংষ্কার []
  9. 7 Health Benefits Of Drinking Alcohol []
  10. A History of Embryology (1959), by Joseph Needham []
  11. অক্ষাংশ []
  12. দ্রাঘিমা []

কোরআনের মতো একটি সূরা – সূরা করোনা


কোরআনের মতো একটি সূরা

আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাস করি না, যারা ইসলামের সমালোচনা করে থাকি, তারা প্রায়শই একটি চ্যালেঞ্জ পেয়ে থাকি। কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ অথবা, কোরআনের মতো একটি সূরা লিখে আনার চ্যালেঞ্জ। “পারলে কোরআনের মতো একটি সূরা লিখে আনেন”, এভাবেই মুসলিমরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তাদের দিকে যারা কোরআনকে ঐশ্বরিক বলে বিশ্বাস করে না। তারা দাবি করেন, আজ অব্ধি কেউ কোরআনের মতো একটি সূরা লিখে আনতে পারেনি ভবিষ্যতেও কখনো পারবে না। কোরআনের মতো একটি সূরা লিখে আনার এই চ্যালেঞ্জটি কোরআন থেকেই এসেছে। কোরআনে বলা হয়েছেঃ

2:23
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّنۡ مِّثۡلِہٖ ۪ وَ ادۡعُوۡا شُہَدَآءَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۳﴾
English - Sahih International
And if you are in doubt about what We have sent down upon Our Servant (Muhammad), then produce a surah the like thereof and call upon your witnesses other than Allah, if you should be truthful.
Bengali - Bayaan Foundation
আর আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
2:24
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَ لَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ ۚۖ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۲۴﴾
English - Sahih International
But if you do not - and you will never be able to - then fear the Fire, whose fuel is men and stones, prepared for the disbelievers.
Bengali - Bayaan Foundation
অতএব যদি তোমরা তা না কর- আর কখনো তোমরা তা করবে না- তাহলে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।

কোরআনের বক্তার বক্তব্য, যদি কেউ কোরআনের মতো করে একটি সূরা লিখতে পারে, তবেই কোরআন মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

কোরআনের মতো একটি সূরা লিখে আনার এই চ্যালেঞ্জটি খুবই স্টুপিড একটা চ্যালেঞ্জ। কেউ কোরআনের মতো কোনো সূরা না লিখতে পারলেই কিভাবে প্রমাণিত হয় কোরআন ঐশ্বরিক? কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো একটি কবিতা না লিখতে পারলেই আমরা কেনো ধরে নেবো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো ঈশ্বরের দূত ছিলেন?

যাইহোক, কোরআনের মতো একটি সূরা লেখা কোনো দুঃসাধ্য কাজ নয়। এপর্যন্ত অনেকেই কোরআনের মতো করে সূরা লিখেছেন

দক্ষ পারসিক চিকিৎসক এবং দার্শনিক আল-রাযি কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলেন।

করোনা 2

সূরা করোনা

সম্প্রতি ‘জিলু’ নামের একজন আলজেরিয়ান নাস্তিক কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ে কোরআনের মতো করে একটি সূরা লিখেছেন। সূরাটির নাম ‘করোনা’।

আরবী ভাষায় জিলু রচিত মূল আয়াতসমূহ তুলে ধরছিঃ

করোনা 4
সূরা করোনা

এবারে, সূরা করোনার ইংরেজি অনুবাদ তুলে ধরছিঃ

করোনা 6
ইংরেজি অনুবাদে সূরা করোনা

এবারে সূরা করোনার বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছিঃ

সূরা করোনা
(১) কোভিড। 
(২) (যা সৃষ্ট) ধ্বংসকারী ভাইরাসটি দ্বারা।
(৩) তবে, তারা অবাক হয়েছিলো যে এটা চীন থেকে তাদের নিকট এসেছে, যা অনেক দূরে।
(৪) তাই, কাফেররা বলেছিলো, এ এক কঠিন রোগ।
(৫) না, বরং এটা নিশ্চিত মৃত্যু।
(৬) আজ রাজা-বাদশা আর দাসদাসীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
(৭) তাই, বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরো এবং ঐতিহ্য বর্জন করো।
(৮) এবং বাইরে যেয়ো না গম কিনতে।
(৯) এবং ঘরে থাকো, কেননা এ এক শক্তিশালী চাবুক।
(১০) এবং তোমার হাত ধুয়ে নাও নতুন সাবান দ্বারা।
(১১) সর্বশক্তিমান জিলু এই সত্য প্রকাশ করেছেন।

এবার, আসুন সূরা করোনার একটি চমৎকার তিলাওয়াত উপভোগ করিঃ

Surah Corona

মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া

মুসলিমরা সবসময়ই দাবি করেন, কোরআনের মতো করে কেউ কখনো কোনো সূরা লিখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কখনো পারবে না। কিন্তু, যখন একজন আলজেরিয়ান নাস্তিক কোরআনের মতো করে একটি সূরা লেখে তখন কি ঘটে? আলজেরিয়ান নাস্তিক জিলুর সূরা করোনা প্রচুর পরিমাণে শেয়ার হয়, সূরাটি আরববিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে, রক্ষণশীল মুসলিমরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে, জড়িতদের মৃত্যু হুমকি দেয়, গ্রেফতারের ডাক দেয় (১)। ক্ষুব্ধ মুসলিমদের রিপোর্টের কারণে সূরা করোনার লেখক জিলুর ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে (১)।

আমনা আল-শার্কি নামে একজন তিউনিসিয়ান নাস্তিক নারী সূরা করোনা শেয়ার করে আর সেই কারণে মুসলিমরা তাকে মৃত্যু হুমকি দেয় (২) (৩)। বেশিরভাগ তিউনিসিয়ানের চোখেই আমনা অপরাধী, তবে কিছুসংখ্যক তিউনিসিয়ান আমনার পক্ষে কথা বলেছেন (২) (৩)।

করোনা 8
তিউনিসিয়ান নাস্তিক নারী আমনা

সূরা করোনা শেয়ার করে অসংখ্য মৃত্যু এবং যৌন নির্যাতনের হুমকি পেয়েছেন সানা বেন্দিমেরাদ নামের একজন আলজেরিয়ান নারী (১)। কেউ তার যোনি পথে এসিড ঢালার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, কেউ আবার তাকে হত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে (১)। কেউ বলেছে, তাকে হত্যা করা হালাল। কেউ আবার আল্লাহর কাছে অভিশাপ দিয়ে বলেছে, আল্লাহ্ যেনো তার চোখ উপড়ে ফেলে, আল্লাহ্ যেনো তার হাত কেটে নেয় যে হাত দিয়ে সে লেখে, আল্লাহ্ যেনো তার মাথা কেটে নেয় যে মাথা গোবরে ভর্তি (১)।

অবাক হইনি, মুসলিমদের কাছ থেকে এমন আচরণ আমাকে অবাক করে না।


তথ্যসূত্রসমূহ

  1. Algerian and Tunisian Free Thinkers under threat for ‘ridiculing’ Quran – The Ex Muslim
  2. Tunisia arrests young woman who made up fake Quran verses about coronavirus – The New Arab
  3. Social Media Outraged About Woman Publishing Quranic Fake Verses on Covid-19 – Albawaba

কোরআন সংকলন এবং পরিমার্জনের ইতিহাস


ভূমিকা

মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি বিশ্বাস বা দাবী হচ্ছে, কোরআন হচ্ছে মানব ইতিহাসের একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ যা আল্লাহ পাক যেভাবে নাজিল করেছিলেন, ঠিক সেরকম অবস্থাতেই আমরা এখনও দেখতে পাই। এমনকি, এর একটি শব্দ বা একটি অক্ষরও এই পর্যন্ত কেউ পরিবর্তন করতে পারে নি। অর্থাৎ, এর কিছুমাত্র এখন পর্যন্ত বিকৃতিসাধন হয় নি। অন্যদিকে বাইবেল থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল ধর্মগ্রন্থই মানুষের দ্বারা বিকৃত এবং দূষিত। যা আল্লাহ যেভাবে প্রেরণ করেছিলেন, সেভাবে আর নেই। যদিও বাইবেল সংকলনের খ্রিষ্টীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাইবেলের সংকলনকে খ্রিস্টানরা ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে করেন। অর্থাৎ, বাইবেল যেভাবে সংকলিত হয়েছিল, খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মতে তা ঈশ্বরের ইচ্ছাতে ঈশ্বরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। খ্রিস্টীয় বিশ্বাস অনুসারে পরিবর্তনগুলোও ঈশ্বরের ইচ্ছাতে হয়েছিল। তাই খ্রিস্টানগণ দাবী করেন, বাইবেলেও কোন ভুল নেই। কারণ পরিবর্তনগুলো স্বয়ং ঈশ্বরই ঘটিয়েছেন।

এই দিক দিয়ে মুসলিমদের দাবী একটু ভিন্ন রকম। মুসলিমগণ মনে করেন, কোরআনই একমাত্র শুদ্ধতম ঐশি গ্রন্থ, যার কিছুমাত্র কোন পরিবর্তন হয় নি। তারা শুধু মনেই করেন না, রীতিমত বিশ্বাস করেন যে, কোরআন একমাত্র ঐশি কেতাব যা মুহাম্মদের আমলেই আল্লাহর পাকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নাজিল হয়েছিল। অধিকাংশ মুসলিম মনে করেন, কোরআন আল্লাহ পাকের কাছ থেকে যেভাবে নাজিল হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এখন আমরা পাই। এবং এটি কোন মানুষের দ্বারাই বিন্দুমাত্র পরিমাণ দূষিত হয় নি, নতুন সংযোজন বিয়োজন পরিমার্জন কিছুই হয় নি। এই দাবীগুলো শোনার পরে আমাদের বিষয়টি গবেষণা করে দেখার প্রয়োজন হয়ে যায়, আসলেই এই দাবীগুলোর সত্যতা কতটুকু। তা নিয়ে আলোচনাই এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য।

অনেক ধার্মিক মানুষ প্রমাণ দেখাতে চেষ্টা করবেন যে, কোরআন হাদিসেই বলা আছে যে, কোরআন অবিকৃত এবং সব ধরণের দূষণমুক্ত। কিন্তু এই ধরণের দাবী একটি খুব সাধারণমানের হেত্বাভাস বা লজিক্যাল ফ্যালাসি। যাকে বলা হয়, চক্রাকার কুযুক্তি বা Circular logic Fallacy [1] । যেমন ধরুন,

প্রশ্ন-১ বাইবেল যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-১ বাইবেল সত্য কারণ ঈশ্বর বলেছেন বাইবেল সত্য।
প্রশ্ন-২ ঈশ্বর যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-২ ঈশ্বর সত্য কারণ বাইবেলে লেখা আছে ঈশ্বর সত্য।

উপরের দাবী দুটো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। তাই এই ধরণের যুক্তিকে যুক্তিবিদ্যায় গ্রহণ করা হয় না, এবং এগুলোকে কুযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ধরণের দাবী আসলে যৌক্তিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য হয় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা কেন কোরআন হাদিসের রেফারেন্সগুলোকে উল্লেখ করছি?

কোরআন হাদিস এবং ইসলামিক ক্লাসিক্যাল যুগের রেফারেন্সগুলো আমরা উল্লেখ করছি কোরআন বা মুসলিমদের দাবীগুলোর স্ববিরোধী চরিত্র দেখাবার জন্য। আসলে আম মুসলিমদের অনেকেই জানেন না, ইসলামের রেফারেন্সগুলোই ইসলামকে ভুল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ইহুদী নাসারা নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র ছাড়াই, শুধুমাত্র ইসলামের রেফারেন্স দিয়েই ইসলামকে ভুল প্রমাণ করা যায়। সেটাই আমরা এই লেখাটিতে দেখবো।

কোরআনে বলা আছে, কোরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ পাক নিজেই নিয়েছেন। এই বিষয়ে কোরআনেই বলা হয়েছে, [2]

নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।
— Taisirul Quran
আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। * الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, লাওহে মাহফুজে যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টির আদিতে কোরআন লিখেছিলেন, আজকে আমাদের কাছে যেই কোরআন রয়েছে, দুটো কী একই রকম? এটি ইসলামের মূল ভিত্তি নিয়ে একটি বড় ধরণের প্রশ্ন। কারণ এই বিশ্বাসটি যদি ভুল প্রমাণ হয়, তাহলে ইসলামের মূল ভিত্তিই ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি, আল্লাহ পাকের অনুপ্রেরণাতেও যদি কোরআন যেভাবে নাজিল হয়েছিল, তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন সাধন হয়ে থাকে, তাহলে তা খ্রিস্টানদের দাবীর মতই হয়ে যায়। কারণ খ্রিস্টানরাও একই দাবী করে থাকেন যে, গসপেল লেখকরা ঈশ্বরের অনুপ্রেরণাতেই গসপেল লিখেছেন। যাকে আবার মুসলিমগণ বিকৃত বলছেন। তাই এই যুক্তিটি খ্রিস্টানদের বেলাতে মুসলিমরা গ্রহণ না করলে, মুসলিমদের বেলাতেও আর খাটে না।

উল্লেখ্য, মুসলিমদের দাবী যেহেতু এরকম যে, তাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন এই পর্যন্ত বিন্দু পরিমান বিকৃত বা মানুষের দ্বারা দূষিত হয় নি, ঠিক লাওহে মাহফুজে আল্লাহ পাক সৃষ্টির শুরুতে যেভাবে লিখেছিলেন, এখনো বর্তমান সময়ের কোরআনে তেমনটিই আমরা পাই, তাই যদি সামান্যতম বিকৃতও প্রমাণ করা যায়, তাহলে তাদের দাবীটি ভুল বলে গণ্য হবে। এই দাবীটি ভুল প্রমাণ করতে শতকরা ৫ ভাগ বা ১০ ভাগ কিংবা ১০০ ভাগ ভুল প্রমাণের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র একটি ভুল বা বিকৃতিই যথেষ্ট। কারণ কোরআনেই বলা রয়েছে, [3]

আমি এ কুরআনকে ভাগে ভাগে বিভক্ত করেছি যাতে তুমি থেমে থেমে মানুষকে তা পাঠ করে শুনাতে পার, কাজেই আমি তা ক্রমশঃ নাযিল করেছি।
— Taisirul Quran
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি
— Sheikh Mujibur Rahman
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমরা তা পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

মুহীউদ্দীন খানের অনুবাদে বলা আছে, [4]

আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি।

তাই আল্লাহ পাকই যা পারফেক্ট বা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছেন, সেটিকে আর পুনরায় যথাযথ করার কোন কারণ বা যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ মানুষ এমনকি নবী মুহাম্মদ বা তার সাহাবা, তাবে তাবেইনও সেখানে সামান্যতম হাত লাগালেই তা দূষিত হবে। তারপরেও, আমরা আলোচ্য লেখাটিতে কোরআনে বিভিন্ন প্রকারের বিকৃতি বা মানুষের দ্বারা সংস্কার বা পরিমার্জন আলোচনা করবো। সেটি পড়ার পরে পাঠকগণই সিদ্ধান্ত নেবেন, কোরআন অবিকৃত গ্রন্থ নাকি তা বহুসংখ্যকবার পরিমার্জিত, সংশোধিত গ্রন্থ। যদিও আমরা ভালভাবেই জানি, সবকিছুরই একটি তৈরি উত্তর সদাসর্বদা মুমিন ভাইদের কাছে থাকে, আর সেটি হচ্ছে, সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা! কিন্তু সেটি যুক্তি হলে বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থকে মুসলিমগণ কোন যুক্তিতে দূষিত বলেন, তা বোধগম্য নয়। আল্লাহর ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যাই হোক, আমি যৌক্তিক আলোচনা এবং মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারার চেষ্টা হিসেবেই এই লেখাটি লিখছি। এই লেখাটিও সেই অর্থে আল্লাহরই ইচ্ছা। নইলে আমি লিখলাম কীভাবে?

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ

এই লেখাটিতে যে সমস্ত রেফারেন্স নেয়া হয়েছে, সেগুলো সবই সবচাইতে নির্ভরযোগ্য এবং বিশুদ্ধ ইসলামিক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা। যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে সঠিক তথ্যগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে। তারপরেও কোথাও কোন ত্রুটি পাওয়া গেলে লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। বানান ভুল বা তথ্যগত ভুল কেউ পেলে বিনা দ্বিধায় সংশোধন করে দিন। আপনার সংশোধনী সঠিক হলে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, এই লেখাটি আপনার কোমল ধর্মীয় অনুভূতির জন্য মারাত্মক আঘাত বলে বিবেচিত হতে পারে। তাই আপনার ধর্মীয় অনুভূতি কোমল হলে লেখাটি এখনই পড়া বন্ধ করুন এবং নিজের ধর্মীয় অনুভূতিকে রক্ষা করুন। এই সতর্কতার পরেও যদি লেখাটি পড়তে চান, নিজ দায়িত্বে প্রাপ্তবয়ষ্ক শিক্ষিত সভ্য মানুষের মত পড়ুন। আপনার ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার জন্য অন্য কাউকে দায়ী করবেন না।

এই লেখাটিতে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা হবে, তারা হচ্ছেন, হযরত মুহাম্মদ নিজে, আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, আয়েশা, আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর, উমরের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবূ খুযায়মা আনসারী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উবাই ইবনে কাব, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ এবং আরো অনেকে। এরা প্রত্যেকেই নবী মুহাম্মদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট এবং মুহাম্মদ অসংখ্যবার এদের প্রশংসা করেছেন। তাই উনাদের বক্তব্যগুলো গুরুত্ব পাবে, সেটিই স্বাভাবিক।

আমি খুব ভালভাবেই জানি, যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন তারা নানাভাবে প্রতিটি তথ্যকে মিথ্যা, ভুল, ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র, কাফেরদের চক্রান্ত, নাস্তিকদের মিথ্যাচার, দুর্বল বর্ণনা, জাল জইফ, হ্যান ত্যান নানা কথা বলে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করে যাবেন। কারণ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এছাড়া উনাদের আর কোন পথ নেই। যেভাবেই হোক, উনারা চেষ্টা করে যাবেন উনাদের বিশ্বাসকে সঠিক বলে ধরে নিতে। কিন্তু উনাদের বিশ্বাস বিষয়ে আমার কোন আলোচনা নেই। উনারা চাইলে যেকোন কিছুই বিশ্বাস করতে পারেন। আমি শুধুমাত্র তথ্যসূত্রগুলো একত্র করছি। পাঠকগণ রেফারেন্সগুলো যাচাই করে দেখবেন অনুগ্রহ করে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

অসংখ্য বইপত্র, আর্টিকেল এবং ইন্টারনেটের কল্যানে অসংখ্য লেখা আমাকে এই লেখাটি সমৃদ্ধ করতে সহযোগীতা করেছে। তাদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। উনাদের অসংখ্য লেখা না পড়লে আমি এই সংকলনটি তৈরি করতে পারতাম না।

কোরআন

কোরআন কী?

কোরআন (আরবি: القرآن‎‎ বা আল্-কুর্’আন) শব্দের অর্থ হচ্ছে পঠিত বা পাঠ করা বা আবৃত্তি করা। কোরআন শব্দের উৎপত্তি ক্বারউন নামক শব্দ থেকে যার অর্থ পঠিত, যা অধিক পাঠ করা হয়, মিলিত। এই বিষয়ে খানিকটা মতবিরোধ রয়েছে। দু’টি প্রধান মতামত হচ্ছে,

১) এই শব্দটি এসেছে al-Qar` মানে হচ্ছে `সংকলন করা` বা ‘সংগ্রহ করা’
২) এই শব্দটি এসেছে `Qara` থেকে যার মানে হচ্ছে ‘পাঠ করা’। এই মতামতটিই বেশিরভাগ ইসলামি স্কলার মেনে নেন। [5]

উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে আমরা যেই কোরআন দেখি, বা পড়ি, সেটি সংকলিত হয়েছিল খলিফা উসমানের আমলে। এই বিষয়টি স্মরণ রেখেই লেখাটি পড়তে হবে।

কোরআন কী আল্লাহর সৃষ্টি?

ইসলামের প্রথম যুগের বেশ পরে তৎকালীন আলেমদের মধ্যে একটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে, কোরআন কি অনাদি অনন্ত, নাকি আল্লাহ পাকের সৃষ্ট? মু‘তাযিলী দার্শনিকগণ কোরআন মজীদকে আল্লাহর সৃষ্ট বলে দাবী করেন এবং অদৃষ্টবাদী (জাবারী) আলেমগণ কোরআনকে অনাদি বলে দাবী করেন। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কাফের ও মুরতাদ এবং হত্যাযোগ্য বলে ফতোয়া দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে আব্বাসীয় খিলাফতে শাসকরা বহু আলেমকে এই দ্বন্দ্বে হত্যা করে। বর্তমানে শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে মুসলমানদের মধ্যে মোটামুটিভাবে এ ধারণা বিরাজ করে যে, যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া আর কোনো কিছুই অনাদি নয়, সুতরাং কোরআন মজীদও অনাদি নয়, তথা আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট। কিন্তু পরবর্তীকালে ইবনে তাইমীয়াহ্ ও ‘আবদুল ওয়াহ্হাব্ নজদীর মাধ্যমে ইসলামে যে গোঁড়া ইফরাত্বী ধারা গড়ে ওঠে তারা এ বিষয়টিকে নতুন করে গুরুত্ব প্রদান করে এবং যারা কোরআনকে অনাদি বলে স্বীকার করে না তাদেরকে কাফের বলে অভিহিত করে।

‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়’- এই বিষয়ে বেশ কিছু বিখ্যাত ইসলামিক আলেমের মতামত পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে,

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. বলেন,
কোরআন আল্লাহ কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, কোরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কাফির। আর যে ব্যক্তি কোরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে- মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না-সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।

ইমাম ইবনে আব্দুল ইয আল হানাফি (তাহাবীয়া গ্রন্থের ভাষ্যকার), বলেন:
“চার মাযহাব সহ পূর্বসূরি ও পরবর্তী মনিষীদের সকলেই একমত যে, আল্লাহর কালাম মাখলুক নয়।
ইমাম ইবনে তাইয়িমা রাহ .এর ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়তা সূলভ বক্তব্য আছে। তিনি ‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে জবাব দিয়েছেন।

শায়খ হাফেয আল হাকামী রহ. বলেন:
“কোরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষর-সমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুযায়। এমনিভাবে শব্দ ছাড়া শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবির উপর অহি আকারে তা নাযিল করেছেন। মুমিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কোরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম থেকে বের হয়ে যায় না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি । কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে তা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখলুক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসুমহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কোরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কান-সমূহ আল্লাহর সৃষ্টি কিন্তু কান দিয়ে কোরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়।

অধিকাংশ ইসলামিক আলেমের মত হচ্ছে, কোরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাত বা গুণাগুন বা বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফত বা গুণ হচ্ছে সৃষ্টি বা মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসেবে হত্যা করা হবে। এই বিষয়ে আরো জানার জন্য [6] [7] পড়ুন। উল্লেখ্য, এই অংশে উল্লেখিত তিনটি রেফারেন্স একটি ইসলামিক ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করা ছাড়া নেয়া হয়েছে।

কোরআন কী সরাসরি আল্লাহর বাণী?

বেশিরভাগ মুসলমানই এই কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কোরআনের প্রতিটি বাক্য হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর মুখ থেকে মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট বাণী বা নির্দেশনা কিংবা বলা যেতে পারে জীবন বিধান। কোরআনেই বলা আছে, [8]

এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর।
এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর।
এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।

তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।

ধরে নিচ্ছি কোরআন আল্লাহর সরাসরি বানী, এবং তা সৃষ্টির আদিকাল থেকে লাওহে মাহফুজে লিখিতভাবে সংরক্ষিত ছিল। এরপরে নবী মুহাম্মদ নবুয়ত লাভ করেন, জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ সেই পবিত্র কেতাবে আল্লাহ পাক যা বলেছিলেন তা মুহাম্মদের কাছে প্রেরণ করেন। এসব ধরে নিলে বোঝা যাচ্ছে, কোরআনের মূল বক্তা আল্লাহ পাক, এবং নবী মুহাম্মদের ওপর তা নাজিল হয়েছে মাত্র। জিব্রাইল ছিলেন বাহক মাত্র, মুহাম্মদ ছিলেন মেসেজঞ্জার নবী/রাসুল। জিব্রাইল এবং মুহাম্মদের দায়িত্ব ছিল, আল্লাহ পাক যা সরাসরি বলেছেন, হুবুহু সেইসব আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। নিজেরা সেই কথাগুলোর মধ্যে কোন বক্তব্য না ঢোকানো বা কোন কথার সামান্যতম কোন পরিবর্তন না করা। কিন্তু কোরআনে এই ধারাটি ঠিক রাখা হয় নি। কোথাও আল্লাহ বলছেন, কোথাও নবী বলছেন, আবার কোথাও মনে হচ্ছে এগুলো জিব্রাইলের বক্তব্য, আবার কোথাও আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলছেন। এরকম অসংখ্য সূরা পাওয়া যায়, সেখানে এক এক সময় বক্তা এক এক রকম। সব যে আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য না, তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। যেমন ধরুন, নিচের সূরাটি। এই সূরাটি কী কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বক্তব্য বলে মেনে নেয়া যায়? তাহলে আল্লাহ কোন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে? স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বক্তব্যগুলো অন্য কারো, সরাসরি আল্লাহর বক্তব্য হতেই পারে না।

  • পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
  • আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা, যিনি বিশ্বজগতের রাব্ব।
  • যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়।
  • যিনি বিচার দিনের মালিক।
  • আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।
  • আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
  • তাদের পথ, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। ( সূরা ফাতিহা )

যেমন ধরুন, করিম বলছে তার ছেলেকে রহিমকেঃ

হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা তোমার শরীরের জন্য ভাল।

অথবাঃ

হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা আমি তোমার জন্য নিয়ে আসি। নিশ্চয়ই আমি উত্তম খাবার বাজার থেকে কিনে আনি।

কিন্তু এই কথা পিতা করিম তার ছেলে রহিমকে কখনই বলবে না, এরকম কেউ বললে কথাগুলো তার ছেলে রহিমের বক্তব্য বলেই বোঝা যাবেঃ

  • শুরু করছি বাজার থেকে উত্তম খাবার নিয়ে আসা পিতা করিমের নামে
  • সম্মানীত পিতা করিমই উত্তম খাবার বাজার করে আনেন
  • যিনি অত্যন্ত দয়ালু, খুবই উদার
  • বাজারের তাজা সবজি আর মাছ উনিই সবচেয়ে ভাল চেনেন
  • আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুল টিফিনের টাকা পাই
  • আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুলের বেতনের টাকা চাই
  • হে পিতা, আমাদেরকে বিকাল বেলা ফুটবল খেলতে দিন
  • আর যারা আপনার খাবার খেয়ে আপনার তোষামোদি করে না,
  • আপনার মাথা আর পিঠ টিপে দেয় না,
  • তাদের ওপর গযব নাজিল করুন

আবার যেমন নিচের সূরাটি লক্ষ্য করি –

  • হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। [9]
  • যে কেউ আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। [10]
  • আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। [11]

উপরের সূরার আয়াতগুলো পড়ে স্পষ্টই মনে হচ্ছে, কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ পাকের কথা নয়। মুহাম্মদের কথা, জিব্রাইল কিংবা অন্য কারো। কোরআনের প্রতিটি শব্দ যদি আল্লাহ পাকেরই বক্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে এই সূরাগুলো হওয়ার কথা নিম্নরূপঃ

  • হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তা অর্থাৎ আমাকে ভয় কর, আমি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছি ও আমি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছি
  • যে কেউ আমার এবং আমার রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে, আমি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবো
  • আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আমি তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছি। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আমার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আমি সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।

কোরআনের ৫১ নম্বর সূরাটি হচ্ছে সূরা যারিয়াত। এই সূরাটির ৪৬ থেকে শুরু করে ৫১ নম্বর আয়াত আসুন পড়ে দেখা যাক, [12] –

৪৬। আর ইতঃপূর্বে নূহের কওমকেও (আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম)। নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক কওম।
৪৭। আর আমি হাতসমূহ দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয় আমি শক্তিশালী।
৪৮। আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!
৪৯। আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
৫০। অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
৫১। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ নির্ধারণ করো না; আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।

প্রশ্ন হচ্ছে, ৪৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, তাহলে ৫০ এবং ৫১ নম্বর আয়াতে এই আমিটি আসলে কে? একই সূরার এক আয়াতে আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, অর্থাৎ আয়াতটি সরাসরি আল্লাহর বাণী হয়ে থাকে, পরের আয়াতে আমি বলতে নবীর কথা বোঝানো হচ্ছে কেন? আসুন আরো একটি সূরার দুইটি আয়াত পড়ে দেখি [13] –


আলিফ, লাম, রা; এটা এমন একটা গ্রন্থ, এর আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর সবিস্তারে ব্যাখ্যাকৃত মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞের নিকট হতে।
— Taisirul Quran
আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আলিফ-লাম-রা। এটি কিতাব যার আয়াতসমূহ সুস্থিত করা হয়েছে, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্ত্বার পক্ষ থেকে।
— Rawai Al-bayan
আলিফ–লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট [১], সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত [২] প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছ থেকে [৩];
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

(এটা শিক্ষা দেয়) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ‘ইবাদাত করবে না, আমি অবশ্যই তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।
— Taisirul Quran
এ (উদ্দেশে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত করনা; আমি (নাবী) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে তোমাদেরকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Sheikh Mujibur Rahman
(এ মর্মে) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Rawai Al-bayan
যে, তোমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো না [১], নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তাহলে, এই সূরাগুলোর এইসব বক্তব্য কী আল্লাহ নিজ মুখে বলেছেন? নাকি আল্লাহ বলেছেন একভাবে, জিব্রাইল বলেছে আরেকভাবে, আর মুহাম্মদ লিখেছে আরেকভাবে? মানে, ব্যক্তিভেদে বক্তব্যের কী পরিবর্তিত হয়েছে? সরাসরি আল্লাহর বানী হলে তো অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল। যেমন ধরুন, সূরা কাউসার এর আয়াতগুলো পড়ি [14] –

আমি তোমাকে (হাওযে) কাওসার দান করেছি।
— Taisirul Quran
আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার [১] দান করেছি।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনার সময় মুমিন ভাইদের বক্তব্য থাকে, সূরা ফাতিহা নাজিল হয়েছে এমনভাবে যেন বান্দারা তা পড়তে পারে। এটি যদি আল্লাহ পাকের বক্তব্য হিসেবে নাজিল হতো, তাহলে কেউ এই সূরাটি নামাজের সাথে পড়তে পারতো না। মুসুল্লিদের পড়ার সুবিধার্থেই সূরাটি এমনভাবে নাজিল হয়েছে। কারণ এভাবে না নাজিল হলে বান্দারা সূরাটি পড়ার সময় সেটি কোন সেন্স মেইক করতো না। কিন্তু একই কথা কী সূরা আল কাউসারের জন্য প্রযোজ্য নয়? এই সূরাটি যখন মুসুল্লিরা নামাজের মাঝে পড়েন, তারা আরবি ভাষাতে বলেন, নিশ্চয়ই আমি (মানে যিনি সূরাটি পড়ছেন তিনি) মুহাম্মদকে আল কাউসার দান করেছি। এর অর্থ হয়, মুসুল্লিরা মুহাম্মদকে কিছু একটা দিচ্ছেন। এই কথাটি সেন্স মেইক করে?

এবারে সূরা মুমতাহিনার ৭ নম্বর আয়াতটির বাঙলা এবং ইংরেজি অনুবাদ পড়ি [15]। বলুন তো, যিনি সকল কিছুর তাকদীর সৃষ্টির পূর্বেই লিখে রেখেছেন, সেই আল্লাহ পাক কেন নিজের বক্তব্যের মধ্যে সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করবেন? আমরা সাধারণ মানুষ নিজের কোন কাজের বিষয়ে আশা করা যায় বা সম্ভবত বা হয়তো শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। মাঝে মাঝে আমরা বলি, সম্ভবত আমি আজকে দুপুরে ইলিশ মাছ খাবো। বা আশা করি আজকে আমি ইলিশ মাছ খাবো। এর কারণ হচ্ছে, আমরা নিশ্চিতভাবে সবকিছু জানি না। অনেক কিছু বিচার বিবেচনা করে সাধারণ কিছু ধারণা করতে পারি। যদি বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হয়ে থাকে, তার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, সম্ভবত আজ দুপুরে আমরা ইলিশ মাছ খাবো। কিন্তু ভিন্ন কিছুও ঘটতে পারে। যেমন ইলিশ মাছটি যদি বেড়াল খেয়ে যায়, তাহলে আর আমার ইলিশ মাছ খাওয়া আজ হবে না। এগুলো হচ্ছে নানা ধরণের সম্ভাবনা, তাই আমরা হয়তো বা সম্ভবত শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। তবে আমরা আশাকরি সাম্ভাব্যতার ভিত্তিতে।

কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে তো এরকম শব্দ ব্যবহারের কোন কারণ নেই। কারণ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই সবকিছু জানেন। এর আরবি শব্দটি লক্ষ্য করুন, শব্দটির অর্থ হয়তো, সম্ভবত, আশা করা যায় ইত্যাদি। তাহলে আল্লাহও কী কোন ঘটনা সম্পর্কে অনিশ্চিত? তিনিও কী আশা করেন? কেন করেন? কার কাছে আশা করছেন তিনি? তাহলে, এই কথাটি তো কোনভাবেই আল্লাহর কথা হতে পারে না। আল্লাহ নিজের সম্পর্কে কেন সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করে কিছু বলবেন? তাহলে কথাটি কী জিব্রাইলের, নাকি নবীর? নাকি আমাদের মত সাধারণ মানুষের? আল্লাহ লওহে মাহফুজে আসলে কী লিখে রেখেছিলেন? সম্ভবত আমি এটি করবো, সেটি করবো? সেটি কীভাবে সম্ভব? [16]

সম্ভবত আল্লাহ তোমাদের মধ্যে আর তাদের মধ্যেকার যাদেরকে তোমরা শত্রু বানিয়ে নিয়েছ তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন (তাদের মুসলিম হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে)। আল্লাহ বড়ই শক্তিমান, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।
— Taisirul Quran
যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন; আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু।
— Sheikh Mujibur Rahman
যাদের সাথে তোমরা শত্রুতা করছ, আশা করা যায় আল্লাহ তোমাদের ও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আর আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এবং আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Rawai Al-bayan
যাদের সাথে তোমাদের শক্ৰতা রয়েছে সম্ভবত আল্লাহ তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন [১] এবং আল্লাহ্‌ ক্ষমতাবান। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Perhaps Allah will put, between you and those to whom you have been enemies among them, affection. And Allah is competent,1 and Allah is Forgiving and Merciful.
— Saheeh International

অনেক মুসলিমই বলবেন, এগুলো আল্লাহ পাক বলে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, কীভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করতে হয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সূরাটিও কী আল্লাহর মুখের বাণী? [17]

তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।

এরকম অসংখ্য সূরা আছে, যেখানে মূল বক্তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বলেই বোঝা যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ মুহাম্মদের কাছে সূরাটি একভাবে পাঠিয়েছিলেন, আর মুহাম্মদ সূরাটি নিজের মত করে বলেছেন। আল্লাহ আসলে বলেছিলেন,

আমি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবো, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আমি(আল্লাহ) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আমার (আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আমার (আল্লাহর) দল। জেনে রাখ, আমার (আল্লাহর) দলই সফলকাম হবে।

এই বক্তব্যটি জিব্রাইলকে বলা হয়েছিল, যেখানে জিব্রাইল কথাটি শুনে মুহাম্মদকে বলেছেন, মুহাম্মদ মুসলিমদের বলেছেন। যার কারণে বাচ্য পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

যেমন ধরুন, আল্লাহ বলছেঃ “আমি সর্বশক্তিমান। আমি সব করতে সক্ষম।” এই কথাটি জিব্রাইল শুনলো। এবং তিনি মুহাম্মদকে বললেন, “আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম।” মুহাম্মদ কথাটি শুনলো। এবং তিনি মুসলিমদের বললেন যে, আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসলো যে, আল্লাহ জানিয়েছেন, “আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম। ”

লক্ষ্য করে দেখুন, একই বক্তব্য, তিনজনার কাছে এসে বক্তব্যগুলোর কিছু পরিবর্তন ঘটে গেল। তাহলে, কোরআনে মুহাম্মদ বা জিব্রাইল বা বান্দাদের যেসকল বক্তব্য পাওয়া যায়, সেগুলো তো আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য হতে পারে না। আল্লাহ তো কথাগুলো সেভাবে বলবেন না।

আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুনঃ [18]

তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।

এবারে ভেবে বলুন তো, উপরের আয়াতে তিনিই কে এবং আমি কে? একই বাক্যের মধ্যে যদি তিনি এবং আমি ব্যবহৃত হয়, তা কী একই জনকে উদ্দেশ্য করে বলা হতে পারে?

আরো দেখুনঃ [19] [20]

তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।

তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে।

লক্ষ্য করুন, একই আয়াতে একবার বলা হচ্ছে তিনি, আবার বলা হচ্ছে আমি। এই আয়াতটির মূল বক্তা কে? আল্লাহ, নবী, জিব্রাইল না বান্দা?

আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি যদি পর্যালোচনা করিঃ [21]

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।

উপরের সূরার আয়াতটি কার বক্তব্য? প্রথম লাইনটি আল্লাহ বা নবী বা জিব্রাইলের বক্তব্য হতে পারে। কিন্তু পরের লাইনগুলো তো পরিষ্কারভাবেই মানুষের বক্তব্য। কোন মানুষের প্রার্থণা, বা প্রত্যাশা। মানুষের কথাবার্তা কোরআনে আল্লাহর বানী হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে কীভাবে? তাছাড়া, আল্লাহ শুরুর লাইনে যেখানে বলেই দিচ্ছেন, আল্লাহ সাধ্যাতীত কাজের ভার কারো ওপর চাপান না, পরের লাইনে আবার বলা হচ্ছে, আমাদের ওপর এমন ভার চাপিও না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। পূর্ববর্তীদের ওপর যা চালিয়েছো! আয়াতটির মধ্যে প্রবল স্ববিরোধীতা লক্ষ্য করছেন?

এরকম ভাষাগত এবং ব্যাকরণগত আরো অসংখ্য সমস্যা পাওয়া যায়, যার তালিকা আমরা ভবিষ্যতে প্রস্তুত করবো বলে আশা রাখি। আপাতত অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছি।

আল্লাহর বাণীতে অসামাঞ্জস্য

কোরআন আল্লাহর বাণী হয়ে থাকলে, কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে নানা ধরণের অসামাঞ্জস্য কেন পাওয়া যায়, সেটি একটি চিন্তার বিষয়। দীর্ঘ ২৩ বছরে ক্রমে ক্রমে কোরআন নাজিল হয়েছিল বলে আমরা জানি। সেই কারণেই কী নানা ধরণের সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়? এই লেখাতেই আমরা দলিল প্রমাণ পেশ করবো, যেখানে দেখা যাবে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল হওয়ার কারণে খোদ নবী মুহাম্মদ কোরআনের আয়াত ভুলে যেতেন। মানুষ হিসেবে ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। এই ভুলে যাওয়ার কারণেই কী এক এক সময় এক এক আয়াত নাজিল হয়ে যেত, যা আসলে পরস্পর বিরোধী বা একটি অন্যটিকে ভুল প্রমাণ করে? আসুন একটি উদাহরণ দেখি।

কোরআনে জাহান্নামীদের খাদ্য সম্পর্কে সূরা আল গাশিয়াহ্‌তে বলা হয়েছে, কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া তাদের সেখানে আর কোন খাবার দেয়া হবে না। [22]

তাদেরকে খাদ্য হিসাবে শিবরিক নামীয় নোংরা ও দুর্গন্ধময় তৃণলতা যা শুকিয়ে গেলে বিষাক্ত হয়ে যায় তা ব্যতীত অন্য কোন খাবার দেয়া হবে না
— Bengali Mokhtasar
কাঁটাযুক্ত শুকনো ঘাস ছাড়া তাদের জন্য আর কোন খাদ্য থাকবে না
— Taisirul Quran
তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই –
— Sheikh Mujibur Rahman
তাদের জন্য কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না
— Rawai Al-bayan
তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া [১] ,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

অবাক কাণ্ড হচ্ছে, সূরা আল হাক্কাহ এর একটি আয়াতে বলা হয়েছে আরেকটি খাদ্যের কথা, যা ছাড়া অন্য কোন খাদ্য থাকবে না। আসুন সেই আয়াতটি দেখি [23] –

তার খাবারের জন্য জাহান্নামীদের শরীরের পুঁজ ব্যতীত অন্য কোন খাদ্য থাকবে না
— Bengali Mokhtasar
ক্ষত হতে পড়া পুঁজ ছাড়া কোন খাদ্য নেই,
— Taisirul Quran
এবং কোন খাদ্য থাকবেনা, ক্ষতনিঃসৃত স্রাব ব্যতীত
— Sheikh Mujibur Rahman
আর ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না,
— Rawai Al-bayan
আর কোনো খাদ্য থাকবে না ক্ষত নিঃসৃত স্রাব ছাড়া,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আরো অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে, সূরা আস সাফফাতে বলা হয়েছে আরো একটি খাদ্যের কথা, আরেকটি গাছের কথা। আসুন সেই আয়াতগুলোও পড়ি, [24]

উপরোল্লিখিত এই স্থায়ী নিয়ামত যা আল্লাহ সেসব বান্দার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছেন যাদেরকে তিনি তাঁর আনুগত্যের জন্য খাঁটি করেছেন তা সম্মান ও অবস্থানের ক্ষেত্রে উত্তম, না কি ‘যাক্কুম’ নামক কুরআনের অভিশপ্ত বৃক্ষ যা কাফিরদের খাদ্য। যা না পুষ্ট করে, না ক্ষুধা নিবারণ করে?!
— Bengali Mokhtasar
আপ্যায়ন হিসেবে এটা উত্তম, না, (জাহান্নামের) জাক্কুম গাছ?
— Taisirul Quran
আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, না কি যাক্কুম বৃক্ষ?
— Sheikh Mujibur Rahman
আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না যাক্কূম* বৃক্ষ? * অতি তিক্ত স্বাদযুক্ত জাহান্নামের এক গাছ।
— Rawai Al-bayan
আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেয়, না যাক্কুম গাছ?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

কাফিররা এর তিতা ও বিস্বাদ ফল ভক্ষণ করবে এবং তা দিয়ে তাদের খালি উদর পূর্ণ করবে।
— Bengali Mokhtasar
জাহান্নামের অধিবাসীরা তাত্থেকে খাবে আর তা দিয়ে পেট পূর্ণ করবে
— Taisirul Quran
ওটা হতে তারা আহার করবে এবং উদর পূর্ণ করবে ওটা দ্বারা
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে
— Rawai Al-bayan
তারা তো এটা থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এ আয়াতগুলো যদি কোন মানুষের লিখিত হতো, তাহলে আমরা সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারতাম যে, জাহান্নামে এই তিন ধরণের খাবারই দেয়া হবে। মানুষের ভুল ত্রুটি হতে পারে, হয়তো ভুলে গেছেন আগে কী বলেছেন। তাই লিখেছেন ঐ খাবার ছাড়া আর কিছু দেয়া হবে না। কিন্তু আল্লাহ থেকে আসা আয়াতে কীভাবে এরকম মারাত্মক ভুল থাকতে পারে? ২৩ বছরে মানুষের ভুলে যাওয়া মেনে নেয়া যায়, কিন্তু আল্লাহর কোরআন, তাও আবার সেটি লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত, সেটিতে কীভাবে এরকম ত্রুটি থাকে?

লাওহে মাহফুজ কী?

লাওহে মাহফুজ কাকে বলে, এই নিয়ে মুসলিমগণদের মধ্যেই নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। এই বিষয়ে জেনে নিই। [25]

  • ইবনে মানযুর বলেন:
    লাওহেঃ “কাঠের প্রশস্ত যে কোন পৃষ্ঠকে লাওহ বলে।”
  • আযহারি বলেনঃ কাঠের পৃষ্ঠকে লাওহ বলা হয়। কাঁধের হাড়ের ওপর যদি কিছু লেখা হয় সেটাকেও লাওহ বলা হয়। যেটার উপর কিছু লেখা হয় সেটাই লাওহ।
    মানে সুরক্ষিত ফলক। আল্লাহ্‌ তাআলার ইচ্ছাসমূহের সংরক্ষণাগার।
  • ইবনে কাছির বলেন:
    লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছেঃ অর্থাৎ এটি উচ্চ পরিষদ কর্তৃক সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত।(তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৪৯৭, ৪৯৮)
  • ইবনুল কাইয়্যেম বলেনঃ
    এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, শয়তানদের পক্ষে কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কুরআন যে স্থানে রয়েছে সে স্থানটি শয়তান সেখানে পৌঁছা থেকে সংরক্ষিত। এবং কুরআন নিজেও সংরক্ষিত; কোন শয়তান এতে সংযোজন-বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে না।
    আল্লাহ্‌ তাআলা কুরআন যে আধারে রয়েছে সে আধার সংরক্ষণ করেছেন এবং কুরআনকেও যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের শব্দাবলি যেভাবে হেফাযত করেছেন অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থকেও বিকৃতি থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের কল্যাণে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেছেন যারা কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি ছাড়া কুরআনের হরফগুলো মুখস্ত রাখে এবং এমন কিছু ব্যক্তি নিয়োজিত করেছেন যারা কুরআনের অর্থকে বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করে।”(দেখুন: আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৬২)
  • কিছু কিছু তাফসিরে এসেছে যে, ‘লাওহে মাহফুয’ হচ্ছে- ইস্রাফিলের কপালে; অথবা সবুজ রঙের মণি দিয়ে তৈরী এক প্রকার সৃষ্টি; কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য ব্যাখ্যা।

কোরআনের আদি ভাষা কী?

শুরুতেই যেই প্রশ্নটি আসে, তা হচ্ছে, লাওহে মাহফুজে আল্লাহ পাকের লিখিত কোরআনের ভাষা কী ছিল? সেটি অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মাতৃভাষা কী আরবি? নাকি আল্লাহ পাক এবং ফেরেশতাদের অন্য কোন ভাষা ছিল? সেই ভাষাটি কী? এবং সেই ভাষা থেকে আরবি ভাষাতে অনুবাদ কে করলো? কোনকিছু অনুবাদ করা হলে ভাষাগত কারণে নানাবিধ গরমিল থাকে। তাই অনুবাদের আগে সেটি কোন ভাষাতে ছিল তা জানা জরুরি। আল্লাহ পাক যে শব্দ উচ্চারণ করেন, তা আমরা হাদিস থেকে জানি। তিনি শব্দ উচ্চারণ করে থাকলে সেই শব্দ এবং বাক্যগুলো কোন ভাষাতে ছিল, সেটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন।

প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়, প্রচলিত পুরাতন আরবি ভাষার দুটি শাখা ছিল। প্রথমটি ছিল সাফাইটিক (Safaitic), যা ১০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। আরেকটি আরবি ভাষার প্রকরণ ছিল হিসমাইক (Hismaic) যা ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এই পুরাতন আরবি উপভাষাসমূহ এরপরে একত্রিত হয়ে নানা সংযোজন বিয়োজনের পরে ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষার উদ্ভব হয়। কোরআন এবং অন্যান্য সাহিত্য রচনা লেখার জন্য সেই ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত আরবি ভাষার মধ্যে উচ্চারণগত নানা বৈচিত্র্য ছিল। কোরআন কুরাইশদের উচ্চারণরীতি অনুসরণ করে রচিত হয়েছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে নানা গোত্রের ভিন্ন ভিন্ন ডায়লেক্ট একত্রিত করে কোরআন সংকলনের সময় কিছু সমস্যার উদ্রেক হয়েছিল। সবকিছু এই লেখাটিতে অন্তর্ভূক্ত করলে এই লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সে বিষয়ে আলাদা লেখা পড়তে পারেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য এই লেখাটি পড়তে হবে। [26]

কোরআন কখন প্রথম লিখিত?

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন, মুসলমানরা বিশ্বাস করে এটি আল্লাহর দ্বারা প্রেরিত সর্বশেষ আসমানি কেতাব। প্রথম অবস্থায় সৃষ্টির শুরুতে আল্লাহ পাক লাওহে মাহফুজ নামক জায়গাতে কোরআন লেখেন, লিপিবদ্ধ করেন, এবং এরপরে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ, কোরআনে কোন কোন সূরা অন্তর্ভূক্ত থাকবে, সেগুলো কেমন হবে, সেগুলোর ভাষা এবং বাক্যের গঠন কেমন হবে, কোন কোন চরিত্র নিয়ে আলোচনা থাকবে, এই সবই আসলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির একদম শুরুতে আল্লাহ পাক লিখে রাখেন। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পৃথিবীতে নবী মুহাম্মদকে প্রেরণ এবং তার মাধ্যমে কোরআন নাজিলের বিষয়টি আল্লাহ সেই শুরুতেই নির্ধারণ করে ফেলেন। এরপরে কোরআন নাজিলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নবী মুহাম্মদকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। কোরআনের আয়াত সমূহ নাজিলের জন্য উপযুক্ত প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাবলী আল্লাহ পাক নিজেই সৃষ্টি করেন, এবং সেই পরিকল্পনা অনুসারে কোরআন নাজিল করেন। কারণ উপযুক্ত প্রেক্ষাপট না ঘটলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা সম্পন্ন হতো না। [27]

বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।

নিচের হাদিসটি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিচের হাদিসটিতে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে যে [28] [29] –

সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই।
২১৫৮. ইয়াহইয়া ইবন মূসা (রহঃ) ….. আবদুল ওয়াহিদ ইবন সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার মক্কায় এলাম। সেখানে আতা ইবন আবু রাবাহ (রহঃ) এর সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁকে বললামঃ হে আবূ মুহাম্মদ, বাসরাবাসরীরা তো তাকদীরের অস্বীকৃতিমূলক কথা বলে। তিনি বললেনঃ প্রিয় বৎস, তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত কর? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সূরা আয-যুখরুখ তিলাওয়াত কর তো। আমি তিলাওয়াত করলামঃ
হা-মীম, কসম সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি তা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআন রূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার। তা রয়েছে আমার কাছে উম্মূল কিতাবে, এ তো মহান, জ্ঞান গর্ভ (৪৩ঃ ১, ২, ৩, ৪)।
তিনি বললেনঃ উম্মূল কিতাব কি তা জান? আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ হল একটি মহাগ্রন্থ, আকাশ সৃষ্টিরও পূর্বে এবং যমীন সৃষ্টিরও পূর্বে আল্লাহ তাআলা তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এতে আছে ফির‘আওন জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত, এতে আছে তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবীও ওয়া তাব্বা ‏(‏تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ‏) আবূ লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হয়েছে আর ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও।
আতা (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম সাহাবী উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পুত্র ওয়ালীদ (রহঃ)-এর সঙ্গে আমি সাক্ষাত করেছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ মৃত্যুর সময় তোমার পিতা কি ওয়াসীয়ত করেছিলেন?
তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেনঃ হে প্রিয় বৎস, আল্লাহকে ভয় করবে। যেনে রাখবে যতক্ষণ না আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাকদীরের সব কিছুর ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি কখনো আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে না। তা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে জাহান্নামে দাখেল হতে হবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। এরপর একে নির্দেশ দিলেন, লিখ, সে বললঃ কি লিখব? তিনি বললেনঃ যা হয়েছে এবং অনন্ত কাল পর্যন্ত যা হবে সব তাকদীর লিখ। সহীহ, সহিহহ ১৩৩, তাখরিজুত তহাবিয়া ২৩২, মিশকাত ৯৪, আযযিলাল ১০২, ১০৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৫৫ (আল মাদানী প্রকাশনী)
(আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি এ সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তাকদীর বিষয়ক হাদিস তিরমীজী শরিফ
আবু লাহাবের তাকদীর পুর্ব নির্ধারিত

ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ ফেরেশতা জিব্রাইল এর মাধ্যমে ইসলামিক নবী মুহাম্মাদ এর কাছে মৌখিকভাবে কোরআনের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। তবে শুধুমাত্র যে জিব্রাইল মারফতই কোরআন নাজিল হয়েছে, সেটিও সত্য নয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারেই কোরআন নাজিল হয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়ে।

আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা

অনেকেই বলে থাকেন, আদম নিজ ইচ্ছাতেই সজ্ঞানে নিজের ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে গন্দম খাওয়ার অপরাধ করেছিল। তাই এর সম্পূর্ণ দায় আদম এবং হাওয়ার। এখানে আল্লাহ পাকের কোন দায় ছিল না। আবার অনেকে বলেন, এটি ছিল আল্লাহ পাকের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। আল্লাহ পাকই ঠিক সেইরকম পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছিলেন, যেন আদম সেই ফল খায় এবং পৃথিবীতে নির্বাসিত হয়। কারণ পৃথিবীতে নির্বাসিত না হলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা সফল হতো না। যদি আল্লাহ পাকই সেরকম পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আদমকে দিয়ে তিনি গন্দম খাইয়েছেন, এবং শয়তানকেও একই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। সেই বিষয়টি আশাকরি এই রেফারেন্সগুলো যাচাই করবার পরে আপনাদের কাছে খোলাসা হয়ে যাবে।

শুরুতেই এই সম্পর্কিত সহিহ হাদিসগুলো পড়ে নিই। [30] [31]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০১। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার, ইবনু আবূ উমর মাক্কী ও আহমাদ ইবনু আবদ দাব্বিয়্যু ও তাঊস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর মধ্যে বিতর্ক হয়। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদের বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে আমাদের বের করে দিয়েছেন। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি তো মূসা। আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে কথা বলে আপনাকে মনোনীত (সম্মানিত) করেছেন এবং আপনার জন্য তার হাতে লিখে (কিতাব তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
 আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর তর্কে বিজয়ী হলেন।
আর ইবনু আবূ উমর ও ইবনু আবাদাহ বর্ণিত হাদীসে তাদের একজন বলেছেন,خَطَّ অন্যজন বলেছেন,كَتَبَ তিনি তার হাতে তোমার জন্য তাওরাত লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহিহ মুসলিম আদম ও মুসার বিতর্ক 
হাদিস নম্বর ৬৫০১
সহিহ মুসলিম আদম ও মুসার বিতর্ক 
হাদিস নম্বর ৬৫০১

অর্থাৎ, আদমকে সৃষ্টির বহু পূর্বেই আল্লাহ পাক সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা করে রাখেন যে, তিনি পৃথিবীতে মানুষ পাঠাবেন, এবং মানুষের কাছে ওহী পাঠাবেন। তিনি যেহেতু সূরা লাহাবের মত নির্দিষ্ট মানুষকে উদ্দেশ্য করে কী সূরা নাজিল হবে, সেটিও সৃষ্টির শুরুতে সেই লাওহে মাহফুজে লিখে রাখেন, সেহেতু আবু লাহাবের জন্ম হবে, সে কাফের হবে, নবী মুহাম্মদের বিরোধীতা করবে, এই সবই আগে থেকে নির্দিষ্ট করা ছিল। আবু লাহাব যদি সেইদিনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতো, তাহলে আল্লাহ পাকের আগে থেকে লিখে রাখা সূরা লাহাব পরিবর্তন করতে হতো। অর্থাৎ এখানে আবু লাহাবের স্বাধীন কোন ইচ্ছাশক্তি ছিল না। তার কাফের হওয়াটাই অবশ্যম্ভাবী ছিল।

আলোচনার খাতিরে, আবু বকর এবং আবু লাহাব এই দুইজনকে উদাহরণ হিসেবে ধরে নিই। আল্লাহ আবু লাহাবের বিরুদ্ধে সূরা লিখে বসে আছে সেই সৃষ্টির শুরুতে। এবং আবু বকর যে নবীর বন্ধু হবে, সেটাও পূর্ব নির্দিষ্ট। এখন, এমন হওয়া কী সম্ভব ছিল যে, আবু বকর স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে কাফের হলেন, আর আবু লাহাবা হয়ে গেলেন মুসলিম? না, এমনটি সম্ভব ছিল না। কারণ তাহলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা পুরোটাই নষ্ট হতো। তখন হয়তো ধ্বংস হোক আবু বকরের হস্তদ্বয় বলে আল্লাহ পাকের ঘৃণাত্মক সূরা নাজিল করতে হতো। কিন্তু এমনটি আদৌ সম্ভব ছিল না। কারণ আল্লাহ পাক আবু লাহাবের বিরুদ্ধে সূরা আগে থেকেই লিখে রেখেছেন।

এই বিষয়ে আরো কিছু সহিহ হাদিস দেখে নেয়া যাক [32] [33]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০৭। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা সমগ্র সৃষ্টির ভাগ্যলিপি আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

তাকদীর আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিখিত

সূরা লাহাবটি আল্লাহ পাক সেই মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে লিখিতভাবে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করেন। এরপরে আবু লাহাবের সাথে ইসলামের নবি হযরত মুহাম্মদের দীর্ঘমেয়াদি শত্রুতা সৃষ্টি করেন, যেন এই সূরাটি প্রেরণ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এবং আবু লাহাবের অন্তরে মোহর মেরে দেন, যেন আবু লাহাব কোন অবস্থাতেই ইসলাম গ্রহণ না করে। কারণ আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণ করে ফেললে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে যেতো। আল্লাহ পাক যেই আবু লাহাব সূরাটি সৃষ্টির আদিতে লিখে রেখেছিলেন, তা আর নাজিলের প্রয়োজন হতো না। তখন আবু লাহাবের সূরাটিকে আবার আল্লাহ পাকের পালটে ফেলতে হতো। তাই আবু লাহাবের সাথে মুহাম্মদের শত্রুতা আল্লাহ পাক নিশ্চিতভাবেই সচেতনভাবে তৈরি করেছিলেন, সূরাটি নাজিলের পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহ পাক কোরআনে নিজেই বলেছেন [34] [35]

আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।

যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

উপরের আয়াত দু’টো থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আবু লাহাবের মত কয়েকজনকে বা বহু সংখ্যক মানূষকে আল্লাহ পাক নিজেই পথভ্রষ্ট করেছিলেন, সূরা আবু লাহাব নাজিলের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য। আবু লাহাবের মত মানুষগণ যদি সেই সময় ইসলাম কবুল করে নিতো, আল্লাহ যদি আবু লাহাবকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে তার মন নরম করে দিতেন, তাহলে আল্লাহ পাকের আগে থেকে লিখে রাখা ঐ সূরাটি অর্থহীন হয়ে যেতো। সেটা আর নাজিলের দরকার হতো না। তাই বোঝা যাচ্ছে, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারেই, সকল কিছুই পরিকল্পিত এবং পূর্ব নির্ধারিত। এখানে আবু লাহাবের মত সামান্য মানুষের চাইতে জরুরি হচ্ছে, আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা।

তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, গন্দম ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আদমের তেমন কোন অপরাধ ছিল না, যেহেতু সেটি আল্লাহর পরিকল্পনারই অংশ। শয়তান এবং আদম তার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, ইবলিশ বা শয়তান যে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অমান্য করবেন, হযরত আদমকে সিজদা করতে রাজি হবেন না, এটি ছিল আল্লাহ পাকের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। কারণ সেদিন যদি ইবলিশ আদমকে সিজদা করতো, তাহলে আদমকে পৃথিবীতে পাঠাবার প্রয়োজনও হতো না, পৃথিবীতে মানুষ জাতি এবং মানব সভ্যতার বিকাশ হতো না, এবং নবী মুহাম্মদকে পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াতেরও দরকার হতো না। নবী মুহাম্মদকে পাঠিয়ে মানুষকে যেহেতু হেদায়াত করতেই হবে, কোরআন নাজিল করতেই হবে, সেহেতু ইবলিশকে সেই সময়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতেই হতো। নইলে আল্লাহ পাকের এক বিশাল পরিকল্পনা মাঠে মারা যেতো।

এতো গেল ইসলামী বিশ্বাসের আলোচনা। কিন্তু সত্যিকার ভাবে কোরআন কবে প্রথমবার লিখিত হয়েছিল?

শবে কদরের রাত

কোরআন থেকে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ পাক লাওহে মাহফুজে প্রথম কোরআন লিপিবদ্ধ করেন, এবং শবে কদরের রাতে তিনি একসাথে পুরো কোরআন প্রথম আসমানে নাজিল করেন। সেখান থেকে ধাপে ধাপে মুহাম্মদের কাছে জিব্রাইল ওহী নিয়ে আসতো। কিন্তু সেটি সত্য হলে, লাওহে মাহফুজ থেকে একবার কোরআনের আয়াত চলে আসার পরে সেটি আবারো সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন সম্ভব নয়। আল্লাহর পাঠানো আয়াত যে সংশোধিত, পরিমার্জিত, পরিশোধিত হয়েছে, নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো সংস্কার করতে হয়েছে, এই লেখার পরবর্তী অংশে সেগুলোর অসংখ্য প্রমাণ পাবেন। অথচ কোরআনেই বলা আছে, [36] [37]

নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।

আল্লাহ কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা বলেন,

হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ কোরআন হুবুহু যেমন আছে তেমন একই রাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে নাজিল হয়ে থাকলে, আল্লাহর হুকুমে কোন আয়াতের সংশোধন করতে হলে, সেই সংশোধিত আয়াতগুলো কোথা থেকে আসতো? পরিবর্তনগুলো কী লাওহে মাহফুজে লিখিত কোরআনে সংশোধন করা হয়েছে? নাকি লাওহে মাহফুজে যা লেখা, আমাদের আজকের কোরআন ভিন্ন রকম?

আরো ভালভাবে বুঝি। প্রথমে লাওহে মাহফুজে লিখিত হলো। সেটি হুবুহু প্রথম আসমানে আসলো। এরপরে জিব্রাইল ওহী নিয়ে আসলো। মুহাম্মদ তা সবাইকে শোনালেন। এরপরে আরশে বসা আল্লাহ আবার তার পাঠানো আয়াতের সংশোধনী পাঠালেন। জিব্রাইল আবার আরশে গিয়ে লাওহে মাহফুজ থেকে সংশোধনী নিয়ে প্রথম আসমানে আসলেন। সেইখান থেকে আবার মুহাম্মদের কাছে সংশোধত ওহী আসলো। মুহাম্মদ আবারো তার অনুসারীদের নতুন এবং সংশোধিত আয়াত পড়ে শোনালেন। খুবই ভয়াবহ কাণ্ডকারখানা!

ওহী নাজিলের পদ্ধতি

ওহী হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক রাসূলদের প্রতি প্রেরিত বার্তা বা নির্দেশনা। ইসলামী বিশ্বাস মতে কোরআন নাজিল হয়েছিল বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে।

ঘণ্টা ধ্বনির পদ্ধতি

হারেস ইবনে হিশাম (রা.) রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ওহি আসে ঘণ্টার আওয়াজের মতো। এটা আামার জন্য সবচেয়ে কষ্টকর।’ [38] [39] –

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ ওহীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি ওহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই, আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাহক্বীক: মারফু হাদিস।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ২, ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। মুসলিম ৪৩/২৩, হা: ২৩৩৩ , আহমাদ ২৫৩০৭ ( আধুনিক প্রকাশনী. ২ , ই.ফা. ২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আসতো

ঠিক একইসাথে, মুহাম্মদ এটিও বলেছেন যে, ঘণ্টা হচ্ছে শয়তানের বাঁশি। [40]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ পোশাক ও সাজসজ্জা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২২. সফরে কুকুর ও ঘণ্টা রাখা মাকরূহ
৫৩৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘন্টা শয়তানের বাঁশি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ঘণ্টা শয়তানের বাঁশি

তারমানে দেখা যাচ্ছে, নবীর কাছে যখন ওহী আসতো, তখন ঘণ্টাধ্বনির শব্দ হতো। আবার ঘণ্টা হচ্ছে শয়তানের বাঁশি, এটিও নবীরই বক্তব্য।

মানবাকৃতিতে ফেরেশতার আগমন

মুহাম্মদের কাছে হজরত জিবরাঈল মানবাকৃতিতে আসতেন। এ সম্পর্কে মুহাম্মদ বলেছেন, ‘কখনও কখনও ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে আমার কাছে আসত। এ পদ্ধতিটি আমার জন্য সহজ ছিল।’ সাহাবিদের মধ্যে দাহয়িয়াতুল কালবি এর চেহারা নিয়ে জিবরাঈল আসতেন। এর কারণ হিসেবে মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘এ সাহাবি অত্যধিক সুদর্শন ছিলেন। এতই সুন্দর ছিলেন যে, কখনও কখনও মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে চলতেন।’ (উমদাতুল কারি : ১/৪৭)। তাছাড়া একবার অপরিচিত লোকের বেশে জিবরাঈল নবীর কাছে এসেছিলেন বলে হজরত উমর থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে।

অন্তরে ঢেলে দেয়া

মুহাম্মদের অন্তরে কিছু কথা আল্লাহপাক সরাসরি ঢেলে দিতেন। আবার জিবরাঈলের মাধ্যমেও ঢেলে দিতেন। এ ক্ষেত্রে জিবরাঈল এর সামনে আসার দরকার হতো না। আবার কোনো কথা বলারও প্রয়োজন হতো না।

সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা

আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গে কথা বলতেন এ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে হজরত মুসার ওপরও ওহি আসত।

ফেরেশতার মাধ্যমে প্রেরিত

ফেরেশতা জিবরাঈল এর মাধ্যমে প্রেরিত ওহিকে ওহিয়ে মালাকি বলে। কখনও ফেরেশতা পর্দার আড়ালে থেকে ওহি বলে চলে যান। আবার কখনও সামনে থেকে ওহি শুনিয়ে দেন। ফেরেশতা কখনও মানবাকৃতিতে আসেন। আবার কখনও নিজ সুরতে আসেন। মুহাম্মদ জিবরাঈলকে মোট তিনবার নিজ আকৃতিতে দেখেছিলেনঃ নবুয়তের প্রথম দিকে একবার, মিরাজের রাতে একবার, আরেকবার নবী নিজেই জিবরাঈল এর আকৃতি দেখতে চেয়েছিলেন।

স্বপ্ন দেখা

স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নবীদের তার নির্দেশ জানিয়ে দিতেন। যেমন ইবরাহিম কে স্বপ্নে বলে দিয়েছেন ছেলে ইসমাঈলকে কোরবানি করতে হবে। আবার নবী মুহাম্মদ স্বপ্নের মাধ্যমে ওমরা করার নির্দেশ পেয়েছিলেন। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা ঘটে। (শরহে ফায়জুল কাবির : ২৪)। আয়েশা বলেন, ‘ঘমুন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুল (সা.) এর ওপর ওহির সূচনা হয়। ওই সময় স্বপ্নযোগে তিনি যা প্রত্যক্ষ করতেন, সকালে তা সত্য হয়ে ধরা দিত।’ [41]

কোরআন, স্বপ্নরূপে ওহী আসতো

অন্য ফেরেশতা দ্বারা

নবুয়তের শুরুর দিকে কয়েক বছর, বিভিন্ন বর্ণনা মতে তিন বছর জিবরাঈল ওহি নিয়ে আসেননি। তখন আরেক ফেরেশতা ইসরাফিল ওহি নিয়ে আসতেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু ঐসময়ে জিব্রাইল কেন আসতেন না, তা জানা যায় না। ফেরেশতা জিব্রাইল কী সেই সময়ে অসুস্থ ছিলেন, যে তার কাজ অন্য ফেরেশতার করতে হতো?

কোরআন সংরক্ষণ

মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংরক্ষণ

হযরত মুহাম্মদের জীবিত অবস্থায় কোরআন একত্র অবস্থায় ছিল না বলেই প্রখ্যাত সাহাবী যায়েদ ইবনে সাবেত বর্ণনা করেছেন [42]-

যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেছেনঃ “নবীজী (সা) ইন্তেকাল করলেন এবং তখনও কোরআন শরীফ এক জায়গায় একত্র করা হয় নি।”

হযরত মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংরক্ষণের জন্য মুহাম্মদ যেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন, তা হচ্ছে পুরো কোরআন মুখস্থ করা। কোরআনে হাফেজদের মধ্যে প্রধান ছিলেন [43]-

হজরত আবু বকর, উমর, ওসমান, আলী, তালহা, সাআদ, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুজায়ফা বিন ইয়ামান, হজরত সালেম, আবু হুরায়রা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ বিন আমর, মুয়াবিয়া, ইবনে জুবাইর, আবদুল্লাহ বিন আস্ সায়েব, আয়েশা, হাফসা, উম্মে সালমা, উম্মে ওয়ারাকা, উবাই ইবনে কাআব, মাআজ ইবনে জাবাল, আবু হুলাইমা মাআজ, জায়েদ ইবনে সাবেত, আবুদ্ দারদা, মুজাম্মা বিন জারিয়া, মাসলামা বিন মুখাল্লিদ, আনাস ইবনে মালেক, উকবা বিন আমের, তামিম দারেমি, আবু মুসা আশআরি এবং হজরত আবু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ।

সেই সাথে, কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি চল্লিশজন ওহি লেখক নিযুক্ত করেছেন। সে সময় কাগজ ছাড়াও পাথর, চামড়া, খেজুরের ডাল, বাঁশের টুকরা, গাছের পাতা এবং চতুষ্পদ জন্তুর হাড্ডির ওপর কোরআন লিখে রাখা হতো। অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবীর সময়ে কোরআন বলে কোন গ্রন্থ ছিল না। তবে সাহাবায়ে কেরামের কারো কারো কাছে ব্যক্তিগতভাবে কোরআনের অসম্পূর্ণ কপি বিদ্যমান ছিল। একটি হাদিসে কোরআন সংকলনের কথা শুনে আবূ বাকর উমারকে বলেন, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশায় এই কাজটি করেননি [44]। তবে বুখারি শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে, কোরআন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে হজরত ইবনে উমর বলেন, ‘রাসুল (সা.) কোরআন নিয়ে (অর্থাৎ কোরআনের অসম্পূর্ণ কপি নিয়ে) শত্রুদের ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ [45]

কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [46] –

আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।

আল্লাহ পাকের এই সরাসরি কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও, কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদের যুগে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বস্তুর ওপর কোরআন সংরক্ষিত ছিল, তাই হজরত আবু বকরের খেলাফতের সময় বিক্ষিপ্ত অংশগুলো একত্র করে সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। হযরত উমরের আশঙ্কা ছিল, যুদ্ধে বহুসংখ্যক কোরআনে হাফেজের মৃত্যু হওয়ায় কোরআনের বড় অংশই হারিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি কোরআনের আয়াতগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই যা সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, আল্লাহপাকের সরাসরি দায়িত্ব নেয়ার পরেও উমর তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন এবং তা আসলে সংরক্ষণের মূল ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত উমর। [47] [48]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০-(১০) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধের পর পর খলীফাতুর রসূল আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলাম। দেখলাম ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে উপবিষ্ট। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘উমার আমার কাছে এসে খবর দিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক কুরআনের হাফেয শহীদ হয়ে গেছেন। আমার আশংকা হয়, বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে এভাবে হাফেয শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ লোপ পেয়ে যাবে। তাই আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কুরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্রিত করতে হুকুম দেবেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আমি ‘উমারকে বললাম, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? ‘উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ। এটা হবে একটা উত্তম কাজ। ‘উমার (রাঃ) এভাবে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ এ কাজের গুরুত্ব বুঝার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং আমিও এ কাজ করা সঙ্গত মনে করলাম।

(বুখারী)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৪৯৮৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭২, সহীহ ইবনু হিববান ৪৫০৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা ও সংকলন

আবু বকরের আমলে কোরআন

আবু বকর যেই কোরআন সংকলন করেন তাকে আদি কোরআন বলা হয়। এই কোরআন মুহাম্মদের বর্ণিত ধারাক্রম অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছে। সূরাগুলো আলাদা রেখে দেওয়া হয়েছে; সূরার ক্রমধারা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এটি সাত হরফ বা সাত কেরাতে লেখা হয়েছে। এ কপিটি হীরার হস্তাক্ষরে লেখা হয়েছে। এই কোরআনে শুধুমাত্র সেই সব আয়াত যুক্ত হয়েছিল, যেগুলো রহিত হয়নি। [49]

এই আদি কোরআনটি আবু বকরের পরে হযরত উমর এর কাছে সংরক্ষিত থাকে। এরপরে সেটি আসে হযরত হাফসা এর কাছে, যিনি হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী এবং উমরের কন্যা ছিলেন। এরপরে হযরত উসমান কোরআন সংকলনের কাজে হাত দেন, এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্রমধারা অনুসারে কোরআন সংকলন করেন। যা ছিল আবু বকরের কোরআন থেকে অনেকটাই ভিন্ন। উসমানের কোরআনের সাথে আবু বকরের আদি কোরআনের পার্থক্য লক্ষ্য করে সেই সময়ে সেই আদি কোরআনটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। [50] [51] –

কোরআন 11

উসমানের কোরআন এবং হত্যাকাণ্ড

বর্তমান সময়ে আমরা যেই কোরআন দেখি, সেটি সংকলন করেছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান। সংকলনের পরে হযরত উসমান ঘোষণা দিলেন যে, যার কাছে যত কোরআন আছে সেগুলো সব পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যখন কুফাতে শোনা গেল যে, তাদের কাছে সংরক্ষিত সব কোরআনের আয়াত পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হবে, আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিলেন [52] –

কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি (মুহাম্মদের), যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।”

মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি লিখেছেন [53] [54] –

যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)। আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ।

ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন [55] –

আমি সরাসরি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্‌র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?”

উসমানের এই সংকলন কী অন্যদের কাছে বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল? ইসলামের অনুসারী অন্যান্য সাহাবীগণ কী উনার এই সংকলনের পদ্ধতি সম্পর্কে একমত ছিলেন? সেটি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে, আমাদের জানা দরকার, হযরত উসমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল। [56]

প্রশ্ন হচ্ছে, খলিফা উসমানকে কিতাবুল্লাহ বা কোরআনে পরিবর্তনের অভিযোগে অভিযুক্ত কারী এই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে ছিলেন? হ্যাঁ, তিনি ছিলেন খোদ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের সন্তান এবং অত্যান্ত ধার্মিক একজন মুসলিম হিসেবে যিনি ছিলেন বিখ্যাত।

উসমান হত্যাকাণ্ড
উসমান হত্যা

> নোকতা সংযোজন

প্রাচীন আরবী ভাষাতে নোকতা সংযোজন করার রীতি প্রচলিত ছিল না। মুহাম্মদ যখন তাঁর সাহাবীদেরকে দিয়ে কোরআন লিখিয়েছিলেন, তখন কোরআনের অক্ষরগুলোর মধ্যেও কোনো নোকতা বা হরকত ছিলো না।হযরত উসমানের আমলে সংকলিত কোরআনের কপি বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করার সাথে সাথে তাই তেলাওয়াতকারীও পাঠিয়েছিলেন। সেই আমলে হরফে নোকতা সংযোজন করাকে দোষণীয় এবং হারাম কাজ মনে করা হত। কিন্তু ইসলামি সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করায় অনারব লোকদের উচ্চারণ জনিত সমস্যা লক্ষ্য করে নোকতা সংযোজিত করা হয়।

বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ তাবে’ঈ হযরত আবুল আসাওয়াদ দোয়ালী (র) আনজাম অথবা হযরত আলী সর্বপ্রথম নোকতা প্রচলন করেন বলে জানা যায়। তবে সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না, কে নোকতার প্রচলন করেছিলেন।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, খোদ নবী মুহাম্মদ যেই কাজটি করেন নি, তা অন্যরা করে কোরআন দূষিত করতে পারে কিনা!

> হরকত সংযোজন

প্রাথমিক কোরআনে হরকত বা যবর-যের-পেশ ইত্যাদিও ছিল না। এই বিষয়ে নানা মতামত পাওয়া যায়। কেউ মনে করেন আবুল আসওয়াদ দোয়ালী হরকত প্রবর্তন করেন। অনেকের মত হচ্ছে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার ও নসর ইবন আসেম লাইসীর দ্বারা এ কাজ করিয়েছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, আবুল আসওয়াদ দোয়ালীর প্রবর্তিত হরকতগুলো আবার আজকের সময়ে প্রচলিত হরকতের মত ছিল না। সেই হরকতগুলো আবারো পরিবর্তিত হয়।

আলীর কোরআন এবং শিয়া মুসলিমগণ

ইসলামের প্রধান দুইটি ধারা হচ্ছে সুন্নী ইসলাম এবং শিয়া ইসলাম। ইতিহাসে সুন্নীগণ শিয়াদের নানাভাবে কাফের ঘোষণা করেছে, আবার শিয়ারাও সুন্নীদের কাফের ঘোষণা করেন। দুই পক্ষই নিজেদের ইমান আকিদাকেই সহিহ ইসলাম বলে গণ্য করেন। কারা আসলেই সহিহ সেই বিতর্কে যাচ্ছি না, তবে শিয়াদের ইমান আকিদা অনুসারে কোরআন বিকৃত হয়েছে। শিয়া অনুসারিগণ মনে করে আলী ব্যক্তিগত ভাবে কোরআনের একটি অনুলিপি তৈরী করেছিলেন। যেটি সংকলিত হয়েছিল নবী মুহাম্মদের ইন্তেকালের ছয় মাসের মধ্যে। আর তাদের মতে এটিই পবিত্র আল কোরআনের প্রথম ও পরিপূর্ণ সংকলন।

শিয়া মুসলিমদের একটি দল দাবী করেন, আলী পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণ অংশ লিপিবদ্ধ করেছেন। যেখানে আয়াত, সূরা, পারা ইত্যাদির নির্ভুল বর্ণনা ছিল। যার মধ্যে কোন কিছুই বাদ পড়ে নি। এমনকি একটি একক অক্ষর আলিফ বা লাম পর্যন্তও না। তবে কোরআনের সংকলকগণ এটাকে গ্রহণ করে নাই।

তারা বিশ্বাস করেন আলী কর্তৃক লিপিবদ্ধ কোরআন ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত, তবে খলিফা উসমান সেটি গ্রহণ করেন নি। তারা এটাও বিশ্বাস করেন, কোরআনের সূরা পরিবর্তন করা হয়েছে, পাঠ পদ্ধতির কিছু অংশ পরিবর্তন এনেছে, তাবদিল, করে উম্মা থেকে ইমমা করা হয়েছে।

শিয়াদের মতে, হযরত আলী যেই কোরআন সংকলন করেছিলেন, সেটিই বিশুদ্ধ এবং দূষণমুক্ত। শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য “হাদিস” গ্রন্থ হচ্ছে, মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনীর ‘আল কাফী’ (الكافي)। এই গ্রন্থে “ইমামগণই আল-কোরআনকে পরিপূর্ণ সংকলন করেন এবং তারাই তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে” শিরোনামের অধীনে বলা হয়েছেঃ

জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ জাফর(আ) -কে বলতে শুনেছি, মানুষের মধ্যে মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ দাবি করতে পারে না যে, আল্লাহ যেভাবে কোরআন নাযিল করেছেন, সে তা পরিপূর্ণভাবে সেভাবে সংকলন করেছে; বরং আলী ইবন আবি তালিব ও তার পরবর্তী ইমামগণই আল্লাহ যেভাবে তা নাযিল করেছেন, ঠিক সেভাবে সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন।

তিনি আরো বলেন [57] –

আবূ আবদিল্লাহ (জাফর সাদিক) বললেন: “… যতক্ষণ না কায়েম বা মাহদীর উত্থান ঘটবে, যখন সে কায়েম বা মাহদীর উত্থান হবে, তখন আল্লাহর কিতাবকে তার সীমারেখায় রেখে পাঠ করা হবে; আর তিনি কোরআনের ঐ কপিটি বের করবেন, যা আলী(আ) লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

তিনি আরো বর্ণনা করেন [58] –

আবূ আবদিল্লাহ(আ) (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় জিবরাঈল আ. যে কুরআন মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নিকট নিয়ে এসেছে, তাতে আয়াত সংখ্যা সতের হাজার।

প্রখ্যাত শিয়া আলেম নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ গ্রন্থে বলেন [59] –

আমীরুল মুমিনীনের হযরত আলী(রা) এর কাছে একটি বিশেষ কুরআন ছিল, যা তিনি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ইন্তিকালের পর নিজেই সংকলন করেন এবং তা জনসমক্ষে পেশ করেন; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে। অতঃপর তিনি তা তাদের দৃষ্টি থেকে গোপন করে রাখেন; আর তা ছিল তার সন্তান তথা বংশধরের নিকট সংরক্ষিত, ইমামত তথা নেতৃত্বের সকল বৈশিষ্ট্য ও নবুয়তের ভাণ্ডারের মত যার উত্তরাধিকারী হয় এক ইমাম থেকে অপর ইমাম। আর তা প্রমাণ (মাহদী) এর নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। “আল্লাহ আল্লাহ দ্রুত তাকে মুক্ত করে দিন”- তিনি তখন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তাদেরকে তা পাঠ করার নির্দেশ দিবেন; আর তা সংকলন, সূরা ও আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিদ্যমান এই কুরআনের বিপরীত; এমনকি শব্দসমূহও কম-বেশি করার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিপরীত। আর যেখানে সত্য আলী’র সাথে; আর আলী সত্যের সাথে, সেখানে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে উভয়দিক থেকেই পরিবর্তন রয়েছে; আর এটাই উদ্দেশ্য।

আরেকজন প্রখ্যাত শিয়া মোল্লা হাসান বলেন [60] –

আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সুত্রে বর্ণিত এসব কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের মধ্যে প্রচলিত কুরআন মুহাম্মাদ(ﷺ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের মত পরিপূর্ণ নয়; বরং তার মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার পরিপন্থী আয়াত যেমন রয়েছে; আবার তেমনি পরিবর্তিত ও বিকৃত আয়াতও রয়েছে। আর তার থেকে অনেক কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে; তন্মধ্যে অনেক জায়গায় আলী’র নাম বিলুপ্ত করা হয়েছে; আবার একাধিক বার “آل محمد” (মুহাম্মদের বংশধর) শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে; আরও বিলুপ্ত করা হয়েছে মুনাফিকদের নামসমূহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পছন্দসই ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানোও নয়।

উল্লেখ্য, শিয়াদের ইমান আকিদা সম্পর্কে বাঙলায় প্রকাশিত বইগুলো খুবই অল্প এবং সেগুলো মৌলবাদী ধর্মান্ধ সুন্নী মুসলিমদের কারণে পাওয়া মুশকিলের ব্যাপার। তবে বাঙলাদেশের সুন্নী মুসলিমদের লিখিত কয়েকটি গ্রন্থে শিয়াদের সমালোচনা থেকে শিয়াদের বিশ্বাস সম্পর্কে ভালভাবে জানা যায়। বইগুলো নিচে ডাউনলোড লিঙ্ক সহ দেয়া হচ্ছে। ( গ্রন্থ সহায়ক ১২, ১৩ )

কোরআন নিয়ে বিতর্কিত বিষয়াদি

কোরআনের আয়াত অক্ষয়

আল্লাহ কোরআনে অসংখ্যবার ঘোষণা করেছেন, কোরআনের প্রতিটি অক্ষর, বাক্য, এমনকি যতিচিহ্ন পর্যন্ত শাশ্বত এবং অক্ষয়। কোরআনে বলা রয়েছে, [61]

আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।

হাদিসে কুদসী এবং সহিহ মুসলিমেও বর্ণিত রয়েছে, [62]

‘আমি আপনার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করব, যাকে পানি ধুয়ে নিতে পারবে না।”

এখানে পানি দিয়ে ধুয়ে যাওয়া বলতে কোন অবস্থাতেই হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই নিচের প্রতিটি অংশ মন দিয়ে পড়তে হবে।

কোরআনে সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা

সুদীর্ঘ ২২ বছর ২ মাস ২২ দিন ধরে সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদের বয়স প্রায় ৪০ বছর এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ প্রায় তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবী মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ মনে করেন, কোরআনের আয়াতের মোট সংখ্যা সেই আদিতে যা ছিল এখনো তাই আছে। তার সামান্যতম কোন পরিবর্তন হয় নি। অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করেন, কোরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে কোরআনেও বলা রয়েছেঃ [63]

আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।

কিন্তু সত্য হচ্ছে, কোরআনের আয়াতের সংখ্যা আসলে কত, তা নিয়ে ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন জনের মতামত অনুযায়ী এই সংখ্যাটি ৬০০০/ ৬২০৪/ ৬২১৪/ ৬২১৯/ ৬২২৫/ ৬২২৬/ ৬২৩৬/ ৬২১৬/ ৬২৫০/ ৬২১২/ ৬২১৮/ ৬৬৬৬/ ৬২২১/ ৬৩৪৮, অর্থাৎ আয়াত ঠিক কয়টি, তা সেই সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। আয়াতের পাশাপাশি অক্ষর ও শব্দের সংখ্যা নিয়েও প্রচুর মতানৈক্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই নিয়ে ঘটে গেছে বহু রক্তারক্তি কাণ্ড। [64]

কোরআনের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা

এবারে দেখি, কোরআনের আয়াত সংখ্যা, শব্দের সংখ্যা, অক্ষর সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধের নমুনা। তাফসীরে জালালাইনে বলা হচ্ছে [65] –

কোরআনের সুরা, রুকূ, মক্কী, মাদানী আয়াত

আবার, এ কে এম এনামুল হক লিখিত কোরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস গ্রন্থে বলা হচ্ছে, [66]

কোরআনের আয়াত শব্দ অক্ষর সংখ্যা

কোরআনের প্রথম সূরা কোনটি?

শুরুতেই যেই প্রশ্নটি আমাদের মনে জাগে, তা হচ্ছে, কোরআনের প্রথম সূরা কোনটি? আমরা সকলেই জানি, ৪০ বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় ইসলামের নবী মুহাম্মদের কাছে প্রথম ফেরেশতা জিব্রাইল আসে, এবং তখন নিচের সূরাটি নাজিল হয়। এই গল্পগুলো আমরা সাধারণত আমাদের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে পড়ে থাকি। এই বিষয়ে হাদিসটি দেখে নিই [67] –

এমনিভাবে হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, পড়ুন’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আমি বললাম, আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন’। আমি বললামঃ আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমিতো পড়িনা’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত। ” (৯৬: ১-৩)
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমদ ২৬০১৮ ( আ.প্রঃ ৩, ইঃফাঃ ৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তাহলে আমরা বুঝতে পারছি, জিব্রাইল প্রথমবার যখন নবী মুহাম্মদের কাছে আসে, তিনি নিয়ে আসেন সূরা আলাকের ১ থেকে ৩ নম্বর আয়াত। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক যেভাবে কোরআন নাজিল করেন, সেই অনুসারে, সূরা আলাকের থাকার কথা সর্বপ্রথমে। কিন্তু আমাদের সময়ে যেই কোরআন পাওয়া যায়, সেখানে সূরা আলাকের স্থান হচ্ছে ৯৬ নম্বরে। কিন্তু সূরা আলাক ৯৬ নম্বরে কিভাবে গেল? কে ঠিক করলো, সূরা আলাক ৯৬ নম্বরে স্থান পাবে? আল্লাহ কি এই বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন? দিয়ে থাকলে, সেই দিক নির্দেশনা কোথায়? আর না দিয়ে থাকলে, আল্লাহ যেই ক্রমানুসারে নাজিল করেছেন, সেই ক্রম ভঙ্গ করে সূরা ফাতিহাকে প্রথমে দেয়ার দুঃসাহস কে করলো?

কিন্তু এখানেই আলোচনা শেষ নয়। কোরআনের প্রথম নাজিল হওয়া আয়াত কোনটি তা নিয়ে রয়েছে আরো কিছু মতামত।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) -এর বর্ণনা অনুযায়ী সূরা আল মুদ্দাছ্ছির সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া সূরা। বুখারী ও মুসলিমে এসেছে-

عن أبي سلمة بن عبد الرحمن ابن عوف قال: سألت جابر بن عبد الله، أي القرآن أنزل قبل؟ قال : يا أيها المدثر ‘আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলাম, কুরআনের কোন অংশ পূর্বে নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন, يا أيها المدثر

এছাড়া আবু মায়সারা (রা.) বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী আল কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া সূরা হলো সূরা আল ফাতিহা। [68]

কিন্তু কোরআন সংকলনের সময় আয়েশার হাদিসকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য মতামতটিকে গুরুত্ব দিয়ে সূরা ফাতিহাকেই সর্বপ্রথম সূরা হিসেবে সংকলনে স্থান দেয়া হয়।

সেটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নাজিলের ক্রম অনুসারে কোরআন সঠিকভাবে সংকলিত হয় নি কেন? এই বিষয়ে কী আল্লাহর কোন নির্দেশনা ছিল?

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে হবে। [69]

কোরআনের শেষ সূরা কোনটি?

প্রথম সূরার মত শেষ সূরা নিয়েও রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। অনেকেই বলে থাকেন, সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতই হচ্ছে কোরআনের শেষ আয়াত, কারণ এখানে বলা হচ্ছে, [70]

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।

সমস্যা হচ্ছে, দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দেয়ার পরে আল্লাহ পাকের আবারো সূরা নাজিলের কেন প্রয়োজন হলো? দ্বীন যদি ওই আয়াতের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গই হয়ে গিয়ে থাকে, এর পরে আবার আয়াত নাজিল হওয়ার তো কথা নয়। এই নিয়েও রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। বিভিন্ন জনার বিভিন্ন অভিমত এখানে উল্লেখ করা হলো।

প্রথম অভিমতঃ রিবা বা সুদ বিষয়ক আয়াত সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত।

ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: সর্বশেষে নাযিল-হওয়া আয়াত হলো আয়াতুর রিবা (সুদ বিষয়ক আয়াত) অর্থাৎ [71]

‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও’

হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ [72] [73]

আল কুরআনের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো ‘রিবা’র আয়াত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ব্যাখ্যা করার পূর্বেই পরলোকগত হন। অতএব তোমরা সুদ ও সন্দেহ পরিত্যাগ করো।’
( তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৮ )

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রা.) আমাদের উদ্দেশ্য করে খুতবা দিলেন, অতঃপর তিনি বললেন: নিশ্চয় সর্বশেষ নাযিল হওয়া কুরআন হলো ‘রিবা’র আয়াত।’
(সূয়ুতী, আল ইতকান, খণ্ড:৬, পৃ:৩৫)
এছাড়া শায়খ মাহমুদ শাকের বলেছেন যে হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদের (দ্র: তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৯)

দ্বিতীয় অভিমতঃ কিছু কিছু তাফসিরবিদদের মতে আল কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো [74] –

আর তোমরা সে দিনের ভয় কর, যে দিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে, তা পুরোপুরি দেয়া হবে। আর তাদের যুলম করা হবে না

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল কুরানের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ (নাসাঈ; বায়হাকী, )

ইবনে মারদুবেহ ও ইবনে জারীর তাবারীও ইবনে আব্বাস (রা.). থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [75] [76]

তৃতীয় অভিমতঃ কারো কারো মতে আলা কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো সূরা নিসার কালালাহ সম্পর্কিত আয়াতটি। কালালাহ হলো পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি। ইরশাদ হয়েছে-

তারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল,‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন কালালা (‘পিতা মাতাহীন নিঃসন্তানকে ‘কালালা’ বলা হয়) সম্পর্কে। কোনো ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোনো সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (মহিলা) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দু’জন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে’। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ’-(সূরা আন নিসা: ১৭৬)। (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

উক্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে তা মূলত মিরাছ তথা মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগবণ্টন বিষয়ক হুকুম-আহকাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আয়াত।

চতুর্থ অভিমতঃ কারো কারো মতে সূরা তাওবার ১২৮ নং আয়াত হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বাণী, [77]

‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা:১২৮)। (বর্ণনায় হাকেম)

এ আয়াতের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা মূলত সূরায়ে বারাআত তথা সূরা তাওবার শেষ আয়াত। অর্থাৎ সূরা তাওবার আয়াতসমূহের মধ্যে এটি হলো সর্বশেষে নাযিল হওয়া আয়াত।

পঞ্চম অভিমতঃ কারো কারো মতে সূরা আল মায়েদা হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া সূরা। তিরমিযী ও হাকেম আয়াশা (রা.) থেকে এ বিষয়ক একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এ মতের খণ্ডনে বলা হয়েছে যে সূরা মায়েদা মূলত হালাল হারাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সূরা যার কোনো হুকুমই মানসুখ হয়নি।

সূরা তওবা কী স্বতন্ত্র সূরা?

তাফসীরে ইবনে কাসীর [78] থেকে জানা যায়, সূরা তওবা যে স্বতন্ত্র সূরা, এটি ছিল উসমানের ধারণা। মুহাম্মদ এই বিষয়ে কিছু বলে যান নি। সূরা তওবার শুরুতে তাই বিসমিল্লাহও পড়া হয় না। এখন লাওহে মাহফুজের কোরআনে সূরা তওবা আলাদা সূরা নাকি তা সূরা আনফালের অংশ, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উসমানের ধারণার ওপর যা প্রতিষ্ঠিত, তা কি আমরা শতভাগ শুদ্ধ হিসেবে গণ্য করতে পারি?

সুরা তওবা স্বতন্ত্র সুরা নয়
সুরা তওবা কি স্বতন্ত্র সুরা

আরো বিবরণ পাওয়া যায় সুনানু আবু দাউদ শরীফের হাদিস থেকে। [79]

সুরা তওবা সুরা আনফালের অংশ
সুরা তওবায় বিসমিল্লাহ নেই

বিসমিল্লাহ কী প্রতিটি সূরার অংশ

উপরে যেই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বলা হচ্ছে, “বিসমিল্লাহ” সূরা নামল এর আয়াত, অন্য কোন সূরার আয়াত নয়। এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পরে মুহাম্মদ প্রতিটি সূরার শুরুতে এটি পড়তেন। তার মানে, এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি সূরা নাজিল হয়েছিল বিসমিল্লাহ ছাড়া। তাহলে, আল্লাহ যেহেতু আগের সূরাগুলোতে বিসমিল্লাহ যুক্ত করে দেন নি, বর্তমান কোরআনে প্রতিটি সূরার শুরুতে (সূরা তওবা বাদে) বিসমিল্লাহ কেন কোরআনে অন্তর্ভূক্ত হলো? আল্লাহ তো আগের ঐ সূরাগুলো বিসমিল্লাহ ছাড়াই নাজিল করেছিলেন।

এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে কী বলা রয়েছে, তা পড়ে নিই [80] –

কোরআন 22

সূরার নামকরণ কে বা কারা করেছিল?

আমাদের অনেকের মনেই এই স্বাভাবিক প্রশ্নটি জাগে, সূরা ফাতিহা বা অন্যান্য সূরাগুলোর নামটি কে দিয়েছেল? স্বয়ং আল্লাহ পাক, নাকি অন্য কেউ? তাহলে একই সূরার বিভিন্ন নাম হয় কীভাবে? কোন নামটি আল্লাহ পাক কর্তৃক নির্ধারিত? নাকি আল্লাহ সূরার নামগুলো নিজে দেন নি, মুহাম্মদ বা তার সাহাবীগণ খেয়াল খুশিমতো নাম দিয়েছেন? যেমন সূরা ফাতিহার নাম যে সূরা ফাতিহা, এটি আল্লাহ পাক কোথায় বলেন দিয়েছেন? না বলে থাকলে, এই নামকরণ কার করা? আল্লাহ যদি নাম নির্ধারণ নাই করে থাকেন, কার এতবড় দুঃসাহস যে ঐ সূরাগুলোর নাম কোরআনে অন্তর্ভূক্ত করলো? অসংখ্য ইসলামিক রেফারেন্স থেকে সূরা ফাতিহার যেসকল নাম জানা যায়, সেগুলো হচ্ছে,

  • ফাতিহাতুলঃ ফাতিহা অর্থ ভূমিকা বা শুরু। যেহেতু ইহার মাধ্যমে নামাজ শুরু করা হয় এবং যেহেতু কোরআন মযীদেরও শুরুতে ইহা লিখিত হয়েছে, তাই মুহাম্মদ এটিকে ফাতিহাতুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন।
  • আস্ সাবউল মাছানীঃ যেহেতু নামাজের প্রতিটি রাকআতে এই সূরাটি বারবার পাঠ করা হয়, তাই এটিকে সাবউল মাছানী বলা হয়।
  • উম্মুল কুরআনঃ উম্ম অর্থ মূল। সূরা ফাতিহার মধ্যে যেহেতু সমগ্র কোরআনের সারাংশ বিদ্যমান তাই এটিকে মুহাম্মদ উম্মুল কোরআন হিসেবে নামকরণ করেছেন
  • উম্মুল কিতাবঃ মুহাম্মদ এটিকে উম্মুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন
  • আল-কুরআনুল আযীমঃ মুহাম্মদ বলেন, এটি হচ্ছে বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং আল-কুরআনুল আযীম।
  • ফাতিহাতুল কুরআনঃ ফাতিহাতুল কিতাব আর ফাতিহাতুল কোরআন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
  • আল ওয়াফিয়াঃ সমস্ত কুরআনের অর্থ যেহেতু ইহাতে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তাই এটাকে ওয়াফিয়া বলা হয়েছে। সুফইয়ান বিন উয়াইনা এই নামে নামকরণ করেছেন।
  • আল-কাফিয়াঃ নামাযে যেহেতু শুধু সূরা ফাতিহা পড়লে যথেষ্ট হয় আর এটা ছাড়া অন্য সূরা দিয়ে যেহেতু নামাজ পূর্ণ হয় না তাই এটাকে কাফিয়া বলা হয়।
  • আল-আসাসঃ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছে এই নামটি বর্ণিত হয়েছে। আল কাসাস মানে মূল।
  • আশ্ শাফিয়া বা আশ্ শিফাঃ কেননা মুহাম্মদ বলেছেন, সূরা ফাতিহাতে রয়েছে প্রতিটি বিষাক্ত সাঁপ-বিচ্ছুর কামড়ের শিফা বা আরোগ্য।
  • সূরাতুল হামদ্ঃ যেহেতু এই সূরার প্রথমেই আলহামদ শব্দটি এসেছে, তাই একে সূরাতুল হামদ বলা হয়।
  • আস্ সালাহঃ হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজকে বান্দা এবং আমার মাঝে দুইভাগে বিভক্ত করেছি। এখানে নামাজ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সূরা ফাতিহা।
  • আর্ রুকইয়াহঃ যেহেতু এই সূরা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়, তাই মুহাম্মদ একে এই নামে নামকরণ করেছেন

এছাড়াও এই সূরাটির আরো অনেকগুলো নাম রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আসল নাম কোনটি? একই সূরার এতগুলো নাম থাকার যৌক্তিকতা কী? আল্লাহ পাক আসলে কোন নামে সূরাটি লিখেছিলেন? নাকি আল্লাহ পাক শুধু সূরাটি লিখেছিলেন, সূরাটির নামকরণ মুহাম্মদের পরে তার অনুসারীগণ কোন সুনির্দিষ্ট ওহী ছাড়াই যার যেমন মনে হয় করে ফেলেছিলেন?

কোরআন কয়টি ভাষায় নাজিল হয়েছে

কোরআনকে মোট সাতটি উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছিল। হযরত উসমান কোরআন বিকৃত হয়ে যাবে এই অযুহাত দেখিয়ে শুধুমাত্র কুরাইশদের উচ্চারণে কোরআন সংকলনের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে স্বয়ং মুহাম্মদের নির্দেশ ছিল যে, তোমাদের জন্য যেই পদ্ধতি সহজতর, তোমরা সেই পদ্ধতিতেই পড়। [81] [82]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল হয়েছে।
৪৬২৬। সাঈদ উব্‌ন উফায়র (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
… এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন সাত উপভাষায় নাজিল

এই বিষয়ে [83] আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন। Dr. Shabir Ally একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার। পুরো ভিডিওটি ইউটিউবে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন, এখানে অংশবিশেষ দেয়া হচ্ছে- ভিডিও

কোরআনের আয়াত ভুলে যেতেন মুহাম্মদ

আল্লাহ পাক ওহী নাজিলের সময় মুহাম্মদকে ভালভাবে আয়াতগুলো পড়িয়ে দিতেন, যেন মুহাম্মদ আবার সেগুলো ভুলে না যায়। কোরআনেই সেটি বলা হয়েছে [84]

আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব, যার ফলে তুমি ভুলে যাবে না
— Taisirul Quran
অচিরেই আমি তোমাকে পাঠ করাব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবেনা –
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব অতঃপর তুমি ভুলবে না
— Rawai Al-bayan
শীঘ্রই আমরা আপনাকে পাঠ করাব, ফলে আপনি ভুলবেন না [১] ,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

কিন্তু এত সতর্কতার পরেও আয়াত ভুলে যেতেন নবী। অন্য কেউ বললে তার মাঝে মাঝে মনে পড়ে যেতো আয়াতগুলো। স্বাভাবিকভাবেই, বোঝা যায় যে, তার স্মৃতিশক্তি এতটা প্রখর ছিল না [85] –

মুহাম্মদ কোরআন ভুলে যেতেন

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইবনে কাসীরের তাফসীরে [86] বর্ণিত আছে,

মুহাম্মদ ভুলে যেতেন আল্লাহর আয়াত

নিচের হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ [87]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ দু’আ
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তুমি দু’আ করবে …. (৯ঃ ১০৩) আর যিনি নিজেকে বাদ দিয়ে কেবল নিজের ভাই এর জন্য দু’আ করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাঃ) দু‘আ করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ‘উবায়দ আবূ আমিরকে মাফ করুন। হে আল্লাহ! আপনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ মাফ করে দিন।
৫৮৯৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত করতে বললেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহমত করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
Narrated `Aisha:
The Prophet (ﷺ) heard a man reciting (the Qur’an) in the mosque. He said,” May Allah bestow His Mercy on him, as he made me remember such and-such Verse which I had missed in such-and-such Sura.

নবী মুহাম্মদ আয়াত ভুলে যাওয়ার বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে আল্লাহর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছেন। [88] [89]

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৭। কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়
পরিচ্ছদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ, অমুক আয়াত ভুল গিয়েছি বলার অপছন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে
১৭২৭-(২২৯/…) ইবনু নুমায়র এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) (শব্দাবলী তার) …. শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেছেনঃ এই পবিত্র গ্রন্থের আবার কখনো বলেছেন এ কুরআনের রক্ষণাবেক্ষণ কর। কেননা মানুষের মন থেকে তা এক পা বাঁধা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও (অধিক বেগে) পলায়নপর। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কেউ যেন এ কথা না বলে যে, আমি (কুরআন মাজীদের) অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি। বরং তার থেকে আয়াতগুলো বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে (এরূপ বলা উত্তম)। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭১২, ইসলামীক সেন্টার ১৭১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৭। কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়
পরিচ্ছদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ, অমুক আয়াত ভুল গিয়েছি বলার অপছন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে
১৭২৮-(২৩০/…) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ….. শাকীক ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তির পক্ষে এরূপ কথা বলা খুবই খারাপ যে, সে অমুক অমুক সূরাহ বা অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছে। বরং বলবে যে ঐগুলো (সূরাহ বা আয়াত) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭১৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআনের ছাগলে খাওয়া আয়াত

কোরআনে সামান্যতম কোন পরিবর্তন বা পরিমার্জনা হয় নি, যেমন ছিল তেমনই রয়েছে, এই ধারণার ভিত্তিতে সবচাইতে বড় আঘাত হচ্ছে, কোরআনের হারিয়ে যাওয়া আয়াতের কথা, যা আয়েশার হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আল্লাহ পাক দ্বারা প্রেরিত আয়াত কীভাবে ছাগলে খেয়ে যায়, যার কারণে আয়াতটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না, যেই আয়াতগুলো বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত, তা বিশ্বাসী মুসলিমদের কাছে এখনো একটি বড় প্রশ্ন। [90]

পরিচ্ছদঃ ৯/৩৬. বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।
২/১৯৪৪। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।
মাজাহ ১৯৪৪ সহীহুল বুখারী ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, ২০৬২, মুয়াত্তা মালেক ১২৯৩, দারেমী ২২৫৩, তা’লীক ইবনু মাজাহ। তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি সালিহ। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

বয়ষ্ক লোকের দুধপান

কোরআনে দুধপান বিষয়ক আয়াত

শুধু তাই নয়, সহিহ হাদিস থেকেও জানা যায়, কোরআনে দুধপান সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়েছিল, যা বর্তমান কোরআনে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। [91] [92] [93]

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৮। দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৬. (কোন মহিলার দুধ) পাঁচ চুমুক খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে
৩৪৯০-(২৫/…) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ আল কা’নাবী (রহঃ) ….. আমরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেছিলেন, আল-কোরআনে নাযিল হয় عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “নির্ধারিত দশবার দুধপানে”। অতঃপর নাযিল হয় خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ “নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।” (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬৩, ইসলামীক সেন্টার. ৩৪৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

স্তন চোষা
বয়ষ্ক লোকের স্তন চোষা

এবারে আসুন মুয়াত্তা মালিকের একটি হাদিস থেকে দেখি, মুহাম্মদের মৃত্যুর সময়ও সেই পাঁচবার দুধপানের আয়াতটি তিলওয়াত করা হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় যেই আয়াত তিলাওয়াত করা হতো, মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে সেই আয়াত মানসুখ বা রহিত করলো কে?

মুয়াত্তা মালিক
৩০. সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৩. দুধ পান করানোর বিবিধ বিষয়
রেওয়ায়ত ১৭. আমরা বিনত আবদির রহমান (রহঃ) হইতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেনঃ কুরআনে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছিল তাহাতে দশবার দুধ চোষার কথা নির্ধারিত ছিল, যাহা হারাম করিবে, তারপর উহা রহিত হইয়া যায় নির্ধারিত পাঁচবার দুগ্ধ চোষার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচবার দুধ চোষার (হুকুমের অংশ) সম্মিলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হইত।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইহার উপর আমল নাই। অর্থাৎ পাঁচবারের উপর আমল নাই। দুগ্ধ পান অল্প হউক বা বেশি হউক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করিবে।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রহঃ)

রজম ও উমরের আশঙ্কা

এরকম আরো অনেকগুলো হাদিস রয়েছে, যেগুলো পড়ে বোঝা যাচ্ছে, কোরআনে আরো বেশ কিছু আয়াত ছিল, সেগুলো কেউ না কেউ মুছে ফেলেছে বা অন্তর্ভূক্ত করার সময় বাদ দিয়েছে। নিচের হাদিসটি দেখুন, এখানে বলা হচ্ছে এই আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে [94] –

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩০। অপরাধের (নির্ধারিত) শাস্তি
পরিচ্ছদঃ ৪. ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪৩১০-(১৫/১৬৯১) আবূ তাহির ও হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহইয়াহ্ (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “উমর ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। তার পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে।* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭১)
* এ আয়াতটি তিলাওয়াত মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু আয়াতটির হুকুম এখনো বহাল রয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হুকুম বহাল রেখে তিলাওয়াত মানসুখ বা রহিত কেন করা হলো? [95] [96]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩০/ অপরাধের শাস্তি
‏পরিচ্ছদঃ ৪. ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪২৭১। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যাভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ব্যাভিচারের জন্য) রজম (এর হুকুম বাস্তবায়িত) করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ একথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাচ্ছিনা। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এই ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যাভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম বাস্তব বিষয়। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভ প্রকাশ পায়, অথবা (সে নিজে) স্বীকার করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২৩. রজম সম্পর্কে
৪৪১৮। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার ভাষণে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর উপর কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি তাঁর উপর যা নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াত তার অন্তর্ভুক্ত। আমরা তা পাঠ করেছি এবং সংরক্ষণ করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন আর আমরাও তাঁর পরে রজম করেছি। তবে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, কাল প্রবাহের দীর্ঘতায় কেউ হয় তো বলবে, আমরা তো আল্লাহর নাযিলকৃত তিাবে রজমের আয়াত পাইনি।
ফলে তারা আল্লাহর নাযিলকৃত একটা ফরজ পরিত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হবে।
 জেনে রাখো বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী প্রমাণিত হলে অথবা অন্তঃসত্তা হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে তাদেরকে রজম করা অবধারিত। আল্লাহর কসম! লোকেরা যদি একথা না বলতো যে, উমার আল্লাহর কিতাবে কিছু বর্ধিত করেছেন। তাহলে আমি অবশ্যই এ আয়াত লিখে দিতাম।(1)
সহীহ।
(1). বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মুহাম্মদ নিজেই ইহুদীদের ভৎসনা করতেন এই বলে যে, তারা আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করে রজমের নির্দেশনা আর পালন করছে না। আল্লাহর কঠিন নির্দেশনা জেনাকারীর রজমকে তারা বাদ দিয়ে ফেলেছে। মুহাম্মদ আল্লাহর সেই নীতিকে আবার পুনর্জীবন দান করেছেন। এই বলে ইহুদীদের ভৎসনা করা মুহাম্মদের কোরআনেই এখন আর রজমের আয়াতটি নেই। [97]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২৬. দু’ ইয়াহুদীকে রজম করার ঘটনা
৪৪৪৮। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বেত্রাঘাতকৃত জনৈক ইয়াহুদীর মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদের ডেকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তির হুকুম পেয়েছ? তারা বললো, হ্যাঁ। অতএব তিনি তাদের একজন আলিমকে ডেকে বললেনঃ তোমাকে সেই আল্লাহর কসম করে বলছি যিনি মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! তোমাদের কিতাবে যেনাকারীদের এরূপ শাস্তির কথা উল্লেখ পেয়েছে কি? সে বললো, হে আল্লাহ! না। আপনি যদি এ বিষয়ে আমাকে আল্লাহর কসম না দিতেন, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে বলতাম না।
আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি রজমের উল্লেখ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজে যেনার বিস্তার ঘটলে আমরা কোনো মর্যাদাসম্পন্ন লোককে এ অপরাধে ধরতে পারলেও ছেড়ে দিতাম; তবে দুর্বলদের কাউকে পেলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। অতঃপর আমরা সকলকে আহবান করে বললাম, চলুন, আমরা যেনার শাস্তির ব্যাপারে সকলে ঐকমত্যে পৌঁছে এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই, যাতে সকল শ্রেণীর লোকদের উপর তা বাস্তবায়িত করা যায়। অতঃপর আমরা এর শাস্তিস্বরূপ মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে অপমান করা এবং বেত্রাঘাত করাতে একমত হই এবং ‘রজম’ পরিত্যাগ করি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তোমার নির্দেশকে পুনর্জীবন দান করেছি, তারা একে প্রাণহীন করার পর। অতঃপর তাঁর নির্দেশে অপরাধীকে রজম করা হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে এ আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ ‘‘হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয় … তারা বলে, তোমাদেরকে এরূপ বিধান দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো অন্যথায় তোমরা বর্জন করো … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই যালিম (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারা পাপাচারী’’ (সূরা আল-মায়িদাহঃ ৪১-৪৭)। তিনি বলেন, এ আয়াতগুলো কাফির অবাধ্যদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।(1)
সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এবারে আসুন আরেকটি হাদিসের ব্যাখ্যা থেকে পড়িঃ [98]

কোরআন 30

মুসনাদে আহমদ থেকে আরো দুইটি হাদিস পড়ে নিই( প্রথমটি দীর্ঘ হাদিস হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া হচ্ছে), [99] [100]

মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) [উমারের বর্ণিত হাদীস]
পরিচ্ছেদঃ
৩৯১। 
কিছুক্ষণ পরেই উমার (রাঃ) আবির্ভূত হলেন। আমি তাকে দেখেই বললাম, আজ সন্ধ্যায় উনি এমন এক ভাষণ দেবেন, যা তার আগে আর কেউ দেয়নি। এরপর উমার (রাঃ) মিম্বারে বসলেন। মুয়াযযিনের আযান দেয়া শেষ হলে উমার দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ হে জনতা, আমি আজ এমন একটা কথা বলতে যাচ্ছি, যা নেহাৎ ভাগ্যক্রমেই আমি বলার সুযোগ পাচ্ছি। জানিনা, হয়তো আমার আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েই এটা বলতে পারছি। যারা আমার এ বক্তব্যকে মনে রাখবে ও বুঝবে, তারা যেন তাদের যাত্রার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়েও তা প্রচার করে। আর যে মনে রাখতে পারবে না ও বুঝবে না সে আমার নামে মিথ্যা প্রচার করুক -এটা আমি অনুমোদন করি না।
নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন। তার ওপর যা কিছু নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াতও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা তা পড়েছি ও বুঝেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রজম করেছেন, তার পরে আমরাও করেছি। আমার আশঙ্কা হয় যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর এক সময় লোকেরা বলতে পারে, আল্লাহর কিতাবে আমরা রজম সংক্রান্ত আয়াত পাইনা। এভাবে আল্লাহর নাযিল করা একটা ফারয বর্জন করে তারা বিপথগামী হয়ে যাবে। বস্তুতঃ বিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যভিচার করলে তার ওপর রজম চালু করা আল্লাহর কিতাবের আওতাভুক্ত একটা অকাট্য সত্য বিধি, যখন তার ওপর সাক্ষ্য, স্বীকারোক্তি বা গর্ভধারণ পাওয়া যাবে।

[বুখারী, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ-১৫৪, ১৫৬, ২৪৯]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (উমারের বর্ণিত হাদীস)
পরিচ্ছেদঃ
৩৫২। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বলেন, উমার (রাঃ) একবার হজ্জ করলেন। ঐ সময় তিনি জন সমক্ষে একটা ভাষণ দিতে চাইলেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ বললেন, আপনার নিকট উচ্ছৃংখল জনতা উপস্থিত। এমতাবস্থায় আপনার ভাষণ দান মদীনায় আসা পর্যন্ত স্থগিত রাখুন। পরে তিনি যখন মদীনায় পৌছলেন, আমি তার নিকট মিম্বারের কাছেই উপস্থিত হলাম। শুনলাম, তিনি বলছেনঃ অনেকেই বলে থাকে, রজম আবার কী? আল্লাহর কিতাবে তো ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে কেবল বেত্ৰাঘাতেরই উল্লেখ রয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম (পাথর মেরে হত্যা) করেছেন এবং তার পরে আমরাও রজম করেছি। এমন আশঙ্কা যদি না থাকতো যে, মানুষ অভিযোগ তুলবে যে, উমার আল্লাহর কিতাবে এমন জিনিস সংযোজন করেছে, যা তাতে নেই, তাহলে আমি রজম সংক্রান্ত আয়াতটি যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে কুরআনে সংযোজন করতাম। (৩৯১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হযরত উমরের আরো বক্তব্য

নানা উচ্চারণের কোরআনের আয়াত উচ্চারণ শুনে খোদ উমর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তিনি এই নিয়ে রাগও প্রকাশ করেছিলেন। পরে নবী তাকে বোঝান, এইসব উচ্চারণেই কোরআন নাজিল হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে খলিফা উসমান শুধুমাত্র কুরাইশদের উচ্চারণ রেখে বাদবাকী সব উচ্চারণের কোরআন পুড়িয়ে দেন। [101]

কোরআন 32

হযরত উসমানের স্বীকারোক্তি

আধুনিক কোরআনের সংকলনকারী হযরত উসমান নিজেও স্বীকার করেছেন যে, কোরআনে কিছু ভুল উচ্চারণের শব্দ লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, যা পড়ার সময় সঠিক করে নেয়ার দরকার হয়। এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এভাবেই সেগুলো থাকতে দাও। কারণ এগুলো দ্বারা বড় কোন পরিবর্তন ঘটছে না। যেমন হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করা হচ্ছে না। [102]

কোরআন 34
কোরআনে ভুল নিয়ে উসমানের স্বীকৃতি

ইদ্দতের আয়াত

ইদ্দতের সময়সীমা কতদিন হবে, আল্লাহ পাক এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রেরণ করলেন যে, তারা পূর্ণ একবছর স্বামীগৃহে অবস্থান করে ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দতের সময়ে তাদের জন্য বিবাহ করা নিষিদ্ধ। এই একবছর ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ সম্পদ যেন স্বামী তাদেরকে অসিয়ত করে যায়। [103]

আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে। অতঃপর যদি সে স্ত্রীরা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন।
আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের উপর কর্তব্য।

কিন্তু নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ বহুবিবাহে যেভাবে আসক্ত ছিল, বিধবা নারীদের পুরো একবছর বিবাহ নিষিদ্ধ থাকা তাদের ঠিক মনমতো হয় নি। পরবর্তীতে এই আয়াত বাদ দিয়ে নতুন আয়াত পাঠানো হলো। সেখানে বলা হলো, এক বছর ইদ্দত পালনের দরকার নেই, চার মাস দশ দিন করলেই হবে। মানে, পারফেক্ট প্ল্যানার আল্লাহ পাক শুরুতে যেই নির্দেশনাটি দিয়েছিলেন, আগের নির্দেশটি রহিত বা মানসুখ করে তা তুলে নিয়ে নতুন বিধান দিলেন। আগে শুধু স্বামীগৃহে থেকে ইদ্দত পুরো করতে হতো। নতুন বিধান অনুসারে, যেখানে খুশি থাকতে পারবে, স্বামীগৃহে কিংবা স্বামীগৃহের বাইরে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানসুখ বা রহিত হয়ে যাওয়া আয়াত কোরআনে এখনো রয়ে গেল কীভাবে? অন্যান্য অনেক রহিত আয়াত তো বাদ দেয়া হলো, এটি কেন থাকলো?

এই বিষয়ে তাফসীরে ইবনে কাসীর [104] থেকে এর তাফসীর পড়ে নিই-

কোরআন 37
কোরআন 39

সূরা নুরে ভুল শব্দ

তাফসীরে ইবনে কাসীর [105] থেকে জানা যায়, ইবনে আব্বাসের মতে সূরা নূরের একটি শব্দ ভুল লেখা হয়েছে। ইবনে আব্বাস মুহাম্মদের বিখ্যাত সাহাবী, যার জ্ঞানের প্রশংসায় খোদ মুহাম্মদ বহুবার পঞ্চমুখ হয়েছেন।

কোরআন 41

ইবনে আব্বাসের আরো বিরোধ

নবী মুহাম্মদের অত্যন্ত প্রখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস বর্তমান কোরআনে আরো বেশ কয়েকটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। যার একটি হচ্ছে, সূরা শুয়ারার ২১৪ নম্বর আয়াতের কথা, যেই আয়াতে একটি বাক্য বর্তমান কোরআনে নেই, অথচ ইবনে আব্বাসের মতে এই আয়াতে আরো একটি বাক্য ছিল। আসুন প্রথমে কোরআনের আয়াতটি দেখে নিই, [106] –

আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের
— Taisirul Quran
তোমার নিকটতম আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর।
— Rawai Al-bayan
আর আপনার নিকটস্থ জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে সতর্ক করুন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে আসুন দেখা যাক, ইবনে আব্বাস এই আয়াতটি কীভাবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে “এবং তাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও “ বাক্যটি অতিরিক্ত যা বর্তমান কোরআনে নেই [107] [108] –

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৪০২। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ’লা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয় (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও, (২৬ঃ ২১৪)। এবং তাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন এবং সাফা পর্বতে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত! সকলে বলাবলি করতে লাগল, কে এই ব্যাক্তি যে ডাক দিচ্ছে? লোকেরা বলল, মুহাম্মাদ। তারপর সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের বংশধর! হে অমূকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! হে আবদ মানাফের বংশধর! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! এতে সবাই তাঁর কাছে সমবেত হল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী জিজ্ঞেস করলেনঃ দেখ যদি আমি তোমাদের এই সংবাদ দেই যে, এই পর্বতের পাদদেশে শত্রু সৈন্য এসে পড়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা উত্তর করল, তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে তো আমরা দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের সতর্ক করছি সামনের কঠোর আযাব সম্পর্কে। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ লাহাব তখন এই বলে উঠে গেল “ধ্বংস হও, তুমি এ জন্যই কি আমাদের একত্র করেছিলে?” তখন এই সূরা অবতীর্ণ হয়ঃ ধবংস আবূ লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও সূরার শেষ পর্যন্ত। (১১১ঃ ১-৫)। অবশ্য রাবী আমাশوَتَبَّ এর স্থলেوَقَدْ تَبَّ পাঠ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

কোরআন 43

ইবনে আব্বাস আরো কিছু কোরআনের আয়াত ভিন্নভাবে পড়তেন বলেই জানা যায়। আসুন ইবনে আব্বাসের আরো একটি ভিন্নভাবে কোরআনের আয়াত সূরা কাহফের ৭৯-৮০ নম্বর আয়াত পড়ার উদাহরণ দেখি [109] –

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/১৮/২. পরিচ্ছেদ নাই।
(وَإِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتّٰىٓأَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا) زَمَانًا وَجَمْعُهُ أَحْقَابٌ.
আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ স্মরণ কর, যখন মূসা স্বীয় যুবক সঙ্গীকে বলেছিলেনঃ আমি অবিরত চলতে থাকব যে পর্যন্ত না দুই সাগরের মিলনস্থলে পৌঁছি, অথবা এভাবে আমি দীর্ঘকাল চলতে থাকব। (সূরাহ কাহাফ ১৮/৬০)
حُقُبًا অর্থ যুগ, তার বহুবচন أَحْقَابٌ।
৪৭২৫. সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাসকে বললাম, নওফ আল-বাক্কালীর ধারণা, খাযিরের সাথী মূসা, তিনি বনী ইসরাঈলের নবী মূসা (আঃ) ছিলেন না। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর দুশমন[1] মিথ্যা কথা বলেছে। [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] উবাই ইবনু কা’আব (রাঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, মূসা (আঃ) একবার বনী ইসরাঈলের সম্মুখে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কোন্ ব্যক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমি। এতে আল্লাহ্ তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা এ জ্ঞানের ব্যাপারটিকে তিনি আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেননি। আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ওয়াহী পাঠালেন, দু-সমুদ্রের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, সে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আঃ) বললেন, ইয়া রব, আমি কীভাবে তাঁর সাক্ষাৎ পেতে পারি? আল্লাহ্ বললেন, তোমার সঙ্গে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ, যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওনা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাঁর খাদেম ’ইউশা’ ইবনু নূন।
তাঁরা যখন সমুদ্রের ধারে একটি বড় পাথরের কাছে এসে হাজির হলেন, তখন তারা উভয়েই তার ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের ভিতর লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। ’’মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’’ আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ্ সেখান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয় গেল। যখন তিনি জাগ্রত হলেন, তাঁর সাথী তাঁকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকী সময় ও পরবর্তী রাত তাঁরা চললেন। যখন ভোর হল, মূসা (আঃ) তাঁর খাদিমকে বললেন ’আমাদের সকালের আহার আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ যে স্থানের[2] নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মূসা (আঃ) ক্লান্ত হননি। তখন তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ’’আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শায়ত্বনই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি বিস্ময়করভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মূসা (আঃ) ও তাঁর খাদেমকে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মূসা (আঃ) বললেনঃ ’’আমরা তো সে স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। তারপর তাঁরা নিজদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা উভয়ে তাঁদের পদচিহ্ন ধরে সে শিলাখন্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এক ব্যক্তিকে কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মূসা (আঃ) তাকে সালাম দিলেন। খাযির (আঃ) বললেন, তোমাদের এ স্থলে ’সালাম’ আসলো কোত্থেকে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খাযির (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করতে পারবে না।’’ হে মূসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জান না আর তোমাকে আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করেছেন, তা আমি জানি না।
মূসা (আঃ) বললেন, ’’ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’’ তখন খাযির (আঃ) তাঁকে বললেন, ’’আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি। তারপর উভয়ে চললেন।’’ তাঁরা সুমদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন, তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নৌকার চালকদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারা খাযির (আঃ)-কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। ’’যখন তাঁরা উভয়ে নৌকায় উঠলেন’’ খাযির (আঃ) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা ছিদ্র করে দিলেন। মূসা (আঃ) তাঁকে বললেন, এ লোকেরা তো বিনা মজুরিতে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি নষ্ট করছেন। আপনি নৌকাটি ছিদ্র করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক অন্যায় কাজ করলেন, (খাযির বললেন) আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবে না। মূসা বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরতা করবেন না।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা (আঃ)-এর প্রথম এ অপরাধটি ভুল করে হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পার্শ্বে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খাযির (আঃ) মূসা (আঃ)-কে বললেন, এ সমুদ্র হতে চড়ুই পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তাঁরা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন। এমতাবস্থায় খাযির (আঃ) একটি বালককে অন্য বালকদের সঙ্গে খেলতে দেখলেন। খাযির (আঃ) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মূসা (আঃ) খাযির (আঃ)-কে বললেন, ’’আপনি কি প্রাণের বদলা ব্যতিরেকেই নিষ্পাপ একটি প্রাণকে হত্যা করলেন? আপনি তো চরম এক অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না।’’
নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অভিযোগটি ছিল প্রথমটির অপেক্ষাও মারাত্মক। [মূসা (আঃ) বললেন] এরপর যদি আমি আপনাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আপনার কাছে আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছেছে। তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। শেষে তারা এক বসতির কাছে পৌঁছে তার বাসিন্দাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকৃতি জানাল। তারপর সেখানে তারা এক পতনোন্মুখ দেয়াল দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খাযির (আঃ) নিজ হাতে সেটি সোজা করে দিলেন। মূসা (আঃ) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম, তারা আমাদের খাদ্য দিল না এবং আমাদের আতিথেয়তাও করল না। ’’আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটল। …..যে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা।’’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মনের বাসনা যে, যদি মূসা (আঃ) আর একটু ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ্ তাঁদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন- وَكَانَاَمَا مَهُمْ مَلِكٌيَّاخُذُ كُلَّ سَفِيْنَةٍ صَالِحَةً غَصْبًا
নিচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করলেন- وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ 
[৭৪]] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৬৬)
[1] নওফ আল-বাককালী- সে একজন মুসলিম। ইব্নু ‘আববাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায়।
[2] স্থানঃ যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)

কোরআন 45

সূরা ইউনুসের একটি শব্দ

সূরা ইউনুসের ২২ নম্বর আয়াতে একটি শব্দ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন একজন আরবী ভাষার শিক্ষক। তিনি হযরত উসমানের কোরআনের কিছু শব্দ পরিবর্তন করেন বলে জানা যায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাফসীরে জালালাইনের গ্রন্থ থেকে। লক্ষ্য করে দেখুন, জালালাইনের তাফসীরে দুইটি শব্দের পাঠের কথা বর্ণিত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, লাওহে মাহফুজের কোরআনে কোন শব্দটি আছে? [110]

কোরআন 47

সুরা আনফালে ইয়ামালুন ও তা’মালুন

সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের উচ্চারণ হচ্ছে,

অক্বা-তিলূ হুম্ হাত্তা-লা-তাকূনা ফিত্নাতুঁও অইয়াকূনাদ্ দীনু কুল্লুহূ লিল্লা-হি ফাইনিন্তাহাও ফাইন্নাল্লা-হা বিমা-ইয়া’মালূনা বার্ছী

ইয়ামালুন শব্দের অর্থ তারা করে। অথচ, ক্বারী ইয়াকুব এই শব্দটিকে উচ্চারণ করতেন তা’মালুন, যার অর্থ তোমরা করো। এই শব্দটির পরিবর্তনে পুরো আয়াতটির অর্থের অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে যায়। বিষয়টি তাফসীরে মাযহারী থেকে জানা যায়। [111]

কোরআন 49

আবদুল্লাহ ইবনে উমর এর বক্তব্য

প্রখ্যাত সাহাবী এবং হাদিস ও ফিকহের অন্যতম বড় পন্ডিত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ছিলেন হযরত উমরের পুত্র। তিনি ১৬৩০টি নির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবী মুহাম্মদ তাকে ‘সৎ লোক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসটি নিচে দেখুন [112] ।

কোরআন 51
কোরআন 53

তিনি বলেছেন, [113]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে সূরা আহযাবের প্রায় দু’শটি আয়াত তেলাওয়াত করা হতো। কিন্তু কুরআন সংকলন করার সময় উসমান কেবলমাত্র যা বর্তমান কোরআনে বিদ্যমান তা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

Abu Ubaid said: “IsnuTil b. Ibrahlm reported to us, from Ayyub, from Nafi from Ibn
“Umar, who said: ‘None of you should say that he has full knowledge of the Qur’an; how could
he know what full knowledge is! So much of the Qur’an has passed him by! Let him say instead:
‘I have taken of the Qur’an that which was present.”

12
He also said: “Ibn Abu Maryam reported to us from Ibn Lahfa, from Abu ‘1-Aswad, from
“Urwa b. ‘1-Zubair, that A’isha said: “During the time of the Prophet (s) two hundred verses of the chapter ‘1-Ahzab were recited but when compiling the Qur’an Uthman was only able to collect what now exists.”

কোরআন 55
কোরআন 57

আবূ খুযায়মা আনসারী

নিচের হাদিসটির শেষের অংশ মন দিয়ে পড়ুন। কিছু আয়াতের একমাত্র বর্ণনাকারী ছিলেন আবূ খুযায়মা আনসারী। যেটি যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। [114]

কোরআন 59

এমনকি আমি সূরা তওবার শেষাংশ আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি পাইনি। আয়াতগুলো হচ্ছে এইঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলো, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি (১২৮-১২৯)।

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছদঃ ২৩৯৮. নবী (সাঃ) এর কাতিব
৪৬২৩। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো অনুসন্ধান কর। এরপর আমি অনুসন্ধান করলাম। শেষ পর্যায়ে সূরা তওবার শেষ দু’টো আয়াত আমি আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) এর কাছে পেলাম। তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পায়নি। আয়াত দু’টো হচ্ছে এইঃ “তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলবে, আমার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের অধিপতি”। (৯: ১২৮-১২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আরো একটি আয়াত রয়েছে, যেই আয়াতটি শুধুমাত্র খুযাইমা আনসারীর কাছ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। অন্য কোন হাফেজ আয়াতটি বলতে পারেননি। আয়াতটি হচ্ছে সূরা আহজাবের ২৩ নম্বর আয়াত [115] –

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৩. মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সংগে তাদের কৃত অঙ্গীরকার পূর্ণ করে দেখিয়েছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (৩৩ঃ ২০)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০৭
২৬১২। আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত কতে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত পেলাম না। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমা আনসারী (রাঃ)-এর কাছে পেলাম। যার সাক্ষ্যকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ব্যাক্তির সাক্ষ্যের সমান সাব্যস্ত করেছিলেন। সে আয়াতটি হলঃمِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত তাদের ওয়াদা পূরণ করেছেন। (৩৩ঃ ২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)

সেই সাথে বোঝা যাচ্ছে, ঐ সময় কোরআনে হাফেজের সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছিল যে, কিছু আয়াত শুধুমাত্র একজন মানুষ জানতেন। আর কেউ সেই আয়াতগুলো জানতেন না। তাহলে এরকম হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয় যে, যেসকল হাফেজ মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যারা কোরআনের কোন না কোন আয়াতের একমাত্র সাক্ষী বা মুখস্তকারী। যেই আয়াতগুলো আর কখনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র একজন বর্ণনাকারী হওয়ায় কোরআনের কিছু আয়াত নেয়া হয় নি। যা পরে আলোচনা করা হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ

নিচের হাদিসটি পড়ুন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হযরত উসমানের আমলেও জীবিত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সম্পর্কে খোদ নবীই বলেছেন তার থেকেই কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করতে। [116]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১০৬. আবু হুযায়ফা (রাঃ) এর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) সালিম (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৪৮৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর আলোচনা হলে তিনি বললেন, আমি এই ব্যাক্তিকে ঐদিন থেকে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যাক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ সর্বপ্রথম তাঁর নাম উল্লেখ করলেন, আবূ হুযায়ফা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে। শেষোক্ত দু’জনের মধ্যে কার নাম আগে উল্লেখ করছিলেন শুধু এ কথাটুকু আমার স্মরণ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যার কোরআন তিলাওয়াত শুনে খোদ নবী মুহাম্মদ পর্যন্ত কান্নায় ভেঙ্গে পরতেন। [117]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ – (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৫-(৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে বসে আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পড়ো (আমি তোমার কুরআন পড়া শুনব)। (তাঁর কথা শুনে) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব? অথচ এ কুরআন আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরআন আমি অন্যের মুখে শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি সূরা আন্ নিসা পড়তে শুরু করলাম। আমি ‘‘তখন কেমন হবে আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব এদের বিরুদ্ধে’’ এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন বন্ধ করো। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম তাঁর দু’ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারী, মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৫০৫০, মুসলিম ৮০০, আবূ দাঊদ ৩৬৬৮, তিরমিযী ৩০২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩০৩০৩, আহমাদ ৩৬০৬, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৪৬০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৫৭, শু‘আবূল ঈমান ৯৮৯২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সেই সাথে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ গর্ব করে বলেছেন, তিনি কোরআনের প্রতিটি সূরা এবং প্রতিটি আয়াত, তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, একটি সূরার কয়েকটি আয়াতের শুধুমাত্র একজন বর্ণনাকারী পাওয়া গেল কীভাবে? [118] [119]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৬/ আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ
পরিচ্ছদঃ ৬৬/৮. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।
৫০০২. মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরাহ সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম। (মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 61

সহিহ হাদিস দুটোই একসাথে মেনে নেয়া একটু কষ্টকর। এখানে দুইটি ঘটনা সত্য হতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সমস্ত আয়াত জানতেন, সেটি সত্য হলে আবূ খুযায়মা আনসারী নিজেই আয়াত বানিয়ে কোরআনে ঢুকিয়েছে, নতুবা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ অনেক আয়াত জানতেন না। দুটোই একই সাথে সত্য হওয়া সম্ভব নয়।

উসমানের কোরআন যখন সংকলিত হয়, সেই সংকলন দেখার পরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর একটি মন্তব্য এখানে গুরুত্বপূর্ণঃ

“The people have been guilty of deceit in the reading of the Qur’an. I like it better to read according to the recitation of him (Prophet) whom I love more than that of Zayd Ibn Thabit,”
(Ibn Sa’d, Kitab al-Tabaqat al-Kabir, Vol. 2, p.444).

সেই আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ একাধিকবার বিভিন্ন জায়গাতেই বলেছেন, সূরা নাস এবং সূরা ফালাক আদৌ কোরআনে অন্তর্ভূক্ত সূরা নয়। এই দুই সূরাকে উনি নিজেই নিজের লিখিত কোরআনে অন্তর্ভূক্ত করেন নি [120] –

কোরআন 63
কোরআন 65

এইসব তথ্যসূত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর মত গুরুত্বপুর্ণ সাহাবী পর্যন্ত উসমানের কোরআন সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন। শুধু দ্বিমতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, হযরত উসমানের কোরআন সংকলের পরে হযরত উসমান ঘোষণা দিলেন যে, যার কাছে যত ধরণের কোরআন বা কোরআনের আয়াত রয়ে গেছে সেগুলো সব পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যখন কুফাতে শোনা গেল যে তাদের কাছে সংরক্ষিত সব কোরআনের আয়াত পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হয়, আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিলঃ ( উপরে একবার এই তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে )

কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি (মুহাম্মদের), যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।”
[52]

তিরমিজী শরীফের এই হাদিসটিও পড়ে নিই, [121]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ কুরআন তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ সূরা তাওবা
৩১০৪. মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহঃ) ….. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু উছমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এলেন। উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন আরমেনিয়া ও আযারবায়জান বিজয়ে ইরাকবাসীদের সঙ্গে শামবাসীদেরও যুদ্ধ-যাত্রার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআনের (পাঠের) ক্ষেত্রে এদের পরস্পর মতানৈক্য দেখেছিলেন। তিনি উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদ নাসারারা যেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহর কিতাবে সেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে এ উম্মতকে আপনি রক্ষা করুন।
তখন উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহ এই বলে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর কাছে লোক পাঠালেন যে, আপনার কাছে রক্ষিত কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, আমরা এটির বিভিন্ন কপি করে পুনরায় আপনার কাছে ফেরত পাঠাব।
হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো উছমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়দ ইবন ছাবিত, সাঈদ ইবন আস, আবদুর রহমান ইবন হারিছ ইবন হিশাম ও আবদুল্লাহ্ ইবন যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর কাছে কপিগুলো পাঠিয়ে বললেন যে, তোমরা এই কপিগুলো মুসহাফে লিপিবদ্ধ কর। এই তিনজন কুরায়শী গ্রুপকে বললেনঃ তোমাদের এবং যায়দ ইবন ছাবিতের মাঝে মতানৈক্য দেখা গেলে কুরায়শী ভাষা অনুসারে তা লিপিবদ্ধ করবে। কেননা কুরআন কুরায়শদের ভাষা অনুসারেই নাযিল হয়েছে।
যা হোক, তারা কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো বিভিন্ন মুসহাফে লিপিবদ্ধ করেন। উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বিভিন্ন দিকে তাদের কপি করা মুসহাফগুলো পাঠালেন।
যুহরী (রহঃ) বলেনঃ খারিজা ইবন যায়দ আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন ছাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি খূঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা পাঠ করতে আমি শুনেছি। সেটি হলঃ
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ
মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। এদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। (৩৩ : ২৩)
পরে তালাশ করে খুযায়মা ইবন ছাবিত কিংবা আবূ খুযায়মার কাছে সেটি পেলাম এবং উক্ত সূরায় তা যুক্ত করে দিলাম।
যুহরী (রহঃ) বলেনঃ একদিন তারাالتابوت এবংالتابوه নিয়ে মতানৈক্য করেন। কুরায়শীরা বললেনঃ التابوت যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃالتابوه তাঁদের এ মতানৈক্যের বিষয়টি উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে পেশ করা হলে তিনি বললেনঃ তোমরাالتابوت লিখ। কেননা কুরআন কুরায়শের ভাষায় নাযিল হয়েছে।
যুহরী বলেনঃ উবায়দুল্লাহ ইবন উতবা বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়দ ইবন ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ হে মুসলিম সম্প্রদায়! কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহর কসম আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়দ ইবন ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)।
আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ। আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ
وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏
এবং কেউ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করলে যা সে অন্যায়ভাবে গোপন করবে কিয়ামতের দিন সে তা নিয়ে আসবে। (৩ : ১৬১) সুতরাং তোমরা তোমাদের মুসহাফসহ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে। যুহরী বলেনঃ বিশিষ্ট সাহাবীগণের অনেকই ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর এ বক্তব্য অপছন্দ করেছেন বলে আমি সংবাদ পেয়েছি।
সহীহ, বুখারি ৪৯৮৭, ৪৯৮৮, মাকতু, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩১০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-সহীহ। এটি হল যুহরী (রহঃ) -এর রিওয়ায়ত। তাঁর রিওয়ায়ত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি লিখেছেন,

যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)। আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ।
[53]
[122]

ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন,

আমি সরাসরি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্‌র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?”
[123]

এবারে আসুন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাঁর ফিকাহ গ্রন্থ থেকে এই অংশটুকু পড়ি [124] –

কোরআন 67
কোরআন 69

হুজাইফা ইবনে ইয়ামান

হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (মৃত্যু-৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ/৩৬ হিজরী) মুহাম্মদের একজন বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন। যিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা সেনাপতি ও দেশ বিজেতা এবং প্রখর জ্ঞানের অধিকারী। উনার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান কোরআনে যে সূরা বারা’আত (সূরা তাওবা) আছে, তা প্রকৃত সূরার এক চতুর্থাংশ মাত্র [125] –

কোরআন 71

উবাই ইবনে কাব

নিচের হাদিসটি পড়ুন। উবাই ইবনে কাব ছিলেন সেই ক’জনের একজন যারা নবী এর মৃত্যুর পূর্বেই কুরআন হাফেজ ছিলেন। যার সম্পর্কে উমর বলেছেন, উনিই সর্বোত্তম ক্বারী। তার সম্পর্কে সহিহ হাদিস রয়েছে যে, আল্লাহ পাকও তার নাম উচ্চারণ করেছেন। [126] , [127] তার থেকে প্রাপ্ত অনেক আয়াত বাদ দেয়া হয়।

কোরআন 73
কোরআন 75

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৬/ আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ
পরিচ্ছদঃ ৬৬/৮. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।
৫০০৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম কারী। এতদ্সত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করেছেন, আমরা তার কিছু অংশ বাদ দিই, অথচ তিনি বলছেন, আমি তা আল্লাহর রাসূলের যবান থেকে শুনেছি, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা ত্যাগ করব না। আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে তা হতে উত্তম কিংবা তার মত কোন আয়াত এনে দিই।’’ ৪৪৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সেই প্রখ্যাত সাহাবী, যার নাম আল্লাহ নিজেই উচ্চারণ করেছেন, সেই উবাই ইবনে কাব কোরআনের সংকলন বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের সাথেই একমত ছিলেন। বর্তমান কোরআনের অনেক কিছুর সাথেই উনার দ্বিমতের কথা জানা যায়। [128]

কোরআন 77

দু ‘টি অতিরিক্ত সূরা

কিছু বিবরণে পাওয়া যায়, কোরআনে আরো দুইটি অতিরিক্ত সূরা ছিল, যা বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত। জালালুদ্দিন সুয়ুতির আল ইত্বকান গ্রন্থে পাওয়া যায়ঃ

এবং উবাই(রা) এর মুসহাফে ছিল ১১৬টি(সূরা/অধ্যায়) এবং শেষ থেকে তিনি লিপিবদ্ধ করেন সূরা হাফদ এবং খাল’।
[129]

উবাই ইবনে কা’ব তাঁর মুসহাফে যে কোরআনের যেই অংশটুকু লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তাও জালালুদ্দিন সুয়ুতি তার আল ইতকান গ্রন্থে বর্ণণা করেছেনঃ

হে আল্লাহ, আমরা শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই, শুধু আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, আপনার গুণগান করি, আপনার অকৃতজ্ঞ হই না, আর যারা আপনার অবাধ্য তাদের থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন হই। হে আল্লাহ, আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি, শুধু আপনার নিকট প্রার্থনা করি, শুধু আপনার প্রতি নত হই(সিজদাহ করি), আপনার দিকে ধাবিত হই।আর আমরা আপনার কঠিন শাস্তিকে ভয় করি, আপনার দয়ার আশা রাখি।নিশ্চয়ই আপনার শাস্তি তো অবিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত।
[130]

এই বিষয়ে ইসলামিস্টগণ বলে থাকেন, এটি কোন স্বতন্ত্র সূরা নয়, বরঞ্চ আল্লাহ পাক নবীকে একটি দোয়া শিখিয়েছেন, যা উবাই ইবনে কা’ব সূরা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে ফেলেছেন। এটি হচ্ছে দোয়া কুনুত। অথচ, সূরা ফাতিহা পড়লেও বোঝা যায়, সেটি আসলে একটি দোয়া। তাহলে, ফাতিহা অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকলে, এই সূরাটি কেন অন্তর্ভূক্ত করা হলো না?

কিন্তু, ইসলামিস্টদের এই দাবী ধোপে টিকে না, কারণ সহিহ হাদিসেও বিষয়টি বর্ণিত রয়েছে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, ঐটি শুধুমাত্র দোয়াই ছিল না, আয়াতও ছিল। [131]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২১৯২. রাজী, রিল, যাক্‌ওয়ান, বিরে মাউনার যুদ্ধ এবং আযাল, কারাহ, আসিম ইব্‌ন সাবিত, খুবায়ব (রা) ও তার সংগীদের ঘটনা। ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, আসিম ইব্‌ন উমর (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রাজীর যুদ্ধ উহুদের যুদ্ধের পর সংঘটিত হয়েছিল
৩৭৯০। … এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছালে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাক্‌ওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কিত কিছু আয়াত আমরা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়।
একটি আয়াত ছিল- بَلِّغُوا عَنَّا قَوْمَنَا، أَنَّا لَقِينَا رَبَّنَا، فَرَضِيَ عَنَّا وَأَرْضَانَا‏ “আমাদের কওমের লোকদের জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন। 
কাতাদা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁকে বলেছেন, আল্লাহর নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র- তথা রি’ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেছেন।
(ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ) খলীফা (রহঃ) এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু যুরায় (রহঃ) সাঈদ ও কাতাদা (রহঃ) এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা ৭০ জন সকলেই ছিলেন আনসার। তাঁদেরকে বি’রে মাউনা নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিল। (ইমাম বুখারী (রহঃ)) বলেন, এখানে قُرْآن শব্দটি কিতাব বা অনুরুপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 79

আরো একটি হারানো সূরা

আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশ আশয়ারী’ যিনি ‘আবু মুসা আল-আশয়ারি’ নামেই বেশি পরিচিত, তিনি ছিলেন মুহাম্মদের সহচর ছিলেন এবং ইসলামের প্রথম দিকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বসরা ও কুফার গভর্নর ছিলেন এবং পারস্যের প্রথম দিকে মুসলিম বিজয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। উনার কাছ থেকে জানা যায়, কোরআনের একটি হারিয়ে যাওয়া সূরার কথা। [132]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৩/ যাকাত
পরিচ্ছদঃ ৩১. পার্থিব সম্পদের প্রতি লোভ করা অপছন্দনীয়
২২৯০। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবুল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) কে বসরাবাসী ক্বারীগনের নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি তথায় গিয়ে এমন তিনশ লোকের সাক্ষাৎ পেলেন, যারা কুরআনের ক্বারী ছিলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা বসরা শহরের সম্রান্ত লোক এবং আল কুরআনের ক্বারী, আপনারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকুন। বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনাদের মন যেন কঠিন না হয়ে যায়, যেমন পূর্বেকার লোকদের মন কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি সূরা পাঠ করতাম যা দৈর্ঘ ও কাঠিন্যের দিক থেকে সূরা (বারা-আত) তাওবার অনুরূপ। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার থেকে এ কথাটি আমার স্মরণ আছে “যদি আদম সন্তানের জন্য দুই মাঠ পরিপূর্ণ ধন-দৌলত হয়, তবে সে তৃতীয় মাঠ অবশ্যই খুজে বেড়াবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছু আদম সন্তানের পেট পুরা করতে পারবে না”।
আমি অন্য একটি সূরাও পাঠ করতাম যা কোন একটি মুশাববিহতের সম পরিমাণ (দৈর্ঘ্য)। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
তবে তা থেকে আমার এতটুকু মুখস্থ আছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল”? বললে তা সাক্ষ্য তা সাক্ষ্য স্বরুপ তোমাদের গর্দানে লিখে দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে কিয়ামতের দিন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 81

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৩। যাকাত
পরিচ্ছদঃ ৩৯. আদাম সন্তানের যদিও সম্পদের দুটি উপত্যকা থাকে তবু সে তৃতীয়টি অনুসন্ধান করবে
২৩০৯-(১১৯/১০৫০) সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাযীঃ) একবার বাসরার কারীদেরকে (আলিমদের) ডেকে পাঠালেন। অতঃপর সেখানকার তিনশ’ কারী তার কাছে আসলেন এবং কুরআন পাঠ করলেন। তিনি (তাদের উদ্দেশে) বললেন, আপনারা বাসরার মধ্যে উত্তম লোক এবং সেখানকার কারী। সুতরাং আপনারা অনবরত কুরআন পাঠ করতে থাকুন। অলসতায় দীর্ঘ সময় যেন কেটে না যায়। তাহলে আপনাদের অন্তর কঠিন হয়ে যেতে পারে যেমন আপনাদের পূর্ববর্তী একদল লোকের অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমরা একটি সূরা পাঠ করতাম যা দীর্ঘ এবং কঠোর ভীতি প্রদর্শনের দিক থেকে সূরা বারাআতের সমতুল্য। পরে তা আমি ভুলে গেছি। তবে তার এতটুকু মনে রেখেছি- “যদি কোন আদাম সন্তান দুই উপত্যকা সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে সে তৃতীয় আর একটি উপত্যকা ভর্তি সম্পদ পেতে চাইবে। মাটি ছাড়া আর কোন কিছুতেই আদাম সন্তানের পেট ভরে না।” আমি আরো একটি সূরা পাঠ করতাম যা মুসাব্বিহাত (গুণগানপূর্ণ) সূরাগুলো সমতুল্য। তাও আমি ভুলে গেছি, শুধু তা থেকে এ আয়াতটি মনে আছে– “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেন এমন কথা বল যা কর না”- (সুরাহু সফ ৬১ঃ ২)। আর যে কথা তোমরা শুধু মুখে আওড়াও অথচ করো না তা তোমাদের ঘাড়ে সাক্ষী হিসেবে লিখে রাখা হয়। কিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৮৭, ইসলামীক সেন্টার ২২৮৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আরো হারিয়ে যাওয়া আয়াত

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, কোরআনে আরো কিছু আয়াত নাজিল হওয়ার পরে সাহাবীগণ সেগুলো পাঠ করতেন, পরে সেগুলো মানসুখ হয়ে যায়, এবং সেই কারণে কোরআন থেকে সেগুলো বাদ যায়। সেই আয়াতগুলো কবে মানসুখ হলো, কেন মানসুখ হলো, সেগুলো বোধগম্য নয় [133] [134] –

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫০. যে আল্লাহ‌র রাস্তায় আহত হলো কিংবা বর্শা বিদ্ধ হল
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০১
২৬০৭। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানু আমিরের কাছে পাঠান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা (হারাম ইবনু মিলহান) তাদেরকে বললেন, আমি সবার আগে বানু আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পৌছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী শোনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যাক্তি তাঁর প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবর, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপরে কাফিররা তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যাক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন।
হাম্মাম (রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তাঁর সাথে অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খবর দিলেন, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি’ল, যাকওয়ান, বানু লিহয়ান ও বানু উসায়্যার বিরুদ্ধে দু’আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬০. আল্লাহ তা’আলার এ বাণী যাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত …. আল্লাহ মুমিনগণের শ্রমফল নষ্ট করে দেন না। (আলে ‘ইমরান : ৩:১৬৯ – ১৭১)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৪
২৬১৯। ইসমাইল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদের শহীদ করেছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রি’ল ও যাকওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরে দুয়া করেছিলেন এবং উসাইয়্যা গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, বী’রে মাউনার কাছে শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা, মানসুখ হয়ে যায়। (আয়াতটি হলঃ)
بَلِّغُوا قَوْمَنَا أَنْ قَدْ لَقِينَا رَبَّنَا فَرَضِيَ عَنَّا وَرَضِينَا عَنْهُ‏
অর্থঃ তোমরা আমাদের কওমের কাছে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তার প্রতি সন্তুষ্ট।”

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

অন্ধের অনুরোধে আয়াত পরিবর্তন

একবার মুহাম্মদের কাছে একটি আয়াত নাজিল হলো। মুহাম্মদের পাশে ছিল একজন অন্ধ সাহাবী, যার নাম আমর ইবন উম্মে মাকতুম। ঐ আয়াতে অন্ধদের বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা হয় নি। এই কারণে তিনি মুহাম্মদের কাছে জানতে চাইলেন, অন্ধদের বেলায় কী হবে? মুহাম্মদ তাৎক্ষণিক আগের আয়াতটি বদলে অর্থাৎ একটু আগে বলা আয়াতটি পরিবর্তন করে নতুন আয়াত নাজিল করলেন। সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক যেই আয়াত শুরুতে নাজিল করেছিলেন, তাতে সংশোধনী আনতে হলো। অর্থাৎ, ঐ অন্ধ ব্যক্তি পাশে না থাকলে আগের আয়াতটিই এখনো মুসলিমগণ পড়তো। অন্যান্য যে সকল আয়াত নাজিল হয়েছে, আয়াত নাজিলের সময় পাশে অন্ধ, প্রতিবন্ধী বা অন্যান্য মানুষজন যদি বসে থাকতেন, সেই আয়াতগুলোও হয়তো বদলে যেতো।

ঘটনাটি বর্ণিত আছে সহিহ বুখারী শরীফে [135] –

কোরআন 83
কোরআন 85

শয়তানের আয়াত

নবী মুহাম্মদের মুখে নাকি একবার শয়তান আয়াত ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এই সূরার এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের আয়াত বলা হয়। পরবর্তীতে মুহাম্মদ আয়াতগুলো সংশোধন করে সবাইকে বলেছিলেন, ঐ আয়াতগুলো শয়তানের ধোঁকায় তার মুখ থেকে বেড়িয়েছিল। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, সূরা আন-নাজমের আয়াত মুহাম্মদের মুখে শুনে একই সাথে মুশরিক অর্থাৎ সেই সময়ের মূর্তি পুজারীগণ এবং মুসলিমরা একই সাথে সবাই মিলে মিশে সিজদা করেছিল। নিচের হাদিসগুলো পড়ুন [136] [137]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছদঃ ৬৫/৫৩/৭. আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)
৪৮৬২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইবনু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি। (১০৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 87

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায)
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৫১. সূরা আন-নাজমের সাজদাহ
৫৭৫। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজম-এ সাজদাহ করেছেন। মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও মানুষ সবাই তার সাথে সাজদাহ করেছেন। -সহীহ। বুখারী, কিসসাতুল গারানীক— (১৮, ২৫, ৩১ পৃঃ), বুখারী।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে ইবনু মাসউদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। একদল বিদ্বানের মতে সূরা নাজম-এ সাজদাহ রয়েছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈনের মতে মুফাসসাল সূরাসমূহে কোন সাজদাহ নেই। মালিক ইবনু আনাস এই মতের সমর্থক। কিন্তু প্রথম দলের মতই বেশি সহীহ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ ও আহমাদ প্রথম মতের সমর্থক। (অর্থাৎ মুফাসসাল সূরায় সাজদাহ আছে)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 89

উপরের হাদিসটি থেকে জানা যায়, সূরা নাজমের আয়াত আবৃত্তি করার পরে শুধু মুসলিমগণই নয়, মুশরিকরাও নবী মুহাম্মদের সাথে তার অনুসরণ করে সকলে সিজদা করলো। কিন্তু সেই সময়ে তো মুহাম্মদের সাথে মুশরিকদের চরম দ্বন্দ্ব এবং শত্রুতা চলছে। কী এমন হলো, যার ফলে নবী মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীরা, সেই সাথে মুশরিকরাও তারই সাথে একত্রে কোরআনের একটি সূরার সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করলো? এমন কী ঘটে গেল? এরকম তো হওয়ার কথা নয়। ভেবে দেখুন, এত বড় আশ্চর্য ঘটনা কীভাবে ঘটে? এর জন্য আমাদের যেতে হবে তাফসীরে জালালাইনের কাছে।

তাফসীরে জালালাইন থেকে সূরা হাজ্জ এর ৫২ এবং ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই [138] –

কোরআন 91
কোরআন 93

অর্থাৎ, মুহাম্মদ একবার মুশরিক ও মুসলিমদের সমাবেশে একটি সূরা পড়েছিল, যেই সূরাতে লাত এবং উজ্জা দেবীর প্রশংসামূলক বাক্য ছিল। পরবর্তীতে তিনি বলেন, ঐ সময়ে শয়তান তার মুখে লাত ও উজ্জা দেবীর প্রশংসামূলক বাক্য ঢুকিয়ে দিয়েছে, সেগুলো আসলে আল্লাহর কাছ থেকে আসে নি। এই বিষয়ে তাফসীরে ইবনে কাসীর এর সূরা হাজ্জ এর ৫২, ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর যা বলা আছে [139] –

কোরআন 95
কোরআন 97
কোরআন 99

এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বলা আছে এই লেখাটিতে [140]

অনুরোধের আয়াত

বাঙলাদেশের রেডিও টিভি যারা শোনেন বা দেখেন, তারা অনেকেই অনুরোধের আসর টাইপের কিছু অনুষ্ঠান দেখে থাকবেন। সেখানে দর্শক শ্রোতাগণ কোন গান বাজাতে অনুরোধ করে, এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেই অনুরোধের ভিত্তিতে গান শোনান। কিন্তু কোরআনেও কিন্তু অনুরোধের আয়াত নাজিল হয়েছে।

উমরের কাকুতিমিনতি ও বারবার অনুরোধেও কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল বলে জানা যায় সহিহ হাদিস থেকেই। উমর এই নিয়ে রীতিমত গর্বও করতেন যে, অন্তত তিনটি বিষয়ে উনার পরামর্শে আল্লাহ পাক আয়াত নাজিল করেন [141] [142] [143] –

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
৪৪২৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ব্যাপারে পর্দার আদেশ দিতেন (তবে ভাল হত) তারপর আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 101

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের বেলা ‘মানাসি’ এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। الْمَنَاصِع (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যাম’আ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় (তিনি এরূপ করলেন)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 103

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮/ সালাত
‏পরিচ্ছদঃ ২৭৩। কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা।
৩৯৩। আমার ইবনু ‘আওন (রহঃ) …. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى‏) “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও” (২ : ১২৫)
(দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি আপনার সহধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়।
আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। (৬৬ : ৫) তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

(অপর সনদে ইবন আবু মারয়াম (রহঃ) …. আনাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 105

খেয়াল করে দেখুন, উমরের পরামর্শ আর সেই মহাবিশ্বের শুরুতে লাওহে মাহফুজে লিখে রাখা আল্লাহ পাকের আয়াতের মধ্যে কত মিল! এবারে আসুন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ নসরুল বারীতে এই বিষয়ে কী বলা আছে জেনে নেয়া যাক, [144]

কোরআন 107
কোরআন 109

Alī ibn Ahmad al-Wāhidī এর Asbāb al-Nuzūl গ্রন্থ থেকে জানা যায়, কোরআনের আরো একটি আয়াত উমরের মতামত অনুসারে নাজিল হয়েছিল [145] – ( গ্রন্থ সহায়ক ১৪ )

কোরআন 111

আয়াত নামার আতঙ্ক

হযরত মুহাম্মদের সাহাবীরা রীতিমত আয়াত নামার আতঙ্কে থাকতেন, যা সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়। তারা ভয় পেতেন যে, এই বুঝি আল্লাহ আরেক আয়াত নাজিল করে বসে। এই আতঙ্কে তারা নবীর স্ত্রীদের সাথে অবাধে হাসাহাসি ঠাট্টামশকরা করতে পারতেন না। তবে নবীজির মৃত্যুর পরে তারা অবাধে হাসিঠাট্টা করতে পারতেন। কারণ তখন আর ক্ষেপে গিয়ে হুটহাট আয়াত নামার কোন সম্ভাবনা ছিল না [146] –

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছদঃ ২৫০৫. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওসীয়ত
৪৮০৮। নুআয়ম (রহঃ) … ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা থেকে দূরে থাকতাম এই ভয়ে যে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে কোন ওহী নাযিল হয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আমরা তাদের সাথে অবাধে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 113

প্রশ্ন হচ্ছে, নবীর সাহাবীগণও কী মুহাম্মদের হুটহাট আয়াত নামাবার অভ্যাস সম্পর্কে জানতেন? কারণ, আল্লাহ পাক যদি আয়াত লাওহে মাহফুজে লিখেই রাখেন, সেটা তো নামবেই। সাহাবীগণ হাসাহাসি করুক কিংবা না করুক। উনারা কেন এই আতঙ্কে থাকবেন? তার মানে কী, উনাদের মনেও নবী সম্পর্কে সন্দেহ ছিল? নবীর যত্রতত্র আয়াত নামাবার অভ্যাসের কারণে সাহাবীরা বিরক্ত ছিল?

আয়েশার সন্দেহ

আয়েশার সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, আয়েশা একসময় খানিকটা বিরক্ত হয়েই নবী মুহাম্মদকে বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার ইচ্ছা অনুসারে সাথে সাথে আয়াত নাজিল করেন। হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আয়েশার মন আমাদের ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে [147] –

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২৪৫৫. কোন মহিলা কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে কিনা ?
৪৭৪০। মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) … হিশামের পিতা উরওয়া থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদের পুরপুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুরআন ের এ আয়াত অবর্তীর্ণ হল- “হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার।” আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবূ সাঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইবনু বিশর এবং আবদাহ্ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হতে একে অপরের চেয়ে কিছু বেশী-কমসহ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কোরআন 115

শিক্ষিত ওহী লেখকের ধর্মত্যাগ

সহিহ হাদিস থেকে এটিও জানা যায়, একজন শিক্ষিত খ্রিস্টান ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে মুহাম্মদ তাকে ওহী লেখার দায়িত্ব দেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সে ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায়। তার বক্তব্য ছিল, সে মুহাম্মদকে যা লিখে দিতো তার চাইতে বেশি মুহাম্মদ জানতো না। তার মৃত্যুর পরে কে বা কারা তাকে কবর থেকে বের করে ফেলতো। হাদিসটির দাবী হচ্ছে, কবরের মাটিই তাকে কবর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করতো। কিন্তু সেটি সত্য হয়ে থাকলে, পৃথিবীতে এখন লক্ষ লক্ষ ইসলাম ত্যাগী এবং মুহাম্মদের কঠোর সমালোচক আছেন। তাদের সকলের কবরেই তো এরকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরকম তো কখনো শোনা যায় না। এর অর্থ হচ্ছে, সেই সময়ে নবীরই কোন অনুসারীকে দিয়ে নবী হয়তো কাজটি করাতেন, বা নবী নিজেই করতেন। এই হাদিসটি সহিহ মুসলিম শরীফেও রয়েছে, তবে খ্রিস্টান ব্যক্তির বক্তব্য বাদ দিয়েইমাম মুসলিম হাদিসটি সংকলন করেছেন।

উল্লেখ্য, নবী রাতের বেলা একা একা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন, যার প্রমাণ আরেকটি হাদিস থেকে পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, আয়িশা তার পিছু নিয়েছিল। তাই সেই ব্যক্তির কবর মুহাম্মদ নিজেই খুড়ে আসতেন কিনা, সেটিও একটি সম্ভাবনা হতে পারে। হাদিসটি নিচে বর্ণনা করা হলো। এই কারণে মুহাম্মদ আয়িশার ওপর রেগে তার গায়ে হাতও তুলেছিলেন [148]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
পরিচ্ছেদঃ ৬১/২৫. ইসলামে নুবুওয়াতের নিদর্শনাবলী।
৩৬১৭. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ -কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কান্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল। (মুসলিম ৫০/৫০ হাঃ ২৭৮১, আহমাদ ১৩৩২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

কোরআন 117

আল-লুলু ওয়াল মারজান
৫০/ মুনাফিক ও তাদের হুকুম
পরিচ্ছেদঃ (মুনাফিক ও তাদের হুকুম)
১৭৭২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরাহ বাকারাহ ও সূরাহ আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ-কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভােরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল।
সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১ : মর্যাদা ও গুণাবলী, অধ্যায় ২৫, হাঃ ৩৬১৭; মুসলিম, পর্ব ৫০ : মুনাফিক ও তাদের হুকুম, অধ্যায়, হাঃ ২৭৮১
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

হযরত আয়শা হতে বর্ণিত, রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে, আয়িশা পিছু নেয়ার কারণে তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [149] [150] –

সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। 
বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)

কোরআন 119
কোরআন 121

আবদুল্লাহ ইবনে সাদ এর ঘটনা

প্রথমেই বলে নেয়া দরকার, মক্কা বিজয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ উসমানের দুধভাই প্রখ্যাত ওহী লেখক আবু ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন সারাহ আল আমিরি আল কুরাইশীকে হত্যার নির্দেশ দেন। তিনি আগে মুসলিম ছিলেন, পরে ইসলাম ত্যাগ করে মক্কায় পালিয়ে আসেন। তাকে নিয়ে মুহাম্মদের খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিল। কারণ সেই সময় উসমান সুপারিশ করেন যে, তাকে যেন ক্ষমা করা হয়। মুহাম্মদ না পারছিলেন তাকে হত্যা করতে, না পারছিলেন জীবিত রাখতে। এক অস্বস্তিকর উভয় সঙ্কট উপস্থিত হয়েছিল। মনে মনে চাচ্ছিলেন, কেউ তাকে হত্যা করুক, কিন্তু চক্ষুলজ্জার খাতিরে তা করতেও পারছিলেন না। এর পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে [151]

কোরআন 123

কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, কে ছিল এই লোক? যাকে মুহাম্মদ এত তীব্রভাবে ঘৃণা করতো যে, তাকে হত্যার হুকুম দিয়েছিল এবং উসমানের সুপারিশের পরেও মনে মনে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? এর বিবরণ পাওয়া যায় তাফসীরে মাযহারীতে [152] –

কোরআন 125
কোরআন 127

সহিহ হাদিস থেকেও জানা যায়, মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরে সে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয়, কিন্তু মুহাম্মদ তাকে হত্যার ইচ্ছাই করেছিলেন [153] –

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ২১. ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আগে, কোন বিধর্মী বন্দীকে হত্যা করা।
২৬৭৪. ’উসমান ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) …. সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারজন ও দুইজন মহিলা ব্যতীত অন্যান্য সকলকে নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং তিনি তাদের নামও ঘোষণা করেন। আর ইবন আবূ সারাহ্ … এরপর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী সা’দ বলেনঃ ইবন রাবী সারাহ্ ’উছমান (রাঃ) এর নিকট আত্মগোপন করে থাকেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়াত গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানান, তখন উছমান (রাঃ) তাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড় করে দেন এবং বলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি ’আবদুল্লাহকে বায়াত করান। তিনি তাঁর মাথা উঠান এবং তিনবার তার দিকে তাকান এবং প্রত্যক বারই বায়াত করাতে অস্বীকার করেন।
তৃতীয় বারের পর তিনি তাকে বায়াত করান, পরে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বলেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন চালাক লোক কি ছিল না, যখন সে আমাকে দেখল যে, আমি তাকে বায়াত করাচ্ছি না, তখন কেন সে তাকে হত্যা করল না? তাঁরা (সাহাবীরা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা তো আপনার অন্তরের কথা বুঝতে পারিনি। আপনি (এ ব্যাপারে) চোখ দিয়ে কেন আমাদেরকে ইশারা করলেন না? তিনি বললেনঃ কোন নবীর জন্য এ উচিত নয় যে, সে চোরা দৃষ্টিতে তাকাবে।
আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ
 আবদুল্লাহ্ ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর দুধ ভাই এবং ওয়ালীদ ইবন ’উকবা ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর বৈমাত্রেয় ভাই। উছমান (রাঃ) তাঁর শাসনামলে মদ্যপানের অভিযোগে তাকে শাস্তি দেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)

মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদের শেষ বক্তব্য

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, মৃত্যুশয্যায় রোগে কাতরাতে কাতরাতে মুহাম্মদ তার উম্মতদের উদ্দেশ্যে কিছু লিখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উমরের নির্দেশে তাকে লিখতে দেয়া হয় নি। এই নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষও ছিল। রীতিমত ঝগড়া এবং মারামারির উপক্রমও হয়ে যাচ্ছিল। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শেষবেলায় কী বলতে চেয়েছিল মুহাম্মদ? তা আর জানা যায় নি [154] [155] [156] –

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা
১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৫/ রুগী
পরিচ্ছেদঃ ৭৫/১৭. তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, রোগীর এ কথা বলা।
৫৬৬৯. ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের সময় আগত হল, তখন ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের জমায়েত ছিল। যাঁদের মধ্যে ’উমার ইবনু খত্তাব-ও ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রোগ কাতর অবস্থায়) বললেনঃ লও, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেব, যাতে পরবর্তীতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। তখন ’উমার (রাঃ) বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর রোগ যন্ত্রণা তীব্র হয়ে উঠেছে, আর তোমাদের কাছে কুরআন মাওজুদ। আর আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময়ে আহলে বাইতের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হল। তাঁরা বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হলেন, তন্মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কাগজ পৌঁছে দাও এবং তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেবেন, যাতে পরবর্তীতে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হও। আবার তাদের মধ্যে ’উমার (রাঃ) যা বললেন, তা বলে যেতে লাগলেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁদের বাকবিতন্ডা ও মতভেদ বেড়ে চলল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা উঠে যাও।
’উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ
 ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলতেন, বড় মুসীবত হল লোকজনের সেই মতভেদ ও তর্ক-বিতর্ক, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেই লিখে দেয়ার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। [১১৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

কোরআন 129
কোরআন 131

আল্লাহর বাণী কী অপরিবর্তনীয়?

কোরআনে আল্লাহ পাক নিজেই গর্ব করে ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ পাকের নাজিল কৃত আয়াত অপরিবর্তনীয়, সামান্যতম হেরফের যার হতে পারে না, এবং সেই সব আয়াত শাশ্বত বাণী।

অপরিবর্তনীয়

কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [157] [158] –

তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।

আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকেঃ [159]

কোরআন 133

কোরআনে এটিও বলা আছে [160] –

আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।

তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এর তাফসীরটিও দেখি [161] –

কোরআন 135

পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংস্কারযোগ্য

আবার একইসাথে, আল্লাহ পাকের অনেক আয়াতের পরিবর্তন পরিমার্জন এবং সংস্কার এসেছে। যার যুক্তি হিসেবে ইসলামিক আলেমগণ বলেন, আল্লাহ আয়াত নাজিল করতে পারলে তার পরিবর্তনও আল্লাহ করতে পারেন। এই নিয়ে মুহাম্মদের আমলেই অসংখ্য ইহুদী প্রশ্ন করেছিল যে, নবী মুহাম্মদকে আল্লাহ পাক একবার একটি নির্দেশ দিয়ে পরে আবার তা বদলে দেয় কীভাবে? আল্লাহ পাকের নিজের কথাই এভাবে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করেন কেন?

এমনকি, এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, নবী মুহাম্মদের ওপর আয়াত নাজিল হওয়ার পরে নবী মুহাম্মদ তা ভুলে গিয়েছিলেন। তখন তিনি যুক্তি হিসেবে বলেছেন, আল্লাহ পাকই ঐ আয়াত তাকে ভুলিয়ে নতুন আয়াত দিয়েছেন। এই যুক্তি কতটা যুক্তি আর কতটা গোঁজামিল, তা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।

এই নিয়ে ইহুদীরা যখন হাসাহাসি করতো, আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, আল্লাহ কারো কাছে জবাবদিহি করেন না। চিন্তা করে দেখুন, বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত।

উল্লেখ্য, বেশ কিছু বিষয়ে আল্লাহ পাক তার নিজের দেয়া আইনই পরিবর্তন করেছেন। সেগুলো হচ্ছে [162] –

  • প্রথম অবস্থায় আয়াত নাজিল হয়েছিল যে, নারীর ইদ্দত হবে একবছর। কিন্তু পরবর্তীতে সেই আয়াত বদলে চারমাস দশদিনের বিধান দেয়া হয়।
  • প্রথম অবস্থায় মুজাহির নারীকে পরীক্ষা করার হুকুম জাড়ি হয়। পরবর্তীতে এই বিধান তুলে নেয়া হয়।

প্রাসঙ্গিক আলোচনা
শানে নুযূল : ইহুদিরা তাওরাতকে ‘নসখ’ -এর অযোগ্য মনে করত। তারা কুরআনেরও অনেক বিধান রহিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেছে। ভর্ৎসনা করে বলেছে মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে একবার এক হুকুম প্রদান করে আবার তা থেকে বারণ করে। এ ধরনের কথা বলে ইহুদিরা মুসলমানদের অন্তরে এ সন্দেহ সৃষ্টির পাঁয়তারা করত যে, তোমরা তো বল- আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সবটুকুই ‘খায়ের’ বা কল্যাণকর। যদি তাই হয়, তাহলে তা রহিত হওয়ার অর্থ কি? যদি প্রথম হুকুমটি ভালো হয়ে থাকে, তাহলে দ্বিতীয়টি খারাপ হবে। আর দ্বিতীয়টি ভালো হলে প্রথমটি খারাপ হবে । অথচ আল্লাহ তা’আলার ওহী এবং হুকুম খারাপ হওয়া অসম্ভব। তাদের এহেন বক্তব্য খণ্ডন করার জন্য আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, আসমান জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার হাতে। তিনি যা ভালো মনে করেন, যে সময় যে বিধান তাঁর হিকমত অনুযায়ী হয়, তা-ই প্রয়োগ করেন এবং পূর্বের কোনো বিধান রহিতও করেন। এটি তার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। -[তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন : আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (র.) খ. ১, পৃ. ১৯৬]
অর্থাৎ শব্দসহ মানসুখ হবে না; বরং শুধু বিধানটি মানসুখ হবে। তেলাওয়াত বাকী থাকবে। এটি -এর দ্বিতীয় সূরত । একে বলা হয়। যেমন – haji না ভাল ল এটির তেলাওয়াত বাকী আছে; কিন্তু বিধানটি রহিত হয়ে গেছে।
দু’প্রকার : কুরআনে কারীমে নসখ দু’রকম হয়েছে-
১. একটি মানসুখ হুকুমের স্থলে অন্য বিধান নাজিল করা। যেমন- এক বছরের ইদ্দত রহিত করে চার মাস দশ দিনের বিধান দেওয়া হয়েছে।
২. প্রথম বিধান রহিত করে আর কোনো নতুন বিধান না দেওয়া। যেমন প্রথম দিকে মুহাজির নারীকে পরীক্ষা করার বিধান ছিল। পরবর্তীতে তা রহিত করা হয়েছে।
ফায়দা : যদি মুফাসসির (র.) এ এন এর স্থলে । বলতেন, তাহলে বক্তব্যটি অধিকতর সুস্পষ্ট হতো। কেননা মুফাসসির (র.)-এর ইবারতে অপর একটি কেরাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে, যা অশুদ্ধ। আর তা হলো …… এই সূরতটি শব্দ ও অর্থ উভয় দিক থেকেই অসঠিক । শব্দগতভাবে এ জন্য যে, এই কেরাতটি বর্ণিত নেই । আর অর্থগতভাবে অসঠিক এ জন্য যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তথা ভুলে যাওয়ার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। [জামালাইন খ. ১, পৃ. ১৯৭]
মুফাসসির (র.) যদি না বলেying বলতেন, তাহলে ভালো হতো । কেননা শব্দটি ও এবং তা। মাসদার থেকে নির্গত; 3 থেকে নয় । সুতরাং বলা হবে মূলবর্ণ থেকে নির্গত । -[হাশিয়ায়ে জামাল খ. ১, পৃ. ১৩৭] STU : উভয়ের মাঝে -এর সম্পর্ক। হযরত জিবরাঈল (আ.)-কে নসখের হুকুম দেওয়া মানে নবীজীকেই হুকুম দেওয়া । আর নবীজীকে হুকুম দেওয়া মানে হযরত জিবরাঈল (আ.)-কে হুকুম দেওয়া।
বান্দাদের জন্য অধিকতর উপকারী। এর দ্বারা এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আয়াতে বর্ণিত বা উত্তম হওয়াটা বান্দাদের উপকারের ভিত্তিতে। এ ভিত্তিতে নয় যে, কুরআনের কোনো আয়াত অপর আয়াতের তুলনায় উত্তম । কেননা আল্লাহ তা’আলার কালাম পুরোটাই কল্যাণ। [হাশিয়ায়ে জালালাইন, পৃ. ১৬]

কোরআন 137

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে মদ্যপান হালাল এবং হারাম হওয়ার বিধান। এই আয়াতগুলো থেকে আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্তহীনতা এবং বারবার নিয়ম পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। আসুন আয়াতগুলো দেখি [163] –

আর খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।
— Taisirul Quran
আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে। * ইমাম তাবারী বলেন, আয়াতটি মাদক নিষিদ্দ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
— Rawai Al-bayan
আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক [১]; নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন [২]
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And from the fruits of the palm trees and grapevines you take intoxicant and good provision.1 Indeed in that is a sign for a people who reason.
— Saheeh International

এরপরে নাজিল হওয়া আয়াতে বলা হয়, মদে উপকারও আছে, অপকারও আছে [164] –

তোমাকে লোকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ‘ঐ দু’টোতে আছে ভয়ঙ্কর গুনাহ এবং মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু এ দু’টোর পাপ এ দু’টোর উপকার অপেক্ষা অধিক’। তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কী তারা ব্যয় করবে? বল, ‘যা উদ্বৃত্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের প্রতি আদেশাবলী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর ।
— Taisirul Quran
মাদক দ্রব্য ও জুয়া খেলা সম্বন্ধে তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলঃ এ দু’টোর মধ্যে গুরুতর পাপ রয়েছে এবং কোন কোন লোকের (কিছু) উপকার আছে, কিন্তু ও দু’টোর লাভ অপেক্ষা পাপই গুরুতর; তারা তোমাকে (আরও) জিজ্ঞেস করছে, তারা কি (পরিমান) ব্যয় করবে? তুমি বলঃ যা তোমাদের উদ্ধৃত্ত; এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।
— Sheikh Mujibur Rahman
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।
— Rawai Al-bayan
লোকেরা আপনাকে মদ [১] ও জুয়া [২] সম্পর্কে জিজ্জেস করে। বলুন, ‘দু’টোর মধ্যেই আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও ; আর এ দু’টোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়’। আর তারা আপনাকে জিজ্জেস করে কি তারা ব্যায় করবে ? বলুন, যা উদ্বৃত্ত [৩]। এভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
They ask you about wine1 and gambling. Say, “In them is great sin and [yet, some] benefit for people. But their sin is greater than their benefit.” And they ask you what they should spend. Say, “The excess [beyond needs].” Thus Allah makes clear to you the verses [of revelation] that you might give thought
— Saheeh International

পরবর্তী সময়ে হযরত আলী মদ্যপ অবস্থায় ভুল সূরা পড়ে নামাজ পড়াবার কারণে মদ পান করে নামাজ পড়ানো বা পড়া নিষিদ্ধ হয়, যেটি জানা যায় একটি সহিহ হাদিস থেকে [165] –

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১/ পানীয় দ্রব্য
পরিচ্ছেদঃ ১. মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা
৩৬৭১ আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আনসার গোত্রের এক লোক তাকে ও আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে দা‘ওয়াত করে উভয়কে মদ পান করালেন তা হারাম হওয়ার পূর্বে। অতঃপর মাগরিবের সালাতে আলী (রাঃ) তাদের ইমামতি করলেন। তিনি সূরা ‘‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ পাঠ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন মাতাল অবস্থায় থাকো তখন সালাতের কাছেও যেও না। সালাত তখনই পড়বে, যখন তোমরা কি বলছো তা সঠিকরূাপ বুঝতে পারো।’’ (সূরা আন-নিসাঃ ৪৩)[1]
সহীহ।
[1]. তিরযযী। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)

এই সময়েই নাজিল হয়, মাতাল অবস্থায় যেন মুমিনরা নামাজের কাছাকাছি না যায়। যা থেকে বোঝা যায়, মদ খাওয়াকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতিই দেয়া হয়েছে। এবং এটি তখনও নিষিদ্ধ হয় নি।[166]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সলাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বল, তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থায়ও (সলাতের কাছে যেও না) গোসল না করা পর্যন্ত (মসজিদে) পথ অতিক্রম করা ব্যতীত; এবং যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক; অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান হতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সঙ্গম করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর, আর তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসহ কর; আল্লাহ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেওনা, যখন নিজের উচ্চারিত বাক্যের অর্থ নিজেই বুঝতে সক্ষম নও – এ অবস্থায় অথবা গোসল যরুরী হলে তা সমাপ্ত না করে সালাতের জন্য দান্ডায়মান হয়োনা। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। যদি তোমরা পীড়িত হও, কিংবা প্রবাসে অবস্থান কর অথবা তোমাদের মধ্যে কেহ পায়খানা হতে প্রত্যাগত হয় কিংবা রমণী স্পর্শ করে এবং পানি না পাওয়া যায় তাহলে বিশুদ্ধ মাটির অম্বেষণ কর, তদ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ মুছে ফেল; নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও*। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ কর, তবে যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম কর** । সুতরাং তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। * তাহলে তার কথা ভিন্ন, সে গোসল না করেও শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে সালাত অর্থ সালাত আদায়স্থল। তাহলে অর্থ হবে, তোমরা অপবিত্র অবস্থায় সালাত আদায়স্থল তথা মসজিদে যেতে পারবে না। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাবে। (যুবদাতুত-তাফসীর)।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় [১] তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার [২] এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর [৩]। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর [৪]। সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
O you who have believed, do not approach prayer while you are intoxicated until you know what you are saying1 or in a state of janābah,2 except those passing through [a place of prayer], until you have washed [your whole body]. And if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women [i.e., had sexual intercourse] and find no water, then seek clean earth and wipe over your faces and your hands [with it]. Indeed, Allah is ever Pardoning3 and Forgiving.
— Saheeh International

এরপরে নাজিল হয়, মদ সম্পর্কে পরিপূর্ণ এবং শেষ বিধান। কোরআনের আয়াতে মদকে স্পষ্টভাবে নাপাক বলা হয়। মদকে উল্লেখ করা হয়, শয়তানি কর্ম ও পরস্পর লড়াই বিদ্বেষের উৎস হিসাবে। মূলত এই আয়াতের মাধ্যমে মদকে হারাম ঘোষনা করা হয়। যা সর্বশেষ আয়াত বিধায় এটিই কোরআনের আইন হিসেবে গণ্য হবে [167] –

5:90
হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! মদ [১], জুয়া, পূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর [২] তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলোকে বর্জন কর –যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার [৩]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
O you who have believed, indeed, intoxicants, gambling, [sacrificing on] stone altars [to other than Allah], and divining arrows are but defilement from the work of Satan, so avoid1 it that you may be successful.
— Saheeh International
5:91
মদ আর জুয়ার মাধ্যমে শয়তান তো চায় তোমাদের মাঝে শত্রুতা আর বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে, আল্লাহর স্মরণ আর নামায থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে। কাজেই তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে?
— Taisirul Quran
শাইতানতো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে। সুতরাং এখনো কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা?
— Sheikh Mujibur Rahman
শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?
— Rawai Al-bayan
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাঁধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না [১]?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Satan only wants to cause between you animosity and hatred through intoxicants and gambling and to avert you from the remembrance of Allah and from prayer. So will you not desist?
— Saheeh International

এরকম আরো বেশ কিছু বিষয়ে আল্লাহ পাক পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, যার যুক্তি হিসেবে তাফসীর লেখকগণ বলেছেন, একজন ডাক্তার যেমন রোগীর অবস্থা বুঝে ঔষধ পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি আল্লাহ পাকও মাঝে মাঝে আদেশ নিষেধ পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু ডাক্তারের ঔষধ পরিবর্তন আর আল্লাহর আদেশ পরিবর্তন কী এক হতে পারে? [168]

কোরআন 139

একজন ডাক্তারের কাছে সকল তথ্য থাকা সম্ভব নয়। সেই কারণে তিনি এক ঔষধ দিয়ে পরীক্ষা করতে পারে। কারণ আসল রোগটি কী, তিনি হয়তো নিশ্চিতভাবে বোঝেন নি। নানা ধরণের পরীক্ষার পরেও একদম শতভাগ নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় ডাক্তারের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। কারণ মানুষের শরীর অত্যন্ত জটিল। আর ডাক্তারের জ্ঞানও সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহর তো সেই সীমাবদ্ধতা নেই। যিনি সব জ্ঞানের অধিকারী, পরে কী হবে সেটাও তো তিনি ভালভাবেই অবগত থাকার কথা। তাহলে তিনি কেন আদেশ নিষেধ পরিবর্তন করবেন?

ধরে নিচ্ছি, আল্লাহ পাক প্রথমে আয়াত নাজিল করলেন, নারীর ইদ্দত হবে একবছর। তিনি তো সব দেখে শুনে বুঝেই এই নির্দেশ জাড়ি করবেন, নাকি? কোথায় কী কী সমস্যা হতে পারে, কোন নারীর কী কী বিষয় ঘটতে পারে, সবই তো তার জানা। তাহলে প্রথমে একবছরের ইদ্দত, পরে আবার তা পরিবর্তন করে চারমাস দশদিনের ইদ্দত পালনের নির্দেশের মানে কী? তার মানে কী, প্রথম নির্দেশটি সঠিক ছিল না? সেই সময়ে আল্লাহর জ্ঞানের অভাব ছিল? সে ঠিকভাবে না বুঝেই, চিন্তাভাবনা না করেই একবছরের ইদ্দতের নির্দেশ দিয়ে ফেলেছিল? পরে যদি সংশোধনেরই দরকার হয়, তাহলে এটি মহান সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য কীভাবে হয়?

এবারে আসুন এই সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখিঃ [169]

আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?

এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ি [170] –

কোরআন 141
কোরআন 143
কোরআন 145
কোরআন 147
কোরআন 149

এবারে কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নিই, [171]

এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।

নসেখ মানসুখ কাকে বলে?

ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী।

منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।

এই বিষয় দুইটি নিয়ে সাধারণত আম মৌলানারা কখনো মুখ খোলেন না। তবে ইসলাম নিয়ে পড়ালেখা করলে বিভিন্ন সময় ইসলামিক আলেমদের বইপত্রগুলোতে নাসেখ মানসুখ শব্দগুলো পাওয়া যায়। এই শব্দগুলো খুব ভালভাবে জানা এবং বোঝা ইসলামকে সামগ্রিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসেখের অর্থ হলো, যা রহিত করে। ‘নসখ’ এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে ‘মানসুখ’ শব্দটি। মানসুখ অর্থ হচ্ছে, যা রহিত করা হয়েছে। কোরআনের কিছু আয়াতকে ‘মানসুখ’ বা রহিত আয়াত এবং আরো কিছু আয়াতকে ‘নসখ’ বা পরিমার্জিত আয়াত বলা হয়। নসখ আয়াতের বিধান দ্বারা মানসুখ আয়াতের বিধান রহিত ও প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক মাঝে মাঝেই বিভিন্ন আয়াত নাজিল করে, সেই আয়াত আবার রহিত করেছেন, নতুন আয়াত নাজিল করেছেন। বিষয়টি কোরআনের অবিকৃত হওয়ার বিরুদ্ধে এক বিশাল ধাক্কা। যদিও মুসলিমগণ এখানেও মুখ উচিয়ে বলবেন, এই সংস্কার, পরিমার্জনাও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে।

কোরআনে বলা আছে, [172] [173]

এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন;

আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?

সেই সাথে, সহিহ হাদিসেও এই বিষয়ে পরিষ্কার বলা আছে যে, আল্লাহ পাকের নাজিলকৃত কোন কোন আয়াত বাতিল হতে পারে। [174]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
হাদিস নাম্বার: ৪১৭৪
৪১৭৪। উমাইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে লিখেছেন (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি (উসমান (রাঃ)) বললেন, হে ভাতিজা আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এ থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, আল্লাহ পাক তার নাজিলকৃত আয়াতসমূহে মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনেন। প্রয়োজনমাফিক তিনি সংশোধন করেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সংশয় ডট কমের সংকলন দেখুন।

মুহাম্মদের সাহাবীগণ, তাবে তাবেইন এবং প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণের মত হচ্ছে, অন্তত পাঁচশ আয়াত রহিত হয়ে গেছে। এসব আয়াতের বিধান এখন আর কার্যকর নয়, যদিও এর প্রায় সবই এখনো কোরআনে রয়েছে। নাসেখ মানসুখের ওপর ভিত্তি করে কোরআনের সূরাগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ

  • ৩০টি সূরায় নাসেখ মানসুখ উভয় ধরণের আয়াত রয়েছে। অর্থাৎ, এসব সূরায় বিধান রহিতকারী আয়াতও রয়েছে, পাশাপাশি পুরাতন বিধান সমৃদ্ধ আয়াতও রয়েছে।
  • ৩৬টি সূরায় শুধু মানসুখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এদেরকে যে আয়াতগুলো রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় স্থান পেয়েছে কিংবা এদের পরিবর্তে অন্য কোন আয়াত পাঠানো হয়নি।
  • ৬টি সূরায় শুধু নসখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এই আয়াতগুলো যাদেরকে রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
  • ৪২টি সূরায় নসখ বা মানসুখ জাতীয় কোন আয়াত নেই। এগুলো ঝামেলামুক্ত।

আসুন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী এর খ্যাতনাম গ্রন্থ আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর থেকে সরাসরি পড়ি। [175]

কোরআন 151
কোরআন 153
কোরআন 155
কোরআন 157
কোরআন 159
কোরআন 161
কোরআন 163
কোরআন 165
কোরআন 167
কোরআন 169
কোরআন 171

এবারে আসুন প্রখ্যাত আলেম ড. আবু বকর যাকারিয়ার মুখ থেকেই সরাসরি শুনি, নাসেখ মানসুখ বিষয়টি সম্পর্কে,

মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু

মুসলিমদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, [176]

এটা (কোরআন) বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে (মুহাম্মদ) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা/প্রধান ধমনী।
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।

এবারে আসুন, সেই হাদিসসমূহ দেখে নিই [177] –

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১৩। ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।(1)
সনদ সহীহ।
(1). আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ)

আরো কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ তার প্রধান ধমনী কেটে দেয়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করতেন [178] –

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারের এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশর ইবনুল বারাআত ইবনু মা‘রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমাকে কিসে প্ররোচিত করেছে?
সে বললো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিয়েছে।(1)
হাসান সহীহ।
(1). বুখারী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

এবারে আসুন আরো দেখি, মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ, সর্বাপেক্ষা প্রিয় রাসুল নবী মুহাম্মদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল [179] [180] [181] –

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২৪৭. নাবী (সাঃ) এর রোগ ও তাঁর ওফাত। মহান আল্লাহর বাণীঃ আপনিতো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। এরপর কিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাক-বিতন্ডা করবে (৩৯ঃ ৩০,৩১) ইউনুস (রহঃ) যুহরী ও উরওয়া (রহঃ) সুত্রে বলেন, আয়শা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাঃ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, হে আয়শা! আমি খায়বারে (বিষযুক্ত) যে খাদ্য ভক্ষণ করেছিলাম, আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি। আর এখন সেই সময় আগত, যখন সে বিষক্রিয়ার আমার প্রাণবায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে

মুহাম্মদের বিষে মৃত্যু
বিষক্রিয়ায় মুহাম্মদের মৃত্যু

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
৩/১৬২৯। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না।
সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, আহমাদ ১৬০২৬, সহীহাহ ১৬৩৮, মুখতাসার শামাযিল ৩৩৪, বুখারী শেষ বাক্য বাদ দিয়ে। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ফাতিমা ও মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ
ফাতিমা ও মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ

সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছদঃ মৃত্যুর সময় কষ্ট হওয়া।
৯৮১. হাসান ইবনুুস সাববাহ আল-বাগদাদী (রহঃ) …… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে কষ্ট হতে দেখেছি এরপর কারো মৃত্যুর সময় আসান হতে দেখতে আমার আর কোন ঈর্ষা হয় না। – মুখতাসার শামাইল মুহাম্মাদিয়া ৩২৫, বুখারি, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯ (আল মাদানী প্রকাশনী)
রাবী বলেন, আমি এই হাদিস সম্পর্কে আবূ যুরআ (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেছিলাম, রাবী আব্দুর রাহমান ইবনুল আলা কে? তিনি বললেন, ইনি হলেন আলা ইবনুল লাজলাজ। তাঁকে এইরূপেই আমরা জানি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মুহাম্মদের মৃত্যু যন্ত্রণা

বলা বাহুল্য, হযরত মুহাম্মদের মৃত্যু যেকোন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর চাইতে বহুগুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়েছিল, তা এই হাদিসগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এ থেকে আসলে কোন সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় না। তারপরেও মুহাম্মদের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হওয়া, করুণ মৃত্যু হওয়া, প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করার কারণ কী হতে পারে, তার উত্তরে ইসলামিস্টগণ হয়তো আমাদের নানাভাবে বুঝ দেবেন।

উপসংহার

পুরো আলোচনা থেকে আমরা যেই বিষয়গুলো প্রমাণ পেলাম, কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নাকি আল্লাহর গুণ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্ক রয়েছে লাওহে মাহফুজ নিয়ে, কোরআনের ভাষা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, প্রথমবার কোরআন লেখা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংকলন, কোরআনের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়েও খোদ খলিফাদের মধ্যে ভয় ছিল, আবু বকর, উমর এবং আলীর কোরআন নিয়ে হয়েছে ইসলামের প্রধান দুটি ভাগ, উসমানের কোরআন নিয়ে রীতিমত রক্তারক্তি ও হত্যা, সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা এবং সূরার সংখ্যা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, কোরআনের আয়াত ছাগলে খেয়ে যাওয়ায় সেই আয়াতটি আর পাওয়া যায় নি, সূরা তওবা আরেকটি সূরার অংশ নাকি স্বতন্ত্র সূরা তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, প্রথম এবং শেষ সূরা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, নাজিলের ক্রমানুসারে কোরআনে সূরাগুলোর সিরিয়াল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, কোরআনের অনেক অংশ নবী মুহাম্মদ খোদ ভুলে গিয়েছিলেন, আবার আল্লাহ নিজেই কোরআনের অনেক আয়াতের সংশোধনী প্রেরণ করেছিলেন, শয়তানের আয়াত নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, এবং মুহাম্মদের মৃত্যুশয্যায় তিনি কী লিখে যেতে চেয়েছিলেন, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

এতকিছুর পরে আরো বহু বহু বিতর্ক রয়েছে গেছে, যার সহজ উত্তম ইসলামিস্টগণ দেন যে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু, সেটি কতটুকু যুক্তি, আর কতটুকু বিশ্বাস, তা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।

এত অসংখ্য সমস্যা, জটিলতা, কোন আয়াত মানসুখ, কোন আয়াত আছে নাকি নেই, এই সব বিতর্ক এবং তা নিয়ে রীতিমত রক্তারক্তি ঘটনা ঘটার পরেও কেউ যখন বলেন, আল্লাহ পাক ঠিক যেভাবে কোরআন নাজিল করেছেন, তার বিন্দুমাত্র কোন পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংস্কার কিছুই হয় নি, যেভাবে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত এখন সেভাবেই আছে, তখন বিষয়টি হাস্যরসাত্মক একটি ব্যাপারে পরিণত হয়।


সহায়ক গ্রন্থসমূহ

১ ) কোরআনের বাংলা অনুবাদগুলো Quran.com এর মুহিউদ্দিন খান এর অনুবাদ থেকে নেয়া হয়েছে।
২ ) বাংলা তাফসির কুর’আনুল কারিম – অনুবাদঃ প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান
৩ ) আল কুরআনুল কারীম সরল অর্থানুবাদ – আল বায়ান ফাউন্ডেশন
৪ ) তাহফীমুল কোরআন। সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী। সব খণ্ড একসাথে
৫ ) সহিহ বুখারী শরীফ। মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন (         ১০ খণ্ড)
৬ ) সহিহ বুখারী। মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। তাওহীদ পাবলিকেশন্স       খণ্ড
৭ ) সহিহ মুসলিম। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন।       খণ্ড
৮ ) সহিহ মুসলিম শরীফ। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। (       খণ্ড)
৯ ) সুনানে আবু দাউদ শরীফ। আবু দাউদ সুলায়মান ইবনুল আশ’আস আস-সিজিস্তানী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। খণ্ড    
১০ ) সূনানু নাসাঈ শরীফ। ইমাম আবু আবদির রহমান আহমদ ইবন শু’আয়ব আন্-নাসাঈ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।     খণ্ড
১১ ) সুনানু ইবনে মাজাহ। আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজাহ আল-রাবি আল-কুয়াজুইনী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।    খণ্ড
১২ ) সহিহ আত-তিরমিযী । হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী। তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী। খণ্ড 
১৩ ) তাফসীরে ইবনে কাসীর- হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)। তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি। ১,২,৩ ৪,৫,৬,৭ ৮,৯,১০,১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৪ ) তাফসীরে ইবনে কাসীর|ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১৫ ) তাফসীরে জালালাইন। জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী। ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী।        খণ্ড
১৬ ) তাফসীরে মাযহারী। আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী। হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী। সব খণ্ড একত্রে
১৭ ) আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর
১৮ ) শিয়া আকিদার অসারতা । শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আত-তুনসাবী ।
১৯ ) কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ।
২০ ) Asbāb al-Nuzūl By: Alī ibn Ahmad al-Wāhidī
২১ ) আল ইত্বকান ইংরেজি


তথ্যসূত্র

  1. Circular reasoning []
  2. কোরআন, সূরা হিজর, আয়াত ৯ []
  3. কোরআন, সূরা আল ইসরা, আয়াত ১০৬ []
  4. কোরআন, সূরা আল ইসরা, আয়াত ১০৬ []
  5. WHAT IS THE MEANING OF THE WORD ‘QURAN’? []
  6. The Qur’an is the word of Allah, may He be exalted, and is not created []
  7. Doubts about the creation of the Qur’aan []
  8. কোরআন, সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত ৪১ – ৪৭ []
  9. কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ১ []
  10. কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ১৪ []
  11. কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ৩২ []
  12. সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৬- ৫১ []
  13. কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত  []
  14. কোরআন, সূরা আল কাউসার, আয়াত ১ []
  15. কোরআন, সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৭ []
  16. কোরআন, সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৭ []
  17. কোরআন, সূরা আল মুজাদালাহ, আয়াত ২২ []
  18. কোরআন ৬ঃ৯৯ []
  19. কোরআন ৬ঃ৯৭ []
  20. কোরআন ৬ঃ৯৮ []
  21. কোরআন ২ঃ ২৮৬ []
  22. সূরা আল গাশিয়াহ্‌, আয়াত ৬ []
  23. সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত ৩৬ []
  24. সূরা আস সাফফাত, আয়াত ৬২৬৬ []
  25. ‘লাওহে মাহফুয’ বলতে কি বুঝায়? এর অর্থ কি? []
  26. কোরআন বিকৃতি ও সাত আহরুফের সাতকাহন []
  27. কোরআন ৮৫ঃ২১-২২ []
  28. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২১৫৮ []
  29. সুনান আত-তিরমিযী, হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১ []
  30. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৫০১ []
  31. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭ []
  32. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৫০৭ []
  33. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৯ []
  34. কোরআন ১৮:১৭ []
  35. কোরআন ৭:১৭৮ []
  36. কোরআন, সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫ []
  37. কোরআন, সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪ []
  38. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২ []
  39. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২ []
  40. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৩৬৪, ৫৩৬৫, ৫৩৬৬ []
  41. সহিহ বুখারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রথম খণ্ড। হাদিস নম্বর ৩ []
  42. ইবনে হাজর আহ্‌মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ ‘আস্কালানী, ফাত-আল-বারি (কাইরো (১৯৩৯), ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯ []
  43. আল-ইত্বকান, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪ []
  44. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ২২২০ []
  45. বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৯ []
  46. কোরআন হিজরঃ৯ []
  47. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ ২২২০ []
  48. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬ []
  49. তারিখুল কোরআনিল কারিম। তাহের আল কুরদি। প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২৮ []
  50. উলুমুল কোরআন, তকি্ব উসমানি, পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭ []
  51. তারীখে ইসলাম, সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইসলাম, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৮ []
  52. কিতাবুল তাবাকাত আল-কবির, ইবন সা’দ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৪ [][]
  53. জামিউত তিরমিযী, সোলেমানিয়া বুক হাউস, পৃষ্ঠা ৮৫১ [][]
  54. Jami’ at-Tirmidhi Vol. 5, Book 44, Hadith 3104 []
  55. কিতাবুল মাসাহিফ, ইবন আবি দাউদ, পৃষ্ঠা ১৫ []
  56. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩২-৩৩৩ []
  57. উসুলুল কাফী (ভারতীয় সংস্করণ), মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী,পৃষ্ঠা ৬৭ []
  58. উসুলুল কাফী(ভারতীয় সংস্করণ)। মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী। পৃষ্ঠা ৬৭১ []
  59. ফসলুল খিতাব, পৃষ্ঠা ৯৭ []
  60. তাফসীরুস সাফী। মোল্লা হাসান। পৃষ্ঠা ১৩ []
  61. কোরআন হিজরঃ৯ []
  62. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৩ []
  63. কোরআন ১৫ঃ৯ []
  64. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৯ []
  65. তাফসীতে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯ []
  66. কোরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস, এ কে এম এনামুল হক, পৃষ্ঠা ৬৯ []
  67. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩ []
  68. দালাইলুল নুবুওয়াহ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮ []
  69. নাজিলের সময়ানুক্রমে কুরআনের সূরাসমূহের সিরিয়াল []
  70. কোরআন, সূরা মায়িদা, আয়াত ৩ []
  71. কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৭৮ []
  72. তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৮ []
  73. সূয়ুতী, আল ইতকান, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৫ []
  74. কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৮১ []
  75. আদ্দুররুল মানসুর, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০[]
  76. তাবারী, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১ []
  77. কোরআন, সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১২৮ []
  78. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৩ []
  79. সুনানু আবু দাউদ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৭-৪২৮, হাদিস নম্বর ৭৮৬-৭৮৭ []
  80. তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৯ []
  81. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৬ []
  82. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৬ []
  83. বিস্তারিতঃ কোরআন বিকৃতি ও সাত আহরুফের সাতকাহন []
  84. কোরআন, সূরা আল-আলা, আয়াত ৮৭ []
  85. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৬, হাদিস নম্বর ৪৬৬৭, ৪৬৬৮, ৪৬৬৯ []
  86. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৬ []
  87. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৮৯৬ []
  88. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ১৭২৭ []
  89. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ১৭২৮ []
  90. সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৯৬ []
  91. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৯০ []
  92. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬৬ []
  93. সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬১-৩৪৬২, পৃষ্ঠা ১০০-১০১ []
  94. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৩১০ []
  95. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪২৭১ []
  96. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৮ []
  97. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৮ []
  98. সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২০১ []
  99. মুসনাদে আহমাদ, আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নম্বরঃ ৩৯১ []
  100. মুসনাদে আহমাদ, আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নম্বরঃ ৩৫২ []
  101. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১ []
  102. তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৮-৩৪৯ []
  103. কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৪০-২৪১ []
  104. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১০-৩১১ []
  105. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৪ []
  106. সূরা শুয়ারা, আয়াত ২১৪ []
  107. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০২ []
  108. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৩-২৫৪, হাদিস নম্বরঃ ৪০২ []
  109. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৫ []
  110. তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৮ []
  111. তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৯ []
  112. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮,২৯,হাদিস নম্বরঃ ৬১৪৫ []
  113. আল ইতকান, পৃষ্ঠা ১২-১৩ []
  114. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২১ []
  115. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬১২ []
  116. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৮৭ []
  117. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস একাডেমি, হাদিস নম্বরঃ ২১৯৫ []
  118. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫০০২ []
  119. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৭, হাদিস নম্বরঃ ৫০০২ []
  120. তাফহীমুল কুরআন, সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী, খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩২০ []
  121. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩১০৪ []
  122. Jami’ at-Tirmidhi Vol. 5, Book 44, Hadith 3104 []
  123. ইবন আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ১৫ []
  124. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাঁর ফিকাহ, ডঃ হানাফী রাযী, আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অনূদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৯৪-৯৫ []
  125. আল ইত্বকান, পৃষ্ঠা ১৫ []
  126. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৭। হাদিস নম্বরঃ ৩৫৩৬, ৩৫৩৭ []
  127. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৩৯ []
  128. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯ []
  129. আল ইতকান, জালালুদ্দিন সুয়ুতি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৬ []
  130. আল ইতকান, জালালুদ্দিন সুয়ুতি, ১/২২৭ []
  131. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬, হাদিস নম্বরঃ ৩৭৯০ []
  132. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬৫, হাদিস নম্বরঃ ২২৯০ []
  133. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬০৭ []
  134. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬১৯ []
  135. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৯-৩৪০, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৪ []
  136. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬২ []
  137. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৮, ৪৪৯৯ []
  138. তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯২-৩৯৩ []
  139. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮১-৪৮৩ []
  140. শয়তানের আয়াত বা স্যাটানিক ভার্সেস []
  141. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭ []
  142. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৭ []
  143. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৬ []
  144. নসরুল বারী, শরহে সহিহ বুখারী, নবম খণ্ড, শিবলী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৯৩, ৯৪ []
  145. Asbāb al-Nuzūl, Alī ibn Ahmad al-Wāhidī , পৃষ্ঠা ১১৪ []
  146. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৯, হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৮ []
  147. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪, হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪০ []
  148. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬১৭ []
  149. সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ []
  150. সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, তৃতীয় খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১২৮ []
  151. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১১ []
  152. তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬০-২৬১ []
  153. সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ২৬৭৪ []
  154. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১১৫ []
  155. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫৬৬৯ []
  156. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০-৮১ []
  157. কোরআন, সূরা ইউনুস, আয়াত ৬৪ []
  158. কোরআন, সূরা আল-আনাম, আয়াত ১১৫ []
  159. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭ []
  160. কোরআন ৬ঃ৩৪ []
  161. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৯ []
  162. তাফসীতে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৭৭ []
  163. কোরআন, সূরা নাহল, আয়াত ৬৭ []
  164. কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২১৯ []
  165. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭১ []
  166. কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ৪৩ []
  167. কোরআন, সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০-৯১ []
  168. তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৯ []
  169. কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ১০৬ []
  170. তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৩-৬২৭ []
  171. কোরআন, সূরা আন নাহল, আয়াত ১০১ []
  172. সূরা নাহলঃ ১০১ []
  173. সূরা বাকারাঃ ১০৬ []
  174. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বারঃ ৪১৭৪ []
  175. আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীরশাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী []
  176. কোরআন, সূরা হাক্কাহ, আয়াত ৪৩-৪৭ []
  177. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ []
  178. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ []
  179. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৩-৩৪। অনুচ্ছেদঃ ২২৪৭ []
  180. সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪-৭৫। হাদিস নম্বরঃ ১৬২৯ []
  181. সহিহ আত-তিরমিযী, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯ []

কুরআন হাদিস অনুসারে সূর্য কি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে?


(লেখাটি ইসলামিস্ট ওয়েবসাইট বাংলা হাদিস থেকে হুবহু পোস্ট করা হয়েছে, সেই সাথে এর উৎসের বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ সংযুক্ত করা হয়েছে)

গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগের নামঃ ঈমান
লেখক/সঙ্কলক/অনুবাদকের নামঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)

প্রশ্ন: (১৬) সূর্য কি পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে?

উত্তর: 

মান্যবর শাইখ উত্তরে বলেন যে, শরী‘আতের প্রকাশ্য দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, সূর্যই পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরে। এ ঘুরার কারণেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির আগমণ ঘটে। আমাদের হাতে এ দলীলগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী এমন কোনো দলীল নেই, যার মাধ্যমে আমরা সূর্য ঘূরার দলীলগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারি। সূর্য ঘুরার দলীলগুলো হলো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ﴾ (البقرة: ٢٥٨)

“আল্লাহ তা‘আলা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন। তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৮) সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলীল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমণ করে।

২) আল্লাহ বলেন,

﴿فَلَمَّا رَءَا ٱلشَّمۡسَ بَازِغَةٗ قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَآ أَكۡبَرُۖ فَلَمَّآ أَفَلَتۡ قَالَ يَٰقَوۡمِ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ٧٨﴾ (الانعام: ٧٨)

“অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেন, এটি আমার রব, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।” (সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৭৮)

এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে, সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়। একথা বলা হয় নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল। পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্যই তা বলা হত।

৩) আল্লাহ বলেন,

﴿وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَٰوَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ ذَاتَ ٱلشِّمَالِ﴾ (الكهف: ١٧)

“তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়।” (সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৭) পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে। পৃথিবী যদিনড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায়। উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়াকে সূর্যের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, সূর্যই ঘুরে। পৃথিবী নয়।

৪) আল্লাহ বলেন,

﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٣٣﴾ (الانبياء: ٣٣)

“এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।” (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩)

ইবন আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে।

৫) আল্লাহ বলেন,

﴿يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا﴾ (الاعراف: ٥٤)

“তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে।” (সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪)

আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে। এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী।

৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۖ يُكَوِّرُ ٱلَّيۡلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيۡلِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمًّىۗ أَلَا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفَّٰرُ ٥﴾ (الزمر: ٥)

“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫)

আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে। পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন, দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান”। এ সমস্ত দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য ও চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তুকে বশীভুত করা এবং কাজে লাগানো একস্থানে অবস্থানকারী বস্তুকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিসঙ্গত।

৭) আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلشَّمۡسِ وَضُحَىٰهَا ١ وَٱلۡقَمَرِ إِذَا تَلَىٰهَا ٢﴾ (الشمس: ١، ٢)

“শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে।” (সূরা আশ-শামস, আয়াত: ১-২)

এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সূর্য এবং চন্দ্র চলাচল করে এবং পৃথিবীর উপর ঘুরে। পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘুরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করতনা। বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর একবার সূর্য চন্দ্রকে অনুসরণ করত। কেননা সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে। এ আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থীর থাকার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।

৮) মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلشَّمۡسُ تَجۡرِي لِمُسۡتَقَرّٖ لَّهَاۚ ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٣٨ وَٱلۡقَمَرَ قَدَّرۡنَٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلۡعُرۡجُونِ ٱلۡقَدِيمِ ٣٩ لَا ٱلشَّمۡسُ يَنۢبَغِي لَهَآ أَن تُدۡرِكَ ٱلۡقَمَرَ وَلَا ٱلَّيۡلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِۚ وَكُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٤٠﴾ (يس: ٣٨، ٤٠)

“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।” (সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৩৮-৪০)

সূর্যের চলা এবং এ চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতভাবেই চলমান। আর এ চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয়। চন্দ্রের জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করার অর্থ এ যে, সে তার মঞ্জিলসমূহে স্থানান্তরিত হয়। যদি পৃথিবী ঘুরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করা হত। চন্দ্রের জন্য নয়। সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র, দিন এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে।

৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যরকে বলেছেন,

«أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَهَا يُقَالُ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا»

“হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায়? আবু যার বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ‘আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়। অতঃপর তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। সে দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন অনুমতি চাবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে।”(1)

এটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে। আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফেরত যাও, অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপরে ঘুরছে এবং তার এ ঘুরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংঘটিত হচ্ছে।

১০) অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া এবং ঢলে যাওয়া এ কাজগুলো সূর্যের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো সূর্য থেকে প্রকাশিত হওয়া খুবই সুস্পষ্ট। পৃথিবী হতে নয়। হয়তো এ ব্যাপারে আরো দলীল-প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো আমার এ মুহূর্তে মনে আসছেনা। তবে আমি যা উল্লেখ করলাম, এ বিষয়টির দ্বার উম্মুক্ত করবে এবং আমি যা উদ্দেশ্য করেছি, তা পূরণে যথেষ্ট হবে। আল্লাহর তাওফীক চাচ্ছি!

(1) সহীহ বুখারী, অধ্যায়: বাদউল খালক; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান

পৃথিবীর চারদিকে 2
পৃথিবীর চারদিকে 4
পৃথিবীর চারদিকে 6
পৃথিবীর চারদিকে 8
পৃথিবীর চারদিকে 10
পৃথিবীর চারদিকে 12
পৃথিবীর চারদিকে 14
পৃথিবীর চারদিকে 16
পৃথিবীর চারদিকে 18
পৃথিবীর চারদিকে 20
পৃথিবীর চারদিকে 22
পৃথিবীর চারদিকে 24

কোরআন ও হাদীস অনুসারে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে


ভূমিকা

বর্তমান সময়ে অনেক মুসলিম দাবি করেন যে, কোরআন বলে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। সেই ১৪০০ বছর আগেই কোরআন এই বিষয়ে বলে দিয়েছে, যা বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানীগণ বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কোরআনের এ সম্পর্কিত আয়াত গুলো পড়লে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না বরং এর উল্টোটাই দেখা যায়। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে কোরআনে বর্ণিত চাঁদের আলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই আয়াত এবং তার ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ এখানে দেয়া হচ্ছে।

সূরা ইউনুস আয়াত ৫

অনুবাদসমূহঃ

  • তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময়… । -(আল বায়ান ফাউন্ডেশন, )
  • তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময়… -(তাইসিরুল)
  • আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন… -(মুজিবুর রহমান)
  • তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে… (Muhiuddin Khan)
  • Pickthall : sun a splendour and the moon a light
  • Yusuf Ali: the sun to be a shining glory and the moon to be a light (of beauty)
  • Shakir: the sun a shining brightness and the moon a light
  • Muhammad Sarwar: the sun radiant and the moon luminous
  • Sahih International: the sun a shining light and the moon a derived light and determined for it phases

সূরা আল-ফুরকান আয়াত ৬১

অনুবাদসমূহঃ

  • বরকতময় সে সত্তা যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন বিশালকায় গ্রহসমূহ। আর তাতে প্রদীপ ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। -(আল বায়ান ফাউন্ডেশন)
  • কতই না কল্যাণময় তিনি যিনি আসমানে নক্ষত্ররাজির সমাবেশ ঘটিয়েছেন আর তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ আর আলো বিকিরণকারী চন্দ্র। -(তাইসিরুল)
  • কত মহান তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চাঁদ! -(মুজিবুর রহমান)
  • কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র। (Muhiuddin Khan)
  • Pickthall: and hath placed therein a great lamp and a moon giving light!
  • Yusuf Ali: and placed therein a Lamp and a Moon giving light;
  • Shakir: therein a lamp and a shining moon.
  • Muhammad Sarwar: and made therein a lamp and a shining moon.
  • Sahih International: and placed therein a (burning) lamp and luminous moon.

সূরা নূহ আয়াত নং ১৬

অনুবাদসমূহঃ

  • আর এগুলোর মধ্যে চাঁদকে সৃষ্টি করেছেন আলো আর সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন প্রদীপরূপে’। -(আল বায়ান ফাউন্ডেশন)
  • আর তাদের মাঝে চাঁদকে বানিয়েছেন আলো এবং সূর্যকে করেছেন প্রদীপ। -(তাইসিরুল)
  • এবং সেখানে চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোক রূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপ রূপে; -(মুজিবুর রহমান)
  • এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।(Muhiuddin Khan)
  • Pickthall: And hath made the moon a light therein, and made the sun a lamp?
  • Yusuf Ali: “‘And made the moon a light in their midst, and made the sun as a (Glorious) Lamp?
  • Shakir: And made the moon therein a light, and made the sun a lamp?
  • Muhammad Sarwar: and placed therein the moon as a light
  • Sahih International: And made the moon therein a (reflected) light and made the sun a burning lamp?

তিনটি আয়াতে যে দুটি শব্দ চাঁদের আলো বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো হল আরবি শব্দ “নূর” (যার অর্থ হলো আলো অনেক ক্ষেত্রে আলোর উৎস ) ও “মুনির” যার অর্থ উজ্জ্বল, দীপ্তিমান, জ্যোতির্ময় ( প্রতিফলিত আলো নয় )। এখানে এই শব্দ দুটির কোনটিই চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত আলো হিসাবে ব্যাখ্যা করে না বরং নূর শব্দের দ্বারা এটাই উল্টো প্রমানিত হয় যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। কারণ আল্লাহর ৯৯টি নামের একটি হলো “আন্-নূর” যার অর্থ “আলো”। যা কোনভাবেই প্রতিফলিত আলো হতে পারে না। ২৪ নং সূরা নূর এর অনুবাদকৃত বাংলা নাম “আলো” ও ইংরেজি নাম “The Light.”

নূর
চাঁদের 3

“মুনির” শব্দের মাধ্যমে অনেক মুসলিম চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত প্রমান করতে চান। মুনির শব্দের অর্থও কোন ভাবেই প্রতিফলিত আলো না। প্রতিফলিত আলো দাবি করার জন্য নুর বা মুনির শব্দের আগে প্রতিফলিত, ধার করা কিংবা এসম্পর্কিত অর্থে কোন শব্দ থাকা প্রয়োজন যা কোরআনে নেই। সুরা ৭১ নুহ এর ১৬ নং আয়াতে নূর শব্দের আগে থাকা “ফিহিন্না” শব্দের অর্থ (তারমধ্যে বা তারমাঝে) যা মুসলিমদের দাবির বিপক্ষে যায়। মুনির শব্দের অর্থও যে প্রতিফলিত আলো হয় না সেটি সূরা আল-আহযাব ৩৩ এর ৪৬ নং আয়াতের অনুবাদগুলো লক্ষ্য করলেই নিশ্চিত হওয়া যায় যেখানে মুনির শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত এ আয়াতে নবী মুহাম্মাদকে উদ্দেশ্যে করে আরবিতে বলা হয়েছে “ ওয়া সিরাজান মুনিরা“। উল্লেখ্য “সিরাজ” শব্দের অর্থ বাতি, প্রদীপ বা ল্যাম্প এবং প্রদীপের আলো কখনো প্রতিফলিত আলো হয় না কারন প্রদীপ বা বাতি সরাসরি আলোর উৎস।

সুরা আল-আহযাব আয়াত ৪৬

অনুবাদসমূহঃ

  • আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। -(আল বায়ান ফাউন্ডেশন)
  • আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর পথে আহবানকারী ও আলোকপ্রদ প্রদীপরূপে। -(তাইসিরুল)
  • আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে। -(মুজিবুর রহমান)
  • এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।- (Muhiuddin Khan)
  • এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর দিকে একজন আহবানকারী ও উজ্জ্বল এক প্রদীপরূপে। -(Fozlur Rahman)
  • Sahih International: And one who invites to Allah, by His permission, and an illuminating lamp.
  • Yusuf Ali: And as one who invites to Allah’s (grace) by His leave, and as a lamp spreading light.
  • Pickthall: And as a summoner unto Allah by His permission, and as a lamp that giveth light.

এ দেশের প্রখ্যাত বাংলা অনুবাদগুলোর মধ্যে কোথাও চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত বা ধার করা আলো বলা হয়নি। অন্যদিকে কোরানের প্রখ্যাত এবং পুরনো ইংরেজি অনুবাদক ( Yusuf Ali, Pickthall, Shakir,Sarwar) সহ কেউই চাঁদের আলোকে প্রতিফলিত আলো অনুবাদ করেন নি, কিন্তু তুলনামূলক নতুন এবং সাম্প্রতিক অনুবাদক Sahih International তার অনুবাদে “নুর” শব্দের অনুবাদ করেছেন (derived light -10:5) এবং (reflected light – 71:16) যা একটি ভুল এবং অসাধু অনুবাদ। হযরত জাকির নায়েকও একই ধরনের দাবি করেন। তাদের দাবি অনুযায়ী “নুর” শব্দটিকে (Reflected Light) বা প্রতিফলিত আলো অনুবাদ করলে ২৪ নং সুরা নুর এর ৩৫ নম্বর আয়াত এর ইংরেজি অনুবাদ দাড়ায়,

Allah is the (Reflected Light) of the heavens and the earth

বাংলা অনুবাদ দাড়ায়

আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিফলিত আলো” ( নাউজুবিল্লাহ)।

উল্লেখ্য, Sahih International এই আয়াতে “নুর”কে Reflected Light অনুবাদ করেনি।

এখানে সাধারণ ইসলামি ডিফেন্সে মুসলিমরা বলে যে চন্দ্র ও সূর্যের আলো বর্ণনায় কোরআন পৃথক শব্দ ব্যবহার করেছে যা প্রমান যে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, যা একটি হাস্যকর দাবি কারন শুধুমাত্র চাদেঁর আলো বর্ণনায়ও কোরআন দুটি পৃথক শব্দ ব্যবহার করেছে যা কোনটির অর্থই প্রতিফলিত আলো না। এমনকি এই সম্পর্কিত তিনটি আয়াতের তাফসিরে কোন তাফসির কারক এই দাবি করেননি যে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। পাঠকদের সন্দেহ থাকলে এ সম্পর্কিত প্রত্যেকটি আয়াতের তাফসীর যাচাই করে দেখবেন। এত গুলো আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন তাফসীরের বর্ণনা দিতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে তাই দিলাম না।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ আয়াত ৮

এবার দেখুন কোরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যা প্রমান করে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে

অনুবাদসমূহঃ

  • আর চাঁদ কিরণহীন হবে, -(আল বায়ান ফাউন্ডেশন)
  • চাঁদ হয়ে যাবে আলোকহীন -(তাইসিরুল)
  • চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।(Muhiuddin Khan)
  • Sahih International: And the moon darkens
  • Pickthall: And the moon is eclipsed
  • Yusuf Ali: And the moon is buried in darkness.
  • Shakir: And the moon becomes dark,

এই আয়াতের অনুবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই আয়াতের তাফসির সমুহ।

তাফসীরে ইবনে কাসীর

চাঁদের আলো
চাঁদের
চাঁদের 7
চাঁদের 9
চাঁদের 11
চাঁদের 13
চাঁদের 15

এ আয়াতের তাফসীরে একটি ব্যাপার খুবই লক্ষনীয় এই যে, সকল তাফসীরকারকগন একমত যে কেয়ামতের পূর্বে চন্দ্রকে জ্যোতিহীন বা আলোকহীন করে নেয়া হবে। পরের আয়াতেই বলা হচ্ছে যে চন্দ্র এবং সূর্যকে একত্রিত করা হবে। তাফসীরকারক বলেছেন সূর্যও আলোকহীন হয়ে যাবে এবং তাদেরকে একত্রে লেপটিয়ে দেয়া হবে বা একত্রিত করা হবে যার বর্ণনা সহিহ হাদীসেও আছে । অর্থাৎ এই আয়াতের তাফসীরে এই বিষয়টি স্পষ্ট যে কেয়ামতের পূর্বে প্রথমে চাঁদকে আলোকহীন করা হবে যা সরাসরি প্রমান করে যে কোরআন অনুযায়ী চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। এখানে কোন ভাবেই মুসলিমরা এটা দাবি করতে পারবে না যে চাঁদ আলোকহীন হবে সূর্যকে আলোকহীন করার মাধ্যমে যেহেতু কোরআন এবং তাফসীর কারকদের ব্যাখা অনুযায়ী সূর্য এবং চন্দ্রকে একত্রিত করার আগেই চন্দ্রকে আলোকহীন করা হবে।

সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণ

সহীহ্ হাদীস থেকেও প্রমান করা যায় যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (2973)
অধ্যায়ঃ ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১৯৮৬. চন্দ্র ও সূর্য উভয়ে নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এর জন্য মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, উভয়ের আবর্তন চাকার আবর্তনের অনুরূপ। আর অন্যেরা বলেন, উভয় এমন এক নির্দিষ্ট হিসাব ও স্থানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যা তারা অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্য লঙ্ঘন করতে পারে না। حُسْبَانٌ হল حِسَابٍ শব্দের বহুবচন, যেমন شِهَابٍ এর বহুবচন شُهْبَانٍ – ضُحَاهَا এর অর্থ জ্যোতি। أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ চন্দ্র সূর্যের এক্তির জ্যোতি অপরটিকে ঢাকতে পারে না, আর তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। سَابِقُ النَّهَارِ রাত দিনকে দ্রুত অতিক্রম করে। উভয়ে দ্রুত অতিক্রম করতে চায়। نَسْلَخُ আমি উভয়ের একটিকে অপরটি হতে বের করে আনি আর তাদের প্রতিটি চালিত করা হয় وَاهِيَةٌ এবং وَهْيُهَا এর অর্থ তার বিদীর্ণ হওয়া। أَرْجَائِهَا তার সেই অংশ যা বিদীর্ণ হয়নি আর তারা তার উভয় পার্শ্বে থাকবে। যেমন তোমার উক্তি عَلَى أَرْجَاءِ الْبِئْرِ কূপের তীরে أَغْطَشَ وَجَنَّ অন্ধকার ছেয়ে গেল। হাসান বসরী বলেন كُوِّرَتْ অর্থ লেপটিয়ে দেয়া হবে, যাতে তার জ্যোতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর বলা হয়ে থাকে وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ এর অর্থ আর শপথ রজনীর এবং তার যে জীবজন্তু একত্রিত করল। اتَّسَقَ বরাবর হল। بُرُوجًا চন্দ্র সূর্যের কক্ষ ও নির্ধারিত স্থান। الْحَرُورُ গরম বাতাস যা দিনের বেলায় সূর্যের সাথে প্রবাহিত হয়। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, حَرُورُ রাত্রিবেলার আর سَمُومُ দিনের বেলার লু হাওয়া। বলা হয় يُولِجُ অর্থ প্রবিষ্ট করে বা করবে وَلِيجَةً অর্থ এমন প্রতিটি বস্তু যা তুমি অন্যটির মধ্যে ঢুকিয়েছ।
২৯৭৩। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন চন্দ্র ও সূর্য় উভয়কে লেপটিয়ে দেয়া হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

চাঁদের আলো সূর্যের আলো
সহিহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন পঞ্চম খণ্ড পৃষ্ঠা ৩৬১

সহীহ বুখারী (তাওহীদ: ৩১৯৯)

চাঁদের 18

এই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে এই বিষয়টি নিশ্চিত যে কেয়ামতের দিন চন্দ্র এবং সূর্যকে লেপটিয়ে দেওয়া হবে যাতে তাদের উভয়ের আলো নিঃশেষ হয়ে যাবে যা আবার প্রমান করে যে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে । বাংলা হাদিসের ব্যাখায় হাসান বসরি একইভাবে ব্যাখ্যাটি করেন। উল্লেখ্য এই হাদিসের অনুবাদে “তার জ্যোতি” না হয়ে তাদের উভয়ের জ্যোতি হবে কারন এখানে দুটি বস্তু তথা চন্দ্র এবং সূর্য উভয়ের কথা বলা হচ্ছে । ইংরেজী হাদীসেও উভয়ের কথাই বলা হচ্ছে

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আরেকটি বিষয় বলা হচ্ছে যে চন্দ্র এবং সূর্য একটির জ্যোতি অপরটিকে ডাকতে পারে না আর তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এই দাবিটিও প্রমান করে যে চন্দ্র এবং সূর্য উভয়ের জ্যোতি রয়েছে কারন সেটা না হলে চন্দ্রের জ্যোতি সূর্যকে ডাকতে পারে না এ দাবিটি করা হতো না। অন্যদিকে আমরা জানি যে সূর্য তার আলো দিয়ে চাঁদকে ডেকে ফেলে।

অন্যান্য প্রমাণ

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “নসরুল বারী শরহে সহীহ বুখারী” (খন্ড ৭ পৃষ্ঠা ৩৪৫ পরিচ্ছেদ ১৯৮৮) তে বলা হচ্ছে (চাঁদ সূর্য) উভয়টির আলো অপরটির আলোকে গোপন করতে পারে না আর না তা করা উভয়ের তরে যতাচিত্ত। এই দাবিটিও আগের দাবির মতোই যা প্রমান করে চাঁদের আলো সূর্যের আলোকে গোপন করতে পারে না। অর্থাৎ চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।

চাঁদের 20

তাফসীর ইবনে কাসিরের সুরা ইউনুস এর (১০ঃ৫-৬) আয়াতের তাফসিরেও একই রকম দাবী করা হচ্ছেঃ

চাঁদের 22

উপসংহার

সুতরাং কোরআন ও হাদীসের চারটি দাবি প্রমান করে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।

  • ১) চাঁদের আলো বর্ণনায় নূর শব্দের ব্যাবহার (১০:৫) (৭১:১৬)
  • ২) কেয়ামতের দিন চাঁদ এবং সূর্যকে একত্রিত করার পূর্বেই চাঁদকে জ্যোতি হীন করে নেয়া হবে।(৭৫ঃ৮-৯)
  • ৩) চন্দ্র এবং সূর্য উভয়ের জ্যোতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। বুখারী (ইফাঃ) ২৯৭২
  • ৪) চন্দ্রের জ্যোতি সূর্যকে ঢাকতে পারে না। (হাদীসটির ব্যাখ্যায় বর্ণিত তথ্যসূত্র)

সহায়ক গ্রন্থসমূহ

কোরআন এবং উল্কা


সূচনা

কোরআনের সূরা আল-মুলকের ৫ নং আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়, কোরআনের লেখক উল্কাকে তারকারাজির সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়, তিনি জানতেন না যে মাঝেমাঝে আকাশে ছুটে চলা তারার মতো যা দেখা যায় তা আসলে কোনো তারা নয়, যা কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুলের একটি ভালো উদাহরণ এবং যা প্রমাণ করে কোরআন একটি মানব রচিত গ্রন্থ। এই প্রবন্ধে কোরআনের এই অসংগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

উল্কা কি?

উল্কা হচ্ছে মহাকাশে থাকা ছোট শিলাময় বা ধাতব বস্তু। [1] উল্কাসমূহ গ্রহাণু থেকে ছোট এবং একটি শস্যকণা শুরু করে এক মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। [1] এরচেয়েও ছোট বস্তুসমূহকে Micrometeoroids বা ‘মহাশূন্যের ধূলিকণা’ বলা হয়। [1]

সাধারণত সেকেন্ড প্রতি ২০ কিলোমিটার পরিমানের বেশি গতিতে কোনো উল্কা, ধূমকেতু বা গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সাথে সেই বস্তুর সংঘর্ষের ফলে উত্তাপ সৃষ্টি হওয়া আলোর একটি রেখা তৈরি করে। পৃথিবী থেকে এই ঘটনা দেখলে মনে হয় আকাশের কোনো তারা একদিকে ছুটে চলছে। একসময়কার মানুষরা সেটাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতো। বিজ্ঞানের অবদানে আজ আমরা প্রকৃতির অনেককিছুই জানি এবং বুঝি, যা একসময়কার মানুষরা জানতো না, বুঝতো না। কোনো ঘটনার পেছনে থাকা প্রকৃত সত্য না জানলে কোনো অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা বা নিজেদের অনুমাননির্ভর কোনো ধারণাকেই প্রকৃত সত্য বলে ধরে নিতো।

কোরআন কি বলে?

প্রাচীনকাল বা মধ্যযুগের মানুষদের রাতের আকাশে উল্কা বা গ্রহাণু দেখলে সেটাকে আকাশের তারাই মনে করতে হতো, তাদের বোঝার কোনো উপায় ছিলো না যে ওটাকে দেখে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে হলেও ওটা কোনো তারা নয়। প্রাচীনকাল বা মধ্যযুগের একজন সাধারণ মানুষ রাতের আকাশে উল্কা দেখে সেটাকে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে করলেও, কোনো সর্বজ্ঞানী ঈশ্বর এই ভুলটা করবেন না। কোনো ধর্মগ্রন্থ পড়ে যদি এমনটা বোঝা যায় যে সেই ধর্মের ঈশ্বর রাতের আকাশে উল্কাকে তারা মনে করেন, তাহলে বুঝতে হবে ধর্মগ্রন্থটি কোনো সাধারণ মানুষের লেখা, যার মধ্যে তার সমসাময়িক ভুল বিশ্বাস ছিলো।

আমরা সবাই এবিষয়ে একমত হতে পারি যে, কোনো ধর্মগ্রন্থ যদি আসলেই ঐশ্বরিক হয়, মানবরচিত না হয়, তাহলে সেই ধর্মগ্রন্থ কোনো ভুল তথ্য ধারণ করবে না, কোনো ভুল বিশ্বাস সেই ধর্মগ্রন্থে স্থান পাবে না। মুসলিমরা দাবি করেন, তাদের ধর্মগ্রন্থে বিন্দুমাত্র ভুল নেই, কোরআন নাজিল হওয়ার সমসাময়িক কোনো ভুল বিশ্বাসের লেশমাত্র নেই। তবে দুঃখজনকভাবে সেটি মুসলিমদের আরও একটি ভুল বিশ্বাস বা তাদের ধর্মের প্রতি তাদের অন্ধত্ব ছাড়া কিছুই না। কেননা, কোরআনের আয়াত থেকে খুব পরিষ্কারভাবেই এটি প্রতীয়মান হয় যে কোরআন যার বাণী তিনি রাতের আকাশে ছুটে চলা উল্কাকে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে করতেন, যা মধ্যযুগের সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রচলিত একটি ভুল বিশ্বাসকেই তুলে ধরে।

সূরা আল-মুলকের ৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ নক্ষত্রসমূহ দ্বারা আকাশকে সাজিয়েছেন এবং সেসব নক্ষত্রসমূহকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য অনুবাদের সাথে আয়াতটি তুলে ধরছি,

وَلَقَدْ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَـٰبِيحَ وَجَعَلْنَـٰهَا رُجُومًۭا لِّلشَّيَـٰطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ ٱلسَّعِيرِ ٥

And verily We have beautified the world’s heaven with lamps, and We have made them missiles for the devils, and for them We have prepared the doom of flame.
— English Translation (Pickthall)

And we have, (from of old), adorned the lowest heaven with Lamps, and We have made such (Lamps) (as) missiles to drive away the Evil Ones, and have prepared for them the Penalty of the Blazing Fire.
— English Translation (Yusuf Ali)

আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে সুসজ্জিত করেছি আর শয়ত্বানকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য, এবং প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
— Taisirul Quran

আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
— Sheikh Mujibur Rahman

আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
— Rawai Al-bayan

(কোরআন ৬৭:৫)

নিঃসন্দেহেই, ‘প্রদীপমালা’ শব্দটি আলোচ্য আয়াতে রাতের আকাশের উজ্জ্বল তারকারাজিকে নির্দেশ করে। কেননা, রাতেরবেলা আকাশের দিকে তাকালে আমরা সাধারণত উজ্জ্বল তারকারাজিকেই দেখতে পাই।
অপরদিকে, উল্কা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর জ্বলে উঠলে কেবল সামান্য কিছু মূহুর্তের জন্যই দৃশ্যমান হয়ে থাকে, তাছাড়া পৃথিবী থেকে উল্কা দেখা যায় না। আলোচ্য আয়াতে নিশ্চয়ই সেই বস্তুর দ্বারা আকাশকে সুশোভিত করার কথা বলা হয়নি যে বস্তু কখনো কখনো সামান্য কিছু মুহূর্তের জন্য দৃশ্যমান হওয়া ছাড়া আকাশে দেখাই যায়না।

লক্ষ্য করুন, আলোচ্য আয়াত অনুযায়ী যে প্রদীপমালা দ্বারা আল্লাহ আকাশকে সুশোভিত করেছেন সেই প্রদীপমালাকেই আবার শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। অর্থ্যাৎ, আলোচ্য আয়াত অনুযায়ী যে তারকারাজি দ্বারা আল্লাহ আকাশকে সুশোভিত করেছেন সেই তারকারাজিকেই আবার শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। এথেকে বোঝা যায়, কোরআনের লেখক জানতেন না যে রাতের আকাশে ছুটে চলা তারার মতো যা অনেকসময় দেখা যায় তা আসলে কোনো তারা নয়, বরং একটি তারার তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি বস্তু।

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে কোরআনের লেখক উল্কাকে তারকারাজির সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন, উল্কাপাত দেখলে তিনি মনে করতেন তারা ছুটে যাচ্ছে, যা প্রমাণ করে কোরআন কোনো ঐশ্বরিক গ্রন্থ নয়।


তথ্যসূত্র

  1. Meteoroid – Wikipedia [][][]

দুই সমুদ্রের পানি একত্রিত হয় না?


সূচনা

ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ইসলাম প্রচারকগণ যে বৈজ্ঞানিক মিরাকলের দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন তার মধ্যে অন্যতম একটি দাবি, কোরআন ১৪০০ বছর আগেই জানিয়েছে যে, দুটি সমুদ্রের মিলনস্থলে একটি অদৃশ্য অন্তরাল থাকে, যার ফলে সমুদ্র দুটির পানি একত্রিত হতে পারে না। ইসলাম প্রচারকগণের এই দাবিটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য? সেই প্রশ্নের উত্তরেই প্রবন্ধটি লিখছি।

দাবি

মুসলিম অ্যাপোলজিস্ট আই. এ. ইব্রাহীম তার বই এ ব্রিফ ইলাস্ট্রেটেড গাইড টু আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলামে দাবিটি উপস্থাপন করেছিলেন। বইটির অনুবাদগ্রন্থ ‘ইসলামের সচিত্র গাইড’ থেকে তার বক্তব্য [1] তুলে ধরছি:

সমুদ্রের পানি 2
সমুদ্রের পানি 4
সমুদ্রের পানি 6

আয়াতসমূহ

প্রথমেই যেই আয়াতসমূহকে কেন্দ্র ইসলাম প্রচারকগণ তাদের দাবিটি উপস্থাপন করেন সেই আয়াতসমূহ তুলে ধরছি,

55:19
مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ یَلۡتَقِیٰنِ ﴿ۙ۱۹﴾
English – Sahih International
He released the two seas, meeting [side by side];
Bengali – Bayaan Foundation
তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়।
Bengali – Taisirul Quran
দু’টি সমুদ্রকে তিনিই প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়,

55:20
بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخٌ لَّا یَبۡغِیٰنِ ﴿ۚ۲۰﴾
English – Sahih International
Between them is a barrier [so] neither of them transgresses.
Bengali – Bayaan Foundation
উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
Bengali – Taisirul Quran
(কিন্তু তা সত্ত্বেও) উভয়ের মাঝে আছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।

25:53
وَ ہُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ ہٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّ ہٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَ جَعَلَ بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخًا وَّ حِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا ﴿۵۳﴾
English – Sahih International
And it is He who has released [simultaneously] the two seas, one fresh and sweet and one salty and bitter, and He placed between them a barrier and prohibiting partition.
Bengali – Bayaan Foundation
আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন।
Bengali – Taisirul Quran
তিনিই সমুদ্রকে দু’ ধারায় প্রবাহিত করেছেন- একটি সুপেয় সুস্বাদু আরেকটি লবণাক্ত কটু, উভয়ের মাঝে টেনে দিয়েছেন এক আবরণ- এক অনতিক্রম্য বিভক্তি-প্রাচীর।

তাফসীর

এখন, আসুন দেখি, তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা আর-রাহমানের ১৯ ও ২০ নং আয়াত দুইটি সম্পর্কে কী বলা আছে,

সমুদ্রের পানি 8
সমুদ্রের পানি 10

এবারে দেখে নেওয়া যাক, তাফসীরে ইবনে কাসীরে সুরা ফুরকানের ৫৩ নং আয়াত সম্পর্কে কী বলা আছে,

সমুদ্রের পানি 12

জবাব

ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর বা যেকোনো দুটি সমুদ্রের একত্রিত হওয়ার স্থানে তাদের পানি একে অপরের সাথে মিশে না তাদের ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে। তবে এই না মেশার ঘটনাটি স্থায়ী নয়। ভিন্ন ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার পানি এক সময় একে অপরের সাথে মিশে যায়। ঘটনাটি সাময়িক এবং কেবল তখনই পর্যবেক্ষণযোগ্য যখন দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হয়। বিষয়টি একটি কফির কাপে দুধ ঢালার সাথে তুলনা করে বোঝানো যেতে পারে। যে কেউই দেখতে পারেন যে কফির কাপে দুধ ঢালা হলে দুধকে সাময়িক সময়ের জন্য কফি থেকে আলাদা মনে হয় এবং এক সময় তারা মিশে পুরোপুরি এক হয়ে যায়। কোরআন যেখানে বলে দুই সমুদ্রের পানি তাদের মধ্যকার অন্তরায় বা বাধা অতিক্রম করতে পারে না সেখানে প্রকৃতপক্ষে ঘনত্ব, লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে দুই সমুদ্রের পানি সাময়িক সময়ের জন্য না মিশলেও একসময় তারা মিশে এক হয়ে যায় আর এটি নিঃসন্দেহেই কোরআন একটি ভুল।

নদীর পানি যখন সমুদ্রের পানির সাথে মিলিত হয় তখন তা সমুদ্রের পানির সাথে মিলিয়ে যায় বা একত্রিত হয়ে যায়। নদী এবং সমুদ্রের মিলনস্থলে বা মোহনায় যা ঘটে কোরআন তার সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য প্রদান করে। মোহনায় যেখানে নদীর মিষ্টি হালকা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত ভারী পানির সাথে মিশে যায় সেখানে কোরআন দাবি করে, নদী ও সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে রয়েছে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা ভেদ করে নদীর পানি সমুদ্রে মিশে যেতে পারে না বা সমুদ্রের পানি নদীতে মিশে যেতে পারে না। পরিষ্কারভাবেই কোরআন যা বলে তা মিরাকল নয় বরং, বৈজ্ঞানিক ভুল। নদীর মিষ্টি এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানির মিলনস্থলে উভয় ধরনের পানির মিশ্রণ পাওয়া যায়। অনেক মুসলিম বলবেন যে, এই উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই নদী এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলে থাকা দুর্ভেদ্য দেয়াল বা বাধা, যা খুবই হাস্যকর। নদী এবং সমুদ্রের পানির মিলনস্থলের উভয় ধরনের পানির মিশ্রণই প্রমাণ করে যে, তারা কোনো বাধার কারণে একে অপর থেকে পৃথক থাকে না এবং মিশে যায়।

পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সংস্থা নাসা ( National Aeronautics and Space Administration (NASA), ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা। সংস্থাটি পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের পানির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র কিছু কণা বিভিন্ন স্থানের পানিতে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই কণাসমূহ স্যাটেলাইটের কাছে সিগন্যাল প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ সমুদ্রসমূহের পানির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেই কণাসমূহের চলাফেরা থেকে সহজেই বোঝা যায়, দুটি সমুদ্রের পানি মিশে যায় কিনা। যদি দুটি সমুদ্রের পানি না মিশতো, তাহলে সেই কণাসমূহের গতি পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যেত যে, কোন নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে।

Ocean current flows in the Mediterranean [2]


উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইসলাম প্রচারকগণ যা কোরআনের বৈজ্ঞানিক মিরাকল বলে প্রচার করেন, তা আদতে কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল ছাড়া কিছুই না।

তথ্যসূত্র

  1. ইসলামের সচিত্র গাইড, পৃষ্ঠা ২৪-২৬ []
  2. Ocean Current Flows around the Mediterranean Sea for UNESCO []

কুরআন এবং ভ্রূণের বিকাশ: আলাকাহ পর্যায়

কুরআন এবং ভ্রূণের বিকাশ: আলাকাহ পর্যায়


আলাকাহ পর্যায়

কুরআন অনুযায়ী, নুতফা পর্যায়ের পর আসে ‘আলাকাহ পর্যায়’। অর্থ্যাৎ, কুরআন অনুযায়ী, মাতৃগর্ভে একটি নুতফা পর্যায়ের ভ্রূণ একটি আলাকাহ পর্যায়ের ভ্রূণে পরিণত হয়।

আরবী শব্দ ‘আলাকাহ’ অর্থ ‘রক্তপিণ্ড’ বা ‘জমাট রক্ত’ আর একটি ভ্রূণকে কখনোই ‘জমাট রক্ত’ বলা যায় না। একটি ভ্রূণ তার বিকাশের কোনো পর্যায়েই জমাট রক্তে পরিণত হয় না।

সেইকারণেই গত তিন দশক ধরে ‘আলাকাহ’ শব্দটি কুরআনের অন্যতম আলোচিত একটি শব্দ। কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনার এই ‘আলাকাহ পর্যায়’ পৃথিবীজুড়ে অনেক বেশি আলোচিত হয় যখন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শারীরস্থানবিৎ অধ্যাপক কিথ মুর কুরআনের বর্ণনার সমর্থনে কিছু বিশেষ বিবৃতি দেন। কিথ মুরের বিবৃতি কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা নির্ভুল প্রমাণ করে ফেলেছে, এমনটা ভেবেই মুসলিমরা স্বস্তি বোধ করেন। তারা বিশ্বাস করেন, কিথ মুরের বক্তব্য মানব ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে কুরআনের বক্তব্যকে পুরোপুরি সঠিক প্রমাণ করে। মুসলিম অ্যাপোলজিস্টরা আজও ইসলামকে সত্য ধর্ম বলে ঈশ্বরের পাঠানো ধর্ম বলে প্রমাণ করতে কিথ মুরের নাম এবং তার বক্তব্য সমূহ ব্যবহার করেন। অমুসলিমদের ইসলামে ধর্মান্তর করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ মুসলিমদের ইসলামের প্রতি আরও অন্ধ করে রাখতে ইসলাম প্রচারকগণ কিথ মুরের নাম আর তার বক্তব্য সমূহ ব্যবহার করে প্রচার করেন, মানব ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রমাণিত তথ্য যা বলে তার সাথে ১৪০০ বছর আগের গ্রন্থ কুরআনের বর্ণনার কোনো অমিল নেই।

ইসলাম প্রচারকদের এই বিশেষ একজন মানুষের নাম ব্যাবহার করে মানব ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে কুরআনের বর্ণনা সমূহ নির্ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা দেখে মনে হয় তারা যুক্তিবিদ্যা নিয়ে কোনোরকম কোনো জ্ঞান রাখে না বা, খুব একটা জ্ঞান রাখে না বা, তাদের বক্তব্য সমূহ কতটুকু যুক্তিযুক্ত কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে তারা দ্বিতীয় বার ভেবে দেখেন না। কিথ মুরের নাম ব্যবহার করে কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা সঠিক বলে প্রমাণ করার এই চেষ্টা প্রকৃত পক্ষে এক প্রকার কুযুক্তি বা লজিক্যাল ফ্যালাসি, আর এই ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসিকে বলে ARGUMENTUM AD VERECUNDIAM বা, ARGUMENT FROM AUTHORITY, যাকে বাংলায় বলা হয় প্রাধিকারের কুযুক্তি। কোনো বিশেষ লোকের নাম ব্যাবহার করে কোনোকিছু প্রমাণ করার বা ন্যায্যতা প্রদান করার চেষ্টা করা হলে তা ARGUMENT FROM AUTHORITY বা প্রাধিকারের কুযুক্তি বলে গণ্য হবে। যেমন, যদি বলা হয়, “নিশ্চয়ই ঈশ্বর আছেন, কেননা বিজ্ঞানী নিউটনের মতো জ্ঞানী লোকও ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন” তাহলে সেটি লজিক্যাল ফ্যালাসি বা কুযুক্তি বলে গণ্য হবে। কারণ, নিউটনের মতো জ্ঞানী লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেই প্রমানিত হয় না যে, ঈশ্বর বলে আসলেই কোনো অলৌকিক সত্ত্বার অস্তিত্ব আছে। সেইজন্যই, কেউ যদি ঈশ্বর আছে বলে প্রমাণ করতে বা ঈশ্বরে বিশ্বাসকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণ করতে বিজ্ঞানী নিউটনের নাম ব্যাবহার করেন তাহলে তা ARGUMENT FROM AUTHORITY বা প্রাধিকারের কুযুক্তি বলে গণ্য হবে।

ইসলাম প্রচারকরা প্রচার করেন যে, মানব ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে কুরআনের বর্ণনা সমূহকে ড. কিথ মুর সত্য বলে প্রমাণ করেছেন, আর সেই কিথ মুর এমন একজন লোক যিনি না কুরআন অনুসরণ করেন না কুরআন বুঝেন। তিনি এমন একজন লোক যিনি না ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, না কুরআনের ভাষায় কথা বলেন।

কিথ মুর বলেছেন,

“As Dr. Persaud said, we don’t read Arabic. The Scholars translated for us. We simply give our interpretations. We are not saying they are accurate.” (1)

Embryology in the Quran with Drs. TVN Persaud, Keith L. Moore and E Marshall Johnson

‘আলাকাহ’ শব্দটির জন্য মুসলিম অ্যাপোলজিস্টরা এই অর্থ সমূহ তুলে ধরেনঃ

ক) ঝুলন্ত/স্থগিত খ) জোঁকের মতো বস্তু গ) রক্তপিণ্ড

এই অর্থ সমূহ ব্যবহার করে তারা আলাকাহ পর্যায়কে বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন।

ক) ঝুলন্ত/স্থগিত

‘আলাকাহ’ শব্দটির মূল ‘আলাক’ শব্দটির অর্থ ঝুলে থাকা বা আটকে থাকা। (2)

অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা যেকোনো কিছুই বোঝায় যা ঝুলে থাকে বা আটকে থাকে। তাদের দাবি অনুসারে, ‘ঝুলন্ত বা স্থগিত’ অর্থটি ভ্রূণের কানেকটিং স্টকের সাহায্যে ঝুলে থাকা নির্দেশ করে।

‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা যদি এমন কিছু বোঝায় যা ঝুলে থাকে বা আটকে থাকে তাহলে আমরা যেকোনো কিছুকেই ‘আলাকাহ’ বলতে পারি। আপনি যে জামাটি গায়ে দিয়ে এই লেখাটি পড়ছেন সেটিও ‘আলাকাহ’ বলে দাবি করা যায়, কেননা আপনার গায়ের জামাটি আপনার গায়ের সাথে ‘ঝুলছে’ বা আপনার গায়ের সাথে ‘আটকে আছে’। আপনি যে ফোনটি হাতে নিয়ে এই প্রবন্ধটি পড়ছেন সেই ফোনটিকেও ‘আলাকাহ’ বলে দাবি করা যায়, কেননা আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও আপনার হাতের সাথে ‘আটকে’ আছে। যেকোনো ধরণের ফল এবং ফুলকেও ‘আলাকাহ’ হিসেবে বর্ণনা করা যায়, কেননা যেকোনো ধরণের ফল এবং ফুলও গাছের সাথে ‘ঝুলে থাকে’ বা ‘আটকে থাকে’। আমরা আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখিও ‘আলাকাহ’ হিসেবে বর্ণনা করতে পারি, কেননা আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখিও বাতাসের সাথে ‘সংলগ্ন’ আছে বলে বর্ণনা করা যায়। এমনকি পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ সমূহ এবং নক্ষত্র সমূহকেও আমরা ‘আলাকাহ’ হিসেবে বর্ণনা করতে পারি, কেননা আমরা বলতে পারি পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ সমূহ এবং নক্ষত্র সমূহ শূন্যের সাথে ‘সংলগ্ন’ আছে।

প্রতিটি বস্তুই কোনো না কোনো ভাবে ‘ঝুলছে’ অথবা ‘আটকে আছে’ বলে বর্ণনা করা যায়। এমন কোনো প্রাকৃতিক বস্তুর অস্তিত্ব থাকা ধারণাতীত যা ‘ঝুলছে’ বা ‘আটকে আছে’ বলে বর্ণনা করা যায়না। আর তাই এটি মনে করাটা খুবই হাস্যকর যে ‘ঝুলন্ত বস্তু’ বা ‘স্থগিত বস্তু’ দ্বারা ভ্রূণ বিকাশের কোনো বিশেষ পর্যায়ের কথা নির্দেশ করা যায়। আর সেজন্যই এই দাবিটি অর্থহীন যে কুরআনে ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা ‘ঝুলন্ত বস্তু’ বা ‘সংলগ্ন বস্তু’ বোঝানো হয়েছে।

অ্যাপোলজিস্টদের এই ব্যাখাটির আরও একটি বড় সমস্যা হলো, ব্যাখাটি কুরআন হাদিসের তথ্যের বিরুদ্ধে যায়। কারণ, ভ্রূণ অ্যামনিয়টিক ক্যাভিটিতে স্থগিত থাকে এবং বাচ্চার জন্ম অব্দি নাভিরজ্জুর সাথে সংযুক্ত থাকে বা সংলগ্নে থাকে। অর্থ্যাৎ, কুরআনে ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা যদি ‘ঝুলন্ত বস্তু’ বা ‘সংলগ্ন বস্তু’ বোঝানো হয়ে থাকে, তাহলে আলাকাহ পর্যায়কে হতে হবে ভ্রূণ বিকাশের একটি সর্বোচ্চ পর্যায়।

সূরা আল-মু’মিনুনের ১৪ নং আয়াত বলছে, আল্লাহ্ ‘আলাকাহ’ কে মাংসপিণ্ডে পরিণত করেন।

23:14
পরে আমি বীর্যকে পরিণত করি 'আলাকাহ' তে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!

আবার, সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থের একটি সহিহ হাদিস বলছে, একটি ভ্রূণ আলাকাহ পর্যায়ে পৌঁছায় চল্লিশ তম দিনে এবং এই আলাকাহ পর্যায়ের শেষ হয় আশি তম দিনে।

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৭০/ তাকদির (كتاب القدر)
হাদিস নম্বরঃ ৬১৪২
পরিচ্ছেদ নাই
৬১৪২। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদউল মালিক (রহঃ) … আবদূলাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্য হিসেবে জমা থাক। তারপর ঐরুপ চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড এবং এরপর ঐরুপ চল্লিশ দিন মাংসপিণ্ড হিসেবে থাকে। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরন করেন এবং তাকে বিযিক, মউত, দূর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য-এ চারটি ব্যাপার লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে তখন কেবলমাত্র একহাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যাক্তি বেহেশতীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা দু-গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন যে, আদম তার বর্ননায় শুধুমাত্র ذِرَاعٌ‏ (এক গজ) বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

কুরআনে ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা যদি ‘ঝুলন্ত বস্তু’ বা ‘স্থগিত বস্তু’ বা ‘আটকে থাকা বস্তু’ বোঝানো হয়ে থাকে তাহলে ইসলামী গ্রন্থ সমূহ ভুলভাবে বলছে যে, ভ্রূণ কেবল চল্লিশ দিনের জন্যই স্থগিত থাকে বা আটকে থাকে এবং চল্লিশ দিন পর তা মাংসপিণ্ডে পরিনত হয়। অর্থ্যাৎ, ইসলাম প্রচারকদের এই দাবিটি সত্য হলেও কুরআন ভুল প্রমানিত হবে।

আরও একটি সমস্যা আছে আর সেটা হলো, ‘কানেকটিং স্টক’ হলো নাভিরজ্জুর পূর্ববর্তী অবস্থা আর নাভিরজ্জুর সাথে সংযুক্ত অবস্থাতেই বাচ্চা তার মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়। পরিষ্কারভাবেই অ্যাপোলজিস্টদের এই ব্যাখাটি ভ্রূণ বিকাশের কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না।

খ) জোঁকের মতো বস্তু

অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা জোঁকের মতো বস্তুও বোঝায় আর এই অর্থটি বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ। তারা বলেন, একটি ভ্রূণ মায়ের জরায়ুতে থাকাকালীন ১৫ থেকে ২০ দিনে একটি জোঁকের মতো আকৃতিতে পরিণত হয়। আবার, জোঁক যেমন যেখানে লেগে থাকে সেখান থেকে রক্ত চোষে তেমনি একটি ভ্রূণও মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি নেয়।

‘আলাকাহ’ শব্দটির অর্থ ‘জোঁকের মতো বস্তু’ বলাটা ভুল। ‘আলাকাহ’ অর্থ ‘জোঁক’, ‘জোঁকের মতো বস্তু’ নয়। (3) আপনি বলতে পারেন, ‘জোঁক’ শব্দটি জোঁকের মতো বস্তুও বোঝাতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর জন্য আপনি বলতে পারেন, ‘আরিফ একটি ছাগল’ কথাটির মানে এই না যে আরিফ আসলেই একটি তৃণভোজী গৃহপালিত প্রাণী যে কাঁঠাল পাতা খেতে ভালোবাসে, বরং আরিফ ছাগলের মতো।

যখন কেউ এমন একটি বাক্য প্রকাশ করেন যে, ‘আরিফ একটি ছাগল’, তিনি মূলত রূপক অর্থে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যাবলী বা চরিত্র বোঝান। ‘আরিফ একটি ছাগল’ কথাটি হয়তো প্রকাশ করে আরিফ কোনো বোকা বা অল্পবুদ্ধির লোক। একইভাবে কেউ যদি বলে, ‘আরিফ একটি জোঁক’, এটি হয়তো প্রকাশ করে, আরিফ নামক একটি লোক কারো অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে।

এখানে একটি অত্যাবশ্যক প্রশ্ন এসে যায় আর প্রশ্নটি হলো, এটা বলা ন্যায্য কিনা যে, ‘আরিফ একটি ছাগল’ কথাটি প্রকাশ করে, আরিফের আকৃতি আর একটি ছাগলের আকৃতি পুরোপুরি এক। এরকম রূপক অর্থের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কারণ কোনোকিছুর প্রকৃত আকৃতি প্রকাশ করতে রূপক অর্থের ব্যাবহার দুর্বোধ্য।

আবার, ‘আরিফ একটি হাতি’ কথাটি আরিফ নামক কোনো লোকের আকার প্রকাশ করবে, কথাটির মানে এই নয় যে আরিফ নামক লোকটির আকৃতি ঠিক একটি হাতির আকৃতির মতো, বরং আরিফ নামক লোকটি অনেক মোটা। একইভাবে, ‘আরিফ একটি লাঠি’ কথাটির মানে এই নয় যে আরিফ নামক লোকটির আকৃতি ঠিক একটি লাঠির আকৃতির মতো, বরং আরিফ লোকটি খুব চিকন।

পরিষ্কারভাবেই, ‘ভ্রূণটি একটি জোঁক’ কথাটি থেকে এটা বোঝা যায় না যে, ভ্রূণটির আকৃতি ঠিক একটি জোঁকের আকৃতির মতো।

কুরআনের লেখক যদি ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা আসলেই ‘জোঁকের মতো বস্তু’ বোঝান, তাহলে একজন পাঠকের এটা বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে, কুরআনের লেখক ‘জোঁকের মতো বস্তু’ বলে আসলে কি বুঝিয়েছেন, উপমাটি আসলে কি প্রকাশ করছে।

এটা বলাটা যদি ন্যায্য হয় যে, ‘ভ্রূণটি একটি জোঁক’ প্রকাশ করে, ভ্রূণটির আকৃতি ঠিক একটি জোঁকের আকৃতির মতো, তাহলে এটা বলাও ন্যায্য হবে যে, ‘ভ্রূণটি একটি জোঁক’ প্রকাশ করে, ভ্রূণটির টেস্টিস এবং ওভারিস উভয়ই আছে। আর এভাবে কুরআন ভুল বলে উপস্থাপন করা যাবে।

অ্যাপোলজিস্টরা বলেন, একটি জোঁক যেমন যেখানে লেগে থাকে সেখান থেকে রক্ত চুষে নেয়, একটি ভ্রূণও তেমন মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি নেয়। আর এই তুলনাটি একদমই অর্থহীন যা কিছুই প্রমাণ করে না। কারণ, একটি জোঁক কেবল রক্ত চুষে নেয়। অপরদিকে, একটি ভ্রূণ যেমন তার মায়ের শরীর থেকে রক্ত গ্রহণ করে, আবার তেমন মায়ের শরীরে রক্ত ফিরিয়ে দেয়। একটি জোঁক কোনো প্রাণীর গায়ে লেগে থাকলে সেখান থেকে রক্ত ‘চুরি’ করে নেয়। অপরদিকে, একটি ভ্রূণ তার মায়ের সাথে পরিপোষক পদার্থ, শ্বাসযন্ত্রের গ্যাস এবং বর্জনীয় পদার্থের বিনিময়ে জড়িত থাকে। (4) (5) ভ্রূণের সাথে জোঁকের এই তুলনা, একটি ব্যাংকের সকল কাস্টমারকে ব্যাংক ডাকাতের সাথে তুলনা দেওয়ার মতোই অর্থহীন।

এছাড়াও এই ব্যাখাটি কুরআন হাদিসের তথ্যের বিরুদ্ধে যায়। ইসলামী গ্রন্থসমূহ বলছে, একটি ভ্রূণ আলাকাহ পর্যায়ে পৌঁছায় চল্লিশ তম দিনে এবং এই আলাকাহ পর্যায়ের শেষ হয় আশি তম দিনে। অথচ, একটি ভ্রূণ তার বিকাশের অধিকাংশ সময় ধরেই মায়ের রক্তের সাহায্যে পুষ্টি গ্রহণ করে। অর্থ্যাৎ, কুরআনের লেখক যদি ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা বোঝায়, ভ্রূণ মায়ের রক্তের সাহায্যে পুষ্টি গ্রহণ করে, তাহলে কুরআন ভুলভাবে বলছে, ভ্রূণ কেবল চল্লিশ দিনের জন্যই মায়ের রক্তের সাহায্যে পুষ্টি গ্রহণ করে।

এবার আসি, কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনায় ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা আসলেই ‘জোঁকের মতো বস্তু’ বোঝানো হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে। অ্যাপোলজিস্টদের এই ব্যাখ্যার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই ব্যাখাটি কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের আয়াত সমূহের বাক্যপ্রসঙ্গের বিরুদ্ধে যায়। কুরআনের লেখক কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের আয়াত সমূহে সোজাসুজিভাবে অল্পকিছু কথায় ভ্রূণ বিকাশ বর্ণনা করেছে। বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিতগণও তাদের তাফসীর সমূহে ভ্রূণ বিকাশ বিষয়ক আয়াত সমূহের সোজাসুজি ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোনো রূপক অর্থের ব্যবহার ছাড়াই। এমনকি বর্তমান সময়ের মুসলিম অ্যাপোলজিস্টরাও আলাকাহ পর্যায় ব্যতীত অন্যান্য পর্যায়ের সোজাসুজি ব্যাখ্যা দেন। কেবল আলাকাহ পর্যায়কেই তারা বিশেষভাবে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করেন। পরিষ্কারভাবেই, এটা Special pleading logical fallacy.

একটু খেয়াল করুন, কুরআনের লেখক ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনায় সোজাসুজিভাবে ভ্রূণকে বীর্য বলছে, আবার সোজাসুজিভাবে মাংসপিণ্ড বলছে। আবার সোজাসুজিভাবে বলছে, মাংসপিণ্ড হাড়ে পরিণত হয়। আবার সোজাসুজিভাবে বলছে, হাড় মাংস দ্বারা আবৃত হয়। কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনায় দেখা যায়, কুরআন ভ্রূণ আসলে কি এবং কিসে পরিণত হয় সেটা বর্ণনা করছে, কিসের মতো তা নয়। অতএব, কেবল আলাকাহ পর্যায়ের জন্যই রূপক অর্থের ব্যবহার অনুমান করা গ্রহণযোগ্য নয়। এই রূপক অর্থটি কুরআনের বাক্যপ্রসঙ্গের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।

ভ্রূণ বিকাশের একটি বাস্তবিক এবং শারীরিক বর্ণনা প্রকাশ করতে রূপক অর্থের ব্যবহার সহায়ক নয়। ‘আলাকাহ’ শব্দটির একটি অর্থ রয়েছে যা রূপকবর্জিতও, আবার কুরআনের বাক্যপ্রসঙ্গের সাথে সংগতিপূর্ণও। আবার, অধিকাংশ ইসলামী পণ্ডিত দ্বারা সমর্থিতও। ‘আলাকাহ’ শব্দটির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য এই অর্থটি হলো ‘একটি জমাট রক্ত’।

প্রখ্যাত আরবী ডিকশনারি লিসান আল-আরব থেকে আমরা জানতে পারি, জোঁক নামক প্রাণীটিকে ‘আলাকাহ’ বলা হয়, কারণ এটা দেখতে রক্তের মতো। (6) লিসান আল-আরব থেকে তথ্যটি দেখানো হলোঃ

ভ্রূণ 2
অনুবাদঃ দৈববাণী (কুরআন): “তারপর আমরা নুতফা আলাকাহয় পরিনত করি” (আয়াত ২৩:১৪) এবং এথেকে এটা বলা হয়েছিলো যে পানিতে বসবাস করা প্রাণীটি আলাকাহ, কারণ এটা রক্তের মতো লাল, জমাট রক্ত হলো আলাক। এবং আল-আলাক: পানিতে থাকা কালো ক্রিমি।

অর্থ্যাৎ, যা জোঁকের মতো তাই ‘আলাকাহ’ নয়, বরং যা রক্তের মতো তা ‘আলাকাহ’ বলা যেতে পারে।

(গ) জমাট রক্ত

অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, ‘জমাট রক্ত’ অর্থটিও বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় না। তাদের দাবি, ‘জমাট রক্ত’ অর্থটি দ্বারা এমনকিছু বোঝায় যা দেখতে জমাট রক্তের মতো।

তারা বলেন, তৃতীয় সপ্তাহের শেষে ভ্রূণের ভেতরে রক্ত চলাচলের কারণে ভ্রূণ দেখতে জমাট রক্তের মতো লাগে।

অ্যাপোলজিস্টরা খুব ভালো করেই জানেন, একটি ভ্রূণ তার বিকাশের কোনো পর্যায়েই জমাট রক্তে পরিণত হয় না। এই বাস্তবতার ওপর সচেতন থেকেই তারা বিষয়টি অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেন।

এখানে প্রথম সমস্যাটি হলো, যে কারণে জোঁক রূপকটি অগ্রহণযোগ্য ঠিক সেকারণেই এই রূপকটি অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো, একটি ভ্রূণ যেমন বিকাশের কোনো পর্যায়েই জমাট রক্তে পরিণত হয় না, তেমনি একটি ভ্রূণকে তার বিকাশের কোনো পর্যায়েই জমাট রক্তের মতো মনে হয় না।

ভ্রূণ বিকাশের এই পর্যায়ের একটি ইমেজ তুলে ধরা হলো, যা দেখে বোঝা যায় ভ্রূণকে এই পর্যায়ে কোনোভাবেই একটি জমাট রক্তপিণ্ডের মতো মনে হয় নাঃ

ভ্রূণ 4

গত ১৪০০ বছরের প্রত্যেক খ্যাতিমান ইসলামী পণ্ডিতই বলেছেন, ‘আলাকাহ’ মানে ‘জমাট রক্ত’।

আমি প্রথম শ্রেণীর এবং আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতদের নামের একটি তালিকা তুলে ধরছি, যারা বলেছেন, কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের আয়াত সমূহে ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা ‘জমাট রক্ত’ বোঝানো হয়েছেঃ

  1. Ikrimah al-Barbari (died. 723 CE) – quoted in Tafsir ibn Kathir (7)
  2. Zaid ibn Ali (d. 740 CE) – Ghareeb al-Quran (8)
  3. Muqatil ibn Sulayman (d. 767 CE) (9)
  4. Al-Tabari (d 923 CE) – Jami al-bayan fi Tafsir al Quran (10)
  5. Al-Tabarani (d. 970 CE) – al-Tafsir al-Kabir (11)
  6. Abu al-Layth al-Samarqandi (d. 985 CE) – Bahar al-Uloom (12)
  7. al-Tha’labi (d. 1035 CE) – al-Jawahir al-Hisan fi Tafsir al-Quran (13)
  8. Al-Mawardi (d. 1058 CE) – al-Nakath wa al-Uyoon (14)
  9. al-Baghawi (d. 1122) – Ma’alim al-Tanzeel (15)
  10. Al-Zamakshari (d. 1143 CE) – al-Kashaaf (16)
  11. Ibn ʿAṭiyyah (d. 1151) – al-Maharar al-Wajeez fi Tafsir al-Kitab al-Azeez (17)
  12. Al-Tabarsi (d. 1153 CE) – Majma’ al-Bayan fi Tafsi al-Quran (18)
  13. ibn al-Jawzi (1201 CE) – Zad al-Maseer fi ‘Ilm al-Tafsir (19)
  14. Al-Razi (d. 1209 CE) – Mafatih al-Ghayb, Tafsir al-Kabir (20)
  15. Ibn Abd Al-Salam (d. 1261 CE) – Tafsir al-Quran (21)
  16. Al-Qurtubi (d. 1273 CE) – al-Jami’ al-ahkam al-Quran (22)
  17. Al-Baidawi (d. 1286 CE) – Anwar al-Tanzeel wa Asrar al-Taweel (23)
  18. Ibn Kathir (d. 1373 CE) – Tafsir al-Qur’an al-Kareem (24)
  19. Ibn Rajab (d. 1392 CE) – Jami’ al-‘Uloom wal-Hikam (25)
  20. Fairuz Abadi (d. 1414 CE) – Tafsir al-Quran (26)
  21. Al-Suyuti (d. 1505 CE) – Tafsir al-Jalalyn (27)
  22. Ash-Shawkhani (d. 1834 CE) – Fatah al-Qadeer (28)
  23. Muhammad Shafi‘ (d. 1976 CE) – Maariful Quran (29)
  24. Muhammad Muhsin Khan (born 1927 CE) – The Noble Quran (30)

তাছাড়া, কুরআনে যে ‘আলাকাহ’ শব্দটি দ্বারা সোজাসুজি অর্থে ‘জমাট রক্ত’ বোঝানো হয়েছে তার প্রমাণ প্রখ্যাত আরবী-ইংরেজী ডিকশনারি Lane’s lexicon থেকে পাওয়া যায়। (31) Lane’s lexicon বলছেঃ

ভ্রূণ 6

‘আলাকাহ’ শব্দটি কেবল ‘জমাট রক্ত’ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়নি, বরং সূরা আল-মু’মিনুনের ১৪ নং আয়াতের ব্যাখাও দেওয়া হয়েছে। আর ব্যাখায় বলা হয়েছে, ‘আলাকাহ’ হলো সেমিনাল ফ্লুইডের পরবর্তী অবস্থা, যখন তা জমাট রক্তে পরিণত হয়।

অত:পর উপরের দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, কুরআন মানব ভ্রূণের বিকাশের একটি পর্যায়ে মানব ভ্রূণকে “জমাট রক্ত” হিসেবে বর্ণনা করে, যা বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় এবং কুরআনকে ভুল প্রমানিত করে।


তথ্যসূত্র সমূহ

  1. Embryology in the Qur’an, University of Toronto, Canada, 1988 with Keith L. Moore, TVN Persaud and E. Marshal Johnson. (00:48:40)
  2. “(Alaq)” Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban. 1968. Vol. 5 page 2132
  3. “(Alaq)” Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban. 1968. Vol. 5 page 2134
  4. Barry Mitchell & Ram Sharma 2009. Embryology: An Illustrated Colour Text. Second Edition. Chruchill Livingstone ElSevier. Page 10.
  5. Ibid. page 11
  6. “(Alaq)” Lisan al-Arab.
  7. Tafsir Ibn Kathir. Verse 23:14.
  8. Zaid ibn Ali. Ghareeb al-Qur’an.
  9. Muqatil ibn Sulayman.
  10. Al-Tabari. Jami al-bayan fi Tafsir al Qur’an.
  11. Al-Tabarani. Al-Tafsir al-Kabir.
  12. Abu al-Layth al-Samarqandi. Bahar al-Uloom.
  13. al-Tha’labi. al-Jawahir al-Hisan fi Tafsir al-Qur’an.
  14. Al-Mawardi. al-Nakath wa al-Uyoon.
  15. al-Baghawi. Ma’alim al-Tanzeel.
  16. al-Zamakshari. al-Kashaaf.
  17. ibn ʿAṭiyyah. al-Maharar al-Wajeez fi Tafsir al-Kitab al-Azeez.
  18. al-Tabarsi. Majma’ al-Bayan fi Tafsi al-Qur’an.
  19. ibn al-Jawzi. Zad al-Maseer fi ‘Ilm al-Tafsir.
  20. al-Razi. Mafatih al-Ghayb, Tafsir al-Kabir.
  21. ibn Abd Al-Salam. Tafsir al-Qur’an.
  22. ibn Abd Al-Salam. Tafsir al-Qur’an.
  23. al-Baidawi. Anwar al-Tanzeel wa Asrar al-Taweel.
  24. ibn Kathir. Tafsir al-Qur’an al-Kareem.
  25. ibn Rajab, Jami’ al-‘Ulum wal-Hikam: A collection of Knowledge & Wisdom, Rendered into English by Muhammad Fadel. Umm al-Qura. Page 69.
  26. Fairuz Abadi. Tafsir al-Qur’an.
  27. al-Suyuti. Tafsir al-Jalalyn.
  28. ash-Shawkhani. Fatah al-Qadeer.
  29. Muhammad Shafi. Maariful Qur’an. Vol 6. page 245.
  30. Muhammad Muhsin Khan. The Noble Qur’an.
  31. “(Alaq)” Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban. 1968. Vol. 5 page 2134

আল্লাহ পাক ও তার বান্দাদের সশ্রদ্ধ চ্যালেঞ্জ


আসুন একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি

এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ
পরো দেহ ঘেরি মেঘ নীল বেশ
কাজল নয়নে যূঁথী মালা গলে
এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
আজি ক্ষণে ক্ষণে হাসিখানি সখী
আঁধারে নয়নে উঠুক চমকিয়া
আজি ক্ষণে ক্ষণে
মল্লারো গানে তব মধু স্বরে
দিক বাণী আনি বন মর্মরে
ঘন বরিষণে জল কলকলে
এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে
এসো করো স্নান নবধারা জলে
(উল্লেখ্য ‘নীপ’ মানে হচ্ছে কদম গাছ।)

এটি রবীন্দ্রসংগীত। কিন্তু আল্লাহ পাককে এই চ্যালেঞ্জ কেন দেয়া হল এর মত গান রচনা করতে? কারণ আল্লাহ পাক নিজেই আমাদের চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তার মত করে সুরা রচনা করতে। আর আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তাখাল্লাক্বু বি আখলাক্বিল্লাহ অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও, তোমরা আল্লাহর আখলাক্বে আখলাক্বিত হও। তাই আল্লাহ পাককে এই সশ্রদ্ধ চ্যালেঞ্জ। আগে দেখি আল্লাহ পাক আমাদের কীভাবে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন,

‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি, এ বিষয়ে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে,তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও সাথে নাও- যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর যদি তা না পার,অবশ্য তোমরা তা কখনও পারবেনা, তাহলে,সে দোযখের আগুন থেকে পানা চাও,যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা-২৩-২৪

‘বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না’। সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮৮।

উক্ত আয়াতে খেয়াল করে দেখেন, আল্লাহর কোরানের ব্যাপারে কোন সন্দেহ যদি থাকে তবে আমাদেরকে কী করতে হবে? আমাদেরকে এর মত একটা সুরা রচনা করে ফেলতে হবে! হাহ হাহ হা! আবার আমাদের এ প্রচেষ্টা চালিয়ে চাপাতির নিচে পড়ার আগেই দয়াময় আল্লাহ নিজেই সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছেন – ‘অবশ্য তোমরা তা কখনও পারবেনা।’ তারপর যথারীতি দোজখ, সে কী থ্রেট! দোজখের জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। হাহ হাহ হা। আবার আরেকটি আয়াতে বলছেন, মানুষ আর জিন জাতি পরস্পরকে সহায়তা করলেও কোরানের মত কিছু রচনা করতে পারবে না। এ ধরণের আজগুবী কথাবার্তার মানে কী? মানুষ আর জিন জাতি একসাথে কাজ করবে কিভাবে? যদি চ্যালেঞ্জ দেই, আপনি নিজে আরো একশ’ জিনকে সাথে নিয়েও আমার মোকাবিলা করতে পারবেন না – এ ধরণের চ্যালেঞ্জের কোনো অর্থ হয়? জিন জাতির সাথে মিলে কাজ করার কোনো ক্ষমতা যেহেতু মানুষের নাই তাই এ ধরণের চ্যালেঞ্জ বাতুলতা, হাস্যকর ও অবান্তর।

কাউকে যদি বলি বন্দে আলী মিয়ার মত একট পদ্য লেখেন তবে সে কী করবে? আপনাকে যদি চ্যালেঞ্জ দেই আমার এই লেখার মত করে একটা কিছু লেখে দেখান, আপনি তাহলে কী করবেন? কোনো কবিতা অথবা প্রবন্ধের মত করে কিছু লেখা বলতে আসলে কিছু বুঝায় না। আর এর চেয়ে উন্নত মানের লেখা বা মন্দ মানের লেখা এসব ধারণা খুবই আপেক্ষিক। আপনি আমার এ লেখার চেয়ে অনেক বেশি মানের একটি লেখা যদি নিয়ে আসেন তারপরেও আমার নিজের লেখার পক্ষে বলার মত কিছু পয়েন্ট অবশ্যই থাকবে। আবার ধরেন সবাই চেষ্টা করেও কোনো এক কবির মত করে কবিতা লেখতে পারল না, তাতে হয়ত বলা যাবে যে ঐ কবির কবিতা অনন্য। কেউ কোরানের মত কিছু যদি রচনা করতে না পারে তাতে যারা কোরান রচনার সাথে সম্পর্কিত তাদের কাব্য প্রতিভার অনন্যতা বা শ্রেষ্টতা না হয় প্রমাণিত হল, কিন্তু এটা যে স্বয়ং আল্লাহর বাণী তা প্রমাণিত হল কিভাবে?

বস্তুত এ ধরণের ছেলেমানুষী চ্যালেঞ্জই কোরানকে হাস্যকর করে ফেলে। আধুনিক যুগে এটা আরো বালখিল্য হয়ে গেছে। আরবি ভাষার অনেক বিবর্তন হয়েছে। আপনাকে যদি বলি চর্যাপদের মত করে শ্লোক লেখেন তো! অথবা ইলিয়াডের মত করে একটু অথবা সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাভারত বা রামায়াণের একটি শ্লোক। অথবা কবি আলাওলের মত করে অথবা আব্দুল হাকিমের মত, তবে?

তারপরেও কোরানের একটি সুরা দেখি। সুরা ফিল

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। তুমি কি দেখনি তোমার রব হাতীওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন?
২। তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেননি?
৩। আর তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন।
৪। তারা তাদের ওপর নিক্ষেপ করে পোড়ামাটির কঙ্কর।
৫। অতঃপর তিনি তাদেরকে করলেন ভক্ষিত শস্যপাতার ন্যায়।

এবার ‘সুরা নাস’ নিয়ে বলি। এ সুরার সকল বাক্যের শেষে ´নাস’ শব্দটি আছে যা একঘেয়েমীপূর্ণ, এ কোন ধরণের ছন্দ? ধরেন আমি একটি পদ্য লেখি

আমি যাব খেলতে
তুমি যাবে খেলতে
মজা পাই খেলতে
প্রতিদিন খেলতে।
তারচেয়ে যদি বলি
আমি যাব খেলতে
তুমি যাবে পড়তে,
কী যে মজা খেলতে
যদি তুমি জানতে।

এতে বৈচিত্র আসে ছন্দে, শোনতেও একঘেয়েমী লাগে না।

তারপর আমাদেরকে মনে রাখতে হবে কোরানের সুরাগুলোর উদ্দেশ্য শুধু কবিত্ব প্রদর্শন নয় বরং এর মূল কথা বা তথ্যটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সুরা ফিল থেকে কী তথ্য পাই? পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করে সম্পূর্ণ সুরা জুড়ে বেশ কিছু আচমকা হুমকি-ধামকি ছাড়া আর কিছুই না। আল্লাপাক যিনি সমস্ত মহাবিশ্ব ‘হও’ বললেই হয়ে যায়, যিনি মহাবিশ্ব পরিচালনা করছেন যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছুটা জানতেই সকল থেকে বড় বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরে যাচ্ছে সেই মহাবিশ্ব যিনি পরিকল্পনা করেছেন, সৃজন করেছেন, তিনি তুচ্ছ মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন, সাবধান করছেন এই বলে যে তিনি হাতিওয়ালাদের ঘাসের সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। যে তার সাথে খারাপ আচরণ করবে তাকে ইচ্ছা করলে একই পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারেন, সুবানাল্লাহ। সমগ্র মহাবিশ্ব তৈরি করে যিনি তুচ্ছ মানুষের সাথে কুস্তি করেন এবং যার মধ্যে তীব্র হিংস্র মানবতার ছাপ আছে তাকে নি:সন্দেহে বলতে পারি মানব কল্পিত অপসত্তা। আবার দেখি সুরা লাহাব

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। ধ্বংস হোক আব লাহাবের দু হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক।
২। তার ধন-সম্পদ এবং যা সে অর্জন করেছে তা তার কাজে আসবে না।
৩। অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে।
৪। আর তার স্ত্রী লাকড়ি বহনকারী ,
৫। তার গলায় পাকানো দড়ি।

আল্লাহ পাক 2

মানে সেই একই, মানুষের সাথে সর্বজ্ঞ-সবজান্তা, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান আল্লাপাক কুস্তি করছেন। মুসলমানরা সেই মুহাম্মদের সময় থেকে একজন মানুষকে কোরানের সুরার মাধ্যমে অভিশাপ দিচ্ছে স্ত্রী সমেত ধ্বংস হওয়ার, সে কি এখনো ধ্বংস হয় নাই? আল্লাহ পাকের মত মহান স্বত্বা কেন এত নগ্নভাবে ক্ষ্যাপবেন মুহাম্মদের চাচা আবু লাহাবের উপর যিনি এক তুচ্ছ মানুষ। দেখেন সুরাটা আবার- আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক, তার ধন-সম্পদ ধ্বংস হোক, তার স্ত্রীকে গলায় ফাস পরানো হবে। কী বীভৎস! এই জিঘাংসার চর্চা আমরা এখনো করছি। দেড় হাজার বছর আগের কোন এক মরুবাসী, চরম বীভৎস হিংসুকের অন্ধকার মননে যে জিঘাংসার সূত্রপাত হয়েছিল তাকে এখনো লালন করে যেতে হবে কেন?

আয়াত: “যখন আমি (আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা)) কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি; অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্ঠীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।” সুরা আল-ইসরা, আয়াত ১৬

মন্তব্য: আল্লাহ পাকের কী মহান ষড়যন্ত্র মানুষকে ঘিরে!

সুরা হাক্ক ৬৯: ৩১ – ৩৬ অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। ………. আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নাই। এবং কোন খাদ্য নাই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত।

সুরা মুহাম্মদ পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? (সুরা মুহাম্মদ, ৪৭; আয়াত ১৫)

সূরা নিসা ৪, আয়াত ৫৬ যখন তাদের(জাহান্নামীদের) দেহের চামড়া আগুনে পুড়ে পুড়ে গলে যাবে, তখন (সাথে সাথে) সেখানে অন্য চামড়া সৃষ্টি করে দেবো; যেনো তারা আজাবের স্বাদ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে।

উপরে দেয়া আয়াতগুলো ভাল করে দেখেন। আল্লাহ পাকের রুচিবোধ কী চমৎকার! তাকে যারা বিশ্বাস করবে না, মান্য করবে না তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ খেতে দিয়ে। একটু ভেবে দেখেন তো প্রচণ্ড উত্তপ্ত আগুনে জ্বালিয়ে একজন মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে অনন্তকাল, পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে, পাপীকে বেঁধে রাখা হবে সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। দেহের চামড়া একবার পুড়ে গেলে পুনরায় নতুন ভাবে সৃষ্টি করে দেয়া হবে আজাব ভোগের জন্য।

আমরা দেড় হাজার বছর আগের অসভ্যতাকে পেছনে ফেলে অনেক অনেক এগিয়ে এসেছি। আমরা আমাদের চরম শত্রুকেও পুঁজ খাওয়ানোর কথা ভাবি না, এক ঘন্টার জন্যও আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়ার কথা ভাবি না। যুদ্ধাহত শত্রুর সেবা করার কথাও ভাবি কখনো কখনো। কেউ শত্রু হলেও যদি পানি চায় আমরা এগিয়ে দেই। আমরা অনীপ্সিত, হিংস্র, বর্বরতার প্রতিচ্ছবি আল্লাহ পাকের চেয়ে অনেক অনেক বেশি সভ্য, তাই না? আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন তার গুণে গুণান্বিত হতে। যারাই আল্লাহ পাককে অনুসরণ করতে যাবে তারা আইএসআইএস, আল কায়দা এর মত বর্বর হবে, এতে আশ্চর্যের কী আছে?

আল্লাহ পাক 4

যা বলছিলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথাও কাউকে ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ খেতে দেয়ার কথা কি বলেছেন? এত জিঘাংসা, এত নিম্ন রুচি একজন মানুষেরও হবে না, সেটা হবে একজন অসুরের।

এক মরু-উন্মাদের উশর মনসা-ক্ষেত্রে হিংস্রতার যে বীজ উপ্ত হয়েছিল তা মহীরুহ হয়ে কোরানে পরিণত হয়েছে। বিবমিষা জাগানিয়া পুতিগন্ধময়-নোংরা আয়াত সম্পন্ন এই গ্রন্থে তাই রবীন্দ্র সংগীতের মত এত অপরূপ স্নিগ্ধতা ছড়ানো গান, রুচিবোধ সম্পন্ন কিছু খুঁজতে যাওয়াই পণ্ডশ্রম। তারচেয়ে আসুন শুনি গানটি আরেকবার। অপর আরেকটি পরিচিত গান দেই, একসাথে শুনি আসেন।

চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো ।
ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ।।
পাগল হাওয়া বুঝতে নারে ডাক পড়েছে কোথায় তারে-
ফুলের বনে যার পাশে যায় তারেই লাগে ভালো ।।
নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,
বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা ।
পারিজাতের কেশর নিয়ে ধরায় শশী, ছড়াও কী এ ।
ইন্দ্রপুরীর কোন্ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ।।

…এবং কিছু কথা

১। আল্লাহ নামক হাস্যকর কোনো সত্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি, আল্লাহ ছিলেন তখনকার সময়ের পৌত্তলিকদের প্রধান দেবতা, মুহাম্মদ নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য ইহুদিদের জিহোভার ধারণার সাথে মিলিয়ে আল্লাহকে সাজিয়ে তুলেছিলেন নতুন ধারণায়।

মহাবিশ্বের যদি কোন স্রষ্টা থাকেও সে আল্লাহ, ভগবান, গড এদের মত মানবীয় ও জঘন্য চরিত্রের হবে না। কারো উপাসনা তার প্রয়োজন হওয়ার প্রশ্নই উঠবে না। উপাসনা, প্রশংসা, ভজনা এগুলোর প্রয়োজন হওয়াটা মনুষ্যসুলভ।

এটা অত্যন্ত স্বস্তির কথা যে আল্লাহ পাকের মত হিংস্র, অসভ্য, বর্বর চরিত্রের ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।

২। কোরান রচনা করেছে মুহাম্মদের সময়কার লোকজন। একই কথা সকল শাস্ত্রের ক্ষেত্রেই- সবগুলো মানুষ রচিত, কোনো সন্দেহ নাই।

৩। এসব মিথ্যা ধর্মগুলোকে দূরে ঠেলে দিয়ে ভাবতে বসি সমাজকে কিভাবে একটু এগিয়ে নেয়া সম্ভব? কিভাবে দু:খ-দারিদ্র জর্জরিত মানুষগুলোকে একটু সুখের সন্ধান দেয়া যায়, একটা মানবিক পৃথিবীর সন্ধান দেয়া যায়। কিভাবে মানুষে মানুষে পাহাড় সম বৈষম্য দূর করা যায়। দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষগুলোকে আসলেই অধিকার সচেতন করা যায়।

৪। দ্রুত সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে হলে ধর্মের অবলুপ্তি প্রয়োজন। সকল প্রগতিশীল ও মানবিক উদ্যোগ অংকুরেই ধ্বংস করে ফেলা হয় ধর্ম ব্যবহার করে।


কুরআন এবং ভ্রূণের বিকাশঃ নুতফা পর্যায়


ভূমিকা

মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের ধর্মগ্রন্থ ‘কুরআন’ স্বয়ং তাদের ঈশ্বর আল্লাহর বাণী এবং সেই কারণে তাতে কোনোরূপ ভুল থাকতে পারেনা। তারা বিশ্বাস করেন, কুরআন পুরোপুরি নির্ভুল একটি গ্রন্থ এবং তাতে কোনোরূপ কোনো সমস্যা নেই। মুসলিমরা মনে করেন, কুরআনে ভুল আছে বলে মানুষ যা বলে থাকেন তা আসলে তাদের বুঝার ভুল। একজন মুসলিম হতে হলে আপনাকে অবশ্য তাই বিশ্বাস করতে হবে, তাই ভেবেই নিজের বিশ্বাসকেই সত্য বলে নিজেকে বুঝ দিতে হবে। তবে বাস্তবতার দিক থেকে বললে, কুরআনে বেশকিছু ভুল পাওয়া যায় এবং সেইসব ভুল সমূহকে ইসলাম প্রচারকরা “বুঝার ভুল” বলে যেসব ব্যাখ্যা সমূহ দেন সেইসব ব্যাখ্যা সমূহকে আবার নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরীক্ষা করলে তাতেও প্রচুর অসততা, ভুল উপস্থাপন এবং মিথ্যা বর্ণনা পাওয়া যায়। কুরআনে যতো ভুল আছে তার মধ্যে কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনার ভুল সমূহ সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। অতীতে ইসলামের সমালোচকেরা কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনার মধ্যে ভুল দেখিয়েছিলেন, ইসলাম প্রচারকেরাও সেসব ভুলের জবাব দিয়ে কুরআনকে নির্ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, আবার ইসলামের সমালোচকেরাও সেইসব জবাবের অসততা দেখিয়ে ইসলাম প্রচারকদের জবাব দিয়েছেন।

এবিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, বিতর্ক হয়েছে, সব মিলিয়ে বিষয়টি অনেক আলোচিত একটি বিষয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, কুরআনে ঈশ্বর মানব ভ্রূণের পর্যায় থেকে পর্যায়ে অবস্থার পরিবর্তন বর্ণনা করেছেন এবং সেই বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানের প্রমানিত তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইসলাম প্রচারকেরা কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা নির্ভুল প্রমাণ করার জন্য ভ্রূণ বিকাশ বিষয়ক আয়াত সমূহের কোনো শব্দের অর্থ বিকৃত করে এমন অর্থ দাঁড় করান যা প্রখ্যাত কোনো তাফসীর এবং ডিকশনারিতে পাওয়া যায় না, আবার ডিকশনারি থেকে কোনো শব্দের বিকল্প অর্থ গ্রহণ করে সেই অর্থ দিয়ে ভ্রূণের বিকাশ বিষয়ক আয়াত সমূহ পুনরায় ব্যাখ্যা করে আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্য সমূহের সাথে সংগতিপূর্ণ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তবে দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, সেইসব ব্যাখ্যা সমূহকে আবার নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরীক্ষা করলে তাতেও প্রচুর অসততা খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলামের সমালোচকদের সমালোচনার বিরুদ্ধে ইসলাম প্রচারকদের জবাব সমূহ পড়ে সাধারণ মুসলিমরা সাধারণত মনে করেন ইসলামের সমালোচকেরা ভুল বলেন, কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনায় কোনো অসংগতি নেই, ইসলাম ১৪০০ বছর আগেই মানব ভ্রূণের বিকাশ সঠিকভাবে বর্ণনা করেছে। কারণ তারা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ইসলামের সমালোচকদের সমালোচনার বিরুদ্ধে ইসলাম প্রচারকদের জবাব সমূহ যাচাই করে দেখেন না, বিচার বিবেচনা করে দেখেন না যে ইসলাম প্রচারকদের ব্যাখ্যা সমূহ কতটুকু গ্রহণযোগ্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত। যা তাদের বিশ্বাসের পক্ষে যায় তাই তাদের কাছে যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তব মনে হয় আর যা তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় তাই তাদের কাছে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে হয়। কারণ ছোটবেলা থেকে মেনে আসা বিশ্বাসের প্রতি ভালোবাসা কিংবা দূর্বলতার কারণে তারা তাদের বিশ্বাসের পক্ষে যাওয়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণই যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তবতা বলে বিশ্বাস করতে স্বস্তি বোধ করেন। আশাকরি, প্রবন্ধটি যারা পড়ছেন তারা নিজের প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি দূর্বলতা নিয়ন্ত্রণ করে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পড়বেন এবং যাচাই-বাছাই করার পরেই সিদ্ধান্ত নিবেন।

কুরআনের ভ্রূণতত্ত্বের প্রসারণ ইসলামী দাওয়াতের একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় যখন অমুসলিম চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ড. কিথ মুর এবং ড. মরিস বুকাইলির বই প্রকাশিত হয়৷ তারা তাদের বইতে কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা নির্ভুল প্রমাণ করতে যে সকল দাবি তুলে ধরেন সেইসব দাবিই ড. জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া এবং অন্যান্য অনেকেই পুনরাবৃত্ত করেন। যাইহোক, এই লেখাটির উদ্দেশ্য কেবল কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনার সমস্যা তুলে ধরা এবং কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনার সমর্থনে বিভিন্ন ইসলামিক ওয়েবসাইট এবং ইসলাম প্রচারকদের মিথ্যা, ন্যায়বিরুদ্ধ এবং অপ্রমাণিত দাবি সমূহের অসারতা তুলে ধরা।

কুরআনের ভ্রূণতত্ত্ব বিষয়ক আয়াতসমূহ

কুরআনের সেই সকল আয়াত নিচে উল্লেখ করা হল যেই সকল আয়াত ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা প্রদান করে :

23:12
আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান হতে।
23:13
অতঃপর আমি ওকে বীর্য রূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে।
23:14
পরে আমি বীর্যকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!
22:5
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও তাহলে  (জেনে রেখ),  আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর বীর্য হতে, এরপর জমাট বাধা রক্ত থেকে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি মাংসপিন্ড হতে; তোমাদের নিকট ব্যক্ত করার জন্য। আমি যা ইচ্ছা করি তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিতি রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে শিশু রূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও; তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যু ঘটানো হয় এবং তোমাদের মধ্যে কেহকে কেহকে প্রত্যাবৃত্ত করা হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে তারা যা কিছু জানত সেআ সম্বন্ধে তারা সজ্ঞান থাকেনা। তুমি ভূমিকে দেখ শুস্ক, অতঃপর তাতে আমি বারি বর্ষণ করলে তা শস্য শ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।

বিশ্লেষণ

কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনা নিয়ে এযাবৎ অনেক মুসলিম অ্যাপোলজিস্ট লেখালেখি করেছেন যাদের উদ্দেশ্য ছিলো কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনাকে নির্ভুল প্রমাণ করা, অনেক ইসলামিক ওয়েবসাইটে এবিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের বর্ণনায় কোনো ভুল নেই। আমি এই প্রবন্ধে কেবল নুতফা পর্যায় নিয়ে আধুনিক ইসলাম প্রচারকদের ব্যাখ্যা সমূহের জবাব তুলে ধরবো। 

নুতফা পর্যায়

কুরআন অনুযায়ী, মাতৃগর্ভে ভ্রূণ বিকাশের প্রথম পর্যায়টি হলো নুতফা পর্যায়। ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা ‘সামান্য পরিমাণ তরল’ বোঝায়। (1) অর্থ্যাৎ, কুরআন অনুযায়ী, এই পর্যায়ে ভ্রূণ কেবলই ‘সামান্য পরিমাণ তরল’। এই ‘সামান্য পরিমাণ তরল’ হলো বীর্য, এই পর্যায়ের ভ্রূণ কেবলই সামান্য পরিমাণ বীর্য।

ভ্রূণ এমনকিছু নয় যাকে ‘তরল পদার্থ’ বা ‘সামান্য পরিমাণ তরল’ বা ‘বীর্য’ বলা যায়। একটি ভ্রূণ কখনোই সামান্য পরিমাণ তরল হতে পারে না। একটি ভ্রূণ তার বিকাশের কোনো পর্যায়েই সামান্য পরিমাণ তরল নয় বা সেরকম কিছুতে পরিণত হয় না।

কুরআনের বর্ণনায় পুরুষের শুক্রাণু, নারীর ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলন থেকে ভ্রূণ গঠন হওয়ার কথা আসেনি। কুরআন যার বাণী সে শুক্রাণু ডিম্বাণুর ব্যাপারে কোনো ধারণা রাখতেন কিনা তারও কোনো চিহ্ন নেই।                     

মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, ‘নুতফা’ শব্দটির অর্থ শুক্রাণুও হতে পারে, আবার ডিম্বাণুও হতে পারে।

সূরা আল-ইনসানের ২ নং আয়াত বলে, আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘নুতফাতিন আমশাজ’ থেকে। ‘আমশাজ’ শব্দটির অর্থ ‘মিশ্রণ’, ‘নুতফাতিন আমশাজ’ মানে ‘মিশ্র নুতফা’। অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, এই আয়াতে ‘নুতফাতিন আমশাজ’ দ্বারা জাইগোট বা ভ্রূণকোষ বোঝানো হয়েছে, যা একটি শুক্রাণুর সাথে একটি ডিম্বাণুর মিলন থেকে গঠিত হয়।

76:2
اِنَّا خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اَمۡشَاجٍ ٭ۖ نَّبۡتَلِیۡہِ فَجَعَلۡنٰہُ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا ﴿۲﴾
ইন্না-খালাকানাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন আমশা-জিন নাবতালীহি ফাজা‘আলনা-হু ছামী‘আম বাসীরা
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি "নুতফাতিন আমশাজিন" থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্য তাকে করেছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী।

এবারে আসুন দেখি, ‘নুতফা’ শব্দটি নিয়ে মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের ধারণা সমূহ কতটুকু সঠিক, কতটুকু গ্রহণযোগ্য। প্রথমেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন, ‘নুতফা’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ কি। ‘নুতফা’ শব্দটির সংজ্ঞায় বিখ্যাত আরবী ডিকশনারি লিসান আল-আরব কি বলে সেটা তুলে ধরছি, পাশাপাশি তুলে ধরছি তার লিপ্যন্তর এবং সঠিক অনুবাদঃ

নুতফা
লিপ্যন্তর : ওয়া আল-নুতফা ওয়া আল-নুতাফা: আল-কালীল মিন আল-মা’আ, ওয়াকীলা: আল-মা’আ আল-কালীল ইয়াবকা ফি আল-কিবরাহ, ওয়া কীলা: হিয়া কাল-জুর’আহ ওয়া লা ফি’আলা লিল-নুতফা।
ওয়া আল-নুতফা আল মা’আ আল-কালীল ইয়াবকা ফি আল-ড্ডালু; আন আল-লিহায়ানি আয়ডান, ওয়া কালা: হিয়া আল-মা’আ আল-সাফী, কাল্লা আও কাথার।
অনুবাদ : এবং “নুতফা” এবং “নুতাফা”: সামান্য পরিমাণ পানি। এবং একে বলা হয়: ভিস্তিতে অবশিষ্ট সামান্য পানি। এবং একে বলা হয়: এটি একটি ডোজের মতো এবং “নুতফা” শব্দের কোনো ক্রিয়াপদ নেই।
এবং “নুতফা” হল বালতিতে অবশিষ্ট সামান্য পরিমাণ পানি। লেহায়ানিও বললেন: এটি বিশুদ্ধ পানি, সামান্য কিংবা অনেক।

সংজ্ঞাটির কিছু কীওয়ার্ড অর্থসহ উল্লেখ করা হলোঃ

১) মা’আঃ পানি (2)

২) কালীলঃ একটি সামান্য পরিমাণ। (3)

অতএব, ‘নুতফা’ শব্দটির লিসান আল-আরব ডিকশনারি প্রদত্ত সংজ্ঞার সঠিক অনুবাদ হলো, “সামান্য পরিমাণ পানি এবং একে বলা হয়ঃ বালতিতে অবশিষ্ট সামান্য পরিমাণ পানি।”

কেউ যদি বলে, “কালীল” শব্দটি “একটি একক কণা” বোঝাতে পারে, তাহলে সে ভুল। আরবীতে “একটি একক কণা” অর্থ হবে, “আল-কাতারা আল-ওয়াহিদা”। (4)

‘নুতফা’ কে একটি শুক্রাণু/ডিম্বাণু/জাইগোট বলাটা এক গাদা বালিকে একটি একক বালুকণা বলার মতোই হাস্যকর। ‘একটি একক পানি কণা’ বা ‘একটি পানি অনু’ কে কোনোভাবেই ‘বালতিতে অবশিষ্ট সামান্য পানি’ বলা যায় না। কেননা, ম্যাক্রোস্কোপিক বা দৃশ্যমান সামান্য পরিমাণ পানি কোনোভাবেই একটি পানি অনুর সমতুল্য নয়, যা ন্যানোস্কোপিকও নয়।

‘নুতফা’ শব্দটির ব্যাপারে লিসান আল-আরব আরও কিছু তথ্য তুলে ধরে (5) যা মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের ভুল প্রমাণ করেঃ

নুতফা
অনুবাদ : “… এবং হাদিসে: তিনি তার সহচরদের বলেন: ওজুর জন্য কি পানি আছে? তখন একজন ব্যক্তি একটি বদনায় করে “নুতফা” নিয়ে আসেন; এটি দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন “সামান্য পানি”। এবং বীর্যকে (মানি) তার সামান্য পরিমানের জন্য “নুতফা” বলা হয়। এবং দৈববাণী: সে কি বীর্যের সামান্য পরিমাণ ছিল না? (কুরআন ৭৫:৩৭)

লিসান আল-আরব ‘নুতফা’ কে বিশেষভাবে খালি চোখে দেখা যায় এমন পরিমাণ পানি হিসেবে বর্ণনা করে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়, প্রখ্যাত অভিধানটি বলে, বীর্য (মানি) কে ‘নুতফা’ বলা হয় তার সামান্য পরিমাণের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা হলো, লিসান আল-আরবে এমন কোনো ইংগিত পাওয়া যায় না যা থেকে অনুমান করা যায় যে ‘নুতফা’ শব্দটি শুক্রাণু/ডিম্বাণু/জাইগোট বোঝাতে পারে।

এবার আসুন দেখি, আরবের লোকেরা ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা কি বুঝতো। এই হাদিস দুটি খুব পরিষ্কারভাবেই প্রমাণ করে যে আরবরা ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা কি বুঝতোঃ         

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩২। পড়ে থাকা বস্তু পাওয়া (كتاب اللقطة)
হাদিস নম্বরঃ ৪৪১০
باب اسْتِحْبَابِ خَلْطِ الأَزْوَادِ إِذَا قَلَّتْ وَالْمُؤَاسَاةِ فِيهَا ‏‏ حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْدِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ، – يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ الْيَمَامِيَّ – حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، – وَهُوَ ابْنُ عَمَّارٍ – حَدَّثَنَا إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ فَأَصَابَنَا جَهْدٌ حَتَّى هَمَمْنَا أَنْ نَنْحَرَ بَعْضَ ظَهْرِنَا فَأَمَرَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَجَمَعْنَا مَزَاوِدَنَا فَبَسَطْنَا لَهُ نِطَعًا فَاجْتَمَعَ زَادُ الْقَوْمِ عَلَى النِّطَعِ قَالَ فَتَطَاوَلْتُ لأَحْزُرَهُ كَمْ هُوَ فَحَزَرْتُهُ كَرَبْضَةِ الْعَنْزِ وَنَحْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً قَالَ فَأَكَلْنَا حَتَّى شَبِعْنَا جَمِيعًا ثُمَّ حَشَوْنَا جُرُبَنَا فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَهَلْ مِنْ وَضُوءٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ بِإِدَاوَةٍ لَهُ فِيهَا نُطْفَةٌ فَأَفْرَغَهَا فِي قَدَحٍ فَتَوَضَّأْنَا كُلُّنَا نُدَغْفِقُهُ دَغْفَقَةً أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً ‏.‏ قَالَ ثُمَّ جَاءَ بَعْدَ ذَلِكَ ثَمَانِيَةٌ فَقَالُوا هَلْ مِنْ طَهُورٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَرِغَ الْوَضُوءُ ‏”‏ ‏.‏
বাংলায়ঃ আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী (রহঃ) ….. সালামাহ্ (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিল। অবশেষে আমাদের কিছু সওয়ারীর বাহন যাবাহ করার কথা ইচ্ছা করেছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য একত্রিত করলাম। আমরা একটি চামড়া বিছালাম এবং তাতে লোকদের খাদ্যদ্রব্য জমা করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সেটির প্রশস্ততা অনুমান করার জন্য দাঁড়ালাম এবং আমি আন্দাজ করলাম সেটি একটি ছাগল বসার স্থানের সমান। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’।
রাবী বলেন, আমরা সকলেই তৃপ্তির সাথে খেলাম। তারপর আমাদের নিজ নিজ খাদ্য রাখার থলে পূর্ণ করে নিলাম। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওযুর জন্য কি পানি আছে? বর্ণনাকারী বলেন, এক ব্যক্তি তার পাত্রে সামান্য পানি নিয়ে এগিয়ে এল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা একটি বড় পাত্রে ঢেলে দিলেন। এরপর আমরা চৌদ্দশ’ লোক সকলেই তার থেকে পানি ঢেলে ঢেলে ওযু করলাম। তারপর আরো আটজন লোক এসে বলল, ওযুর জন্য কি পানি আছে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওযুর পানি সমাপ্ত হয়ে গেছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৬৯)

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ১/ পবিত্রতা রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে (كتاب الطهارة عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ১১৩
باب مَا جَاءَ فِيمَنْ يَسْتَيْقِظُ فَيَرَى بَلَلاً وَلاَ يَذْكُرُ احْتِلاَمًا حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ خَالِدٍ الْخَيَّاطُ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، هُوَ الْعُمَرِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يَجِدُ الْبَلَلَ وَلاَ يَذْكُرُ احْتِلاَمًا قَالَ ‏”‏ يَغْتَسِلُ ‏”‏ ‏.‏ وَعَنِ الرَّجُلِ يَرَى أَنَّهُ قَدِ احْتَلَمَ وَلَمْ يَجِدْ بَلَلاً قَالَ ‏”‏ لاَ غُسْلَ عَلَيْهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ تَرَى ذَلِكَ غُسْلٌ قَالَ ‏”‏ نَعَمْ إِنَّ النِّسَاءَ شَقَائِقُ الرِّجَالِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَإِنَّمَا رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ حَدِيثَ عَائِشَةَ فِي الرَّجُلِ يَجِدُ الْبَلَلَ وَلاَ يَذْكُرُ احْتِلاَمًا ‏.‏ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ فِي الْحَدِيثِ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ إِذَا اسْتَيْقَظَ الرَّجُلُ فَرَأَى بِلَّةً أَنَّهُ يَغْتَسِلُ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَأَحْمَدَ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنَ التَّابِعِينَ إِنَّمَا يَجِبُ عَلَيْهِ الْغُسْلُ إِذَا كَانَتِ الْبِلَّةُ بِلَّةَ نُطْفَةٍ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَإِسْحَاقَ ‏.‏ وَإِذَا رَأَى احْتِلاَمًا وَلَمْ يَرَ بِلَّةً فَلاَ غُسْلَ عَلَيْهِ عِنْدَ عَامَّةِ أَهْلِ الْعِلْمِ
বাংলায়ঃ আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, সে ঘুম হতে জেগে ভিজা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু স্বপ্লদোষের কথা মনে করতে পারছে না। তিনি বললেন, সে গোসল করবে। অপর এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে কিন্তু বীর্যপাতের কোন আলামাত দেখতে পাচ্ছে না। তিনি বললেনঃ “তাকে গোসল করতে হবে না।” উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রীলোক যদি এমনটি দেখতে পায় (স্বপ্লদোষ হয়) তবে তাকে কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, স্ত্রীলোকেরা পুরুষদেরই অংশ। —সহীহ। সহীহ আবু দাউদ- (২৩৪)।

প্রথম হাদিসে, ‘নুতফা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ‘সামান্য পানি’ বোঝাতে।

দ্বিতীয় হাদিসে, ‘নুতফা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ‘বীর্য’ বোঝাতে। অর্থ্যাৎ, প্রকৃতপক্ষেই ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা বীর্য বোঝায়।

মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের দাবি, ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা কেবল ‘বীর্য’ বোঝাতে পারে না, কেননা সূরা আল-ক্বিয়ামাহের ৩৭ নং আয়াতে ‘নুতফা’ শব্দটি ‘মানি’ (বীর্য) শব্দটি থেকে আলাদাভাবে এসেছে। তাদের মতে, যেহেতু সূরা আল-ক্বিয়ামাহের ৩৭ নং আয়াত বলে, “সে কি নির্গত বীর্যের ‘নুতফা’ ছিলো না?”, সেহেতু ‘নুতফা’ শব্দটি দ্বারা বীর্য নয়, বরং বীর্যের সামান্য অংশ বা উপাদান বুঝায়।

75:37
اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی ﴿ۙ۳۷﴾
আলাম ইয়াকুনুতফাতাম মিম মানিইয়িইঁ ইউমনা
সে কি নির্গত বীর্যের “নুতফা” ছিল না?

এটা যে সূরা আল-ক্বিয়ামাহের ৩৭ নং আয়াতের একটি অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই না, সেটা উপরের আলোচনা থেকেই পরিষ্কার।

লিসান আল-আরব বলছে, “বীর্যকে ‘নুতফা’ বলা হয় তার সামান্য পরিমাণের জন্য। আর কুরআন বলে, সে কি নির্গত বীর্যের ‘নুতফা’ ছিলো না?”

অতএব, একাডেমিক ডিকশনারি প্রদত্ত তথ্য সমূহের আলোকে সূরা আল-ক্বিয়ামাহের ৩৭ নং আয়াতের সবচেয়ে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য অনুবাদটি হলোঃ “সে কি নির্গত বীর্যের সামান্য পরিমাণ ছিলো না?”

আপনি এখন প্রশ্ন করতেই পারেন, যদি ‘নুতফা’ কেবলই বীর্য হয়ে থাকে, তাহলে কুরআন কেন ‘মানি’ শব্দটি ছাড়াই কেবল বলে না যে, ‘নুতফা’ নির্গত হয়? হ্যাঁ, কুরআন তা বলে।

53:46
مِنْ نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ
মিন নুতফাতিন ইযা-তুমনা।
'নুতফা' থেকে যখন নির্গত করা হয়।

সূরা আস-সাজদাহের ৮ নং আয়াত ব্যবহার করেও অ্যাপোলজিস্টরা একটি দাবি উপস্থাপন করেন।

32:8
ثُمَّ جَعَلَ نَسۡلَہٗ مِنۡ سُلٰلَۃٍ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ۚ﴿۸﴾
ছুমমা জা‘আলা নাছলাহূমিন ছুলালাতিম মিম মাইম মাহীন।
তারপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

অ্যাপোলজিস্টরা বলেন, ‘নুতফা’ শব্দটি কেবলই বীর্য বোঝাতে পারে না, কেননা কুরআন অনুযায়ী, ‘নুতফা’ হলো ‘এক তুচ্ছ তরলের নির্যাস’। তাদের দাবি, ‘বীর্যের নির্যাস’ স্বয়ং ‘বীর্য’ থেকে আলাদা, বীর্যের কিছু উপাদান।

আসুন দেখি, প্রখ্যাত আরবী-ইংরেজি ডিকশনারি Lane’s Lexicon আরবী শব্দ ‘ছুলালাহ (নির্যাস)’ কে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেঃ (6)

নির্যাস

Lane’s Lexicon এর বর্ণনায়, “an extract of a thing” বা কোনোকিছুর নির্যাস মানে “The clear or pure part…of a thing” বা কোনোকিছুর পরিষ্কার বা খাঁটি অংশ। অর্থ্যাৎ, প্রখ্যাত আরবী-ইংরেজী ডিকশনারি Lane’s Lexicon অনুযায়ী, তুচ্ছ পানির নির্যাস বা বীর্যের নির্যাস মানে তুচ্ছ পানির খাঁটি অংশ বা বীর্যের খাঁটি অংশ। আরও পরিষ্কার অর্থে বলতে গেলে বলতে হয়, “ক এর নির্যাস” মানে ক এর খাঁটি অংশ।

বীর্যের নির্যাস মানে যে স্বয়ং বীর্য নয়, বরং বীর্যের কিছু উপাদান, তার কোনো প্রমাণ নেই।     

আপনি এখন এই প্রশ্নটি করতেই পারেন যে, “কুরআন কেন “নির্যাস” শব্দটির ব্যাবহার না করে বললো না যে, মানুষকে এক তুচ্ছ তরল থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?” এই প্রশ্নের উত্তর হল, হ্যা কুরআন বলে, কুরআনের আয়াত ৭৭:২০ এ কুরআন এই কথা বলেছে।

77:20
اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ﴿ۙ۲۰﴾
আলাম নাখলুককুম মিম মাইম্মাহীন।
আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি দিয়ে সৃষ্টি করিনি?
77:21
فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ﴿ۙ۲۱﴾
ফাজা‘আলনা-হু ফী কারা-রিম মাকীন।
অতঃপর তা আমি রেখেছি সুরক্ষিত আধারে

কুরআনের আয়াত ৭৭:২০-২১ অনুযায়ী, এক তুচ্ছ পানি (যাকে আরবী শব্দ “মা’ইন” দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে) একটি সুরক্ষিত আঁধারে স্থাপিত হয়। এই আয়াতটি কুরআনের আয়াত ২৩:১৩ এর অনুরূপ, যা বলে “নুতফা” একটি সুরক্ষিত আঁধারে স্থাপিত হয়। এই বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে তোলে যে, কুরআনে “নুতফা” শব্দটি দ্বারা বীর্য বুঝানো হয়েছে।

23:13
ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ
ছুমমা জা‘আলনা-হু নুতফাতান ফী কারা-রিম মাকীন।
অতঃপর আমি তাকে বীর্য রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

সুতরাং, তথ্যপ্রমাণের আলোকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেই পারিঃ

  1. আরবী শব্দ ‘নুতফা’ দ্বারা ‘সামান্য পরিমাণ তরল’ বা ‘বীর্য’ বোঝায়।
  2. সূরা আল-ইনসানের ২ নং আয়াতে ‘নুতফাতিন আমশাজ’ দ্বারা নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন তরলের মিশ্রণ বোঝানো হয়েছে।
  3. কুরআনের ভ্রূণ বিকাশের নুতফা পর্যায়ে ভ্রূণ কেবলই সামান্য পরিমাণ তরল। আর একটি ভ্রূণকে কখনোই ‘সামান্য পরিমাণ তরল’ বলা যায় না। এটা কুরআনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক ভুল।

তথ্যসূত্রসমূহ

মমি, ফেরাউনের গল্প এবং বিজ্ঞান


মমি কি?

মমি হল প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সংরক্ষিত মৃতদেহ। এই সংরক্ষনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় মামিফিকেশন (mummification)। এখানে আমরা আলোচনা করব মিশরের মমি (কৃত্রিম মমি) সম্পর্কে বিশেষত ফেরাউন সম্পর্কে।

মমির ইতিহাস

প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই মিশরে মৃতদেহ মমি করার প্রচলন ছিল। খৃষ্ট জন্মের ২৬০০ বছর আগে প্রথম মমির মাধ্যমে মৃতদেহ সংরক্ষণ শুরু হয় বলে মনে করা হয়। এবং সেটা দু হাজারেও বেশি বছর ধরে চালু ছিল। (1)

কাদের দেহ মমি করা হত?

সাধারণত মিশরের ফারাওদের (ফেরাউন) দেহ মমি করা হত। (1) তবে ফারাও ছাড়াও রাজপরিবারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এমনকি সাধারন মানুষের দেহও মমি করার নজির আছে। তবে যেহেতু এটা একটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া তাই এটা সাধারন মানুষের সাধ্যের বাইরে ছিল। এছাড়া ধর্মীয় কারনে মানুষ ছাড়াও বানর,পাখি,বিড়াল এবং কুমিরের দেহ মমি করা হত। (2) (3)

মমি তৈরির প্রক্রিয়া

একজন প্রধান পুরোহিতের নেতৃত্বে মমি বানানো হত যার ধর্মীয় এবং মানুষের শরীরের এনাটমি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকত। প্রথম ধাপে মৃতের শরীর থেকে সব পচনশীল অংগ বের করে ফেলা হত যেগুলো সহজে পচে যায়। মাথার ঘিলু বের করা হত নাকের ফুটো দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি হুক দিয়ে। (এখনকার দিনেও ব্রেনের অনেক অপারেশন নাকের ফুটো দিয়ে যন্ত্র ঢুকিয়ে করা হয়)। এটা করতে যথেষ্ট সতর্কতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন,নাহলে সহজেই লাশের মুখ বিকৃত হতে পারে। এরপর পেটের বাদিক কেটে পেটের সব নাড়ি পাকস্থলী লিভার কিডনি বের করা হত। পেট দিয়েই ফুসফুস বের করা হত। শুধু হৃদপিন্ড রেখে দেয়া হত। কেননা তখনকার ধারনা ছিল হৃদপিণ্ড হল মানুষের ভাবনা বা বুদ্ধির কেন্দ্র। নাড়িভুঁড়ি বা অন্য অংগ যেগুলো বের করা হত সেগুলোও আলাদা পাত্র (Canopic Jar)করে মমির সাথেই সমাধিস্থ করা হত। অনেক মমিতে এই অংগগুলো মমির সাথেই আলাদা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার রাখা হয়েছে বিশেষত পরের দিকে মমির ক্ষেত্রে।
দ্বিতীয় ধাপে মৃতদেহ শুকানো হত ন্যাট্রন লবন (4) দিয়ে। ন্যাট্রন লবনের তাড়াতাড়ি শুকানোর অসাধারণ ক্ষমতা আছে তাই এটা দিয়ে দেহ ঢেকে রাখা হত আদ্রতা দূর করার জন্য। কিছু প্যাকেটে ন্যাট্রন লবন শরীরের মধ্যেও ঢুকিয়ে রাখা হত। পুরোপুরি শুকিয়ে যাবার পর ভেতর থেকে লবনের প্যাকেট বের করে নিয়ে হালকা করে ধুয়ে নেয়া হত। কিছু কিছু জায়গাতে কাপড়ের টুকরো গুজে দেয়া হত যেখানে কুকড়ানো থাকত। এরপর কাপড় জড়ানো হত। শতশত হাত কাপড়ের প্রয়োজন হত একটা মমিকে পুরোপুরি কাপড়ে মোড়ার জন্য। প্রতিটা আঙুল আলাদা কাপড়ে জড়ানো হত। বিভিন্ন গয়না রত্ন সামগ্রী দেয়া হত স্তরের মধ্যে এটা ভেবে যে এগুলো মৃতদেহকে খারাপ হওয়া থেকে বাচাবে। গাছের রেজিন স্তরে স্তরে ঢালা হত বিভিন্ন ধাপে। সবশেষে শেষ স্তরের কাপড় পেচিয়ে মমিকে সম্পূর্ণ করা হত। মমিকে আসল দেখানোর জন্য নকল চোখ বসিয়ে দেয়া হত।
একদিকে যেমন পুরোহিত মৃতদেহকে তৈরি করত অন্যদিকে অসংখ্য মানুষ মমির জন্য সমাধি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকত। (1)

মমি নিয়ে কিভাবে গবেষণা হয়েছে?

মমি এবং সমাধির গায়ে লেখা লিপি উদ্ধার করে যেমন মৃতের সম্পর্কে অনেক তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে তেমনি এক্স রে সিটি স্ক্যান ইমেজ থেকে মমিকে কাটাছেঁড়া না করেই সে কবে মারা গেছিল, কত বয়সে মারা গেছিল সব জানা যায়। দেহের টিস্যু পরীক্ষা করে মৃত্যুর কারন জানা গেছে বেশিরভাগ মমির। থ্রিডি ইমেজ ব্যভার করে মমি কেমন দেখতে ছিল সেটাও এখন পুনর্গঠন করে দেখা সম্ভব হয়েছে। (5)

দ্বিতীয় রামেসিস কি কোরানে বর্ণিত ফেরাউন?

প্রথমত ফেরাউন কারো নাম নয় এটা মিশরের রাজাদের উপাধি (নবাব বা মুঘল সম্রাট যেমন উপাধি)। দ্বিতীয় রামেসিস মিশরের ফারাওদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন এজন্য তাকে বলা হয় রামেসিস দ্যা গ্রেট। ৬৬ বছর শাসন করে ৯০ বছর বয়সে উনি মারা গেছিলেন। মানে বৃদ্ধ বয়সে দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যু হয় যেটা কোরানের সাথে মেলে না। মৃত্যুর কারন কি ছিল? মমি পরীক্ষায় জানা গেছে উনি মারা গেছিলেন বার্ধক্যজনিত আরথ্রাইটিস এবং আরট্রাইটিস সাথে খারাপ দাঁতের সংক্রমণজনিত কারনে। যেটা কোরানের সাথে অমিল। দ্বিতীয় রামেসিসের উচ্চতা ছিল পাচফুট সাত ইঞ্চি। (6)

দ্বিতীয় রামেসিসের মমি কোথায় পাওয়া গেছিল?

উনাকে প্রথমে KV7 নামের সমাধিতে রাখা ছিল। ডাকাতির (রত্ন সামগ্রীর লোভে প্রচুর চুরি ডাকাতি হত) জন্য সেখান থেকে উনার মমি আরেক সমাধিতে নিয়ে যায় হয়। ৭২ ঘন্টা পর সেখান থেকে আবার TT320 নামের সমাধিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব ঘটনা দ্বিতীয় রামেসিসের গায়ে জড়ানো কাপড়ে লেখা হায়ারোগ্লিফিক্স লিপি থেকে জানা গেছে। এই তথ্যো কোরানের বিপরীত। (6)

দ্বিতীয় রামেসিস এর মমি ফ্রান্সে কেন নেওয়া হয়েছিল?

১৯৭৪ সালে ইজিপ্টোলজিস্টরা বুঝতে পারেন যে মমিটি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই সেটাকে পরীক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়। (7)
১৯৭৫ সালে মমির ফরেন্সিক পরীক্ষা করেন ফরবন্সিক বিভাগের প্রধান পিয়ারে ফার্নাড সিকাল্ডি। দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যুর কারন সেই পরীক্ষাতেই উঠে আসে।

রামেসিসের মমিতে লবন কি সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুর জন্য?

আগেই বলা হয়েছে সব মমি ন্যাট্রন লবন দিয়েই শুকানো হত (নোনা মাছ যেমন লবন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়)। দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যু কি সমুদ্রে ডুবে হবার কোন সম্ভাবনা আছে? এক কথায় না। মিশরের শ্রেষ্ঠ সম্রাট যদি এভাবে মারা যেতেন তাহলে তার দলিল থাকত। ৯০ বছরের বৃদ্ধ রাজা যার আরথরাইটিস এবং আর্ট্রাইটিস ছিল তিনি যুদ্ধ করতে করতে মারা যাবেন সমুদ্রে ডুবে সেটা নেহাত গল্পে সম্ভব।

তথ্যসূত্রঃ

(1) Egyptian Mummies
(2) Mummied Ibis
(3) Falcon-Shaped Wooden Coffin, With Falcon Mummy
(4) Natron
(5) Egyptian mummy CT scan video, Smithsonian’s National Museum of Natural History
(6) Ramesses II
(7) Ramesses the Great By John Ray


কোরআন এবং বীর্যের উৎস


ভূমিকা

কুরআনের সূরা তারিকের ৫ থেকে ৭ নং আয়াত বলে, বীর্য নির্গত হয় বা আসে মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। কুরআনের এই কথাটি কুরআনের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক ভুল হিসেবে সমালোচিত। কুরআনের এই কথাটি ভুল নয় প্রমাণ করতে ইসলামিস্টরা এপর্যন্ত বেশকিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য কুরআনের এই বক্তব্যটি পর্যালোচনার মাধ্যমে বাস্তবতা উপস্থাপন করা।

আয়াত সমূহ

সূরা আত-তারিক আয়াত ৫
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ
ফালইয়ানযুরিল ইনছা-নুমিমমা খুলিক।
অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।

সূরা আত-তারিক আয়াত ৬
خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ
খুলিকা মিমমাইন দা-ফিকি।
সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।

সূরা আত-তারিক আয়াত ৭
يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
ইয়াখরুজুমিম বাইনিসসুলবি ওয়াত্তারাইব।
এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।

বীর্য নাকি অন্যকিছু?

উপরে উল্লেখিত আয়াত সমূহ পড়লে আমরা জানতে পারি যে, কুরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে সৃষ্টি করা হয় দ্রুতবেগে নির্গত তরল থেকে যা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। এখানে সবেগে স্খলিত পানি বা দ্রুতবেগে নির্গত তরল বলতে নিঃসন্দেহেই বীর্যকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, এখানে মানুষ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় একজন মানুষের মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে আসা এমন এক তরল পদার্থের কথা বলা হয়েছে যা থেকে আরেকজন মানুষ বা সন্তান সৃষ্টি হয়। এখানে মানবদেহের এক প্রকার তরলকে সন্তানের উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং সন্তানের উৎসের সাথে জড়িত তরল অবশ্যই মানবদেহের যৌন তরল হবে, যা বীর্য। অতএব, উপরে উল্লেখিত আয়াত সমূহে সবেগে স্খলিত পানি বলতে নিঃসন্দেহেই বীর্য বুঝানো হয়েছে। তাই সরাসরি বীর্য লেখা হয়নি বলে বীর্য বুঝানো হয়নি এমনটা ভাববার কোনো সুযোগ নেই।

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা

ব্যাখ্যা ১ – মানুষ দ্রুতবেগে নির্গত পানি বা নারী-পুরুষের বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়। পুরুষের বীর্য নির্গত হয় তার মেরুদণ্ড থেকে এবং নারীর বীর্য নির্গত হয় তার বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। নারী-পুরুষ উভয়ের বীর্যের মিশ্রণ থেকে সন্তান জন্ম নেয়। (ইবনে কাসির, তাবারী, জালালাইন, খোমেনী, যামাখশারী)

ব্যাখ্যা ২ – আয়াতটি কেবল পুরুষের বীর্যের কথাই বলছে, যা তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে নির্গত হয়। (কুরতুবী, কাইয়িম, উসাইমীন, সাদী)

মন্তব্য

কুরআনে আলোচ্য আয়াতটি যদি এটি বুঝিয়ে থাকে যে, পুরুষের বীর্য নির্গত হয় তার মেরুদণ্ড থেকে এবং নারীর যৌন তরল নির্গত হয় তার বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে, তাহলে আয়াতটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। একজন পুরুষের বীর্য তার মেরুদণ্ড থেকে নির্গত হয় না। আর একজন নারীর বুকের পাঁজর থেকে প্রজনন সম্পর্কিত কোনোকিছুই নির্গত হয় না।

একইভাবে, আয়াতটি যদি এটি বুঝিয়ে থাকে যে, একজন পুরুষের বীর্য তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে নির্গত হয়, তাহলেও আয়াতটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। একজন পুরুষের বীর্য না তার মেরুদণ্ড বা বুকের পাঁজর থেকে বেরিয়ে আসে, না এমন কোনো অঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে যা তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে অবস্থিত।

মানুষের বীর্য চারটি গ্রন্থির উৎপাদিত বস্তু দ্বারা গঠিত : অন্ডকোষ শুক্রাণু বা পুংজননকোষ উৎপাদন করে, সেই শুক্রাণু যে তরলে বাহিত হয় তা আসে সেমিনাল ভেসিকল, প্রোস্টেট গ্রন্থি এবং বালবোইউরেথাল গ্রন্থি থেকে। এই ভিডিওটি খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেঃ              

মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের ব্যাখ্যা সমূহ

সুলব শব্দটির নানা অর্থ রয়েছে, যেমনঃ কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়। শব্দটি দ্বারা মেরুদণ্ডের যেকোনো অংশও বোঝায়, বিশেষভাবে কটিদেশীয় অংশ বা কোমর। আর কোমর সেক্স অরগ্যান বা যৌন অঙ্গসমূহের একটি ইউফেমিজম (শ্রুতিকটু পদের পরিবর্তে কোমলতর পদের প্রয়োগ)।

প্রখ্যাত আরবী-ইংরেজী ডিকশনারি Len’s Lexicon অনুযায়ী ‘সুলব’ শব্দটির অর্থ সমূহ হচ্ছেঃ কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়, মেরুদণ্ড, পিঠের একটি অংশ, কশেরুকা ধারণকারী পিঠের যেকোনো অংশ, কটিদেশীয় অংশ বা কোমর। (1)

এখন কথা হলো, কুরআনের আয়াতটিতে যদি ‘সুল্‌ব’ শব্দটি দ্বারা আসলেই ‘কোমর’ বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে কি কুরআনের আয়াতটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়? অবশ্যই নয়।

অ্যাপোলজিস্টদের এই ব্যাখায় সমস্যা হলো এই যে, ইংরেজি ভাষাতেই ‘কোমর’ শব্দটি দ্বারা কোমল বা পরোক্ষ অর্থে প্রজনন অঙ্গ সমূহ বোঝায়, আরবি ভাষায় নয়। অ্যাপোলজিস্টরা এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন না যা নিশ্চিত করে যে প্রাচীন আরবরা ‘কোমর’ শব্দটি দ্বারা কোমল বা পরোক্ষ অর্থে প্রজনন অঙ্গ সমূহ বোঝাতো।

Oxford English Dictionary অনুসারে Loins (কোমর) শব্দটির প্রাইমারি ডেফিনেশন (2) নিচে তুলে ধরা হলোঃ

বীর্য 2

শব্দটির সেকেন্ডারি ডেফিনেশন অনুযায়ী, শব্দটি যৌনাঙ্গ বা লজ্জা স্থান সমূহের জন্য একটি ইউফেমিজম (কোমল বা পরোক্ষ অর্থের প্রকাশ)। Oxford English Dictionary ও Online Etymology Dictionary (3) উভয় ডিকশনারিই তা নিশ্চিত করে:

বীর্য 4

ইউফেমিস্টিক সংজ্ঞাটি বর্ণনা করা হয়েছে ‘কারো যৌনাঙ্গ বা লজ্জা স্থান সমূহ’ হিসেবে, যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় উদ্ভূত হয়। কোনো ইংরেজি শব্দের ষোড়শ শতাব্দীর সময় জন্ম হওয়া একটি সংজ্ঞাকে সপ্তম শতাব্দীতে ব্যাবহৃত হওয়া একটি আরবী শব্দের ওপর আরোপ করা অত্যন্ত হাস্যকর।

তারায়িব শব্দটির অর্থ বুকের হাড়, বুকের পাঁজর অথবা শ্রোণী ঘোর। আর নারী জননকোষ শ্রোণী ঘোর অঞ্চল থেকে আসে।

‘তারায়িব’ শব্দটির অর্থ যে ‘শ্রোণী ঘোর’, তার কোনো নির্ভরযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। আরবি-ইংরেজি ডিকশনারি Lane’s lexicon অনুযায়ী ‘তারায়িব’ শব্দটির অর্থসমূহ হচ্ছেঃ বুকের হাড়, বুকের হাড় যা কণ্ঠা এবং স্তনের বোঁটার মধ্যে অবস্থিত, বুকের সেই অংশ যা দুই কণ্ঠার নিচে অবস্থিত, দুই স্তন এবং কণ্ঠার মধ্যবর্তী অংশ, বুকের ডান পাশের চার পাঁজর এবং বাম পাশের চার পাঁজর, দুই হাত এবং দুই পা এবং দুই চোখ, দুই কণ্ঠার নিচে অবস্থিত দুই পাঁজর। তবে, বেশিরভাগ শব্দবিজ্ঞানী ‘বুকের হাড়’ অর্থটিকেই সঠিক অর্থ বলেছেন। (4)

‘বুকের হাড়’ অর্থটিই ‘তারায়িব’ শব্দের সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য অর্থ হতে পারে। কেননা, আরবী ভাষায় এবং আরবী কাব্যে সেটাই সুপরিচিত ব্যবহার। (5)

এছাড়াও, একটি শব্দ দ্বারা যদি একই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুটি স্বতন্ত্র পরিভাষা নির্দেশ করা হয়, তাহলে ভাষার উদ্দেশ্য কি? ধরা যাক, কিছু ব্যক্তি শনিবার আর বুধবারকে “মজাবার” বলে সংজ্ঞায়িত করে। গড়বড় তৈরি করা ছাড়া এমন একটি শব্দের উদ্দেশ্য আর কি হতে পারে? “এই মজাবারে আমার জন্মদিন” এরকম বাক্যের জন্য সবসময়ই আরও ক্ল্যারিফিকেশন প্রয়োজন হবে। আর তাই এটা অনুমান করা অর্থহীন যে এরকম শব্দের অস্তিত্ব আদৌ আছে।

আধুনিক দেহতত্ত্ব অনুযায়ী, বীর্যের প্রধান উৎস হলো সেমিনাল ভেসিকল থেকে আসা তরল আর এই ভেসিকল সমূহ মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যেই পড়ে।” (খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরা হলে)

এখানে প্রশ্ন এসে যায়, ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরে ব্যাখ্যা করা গ্রহনযোগ্য কিনা। এভাবে ব্যাখ্যা করলে ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি দ্বারা হাত পা ও মাথা বাদে পুরো শরীরেরই ভেতরের অংশকে নির্দেশ করা যাবে। নিচের চিত্রটি দেখুন:

বীর্য 6

হ্যাঁ অ্যাপোলজিস্টরা এই ব্যাখাটি ব্যবহার করে দাবি করতে পারেন যে সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতটি সঠিক। তবে এই ব্যাখাটি কুরআনের আয়াতটিকে আরও বেশি সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়, কেননা এই ব্যাখাটি আয়াতটিকে অত্যন্ত অস্পষ্ট একটি আয়াত হিসেবে প্রমাণ করে।

ধরা যাক, কোনো স্কুলে গণিত পরীক্ষা হচ্ছে এবং সেই পরীক্ষার একটা প্রশ্ন হলো, ‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ রাশেদ নামে একজন ছাত্র এই প্রশ্নের উত্তর লিখলো ‘কোনো এক সংখ্যা’, আবার শফিক নামে একজন ছাত্র উত্তর লিখলো ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ এবং শ্রাবণী নামে একজন ছাত্রী উত্তর লিখলো ‘৭৩৬১৩’।

‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ এই প্রশ্নের একেবারে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো ‘৭৩৬১৩’। তবে কি রাশেদ আর শফিকের উত্তর সঠিক নয়? হ্যাঁ তাদের উত্তরও সঠিক। ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যাই। তাই কেউ যদি রাশেদের মতো বলে ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি ‘কোনো একটি সংখ্যা’, তাহলে ভুল কিছু বলা হয় না। আবার, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যাও। তাই কেউ যদি শফিকের মতো বলে ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’, তাহলেও ভুল কিছু বলা হয় না। রাশেদ আর শফিকের পরীক্ষার খাতা যে শিক্ষক দেখবেন তিনি কি তাদের এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক বলে গ্রহণ করবেন এবং মার্কস দেবেন? অবশ্যই নয়, কোনো যুক্তিবাদী শিক্ষকই এমনটা করবেন না। কেন করবেন না? কারণ রাশেদ আর শফিকের উত্তরটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন গ্রহণযোগ্য নয়? কারণ, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যা হলেও সকল সংখ্যাকেই ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বলা যায়। আবার, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যা হলেও এমন সংখ্যার কোনো শেষ নেই যাদের ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা যায়। তাই ‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ প্রশ্নটির উত্তরে ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বা ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা হলে তা হবে খুবই অস্পষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য উত্তর!

একই সমস্যা কুরআনের আয়াতেও এসে পড়ে যদি সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতের ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরে ব্যাখ্যা করা হয়। এভাবে ব্যাখ্যা করলে ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি দ্বারা হাত পা ও মাথা বাদে একজন মানুষের পুরো শরীরের ভেতরটাই নির্দেশ করা যায়। একজন পাঠকের এখানে বোঝার কোনো কায়দা নেই যে বীর্য আসলে দেহের কোথায় থেকে বের হয়ে আসে। এখানে এটা বোঝারও কোনো কায়দা নেই যে কুরআনের লেখক আসলেই জানেন কিনা যে একজন মানুষের বীর্য তার দেহের ঠিক কোন জায়গা থেকে বের হয়ে আসে।

তথ্যসূত্র:

  1. Sulb” Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban 1968. Vol.4, page 1712
  2. “loin, n.” The Oxford English Dictionary. 2nd edition, 1989; online version June 2012.
  3. “Loin”. Online Etymology Dictionary.
  4. Taraib Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban 1968 Vol 1 page 301
  5. Commentary on the verse “He is created from a water gushing forth, Proceeding from between the back-bone and the ribs” (at-Taariq 86:6-7) – Islam Questions And Answers.

সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান?


এ আর্টিকেলটি কোরআনের দাবি ‘সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট’ ভুল প্রমাণ করাসহ এ বিষয়ে মুসলিমদের দাবি সমূহ খন্ডন করে।

ইসলামের এপোলোজিস্টগণের দাবি

জোড়ায় জোড়ায় জীবন্ত বস্তু
সাম্প্রতিক সকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের একটি আবিষ্কার হলো, আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান, যেমন : জীবন্ত জিনিসে নারী ও পুরুষ জোড়া।
কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন : আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। ( সূরা যারিয়াত : আয়াত ৪৯ )
ইউসুফ আলী বলেন, “সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান : প্রাণী ও উদ্ভিদের লিঙ্গ যার দ্বারা একে অপরের পরিপূরক। দিন এবং রাত, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি, আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল এবং আরও অনেক বিপরীত বস্তু, যারা প্রত্যেকে তাদের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করছে এবং আল্লাহ্‌র মহাবিশ্বের কার্যে ভূমিকা রাখছে। ভালোবাসা এবং বিতৃষ্ণা, কৃপা এবং বিচার, সংগ্রাম এবং বিশ্রাম এরকম আরও অনেক আছে, সবকিছুই আল্লাহ্‌র শিল্পকৌশল এবং অপূর্ব উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করছে। সবকিছুরই প্রতিরূপ, অথবা জোড়া, কিংবা পূরক রয়েছে। কেবল আল্লাহ্‌ই এক, তার মতো কেউ নেই, না তার কোনো পূরক প্রয়োজন।”
Qur’an and Science: all things in pairs
Dr. Ibrahim B. Syed, Islamic Research Foundation International, Inc

উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, নারী এবং পুরুষ
আগে মানুষ জানতেন না যে, উদ্ভিদের মধ্যেও নারী পুরুষ পার্থক্য রয়েছে। উদ্ভিদবিদ্যা বলে, প্রত্যেক উদ্ভিদেরই একটি স্ত্রীলিঙ্গ এবং একটি পুংলিঙ্গ রয়েছে। এমনকি একলিঙ্গ উদ্ভিদেরও নারী এবং পুরুষ উভয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র অঙ্গ রয়েছে।
“তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।” ( আল কোরআন ২০:৫৩ )
ফলমূল জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, নারী এবং পুরুষ
“তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।” ( আল কোরআন ১৩:৩ )
উচ্চতর উদ্ভিদের প্রজননের শেষ ফলাফল হলো ফল। ফলের পূর্ববর্তী পর্যায় হলো ফুল, যার পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গের অঙ্গ রয়েছে (পুংকেশর ও ডিম্বক)। পরাগ ফুলে বাহিত হলে তা গর্ভে ফল ধারণ করে, যা পূর্ণবর্ধিত হয় এবং বীজ মুক্ত করে। অতএব সকল ফল পরোক্ষভাবে স্ত্রী ও পুং অঙ্গসমূহের অস্তিত্ব প্রকাশ করে, এটি একটি বাস্তবতা যা কোরআনে প্রকাশ পেয়েছে। কিছু প্রজাতির ফল নিষিক্ত নয় এমন ফুল থেকেও আসতে পারে, যেমন : কলা, এক ধরণের আনারস, ডুমুর, কমলা ইত্যাদি। তাদেরও লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে।
সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট
“আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।” ( আল কোরআন ৫১:৪৯ )
আয়াতটি মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ফল ছাড়া অন্যান্য জিনিস বুঝিয়েছে। এটি সরাসরি ইন্দ্রিয়গোচর বস্তু বা ব্যাপারও বুঝাতে পারে, যেমন : বিদ্যুৎ যার মধ্যে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জে চার্জিত ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত পরমাণুসমূহ বিদ্যমান।
“পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।” ( আল কোরআন ৩৬:৩৬ )
কোরআন এখানে বলছে, সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট। এমনকি সেইসব জিনিসও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট যা সম্পর্কে মানুষের বর্তমানে কোনো জ্ঞান নেই এবং ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত হতে পারে।
The Qur’aan and Modern Science: Compatible or Incompatible?
Dr. Zakir Naik, Islamic Research Foundation

আবার, অনেকে দাবি করেন, ম্যাটারের পূরক এন্টিম্যাটারের অস্তিত্ব ‘সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট’ আয়াতসমূহ বিশেষভাবে ৪৩:১২, ৫১:৪৯ এবং ৩৬:৩৬ এর ন্যায্যতা প্রমাণ করে। কোরআনের আয়াত ৩৬:৩৬ এর ‘যা তারা জানে না’ অংশ অনুমান-অনুসারে পার্টিকল ফিজিক্সে আমাদের আধুনিক জ্ঞান নির্দেশ করে।

ব্রিটিশ পদার্থবিদ্যাবিৎ পল ডিরাক যিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে ম্যাটার জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, তিনি ১৯৯৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী হয়েছিলেন। এই আবিষ্কার ‘সমতা’ নামে পরিচিত, যা ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার নামে দ্বৈত প্রকাশ করেছিলো। এন্টিম্যাটার ম্যাটারের বিপরীত স্বভাব ধারণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যাটারের বিপরীত, এন্টিম্যাটার ইলেকট্রন পজিটিভ এবং প্রোটন নেগেটিভ।

আলোচ্য আয়াতসমূহ

13:3
وَهُوَ الَّذِى مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوٰسِىَ وَأَنْهٰرًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِى الَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

36:36
سُبْحٰنَ الَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি মাটি হতে উৎপন্ন উদ্ভিদ, স্বয়ং মানুষ এবং ওরা যাদের জানেনা, তাদের সকলকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন।

43:12
وَالَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعٰمِ مَا تَرْكَبُونَ
আর যিনি সব কিছুই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও গৃহপালিত জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ কর,

51:49
وَمِن كُلِّ شَىْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।

অনেকে দাবি করে থাকেন, এসকল আয়াতের সকল আয়াত বলে না, ‘সকল জীব’ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট। তারা কখনো আক্ষরিক আবার কখনো রূপকশোভিত অর্থ গ্রহণ করেন যখন যা ব্যাখ্যায় সুবিধাজনক।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা দাবি করেন, আয়াত ১৩:৩ কেবলমাত্র ফল নির্দেশ করেছে, অথবা আয়াত ৩৬:৩৬ কেবল উদ্ভিদ নির্দেশ করেছে। যাইহোক, আয়াত ৪৩:১২ এবং ৫১:৪৯ একেবারে সহজবোধ্য করে প্রকাশ করে যে, আল্লাহ্‌ সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এতে কোনো অনিশ্চয়তার ছাপ নেই।

অনেক মুসলিম আবার নিজের মনকে বুঝ দেন এভাবে যে, এসকল আয়াতে ‘জোড়ায় জোড়ায়’ বলতে নারী ও পুরুষ জোড়া বুঝানো হয়নি, বরং কেবল ‘দুটো’ বুঝানো হয়েছে। এমন ধারনা যে একেবারেই ভুল এবং কোরআনে ‘জোড়ায় জোড়ায়’ বলতে যে নারী পুরুষ জোড়া বা বিপরীত বস্তুদ্বয় বুঝানো হয়েছে যা একে অপরের পূরক তার প্রমাণ আমরা কোরআন থেকেই পাই।

53:45
وَأَنَّهُۥ خَلَقَ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰ

আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী

75:39
فَجَعَلَ مِنْهُ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰٓ
অতঃপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়া জোড়া নর ও নারী।

বিশ্লেষণ

আলোচ্য বিষয়ে ইসলামের এপোলোজিস্টদের দাবি খন্ডন করা খুবি সহজ ব্যাপার। আপনাকে কেবল দেখাতে হবে যে, সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান নয়।

কোরআন অযৌন জীব বাদ দিয়েছে

অনেক জীবের মধ্যেই অযৌন জনন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে আছে অধিকাংশ উদ্ভিদ, প্রোটিস্ট (যেমন, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, এককোষী জলজ উদ্ভিজ্জ এবং ছত্রাক) এবং অনেক অমেরুদন্ডী প্রাণী (যেমন, ফিতাকৃমি)। (1)

অযৌন জন্মদায়ক জীবের অন্যান্য উদাহরণ হলো হাইড্রা, অনেক নিম্নতর উদ্ভিদ (যেমন, ফার্ন)। কিছু জীব পুনরুৎপাদন করতে সামর্থ্য রাখে যা একটি বিশেষ ধরণের অযৌন জনন, যেমন : তারা মাছ, পলিপ, জেব্রাফিশ, গোধা এবং স্যালামান্ডার। অনেক উদ্ভিদ পুরো পুনরুৎপাদন করতে সামর্থ্য রাখে। প্রাণীদের মধ্যে প্রাণীর গঠন যতো নিম্নতর হবে পুরো পুনরুৎপাদন করতে ততো সমর্থ হবে। কোনো মেরুদন্ডী প্রাণীর এ সামর্থ্য নেই। পুনরুৎপাদন জায়মান জননের স্বজাতীয়, যা জীবের বিভিন্ন অংশ দ্বারা একটি নতুন স্বতন্ত্রের গঠন। সামুদ্রিক স্কোয়ার্টের মত ঔপনিবেশিক আচ্ছাদিতরাই সর্বোচ্চ প্রাণী যাদের বর্ধনশীল প্রজনন ঘটে, যারা আসলে উদ্ভিদের মত।

(বিঃদ্রঃ হাইড্রা এবং জেলিফিশ এবং আরও অনেক অযৌন জীব যৌন জননের সামর্থ্য রাখে। তবে অনেক সাধারণ জীব যেমন : ব্যাকটেরিয়া, ইষ্ট এবং ছত্রাক একেবারেই অযৌন।)

কোরআন উভলিঙ্গদের বাদ দিয়েছে

উদ্ভিদসহ কিছু জীব আছে যারা একেবারেই উভলিঙ্গ। যেমন : স্পঞ্জ, শামুক এবং গভীর সমুদ্রের এক ধরণের ক্রিমি পুরোপুরিভাবে উভলিঙ্গ, যার অর্থ তাদের দেহে উভয় ধরণের লিঙ্গ বিদ্যমান। (2)

কিছু জীব তাদের জীবনচক্রে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। যেমন : শক্ত খোসা বিশিষ্ট ঝিনুক পুরুষ হিসেবে জন্ম নেয় ও বেড়ে ওঠে, আবার পরবর্তীতে তাদের অর্ধেক নারীতে পরিণত হয়। তারা প্রত্যেক ঋতুতে পুরুষ হিসেবে আসে তবে পরবর্তীতে তাদের প্রায় সকলেই এমবিসেক্সুয়ালিটির একটি ধাপ অতিক্রম করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীরে পরিণত হয়। কিছু প্রজাতি পরিবেশের ওপর নির্ভর করে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। যদি মোটাসোটা অল্পবয়স্ক নারী পরবর্তীতে অপুষ্ট হয় তাহলে তারা আবার নিজেদের পুরুষে পরিণত করে। কিছু মাছ অনায়াসে নিজেদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে, যেমন : কিছু গ্রাউপার।

কিছু মুসলিম দাবি করেন, উভলিঙ্গ জীব মূলত একটি নারী-পুরুষ জোড়া কেননা তাদের মধ্যে উভয় প্রকার লিঙ্গ বিদ্যমান। এ দাবিটি একেবারেই ভুল, কেননা উভলিঙ্গের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি উভলিঙ্গ জীব একইসাথে নারী ও পুরুষ। এমনকি তারা যদি কেবল এক লিঙ্গ দ্বারা যৌন ক্রিয়াকলাপ করে তাহলেও তাদের দাবিটি ভুল কেননা তারা নারী কিংবা পুরুষ নয়, তারা একইসাথে নারী পুরুষ উভয়ই।

কোরআন পার্থেনোজেনেটিক জীব বাদ দিয়েছে

‘যৌনসংসর্গ ব্যতীত সন্তানজন্ম’ প্রজননের একটি রূপ, যাতে ডিম্বাণু একটি নতুন স্বতন্ত্রে বিকশিত হয় নিষেক ছাড়াই। প্রাকৃতিক যৌনসংসর্গ ব্যতীত সন্তানজন্ম অনেক নিম্নতর জীবে পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পোকামাকড়ে।

মনে রাখতে হবে, জাবপোকা, মৌমাছি এবং পিপড়া প্রকৃত পার্থেনোজেনেটিক জীব নয়, কেননা তারা যৌন জননে সামর্থ্য রাখে।

যাইহোক, মুহাম্মদ হয়ত জানতেন না যে ১৫ প্রজাতির হুইপটেইল টিকটিকি পুরোপুরি পার্থেনোজেনেটিক, যেমন : Cnemidophorus tigris ও C. neomexicanus. (3)

কোরআন সিজোফিলাম কমিউন বাদ দিয়েছে

সিজোফিলাম কমিউন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছত্রাক, যা এন্টার্কটিকা বাদে সকল মহাদেশে দেখা যায়। এটির ২৮ হাজারেরও বেশি স্বতন্ত্র লিঙ্গ রয়েছে। (4)

লিঙ্গের সংখ্যাধিক্য অ-সহোদর এবং অনাত্মীয় মিলনকে উৎসাহিত করে, যা জনসংখ্যার মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে।

এমন অন্যান্য ছত্রাকসহ এই প্রজাতি আয়াত ৩৬:৩৬ এর জন্য একটি দারুণ বিপরীত উদাহরণ। কেননা এমন অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের কোনো যুগল নেই।

জেনে রাখুন, কিছু অনুবাদ মূল আরবিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমন, কিছু অনুবাদ আয়াতটির অর্থ দাঁড় করায়, ‘সকল যুগল যা মাটি হতে উৎপন্ন’ অথচ আয়াতটি বলে, ‘মাটি থেকে উৎপন্ন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়’। এধরণের চালাকি সরাসরি আয়াত ১৩:৩ এবং ৫১:৪৯ এর সাথে সংঘর্ষ করে।

চীনা ইন ইয়াং দ্বৈত ধারনা

কিছু এপোলোজিস্ট দাবি করেন, কোরআনের ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ বিষয়ক আয়াতসমূহ বিশেষভাবে আয়াত ৩৬:৩৬ ম্যাটার এন্টিম্যাটার সম্পূরক সমূহ নিয়ে আমাদের আধুনিক জ্ঞান নির্দেশ করে। কিছু সমালোচক ম্যাটারের তুলনায় এন্টিম্যাটারের অল্পতা হাইলাইট করে জবাব দেন। (5) যেহেতু বিগ ব্যাং এর প্রথম সেকেন্ডে অধিকাংশ এন্টিম্যাটার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

আবার, অনেকে দাবি করতে পারেন, এন্টিম্যাটারের অস্তিত্ব কোরআনের ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ বিষয়ক আয়াত সমূহ অলৌকিক প্রমাণ করে। কেননা সপ্তম শতাব্দীর একজন সাধারণ মানুষ ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটারের ব্যাপারে কিভাবে জানবে?

যাইহোক, প্রাচীন চীনদেশবাসী আগেই সকল সৃষ্টির দ্বৈত ধারনায় বিশ্বাস করতেন। এই দ্বৈত নীতি ‘ইন এবং ইয়াং’ নামে পরিচিত, যা তাওবাদী বিশ্বাস ব্যবস্থার অংশ। যাইহোক, সকল যুক্তিসঙ্গত নির্ণয় নির্দেশ করে যে এসব ইসলামের ২৫০০ বছর আগেই প্রচলিত ছিল। (জেনে রাখুন, ইন ইয়াং চিহ্ন খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ সালের আগে প্রচলিত ছিলো এবং সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জে অস্তিত্বশীল ছিলো, তবে ইন ইয়াং নীতি আরও অনেক আগে প্রচলিত ছিলো।)

খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৯৮ সাল থেকে ২৫৯৮ সাল পর্যন্ত শাসন করা এবং হান চীনাদের পূর্বপুরুষ লিজেন্ডারি চীনা সম্রাট কালচারাল বীর হলুদ সম্রাট বলেছেন, ‘ইং এবং ইয়াং এর নীতি পুরো মহাবিশ্বের মূল। এটি প্রত্যেক সৃষ্টির অধীন। এটি অভিভাবকত্বের অগ্রগতি নিয়ে আসে। এটি জীবন এবং মৃত্যুর মূল ও উৎস। (6)

ইন ইয়াং বিষয়ক নিচের উদ্ধৃতি দুটি দেখায় যে বিষয়টি বোধহয় ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার সম্পূরক সমূহ পর্যন্ত বিস্তৃত :

‘প্রতিরূপ’ এবং ‘বিরুদ্ধ’ একে অপরের বিপরীত, তারা একটি সৃজনশীল বল গঠনে একে অপরের পূরক, আসমান এবং ফলমূলসহ পৃথিবী যার পণ্য। (7)

সুতরাং, কোরআনের জন্য পরিচিত অপরিচিত সবকিছু ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ দাবি করা অলৌকিক নয়, কেননা ইসলামের ২৫০০ বছর আগেই চীনা মানুষরা একইধরনের দ্বৈত নীতিতে বিশ্বাস করতেন।

উপসংহার

  • নবী মুহাম্মদের কাছে কোনো অণুবীক্ষণযন্ত্র কিংবা জীববিদ্যা পাঠ্যপুস্তক ছিলো না, তাই তার অযৌন জীব, পার্থেনোজেনেটিক জীব, উভলিঙ্গ জীব এবং সিজোফিলাম কমিউন নিয়ে কোনো ধারনা ছিলো না।
  • তার জন্য স্ত্রী ও পুং লিঙ্গের মানুষ, কুকুর, উট পর্যবেক্ষণ করা খুব সহজ ছিলো, তবে ছোটো জীব নিয়ে তার কোনো ধারনা ছিলো না এবং তিনি তার বিশ্বাসে ভুল ছিলেন যে, সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান।
  • অযৌন জীব, উভলিঙ্গ জীব, পার্থেনোজেনেটিক জীব এবং সিজোফিলাম কমিউনের ওপর নির্ভর করে ‘কোরআনের আল্লাহ্‌ সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন’ বিষয়ক আয়াত সমূহ ভুল প্রমাণিত হয়।

References

1. David Pratt, “Sex and Sexuality (part 1)“, Exploring Theosophy, April 2002 .
2. David Pratt, “Sex and Sexuality (part 2)“, Exploring Theosophy, April 2002.
3. Parthenogenesis – Wikipedia, accessed September 7, 2010
4. Prof. Tom Volk, “Schizophyllum commune, the split gill fungus“, University of Wisconsin, February 2000.
5.  Quennel Gale, “Does Science really prove the Quran? Part 2 “A refutation to answering-christianity’s ‘Earth in Islam'””, Answer Islam, accessed February 14, 2011.
6.  Ray Wood, “Yin and Yang“, Taichido, accessed February 14, 2011
7.  J. Dominguez, M.D, “Religions in China“, Religion-Cults, September 11, 2004


Popular posts from this blog

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ?

  ভূমিকা আজকের প্রবন্ধে আমরা যেই বিষয়গুলোর দিকে আলোকপাত করবো, তা হচ্ছে, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ নামক ইসলামী কেতাব লেখক এবং ইসলাম সম্পর্কে কেতাবটির লেখক যেসকল মিথ্যাচার করেছেন, সে সম্পর্কে। প্রকাশিত ঐ বইটির পাতায় পাতায় যেই বিপুল পরিমাণ মিথ্যাচার এবং হাস্যকর  সব কুযুক্তি  দেয়া হয়েছে, আমি শুধুমাত্র তার অল্পকিছু উদাহরণ তুলে ধরবো। উল্লেখ্য, আরিফ আজাদের কেতাবে খোদ ইসলাম ধর্মকেই আরিফ আজাদ এমনভাবে ধর্ষন করেছেন, যা পড়ে বোঝা মুশকিল যে, এটি কোন ছদ্মবেশি নাস্তিকের ইসলামকে অপদস্থ করার জন্য লেখা নাকি ইসলামপন্থী কারোর। কারণ ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান এই কেতাবে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়ত অনুসারে এই কাজ সরাসরি কুফরি এবং এই কুফরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল (সম্পূর্ন)

আজ আমরা কুরআনের সমস্ত বৈজ্ঞানিক ভুলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।  কুরআনকে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরম অপরিবর্তিত, সরাসরি, নিখুঁত, আল্লাহর বাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।  কোরান যখন বলে, উদাহরণস্বরূপ, "তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বত স্থাপন করেছেন", তখন আল্লাহই এই কথা বলছেন এবং আল্লাহ তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যে নিজের কথা বলছেন।  খুব বিরল ক্ষেত্রে, কুরআন মানুষকে উদ্ধৃত করে বা মানুষকে কীভাবে প্রার্থনা করতে হয় তার একটি উদাহরণ দেয়। যাই হোক না কেন এটা আল্লাহর বাণী, তাই মুসলমানরা যখন কুরআন উদ্ধৃত করে তখন তারা বলে “আল্লাহ বলেন”।  অতএব, কুরআনের কোন ভুল, কোন মিথ্যা বক্তব্য, আল্লাহর ভুল।  যেহেতু আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর, যদি কোন ত্রুটি থাকে, তাহলে এর অর্থ হল বইটি ঐশ্বরিক উৎসের নয় এবং মিথ্যা।  বস্তুত কুরআন নিজেই তা স্বীকার করে।  এটি বৈজ্ঞানিক ভুলের একটি তালিকা।  এই সব দৃষ্টিকোণ সব ভুল নাও হতে পারে.  কিছু লোক এই ভুলগুলির একটি বা দুটির সাথে একমত নাও হতে পারে, অন্যরা ভাববে কেন অন্য ভুলগুলি বাদ দেওয়া হয়।  আমি শুধুমাত্র তাদের উপর ফোকাস করার ...

আরমিন নবাবি ও রিচার্ড ডকিন্স – আস্তিক্য, নাস্তিক্য এবং অজ্ঞেয়বাদ